পুরুষের প্রজননক্ষমতায় পরিবেশদূষণের প্রভাব
Published: 7th, March 2025 GMT
বাংলাদেশেও অন্যান্য দেশের মতো সন্তানপ্রত্যাশী ব্যক্তিদের ব্যর্থতার হার বেড়ে চলেছে। প্রজননক্ষমতা হ্রাস পাওয়ার ক্ষেত্রে পুরুষ ও নারী উভয়ের বা কোনো একজনের সমস্যা ভূমিকা রাখে। পুরুষদের বন্ধ্যত্বের পেছনে পরিবেশদূষণ উল্লেখযোগ্য কারণ হিসেবে স্বীকৃত। এ দূষণ শুক্রাণুর গুণমান, হরমোনের ভারসাম্য ও সামগ্রিক প্রজননস্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। আসুন, এ বিষয়ে জেনে নেওয়া যাক:
বায়ুদূষণ
পার্টিকুলেট ম্যাটার: বাতাসের অতিসূক্ষ্ম কণা রক্তপ্রবাহে প্রবেশ করে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস তৈরি করতে পারে, যা শুক্রাণুর ডিএনএর ক্ষতি করে ও শুক্রাণুর গতিশীলতা হ্রাস করে।
নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড ও সালফার ডাই-অক্সাইড গ্যাসগুলো শুক্রাণুর কম ঘনত্ব ও অস্বাভাবিক আকারের সঙ্গে যুক্ত।
পলিসাইক্লিক অ্যারোমেটিক হাইড্রোকার্বন: এটি যানবাহনের নিষ্কাশন ও শিল্প নির্গমনে পাওয়া যায়, যা হরমোনের ভারসাম্য ব্যাহত করতে পারে এবং শুক্রাণু উৎপাদন ব্যাহত করতে পারে।
পানিদূষণ
ভারী ধাতু: পানির উৎসে থাকা সিসা, ক্যাডমিয়াম ও পারদের মতো দূষিত পদার্থগুলো শরীরে জমতে পারে; যা টেস্টিসের ক্ষতি, শুক্রাণুর সংখ্যা হ্রাস এবং হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণ হতে পারে।
এন্ডোক্রাইন-ডিসরাপ্টিং কেমিক্যালস: বিসফেনল এ, থ্যালেট ও পানিতে থাকা কীটনাশকের মতো রাসায়নিক পদার্থ হরমোন উৎপাদন এবং এর কার্যকারিতায় হস্তক্ষেপ করতে পারে।
মাটিদূষণ
কীটনাশক ও হার্বিসাইড, শিল্পবর্জ্য মাটিকে দূষিত করে। এমন দূষণও পুরুষের প্রজননক্ষমতায় প্রভাব রাখতে পারে।
পুরুষদের বন্ধ্যত্বের পেছনে পরিবেশদূষণ উল্লেখযোগ্য কারণ হিসেবে স্বীকৃত।ইলেকট্রোম্যাগনেটিক দূষণ
মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ ও ওয়াই-ফাই থেকে ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ডের এক্সপোজার শুক্রাণুর গতিশীলতা হ্রাস এবং ডিএনএ ফ্র্যাগমেন্টেশনের সঙ্গে যুক্ত।
সমাধান
এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করুন।
অত্যন্ত দূষিত এলাকায় মাস্ক ও প্রতিরক্ষামূলক পোশাক পরুন।
নিরাপদ পানির উৎস ব্যবহার করুন।
স্বাস্থ্যকর ডায়েট বা অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করুন।
চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা
অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সাপ্লিমেন্ট: ভিটামিন সি, ভিটামিন ই-এর মতো অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা যায়।
ডা.
