মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আগের চেয়ে বেড়েছে। পাশাপাশি কিছু চ্যালেঞ্জও তৈরি হয়েছে। একধরনের অপশক্তির মতও জোরদার হয়েছে। জাতীয় এসডিজি বা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে তরুণদের এক আলোচনায় এ কথাগুলো উঠে এসেছে। আজ সোমবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘জাতীয় এসডিজি রিপোর্ট (ভিএনআর) ২০২৫: যুবসমাজের ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনার আয়োজন করে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম।

আলোচনায় অংশগ্রহণকারী তরুণেরা অনলাইন ভোটের মাধ্যমে মতপ্রকাশ, মানসম্মত শিক্ষা, শোভন কর্মসংস্থান ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়গুলোকে আলোচনার জন্য বেছে নেন। তাঁদের বক্তব্যে জাতীয় এসডিজি প্রতিবেদনে মতপ্রকাশ, মানসম্মত শিক্ষা, শোভন কর্মসংস্থান ও জলবায়ু পরিবর্তনকে প্রাধান্য দেওয়ার বিষয়টি উঠে আসে।

তরুণদের বক্তব্যে উঠে এসেছে, এসব বিষয়ে নানা অগ্রগতি হলেও আরও কাজ করার সুযোগ আছে। দেশ এখন তরুণদের হাতে, তাঁদের ভাবনাকে অংশগ্রহণমূলকভাবে নিয়ে এসডিজি বাস্তবায়নে এগোতে হবে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর নাগরিক সমাজ ম্রিয়মাণ হয়ে গেছে।

মানসম্মত শিক্ষা প্রসঙ্গে তরুণেরা মত দিয়ে বলেন, এ দেশে শিক্ষার ক্ষেত্রে ঘন ঘন নীতি পরিবর্তন হয়, যা অন্যতম চ্যালেঞ্জ। এ ছাড়া বাজার চাহিদার সঙ্গে শিক্ষাব্যবস্থার কারিকুলামের সামঞ্জস্য থাকে না। শোভন কর্মসংস্থান বিষয়ে তাঁরা তরুণদের জন্য যুব ব্যাংক গঠনের পরামর্শ দেন। পড়াশোনার পাশাপাশি কর্ম উদ্যোগের ব্যবস্থা রাখতে বলেন। জলবায়ু পরিবর্তনে তরুণেরা বলেন, জলবায়ুসংক্রান্ত যে ধরনের নীতি হয় তা ঢাকাকেন্দ্রিক। স্থানীয় পর্যায়ে অংশগ্রহণমূলক নীতি করতে হবে। এতে নারী, ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীসহ সবার মতামত থাকতে হবে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো ও এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘এর আগে যে দুটি ভিএনআর (স্বতঃপ্রণোদিত জাতীয় প্রতিবেদন) হয়েছিল তার বড় সমালোচনা ছিল এটা জাতীয় হয়নি, সরকারি প্রতিবেদন ছিল। এবারের পার্থক্য হচ্ছে, এবার প্রকৃত অর্থেই জাতীয় করার চেষ্টা করা হচ্ছে। যেখানে সরকার, নাগরিক, জাতিসংঘ মিলে একটা প্রতিবেদন করা হবে।’

তরুণদের ভাবনা প্রসঙ্গে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘আগামী দিনে উত্তরণের জন্য মানসম্মত শিক্ষা এবং শোভন কর্মসংস্থান যদি না হয়, তবে পরবর্তী পর্যায়ে যাওয়ার সুযোগ আটকে যাবে। সাম্প্রতিককালে বাক্‌স্বাধীনতা ও কথা বলার অধিকার এসেছে। মতপ্রকাশের জায়গার কার্যকর ব্যবহারের প্রসঙ্গ এসেছে। কণ্ঠস্বর বড় হওয়া মানেই তা ন্যায্য হবে, এমন কোনো কথা নেই। যেটা সর্বোচ্চভাবে বলা হয়, সেটাই যে সঠিক, তারও নিশ্চয়তা নেই।’

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরও বলেন, ‘চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে সর্বজনীনতা ও ন্যায্যতা। যে সুযোগ আছে তা যেন সব নাগরিক উপভোগ করতে পারে। এ ছাড়া এসেছে ক্ষমতার ভারসাম্য, বাজার সিন্ডিকেট, জবাবদিহির বিষয়, সরকারের যথাযথ পর্যবেক্ষণ।’

