চট্টগ্রামে রোজায় সুপেয় পানির হাহাকার
Published: 7th, March 2025 GMT
চট্টগ্রামে পানি সংকট তীব্র হয়েছে। যেসব এলাকায় পানি আছে, মুখে তোলা যাচ্ছে না লবণাক্ততায়। অনেক অঞ্চলে মিলছে না ব্যবহারের পানিও। রমজানে সুপেয় পানির জন্য হাহাকার পড়ে গেছে। নাকাল নগরবাসী ক্ষোভে ফুঁসছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত মাসের শেষ দিকে বন্দরনগরীর সুপেয় পানির উৎস কর্ণফুলী নদী ও হালদা নদে ঢুকে পড়ে সাগরের পানি। সংকটের কারণে কাপ্তাই লেক থেকে পাওয়া যাচ্ছে না মিঠা পানি। লবণাক্ততা এড়াতে জোয়ারের সময় পাঁচ-ছয় ঘণ্টা পানি সংগ্রহ বন্ধ রাখছে ওয়াসা। আবার গভীর নলকূপ থেকে যা উঠছে, তা মিশিয়েও কমছে না লবণের তীব্রতা। ফলে উৎপাদন কমে সংকট ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। সামনে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
নগরীতে বিভিন্ন আকারের ৫ হাজার ৩০০ গভীর নলকূপ রয়েছে। অবৈধ নলকূপ আরও কয়েক গুণ। অবৈধভাবে ভূগর্ভস্থ পানি তোলায় এসব ভবনের মালিকের তেমন সমস্যা হচ্ছে না। বাকিদের ত্রাহি দশা। অবশ্য নির্বিচারে এভাবে তোলায় পানির স্তর নেমে যাচ্ছে, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর– বলছেন পরিবেশবিদরা। কর্ণফুলী নদী বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশবিদ ড.
সুপেয় পানিতে লবণের স্বাভাবিক মাত্রা লিটারে ২৫০ মিলিগ্রাম। বর্তমানে ওয়াসার পানিতে মাত্রা ২ হাজার ৫০০ মিলিগ্রাম। খোদ চট্টগ্রাম ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নুরুল আমিন মাত্রাতিরিক্ত লবণের কথা স্বীকার করেছেন। তিনি সমকালকে বলেন, ‘কর্ণফুলী ও হালদা থেকে সংগ্রহ করা পানিতে লবণের মাত্রা পাওয়া যাচ্ছে ২ হাজার ৩০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ মিলিগ্রাম। এ কারণে আমরা জোয়ারের সময় কয়েক ঘণ্টা পানি সংগ্রহ বন্ধ রাখছি। তার পরও লবণের প্রভাব কমছে না।’
জানা যায়, কাপ্তাই লেক থেকে পানি ছাড়ার মাধ্যমে বিদ্যুৎ যেমন উৎপাদন হয়, তেমনি তা সাগরের পানি নদীতে ঢুকতে বাধা দেয়। বৃষ্টি হলে সাগরের পানি নদীকে তেমন লবণাক্ত করতে পারে না। এখন বৃষ্টি নেই। কমে যাওয়ায় কাপ্তাই লেক থেকে তেমন পানি ছাড়া হচ্ছে না। ফলে প্রধান উৎসের পানি লবণমুক্ত করতে পারছে না ওয়াসা। আবার গভীর নলকূপ থেকে পাওয়া পানি মিশিয়েও পানযোগ্য করা সম্ভব হচ্ছে না।
নগরীর চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার বাসিন্দা হাসান মুরাদ মামুন বলেন, ‘পানি নিয়মিত পাওয়া যায়। তবে গ্রীষ্ম শুরু হলে লবণাক্ততার কারণে ওয়াসার পানি মুখে তোলা যায় না। এবারও একই সমস্যা হচ্ছে। বোতলজাত পানি কিনতে গিয়ে দিশেহারা।’
লবণমুক্ত করতে নির্বিকার ওয়াসা
বিভিন্ন উপায়ে পানি লবণমুক্ত করা যায়। জটিল এবং ব্যয়বহুল হলেও বিভিন্ন দেশে এটি হচ্ছে। দীর্ঘদিন নগরবাসী ভুগলেও কোনো উদ্যোগ নেই চট্টগ্রাম ওয়াসার। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ চট্টগ্রামের মানুষ। ক্যাবের কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, বছরের নির্দিষ্ট সময়ে লবণাক্ততার কারণে ওয়াসার পানি পান করা যায় না। একের পর এক বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে অর্থ নয়ছয় হচ্ছে। অথচ রিভার্স অসমোসিস প্রক্রিয়ায় পানি লবণমুক্ত করার কোনো উদ্যোগ নেই।
ভরাটের সঙ্গে নতুন আপদ শ্যাওলা
কর্ণফুলী ও হালদার তলদেশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি কাপ্তাই লেক থেকে পানি ছাড়া হচ্ছে নামমাত্র। ফলে পানির প্রবাহ কমে গেছে। স্থিতি অবস্থার কারণে নদীতে জন্ম নিচ্ছে শ্যাওলা। বিশেষ করে যেসব পয়েন্ট থেকে পানি সংগ্রহ করা হয়, সেখানে শ্যাওলা থাকায় বিপাকে পড়েছে ওয়াসা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কাপ্তাই হ্রদ, কর্ণফুলী ও হালদা নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। কর্ণফুলী ও হালদার একাংশ ড্রেজিং না করলে আগামীতে সুপেয় পানির উৎস সংকটে ভুগতে হবে।
নুরুল আমিন বলেন, ‘কাপ্তাই থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি ছাড়া হচ্ছে না। এবার বৃষ্টিও কম হয়েছে। ফলে কর্ণফুলী ও হালদায় পানি চলাচলের গতি কমে প্রাকৃতিকভাবে জন্মেছে শ্যাওলা। পানি সংগ্রহে শ্যাওলা বড় বিঘ্ন সৃষ্টি করছে।’