শাহজাদা সেলিম, সহযোগী অধ্যাপক, এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: হরম ন
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাম্পকে ইউক্রেনের পাশে থাকার আহ্বান রাজা চার্লসের
বিশ্বের সবচেয়ে জটিল কিছু সংকট সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যক্তিগত প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করেছেন ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লস। একই সঙ্গে তিনি ‘স্বৈরাচারের (রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন) বিরুদ্ধে ইউক্রেনের প্রতি মার্কিন সমর্থন’ দেওয়ার জন্য ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানান। খবর বিবিসির।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফরের প্রথম দিনে উইন্ডসর ক্যাসলে আয়োজিত রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে দেওয়া বক্তৃতায় এ কথা বলেন রাজা।
আরো পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় ৩ পুলিশ নিহত
সম্পদ বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন করায় সাংবাদিকের ওপর ক্ষেপলেন ট্রাম্প
জবাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ সম্পর্কের প্রশংসা করে বলেন, এ সম্পর্ককে ‘বিশেষ’ শব্দ দিয়ে যথাযথভাবে বোঝানো যায় না।
উইন্ডসর ক্যাসলে ১৬০ জন অতিথির জন্য আয়োজিত জাঁকজমকপূর্ণ এই নৈশভোজে রাজার বক্তৃতায় দুই দেশের গভীর বন্ধন এবং সাংস্কৃতিক, বাণিজ্যিক ও সামরিক সম্পর্ক ধরে রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়।
ট্রাম্পের রাষ্ট্রীয় এ সফর চলবে আজ বৃহস্পতিবারও। এদিন নানা অনুষ্ঠানে মার্কিন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের সঙ্গে অংশ নেবেন ব্রিটিশ রানি ক্যামিলা ও প্রিন্সেস অব ওয়েলস।
রাজকীয় অ্যাপায়ন শেষে ট্রাম্পের আজকের কর্মসূচি রাজনৈতিক আলোচনায় রূপ নেবে। আজ বৃহস্পতিবার ট্রাম্প ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে তার সরকারি বাড়ি চেকার্সে বৈঠক করবেন। বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনও হবে।
বুধবারের (১৭ সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রীয় ভোজ ছিল আড়ম্বর ও রাজনীতির সমন্বয়ে সাজানো এক বিশেষ আয়োজন। ভোজে রাজা, রানি ও রাজপরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের উপস্থিতিতে ট্রাম্পকে স্বাগত জানানো হয় উইন্ডসরে।
উইন্ডসর ক্যাসলের মনোরম প্রাঙ্গণে পৌঁছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও মেলানিয়া রাজকীয় ঘোড়ার গাড়ি থেকে নামেন। সেখানে সুশৃঙ্খলভাবে সাজানো সেনাদলের অভিবাদন গ্রহণ করেন তারা।
যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানানোর জন্য দেশটিতে আয়োজিত স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক সংবর্ধনা ছিল এটি।
যুক্তরাষ্ট্রের অতিথিকে স্বাগত জানাতে প্রিন্স ও প্রিন্সেস অব ওয়েলসও উপস্থিত ছিলেন। তারা প্রেসিডেন্ট ও মেলানিয়ার সঙ্গে উষ্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ এক বৈঠকও করেন।
ভোজসভায় বক্তৃতা করতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রিন্স উইলিয়ামের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে তিনি হবেন ‘অসাধারণ সফল নেতা’। প্রিন্সেস অব ওয়েলস ক্যাথরিনকে তিনি আখ্যা দেন ‘উজ্জ্বল, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ও সুন্দরী’ হিসেবে।
ট্রাম্পের ঐতিহাসিক এ দ্বিতীয় রাষ্ট্রীয় সফর প্রমাণ করেছে রাজা ও তাঁর মধ্যে সম্পর্ক বেশ ভালো। সফরে আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজে তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মুহূর্তও দেখা গেছে।
এরপর রাজপ্রাসাদে ট্রাম্প দম্পতিকে স্বাগত জানান রাজা তৃতীয় চার্লস ও রানি ক্যামিলা। ট্রাম্প যখন রাজার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করছিলেন, তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ের ছয়টি কামান থেকে একযোগে ৪১ বার তোপধ্বনি করা হয়। একই সময়ে টাওয়ার অব লন্ডন থেকে একই রকম তোপধ্বনি হয়।
ট্রাম্প দম্পতিকে স্বাগত জানানোর এ আয়োজনে অংশ নেন ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর ১ হাজার ৩০০ সদস্য। ছিল শতাধিক ঘোড়া।
যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানানোর জন্য দেশটিতে আয়োজিত স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক সংবর্ধনা ছিল এটি।
বিবিসি বলছে, রাজকীয় অনুষ্ঠানের পাশাপাশি, বাণিজ্য ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে প্রভাবিত করার প্রচেষ্টা থাকবে।
যুক্তরাজ্যে রাষ্ট্রীয় সফর হলো একধরনের নরম শক্তির কূটনীতি, যা গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য রাজকীয় আকর্ষণ ব্যবহার করে, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কেউ নেই।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্টারমার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আর্থিক সেবা, প্রযুক্তি এবং জ্বালানি খাতে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় গড়ে তুলে যুক্তরাজ্যকে আমেরিকান বিনিয়োগের প্রধান গন্তব্য হিসেবে উপস্থাপন করতে চেষ্টা করছেন। এর মাধ্যমে তিনি নিজ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি করতে চাইছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফর শুরু হওয়ার সাথে সাথে, মার্কিন প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর সঙ্গে যুক্তরাজ্যে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের একটি বড় প্রযুক্তি চুক্তি ঘোষণা করা হয়েছে। যার মধ্যে মাইক্রোসফট থেকে ২২ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং পারমাণবিক শক্তিতে সহযোগিতা দেখা যাবে।
ট্রাম্পের সফরের আগে গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট যুক্তরাজ্যের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণায় ৫ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার ট্রাম্প-স্টারমারের বৈঠক থেকে কয়েক বিলিয়ন ডলারের ব্যবসায়িক চুক্তির ঘোষণাও আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ঢাকা/ফিরোজ