ধর্ষণের প্রতিবাদে মধ্যরাতে উত্তাল ঢাবি
Published: 9th, March 2025 GMT
মাগুরায় শিশু ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে মধ্যরাতে বিক্ষোভ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা।
শনিবার (৮ মার্চ) রাত ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুফিয়া কামাল হল থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। পরে তাদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে যোগ দেন শহীদুল্লাহ্ হলের শিক্ষার্থীরা।
এ সময় তারা— ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘আমার সোনার বাংলায়, ধর্ষকদের ঠাঁই নাই’, ‘তুমি কে আমি কে, আছিয়া আছিয়া’, একটা একটা ধর্ষক ধর, ধরে ধরে কবর দে’, ধর্ষকদের কালো হাত, ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও'- ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
সরজমিনে দেখা যায়, রাত পৌনে ১টার দিকে শিক্ষার্থীরা রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বসে অবস্থান নেন। ধর্ষকদের শাস্তির দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন৷ এ সময় তাদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় প্রতিটি হলের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন এবং ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান। রাত ১টা বাজতেই রাজু ভাস্কর্য এলাকা শিক্ষার্থীদের স্লোগানে প্রকম্পিত হতে থাকে।
আইন বিভাগের শিক্ষার্থী জারিন তাসনীম রিমি বলেন, “আজকে আমরা এখানে ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়ে রাজপথে নেমেছি। আমরা চাই, একটা ধর্ষকও যেনো আর মুক্ত না থাকে। আমরা এই নরপশুদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।”
সুফিয়া কামাল হলের শিক্ষার্থী ফাতেমা আক্তার বলেন, “এই যে বিচারহীনতার সংস্কৃতি চালু হয়েছে তা অবিলম্বে আমরা বিলোপ চাই। আমরা চাই না, কোনো অপরাধী বাইরে ঘুরে বেড়াক। তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি দিয়ে দ্রুত কার্যকর করা হোক।”
লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী তাসমিয়াহ্ বলেন, “এক দিনে ৫টা ধর্ষণের নিউজ পেয়েছি। আরো থাকতে পারে আমি সঠিক জানি না। ধর্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এই জাতি কোনদিন দেখেনি। এই দেশের ধর্ষকের মাইন্ডসেট হয়ে গিয়েছে, তারা জানে এর কোনো বিচার কোনোকালেই হয় না। তাদের পক্ষে আইনজীবী লড়ে, তারা জামিন পায়। আমরা এবার আর এরকম কোনো ঘটনা দেখতে চাইনা। আমরা চাই, আছিয়াসহ অন্য ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।”
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদার বলেন, “আমরা দেখে আসছি দীর্ঘদিন ধরে এ দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি চলে আসছে৷ আমরা আর এভাবে চলতে দিতে পারি না। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা দেশের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন। আমরা তার পদত্যাগের দাবি জানাই।”
ধর্ষণবিরোধী মঞ্চর আত্মপ্রকাশ: অবস্থান কর্মসূচি শেষ করার আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা ও গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের মুখপাত্র আশরেফা খাতুনের নেতৃত্বে আত্মপ্রকাশ করে ‘ধর্ষণ বিরোধী মঞ্চ'।
ধর্ষণ নিপীড়ন, নারী বিদ্বেষী মব এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতির বিরূদ্ধে এই মঞ্চের অবস্থান বলে জানান তারা। মঞ্চ থেকে দুই দফা দাবি উত্থাপন করা হয় । এগুলো হচ্ছে- অনতিবিলম্বে ধর্ষণবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের মাধ্যমে সকল ধর্ষণের বিচার নিশ্চিত করতে হবে এবং আছিয়ার হত্যাচেষ্টাকারী এবং ধর্ষকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে হবে।
যতদিন পর্যন্ত দাবি বাস্তবায়ন না হচ্ছে ধর্ষণবিরোধী মঞ্চ তাদের কর্মসূচি বহাল রাখবে বলেও জানান তারা।
ঢাকা/সৌরভ/ইভা
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
পঞ্চগড় সীমান্তে গুলিবিদ্ধ যুবকের মৃত্যু
