মুশফিকের বিদায়টা মাঠ থেকেই হবে: শাহরিয়ার নাফিস
Published: 6th, March 2025 GMT
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দুজনের পথচলা একই সময়ে। টি-টোয়েন্টি অভিষেক হয়েছে একই সঙ্গে। টেস্ট-ওয়ানডেতে আগে-পরে। সেই শাহরিয়ার নাফিস যখন ব্যাট-বল ছেড়ে পুরোদস্তুর ক্রিকেট কর্তা সেখানে মুশফিকুর রহিমের বাস এখনো বাইশ গজেই।
টি-টোয়েন্টি ছেড়েছেন আগেই। এবার একই কায়দায় ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে মুশফিক ইতি টানলেন ওয়ানডে ক্রিকেটের। ২০০৫ থেকে ২০২৪! মাঝে কেটে গেছে ১৯ বছর। দেশের ক্রিকেটে অনেক উত্থান-পতন হলেও মুশফিক ছিলেন তার কাজে অটল।
সেই মুশফিকের বিদায় কি এক স্ট্যাটাসেই লেখা হয়ে থাকবে? বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি দলের প্রথম অধিনায়ক, মুশফিককে যিনি দেখে এসেছেন শুরু থেকে, একসঙ্গে খেলছেন দীর্ঘদিন সেই শাহরিয়ার নাফিসকে প্রশ্ন করতেই উত্তর মিলল, যেহেতু মুশফিক এখনো টেস্টের অন্যতম সদস্য তার বিদায়টা মাঠ থেকেই হবে!
আরো পড়ুন:
পরিসংখ্যান ও রেকর্ডের পাতায় মুশফিক
‘পরিশ্রমে কেউ মুশফিকের কাছাকাছি যেতে পারলেও অনেক ভালো করবে’
“প্রথমত বিদায়, বিদায়ই। সেটা ফেসবুক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে হোক বা মাঠের থেকে হোক।”
“মাঠ থেকে নিতে পারলে কি হয়, দর্শকের মাঝে থাকে, একটু সেলিব্রেটেড হয়। আরেকটা জিনিস মনে রাখতে হবে মুশফিকুর রহিম বাংলাদেশ টেস্ট টিমের এখনো গুরুত্বপূর্ণ একজন সদস্য। ও একটা ফরম্যাট ছেড়ে দিয়েছে, জাতীয় দলের খেলাতো ছাড়েনি। হয়তো ওর বিদায়টা মাঠ থেকেই হবে” -যোগ করেন শাহরিয়ার নাফিস।
সাদা বলের ক্রিকেটকে বিদায় জানালেও লাল বলে মুশফিক চালিয়ে যাবেন খেলা। শত টেস্ট খেলার জন্য আহ্বান করেছেন বন্ধু তামিম ইকবালও। নাফিসে মতে সাদা পোশাকে মুশফিকের বিদায়টা হবে রঙিন, বর্ণিল।
“ব্যাপারাটা তো এরকম না তিন ফরম্যাট খেলবে দেখে তিনবারই মাঠ থেকে বিদায় নিতে হবে। সে এখনো বাংলাদেশ জাতীয় দলের অংশ। সার্বিকভাবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিবে তখন সেই সুযোগটা সে গ্রহণ করবে।”
ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে থাকা মুশফিক কখন থামবেন এই নিয়ে ২০২৩ বিশ্বকাপ থেকেই চলছিল আলোচনা সমালোচনা। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাজে পারফরম্যান্স এই আলোচনাকে তুঙ্গে তুলে দেয়। দেশে ফেরার পর কয়েকদিন বিশ্রাম নিয়ে অবশেষে জানিয়ে দেন রঙিন জার্সি তুলে রাখার কথা।
নাফিস বলেন, “মুশফিক এমন একজন ক্রিকেটার খেলা ছাড়া অন্য কিছু চিন্তা করতে চায় না। ও যখন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ছিল স্বাভাবিকভাবে অন্য কিছু চিন্তা করে যায় নাই। ও হয়তো ভেবেছে, আমি যদি এখন বিদায় নিয়ে চিন্তা করি খেলার মধ্যে শতভাগ ফোকাস করতে পারবো না। ভালো হবে টুর্নামেন্টটা শেষ করে আসি, তার পরে চিন্তা করি।”
ঢাকা/রিয়াদ/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে
বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।
আরো পড়ুন:
ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০
বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী
প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন।
দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।
হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী।
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”
শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।
লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।
স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, “হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”
রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?”
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”
বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”
ঢাকা/মাসুদ