অনুষ্ঠানে সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘দেশে ভালো শিক্ষাব্যবস্থা করতে গেলে বিভিন্নমুখী যে শিক্ষাব্যবস্থা আছে সেটাকে কীভাবে সমন্বয় করা যায়, তা ভাবতে হবে। কর্মসংস্থানে নিম্নতম মজুরির বিষয় আসবে। এগুলো সমাধান করেই প্রতিবেদন করতে হবে। দেশকে কীভাবে এগিয়ে নেওয়া হবে, সেটা ঠিক করতে পারলে প্রতিবেদনও ভালো হবে।’

আলোচনায় আরও অংশ নেন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মহাপরিচালক শিহাব কাদের ও ইউএনডিপির সহকারী আবাসিক প্রতিনিধি আনোয়ারুল হক।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবস থ জলব য় এসড জ

এছাড়াও পড়ুন:

গুলশানে ৫০ লাখ টাকা চাঁদাবাজির মামলায় অপু গ্রেপ্তার

রাজধানীর গুলশানে সাবেক এমপি শাম্মী আহমেদের বাসায় চাঁদাবাজির মামলায় এজাহারনামীয় আসামি বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের সদ্য বহিষ্কৃত যুগ্ম আহ্বায়ক জানে আলম অপুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 

শুক্রবার (১ আগস্ট) সকাল ১০টার দিকে রাজধানীর ওয়ারী থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

ডিবির যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয়ে গুলশানে ৫০ লাখ টাকা চাঁদাবাজির ঘটনায় গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের যুগ্ম আহ্বায়ক জানে আলম অপুকে ওয়ারী থেকে ডিবির ওয়ারী বিভাগের সদস্যরা গ্রেপ্তার করেছেন। তাকে মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে।

গত ১৭ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে একটি চক্র রাজধানীর গুলশানের ৮৩ নম্বর রোডে আওয়ামী লীগ নেত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের বাসায় গিয়ে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। তাদের নেতৃত্বে ছিলেন জানে আলম অপু ওরফে কাজী গৌরব অপু এবং আব্দুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান ওরফে রিয়াদ। এ সময় শাম্মী আহমেদ দেশের বাইরে থাকায় তার স্বামী সিদ্দিক আবু জাফরকে জিম্মি করে ভয় দেখানো হয়।

চক্রটি বাসায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি করে প্রথম ধাপে ১০ লাখ টাকা আদায় করে নেয়। এর মধ্যে ৫ লাখ টাকা ভাগ পান অপু এবং বাকি ৫ লাখ পান রিয়াদ। চাঁদার দ্বিতীয় কিস্তি আনতে ২৬ জুলাই সন্ধ্যায় আবারও গুলশানের ওই বাসায় গেলে চক্রের পাঁচ সদস্যকে আটক করে পুলিশ। তারা হলেন- আব্দুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান ওরফে রিয়াদ, ইব্রাহীম হোসেন মুন্না, সাকদাউন সিয়াম, সাদমান সাদাব এবং আমিনুল ইসলাম। তাদের সবাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের বিভিন্ন পদে ছিলেন। গ্রেপ্তারের পরপরই  তাদেরকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়।

এদিকে, চাঁদাবাজির এ ঘটনায় গুলশান থানায় দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, এজাহারনামীয় ছয় আসামি ও অজ্ঞাত ১০-১২ জন সমন্বয়ক পরিচয়ে ১৭ জুলাই সকালে আমার গুলশান-২ নম্বরের বাসায় আসে। যার মধ্যে আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ ও কাজী গৌরব অপু আমাকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি-ধামকি দিয়ে ৫০ লাখ টাকা ও স্বর্ণালংকার দাবি করে। তাদের দাবিকৃত টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তারা আমাকে আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দিয়ে গ্রেপ্তারের হুমকি দেখায়। একপর্যায়ে আমি বাধ্য হয়ে ১০ লাখ টাকা দিই। পরে ১৯ জুলাই রাতে রিয়াদ ও অপু আমার বাসায় এসে ধাক্কাধাক্কি করে, যা আমি পুলিশকে ফোন করে জানাই। এ সময় অভিযুক্তরা সেখান থেকে সটকে পড়ে।

এজাহারে আরো বলা হয়েছে, ২৬ জুলাই শনিবার বিকেলে রিয়াদের নেতৃত্বে আসামিরা আমার বাসার সামনে এসে আমাকে খুঁজতে থাকে। আমি বাসায় না থাকায় বাসার দারোয়ান আমাকে ফোন করে বিষয়টি জানায়। এ সময় আসামিরা তাদের দাবিকৃত আরো ৪০ লাখ টাকা না দিলে আমাকে পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তার করানো হবে বলে হুমকি দিতে থাকে।

ঢাকা/এমআর/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