পঞ্চগড় সীমান্তে গুলিবিদ্ধ যুবক মারা গেছেন। শনিবার (১৪ জুন) দিবাগত রাত ৩টার দিকে সদর উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের ঘাগড়া সীমান্তে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। পরে আহতাবস্থায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।
নিহতের নাম রাজু ইসলাম (৩৫)। তার বাড়ি হাড়িভাসা ইউনিয়নের ঝুলিপাড়া গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে। রাজু সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতীয় গরু পারাপারের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, ঘাগড়া সীমান্তের মেইন পিলার ৭৫১ এর বিপরীতে ভারতীয় এলাকার কিছু যায়গায় কাঁটাতারের বেড়া না থাকায় এলাকাটি ভারতীয় গরু পারাপারের গুরুত্বপূর্ণ রুট হিসেবে ব্যবহার করে আসছে চোরাকারবারিরা। শনিবার মধ্যরাতে এই মেইন পিলারের ৩ নম্বর সাব পিলার সংলগ্ন এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন রাজু। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) কাঞ্চনজঙ্ঘা ক্যাম্পের সদস্যরা তার দুই পায়ে গুলি করে। ঘটনাস্থলের পাশেই রাজুর বাড়ি হওয়ায় গুলিবিদ্ধ অবস্থাতেই রাজু বাড়ি ফেরেন। পরে আহতাবস্থায় পরিবারের সদস্যরা তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। রবিবার দুপুরে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ।
আরো পড়ুন:
কুষ্টিয়ায় সাপের কামড়ে গৃহবধূর মৃত্যু
হবিগঞ্জে বজ্রপাতে কৃষকের মৃত্যু
এদিকে রাজুর মৃত্যু বিএসএফের গুলিতে নয়, হার্ট অ্যাটাকে হয়েছে বলে দাবি করেছেন নীলফামারী ৫৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল শেখ মো. বদরুদ্দোজা। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকেও একই দাবি করা হয়েছে বলে জানান তিনি। তবে পুলিশ বলছে, প্রাথমিক সুরতহালে মরদেহের পায়ে গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য হাসিবুল ইসলাম বলেন, ‘‘রাজুর হৃদরোগ থাকলেও তার মৃত্যু বিএসএফের গুলিতে হয়েছে। তার দুই পায়ে গুলির চিহ্ন রয়েছে।’’
হাড়িভাসা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইয়েদ নূর-ই-আলম বলেন, ‘‘খবর পেয়ে রাজুর বাড়িতে পাই। তার দুই পায়ে ক্ষত চিহ্ন দেখেছি। ধারণা করছি, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়েছে। গত কয়েক বছরে ঘাগড়া সীমান্তে এমন পাঁচ জনের মৃত্যু হলো।’’
নীলফামারী ৫৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল শেখ মো. বদরুদ্দোজা বলেন, ‘‘গত রাতে বর্ডারে কোনো গোলাগুলি হয়নি- এটা আমরা নিশ্চিত হয়েছি। সেখানে বিজিবির পেট্রোল টিম ছিল, আশপাশে বাড়িঘর ছিল। বিএসএফ গুলি করলে শব্দ শোনা যেত, তারা কেউ কোনো শব্দ শোনেনি। চোরাকারবারি দমনে বিএসএফ অনেক সময়েই ফায়ার করে, আমরা সব সময় এসবের প্রতিবাদ করি। যদিও তারা বিভিন্ন সময় বলে, আত্মরক্ষার্থে ফায়ার করে। এ ক্ষেত্রে ফায়ারের শব্দ অনেক দূর পর্যন্ত শোনা যায়। কিন্তু, গত রাতে কোনো শব্দ শোনা যায়নি। আমরা বিএসএফের সঙ্গেও কথা বলেছি, তারাও জানিয়েছে কোনো ফায়ার হয়নি। এরপরও সৌজন্য সাক্ষাতে এ বিসয়ে আমরা তাদের আরো জিজ্ঞেস করব।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘রাজুর মৃত্যুর খবর পেয়ে তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তারা আমাদের জানিয়েছেন, রাজু হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন। অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়েছে। পরবর্তীতে জেনেছি, তার পায়ে নাকি গুলির চিহ্ন রয়েছে। কিন্তু, এ বিষয়ে তারা আমাদের কিছুই জানায়নি।’’
এ বিষয়ে পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. শইমী ইমতিয়াজ বলেন, ‘‘নিহতের দুই পায়ে গুলির চিহ্ন রয়েছে। মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। হার্ট অ্যাটাকের বিষয়টি চিকিৎসক বলতে পারবেন। এছাড়া, মৃত্যুর সঠিক কারণ ময়নাতদন্তের পর বিস্তারিত বলা যাবে।’’
এ বিষয়ে জানতে রাজুর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
ঢাকা/নাঈম/রাজীব