কাপ্তাই লেক থেকে পানি ছেড়ে পাঁচ ইউনিটের মাধ্যমে ২৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। যে পানি ছেড়ে বিদ্যুৎ হয়, সেটিই কর্ণফুলী ও হালদার প্রাণ। কারণ কাপ্তাই লেকের পানির বাধায় দুই নদীতে ঢুকতে পারে না সাগরের পানি।
কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের তথ্য অনুযায়ী, পানি কমে যাওয়ায় পাঁচটির মধ্যে এখন চার ইউনিট বন্ধ। ৪০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার ইউনিট চালু রাখতে যে পরিমাণ পানি ছাড়া হচ্ছে, তা সাগরের পানিকে বাধা দিতে অক্ষম। এ সময় কাপ্তাইয়ে ৯২ দশমিক ২০ মিনস সি লেভেল (এমএসএল) পানি থাকার কথা। অথচ রয়েছে ৮৮ দশমিক ৫২। এ জন্য পানি কম ছাড়ছে কর্তৃপক্ষ।
দিনে উৎপাদন কমেছে ৬ কোটি লিটার
ওয়াসার পানি সরবরাহের সবচেয়ে বড় দুটি প্রকল্প হলো– রাঙ্গুনিয়া পানি শোধনাগার প্রকল্প-১ ও ২। এর মাধ্যমে কর্ণফুলী নদী থেকে প্রতিদিন ২৮ কোটি লিটার পানি সংগ্রহ করা হয়। হালদা নদের মদুনাঘাট পানি শোধনাগার প্রকল্প এবং মোহরা পানি শোধনাগার প্রকল্পে প্রতিদিন ৯ কোটি লিটার উৎপাদন হয়। এর বাইরে ৫০টি গভীর নলকূপ থেকে মেলে চার কোটি লিটার। পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে প্রতিদিন ৫০ কোটি লিটার পানি দিয়ে মেটানো হয় নগরবাসীর চাহিদা। কিন্তু লবণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় দিনে পাঁচ-ছয় ঘণ্টা নদী থেকে পানি সংগ্রহ কার্যক্রম বন্ধ রাখছে ওয়াসা। এতে উৎপাদন প্রায় ছয় কোটি লিটার কমে গেছে। কমবেশি নগরীর এক-তৃতীয়াংশ মানুষ পানি বঞ্চিত। কোনো কোনো এলাকায় একেবারেই মিলছে না। বিশেষ করে নগরীর বাকলিয়া, বায়েজিদ, চকবাজার, কাতালগঞ্জ, সরাইপাড়া, পতেঙ্গা, হালিশহর, আকবর শাহ, কাট্টলী, আগ্রাবাদ, মুরাদপুরে নিয়মিত পানি পাওয়া যাচ্ছে না।
আকবর শাহ এলাকার বাসিন্দা কাজী আহমদ উল্লাহ বলেন, ‘বছরজুড়েই পানি সংকট থাকে। তবে গ্রীষ্ম শুরু হলে তেমন একটা পাওয়া যায় না। যা মেলে, তাতে প্রচুর ময়লা ও দুর্গন্ধ। এর মধ্যে নতুন সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে লবণাক্ততা।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: লবণ ক ত প রকল প লবণ র নগর র
এছাড়াও পড়ুন:
সরকারের ভেতরে একটা অংশ নির্বাচন বানচালের পাঁয়তারা করছে: এনসিপি
সরকারের ভেতরের একটি পক্ষ ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশের বাইরে গিয়ে নিজেরাই ঐকমত্য কমিশন হওয়ার চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন। তিনি বলেন, এই চেষ্টার কারণে নির্বাচন ঝুঁকিতে পড়বে।
আজ সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আখতার হোসেন এ কথা বলেন।
আখতার হোসেন বলেন, তাঁদের কাছে স্পষ্টতই প্রতীয়মান যে সরকারের ভেতরের কোনো একটা অংশ সংস্কারকে ভন্ডুল করে নির্বাচন বানচালের পাঁয়তারা করছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ–আলোচনার ভিত্তিতেই কমিশন সুপারিশ উপস্থাপন করেছে উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির সদস্যসচিব বলেন, সেই সুপারিশের ভিত্তিতেই সরকার আদেশ জারি করবে, সেটাই হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু যখন সরকারের তরফ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে আরও এক সপ্তাহ রাজনৈতিক দলগুলোকে আলাপ–আলোচনার কথা বলা হয়, তখন মনে হয় যে সরকার আসলে এই সংস্কারের বিষয়গুলো নিয়ে সাপ-লুডো খেলছে। তিনি বলেন, ‘আমরা ৯৬-তে পৌঁছে গিয়েছিলাম, সেটাকে আবার তিনে নিয়ে আসা হয়েছে সাপ কেটে। এ অবস্থায় বাংলাদেশের বর্তমান যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি, তাতে সংকট আরও ঘনীভূত হচ্ছে।’
অতি দ্রুত সরকারকে দায়িত্বশীল আচরণ করার আহ্বান জানিয়ে এনসিপির সদস্যসচিব বলেন, সরকারকে নিজেকেই দায়িত্ব নিয়ে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি করতে হবে। সামনের সংসদকে গাঠনিক ক্ষমতা প্রদান করার মধ্য দিয়ে সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে ঘোষণা করতে হবে। গণভোটের মাধ্যমে অর্জিত জনগণের অভিপ্রায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে যেন বাস্তবায়িত হয়, সেই সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে হবে।