বরিশালের বানারীপাড়ায় লাউ কেনাবেচাকে কেন্দ্র করে তুচ্ছ ঘটনায় খোকন শীল (৪৫) ও হীরা শীল (১৭) নামের দুই পিতা-পুত্রকে কুপিয়ে জখমের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সদর ইউনিয়নের কাজলাহার বাজারে এ ঘটনা ঘটে।

গুরুতর আহত অবস্থায় তাদের প্রথমে বানারীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং অবস্থার অবনতি হলে আশঙ্কাজনক অবস্থায় বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে পাঠানো করা হয়।

জানা গেছে, উপজেলার কাজলাহার বাজারের ফুটপাতের বাদাম বিক্রেতা নিতাই মন্ডল তার ক্ষেতের লাউ বিক্রির জন্য বাজারে নিয়ে আসেন। রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ওই বাজারের সার ব্যবসায়ী মো, হাবিব একটি লাউয়ের মূল্য ৩০ টাকা বললে নিতাই ওই দামে বিক্রি করতে অস্বীকৃতি জানান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে হাবিব নিতাইকে ওই লাউ দিয়ে আঘাত করেন। একপর্যায়ে তার পিঠে হাতের কনুই দিয়েও আঘাত করেন।

বিষয়টি দেখতে পেয়ে বাজারের সেলুন মালিক খোকন শীল প্রতিবাদ করেন। এনিয়ে হাবিব ও খোকন শীলের মধ্যে বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ খবর পেয়ে হাবিবের ছেলে রাসেল, রাজিব ও ফাগুন এবং ভায়রা ছেলে মিথুন বাড়ি থেকে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে খোকন ও হীরাকে কুপিয়ে জখম করে।

এ সময় বানারীপাড়া-স্বরূপকাঠি সড়কের পাশের ওই বাজারে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় জনতা তাদেরকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে বানারীপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় কর্তব্যরত ডাক্তার তাদেরকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন।

এদিকে খবর পেয়ে থানা পুলিশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শন করে। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক প য় জখম বর শ ল অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

শ্রমিকের অধিকার প্রতিষ্ঠিত না হলে রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়

রাষ্ট্র শ্রমিককে মর্যাদার দৃষ্টিতে না দেখলে তাদের কোনো অধিকারই প্রতিষ্ঠিত হবে না। শোভন কাজ, নিরাপদ কর্মপরিবেশ কিংবা পেশাগত স্বাস্থ্য নিরাপত্তা– এসব অধিকার আইন এবং নীতিমালার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকে যাবে। অথচ শ্রমিকের নিরাপত্তা তাঁর অধিকার, এটা দরকষাকষির বিষয় নয়। শ্রমিকের অধিকার প্রতিষ্ঠিত না হলে উৎপাদন কমে, রপ্তানি কমে। পরিণামে রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়। 
পেশাগত স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা সম্মেলনে গতকাল সোমবার এমন পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন বক্তারা। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সহযোগিতায় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর (ডিআইএফই) এ আয়োজন করে। রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শ্রম উপদেষ্টা ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এএইচএম সফিকুজ্জামান ও আইএলওর কান্ট্রি ডিরেক্টর টুমো পোটিয়াইনেন। 

শ্রম উপদেষ্টা বলেন, ৫০ বছর ধরে শ্রম খাতে যেসব সংস্কার, উন্নয়ন কাজ করা হয়নি, সেগুলোর জন্য এখন চাপ তৈরি হয়েছে। সাত মাস ধরে এ খাতের অনেক সমস্যা মোকাবিলা করতে হচ্ছে। সম্প্রতি বিভিন্ন পোশাক কারখানায় শ্রম অসন্তোষ প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, শ্রম খাতে সংকট হলে কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। ত্রিপক্ষীয় কমিটি কিংবা অন্যান্য বিভাগ– সংকটকালে সব পক্ষকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। উপদেষ্টা বলেন, ‘শ্রম আইন মানা না হলে সরকারি টেন্ডারেও অংশ নেওয়া যাবে না। গতকাল বিএটি বাংলাদেশের কিছু লোক এসেছিল, যাদের ২০১৯ সালে ছাঁটাই করা হয়েছিল। আমি বিএটিকে বলেছি, আপনারা হয় আইন মেনে চলেন, না-হয় এ দেশ থেকে ব্যবসা গুটিয়ে চলে যান। বাধ্য হয়ে এমন শক্ত কথা বলতে হয়েছে।’ 
আলোচনায় শ্রম সচিব বলেন, মানুষ নির্বিঘ্নে তার কর্মক্ষেত্রে যাবে, অথচ কাজের জায়গাগুলোকে যেন মৃত্যুকূপ বানিয়ে রাখা হয়েছে। শ্রম সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদনে যেসব সুপারিশ দিয়েছে, তার প্রতিটি বিষয় নিয়ে কাজ হবে। 

সম্মেলনে পেশাগত স্বাস্থ্য নিরাপত্তা বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডিআইএফইর যুগ্ম মহাপরিদর্শক মো. মতিউর রহমান এবং সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেইনিং বিভাগের পরিচালক হাসনাত এম আলমগীর।
মতিউর রহমান বলেন, ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের ঘটনার পরেও প্রায় প্রতিবছরই কমবেশি বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে। পেশাগত নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিতে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় এবং তাদের তদারকি কার্যক্রম আরও বাড়ানো প্রয়োজন।

সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেইনিং বিভাগের পরিচালক হাসনাত এম আলমগীর বলেন, পেশাগত ক্ষেত্রে অসুস্থতার বিষয়টি উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। শ্রমিকরা ঠিক সময়ে বেতন না পেলে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যে বিরূপ প্রভাব পড়ে। 
শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন বলেন, পেশাগত নিরাপত্তা মানুষের মৌলিক অধিকার, এটা দরকষাকষির বিষয় না। এটি যতদিন না ঠিক হবে ততদিন শিল্পও টেকসই হবে না। 
ডিআইএফইর মহাপরিদর্শক মো. ইমরুল মহসিন বলেন, দ্বন্দ্ব নিরসনে মালিক, শ্রমিক ও সরকার– প্রত্যেকের মাঝে এক ধরনের প্রতিপক্ষ মনোভাব কাজ করে। এই সুযোগে গরম তাওয়ায় কীভাবে রুটি ভেজে খাওয়া যায়, অনেকে সেই চেষ্টা করে। 
প্যানেল আলোচনায় বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান ও শ্রমবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সদস্য তাসলিমা আখতার বলেন, শ্রমিকের অধিকার প্রতিষ্ঠিত না হলে উৎপাদন কমে, রপ্তানি কমে। পরিণামে রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শ্রমিকের অধিকার প্রতিষ্ঠিত না হলে রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়