চট্টগ্রাম নগরের ধনিয়ালাপাড়া এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ জসিমের ঘরে এক সপ্তাহ ধরে পানি নেই। রান্নাবান্না, ধোয়ামোছা ও গোসলের কাজ চলছে কেনা পানিতে। প্রতিদিন পাঁচ শ টাকার পানি লাগছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে তিনি এসেছিলেন ওয়াসা ভবন ঘেরাও কর্মসূচিতে অংশ নিতে।

ভোগান্তির তথ্য তুলে ধরে জসিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওয়াসা বিগত এক দশকে কয়েক হাজার কোটি টাকা খরচ করেছে। কিন্তু এত টাকা খরচ করে কী লাভ হলো। শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকার বসবাসকারী পানি পাচ্ছে না। আমরা গত এক সপ্তাহে একফোঁটা পানি পাইনি।’

শুধু মোহাম্মদ জসিম নন, তাঁর মতো এমন আরও অর্ধশতাধিক ব্যক্তি ‘ওয়াসা ভবন ঘেরাও’ কর্মসূচি পালন করতে এসেছিলেন। তাঁদের কেউ এক সপ্তাহ ধরে, কেউ চার দিন ধরে পানি পান না। সবাই ধনিয়ালাপাড়া, সুপারিওয়ালাপাড়া, পোস্তারপাড়, দেওয়ানহাট, মতিয়ারপোলসহ আশপাশের এলাকার বাসিন্দা।

সরেজমিন দেখা যায়, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মিছিল নিয়ে এসব এলাকার বাসিন্দারা ওয়াসা ভবনের নিচে আসেন। এ সময় পানি সরবরাহের দাবিতে নানা ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে বাসিন্দারা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা বরাবর স্মারকলিপি দেন।

এতে বলা হয়, দীর্ঘদিন ধরে বাসাবাড়ি, মসজিদ, মাদ্রাসা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। বর্তমানে পানির সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। পানি অভাবে জনসাধারণ দিন দিন অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে। কিন্তু ওয়াসা প্রশাসনের ঘুম ভাঙছে না। অবিলম্বে এ সংকটের সমাধান করতে হবে।

দেওয়ানহাটের বাসিন্দা আবদুল জব্বার প্রথম আলোকে বলেন, গত শনিবার রাত থেকে পাইপে কোনো পানি নেই। হঠাৎ করে পানি আসা বন্ধ হয়ে গেছে। ঘরে জমা কোনো পানিই ছিল না। বড় বিপদে পড়তে হয়েছে।

বাসিন্দারা জানান, তাঁদের এলাকায় এমনিতেই পানিসংকট লেগে থাকে। সপ্তাহে কেউ তিন দিন, কেউ চার দিন পানি পান। কিন্তু চার দিন ধরে একফোঁটা পানিও না আসায় তাঁরা কর্মসূচি দিতে বাধ্য হয়েছেন।

ওয়াসার লাইন ফেটে যাওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছে নগরবাসী। সড়কের পাশের একটি ভবনের গভীর নলকূপের পাইপ থেকে লাইন ধরে পানি নিচ্ছে এলাকাবাসী। আজ বেলা ১টায় চট্টগ্রাম নগরের ১৫ নম্বর মধ্যম রায়পুর হাজার দিঘীর পাড়ে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এল ক র ব

এছাড়াও পড়ুন:

২ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা হচ্ছে সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে

জালিয়াতির মাধ্যমে এলসির বিপরীতে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে পাঁচটি মামলা করতে যাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন, তাতে বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমানও আসামি হতে যাচ্ছেন।

আজ সোমবার দুদকের প্রধান কার্যালয় মামলাগুলোর অনুমোদন দেয়। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি, শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান রহমানের পাশাপাশি তাঁর ছেলে, ভাই, ভাতিজা, জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তাসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে এই মামলাগুলো হবে।

রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, অনুমোদিত পাঁচ মামলায় ৩৪ জন আসামির বিরুদ্ধে মোট ২১ কোটি ৫৫ লাখ ২৮ হাজার ৮০১ মার্কিন ডলার বা প্রায় ১ হাজার ৯৩৯ কোটি ৭৫ লাখ ৯২ হাজার টাকা আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ আনা হয়েছে।

মামলায় সালমান এফ রহমান ছাড়া আসামিদের মধ্যে রয়েছেন তাঁর ছেলে শায়ান এফ রহমান, ভাই বেক্সিমকো গ্রুপের চেয়ারম্যান সোহেল এফ রহমান, সোহেল রহমানের ছেলে আহমেদ শাহরিয়ার রহমান, বেক্সিমকো গ্রুপের পরিচালক ইকবাল আহমেদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওসমান কায়সার চৌধুরী, পরিচালক এ বি সিদ্দিকুর রহমান, মাসুদ ইকরামুল্লাহ খান, শাহ মঞ্জুরুল হক ও রীম এইচ শামসুদ্দোহা।

এ ছাড়া স্কাইনেট অ্যাপারেলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ারুল বাশার ও পরিচালক নাসরিন আহমেদ, ক্রিসেন্ট অ্যাকসেসরিজের এমডি আবু নাঈম মাহমুদ সালেহিন ও পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান তানভীর, প্লাটিনাম গার্মেন্টস লিমিটেডের এমডি মোহাম্মদ আলিফ ইবনে জুলফিকার ও পরিচালক নুসরাত হায়দার, পিয়ারলেস গার্মেন্টস লিমিটেডের এমডি ওয়াসীউর রহমান ও পরিচালক রিজিয়া আক্তার, নিউ ঢাকা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের এমডি সালাউদ্দিন খান মজলিস ও পরিচালক আবদুর রউফ, কাঁচপুর অ্যাপারেলস লিমিটেডের এমডি মাহফুজুর রহমান খান ও পরিচালক সৈয়দ তানবির এলাহী আফেন্দী সম্ভাব্য আসামির তালিকায় রয়েছেন।

জনতা ব্যাংকের মধ্য থেকে আসামি করা হচ্ছে ব্যাংকটির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুছ ছালাম আজাদ ও আবদুল জব্বার, সাবেক মহাব্যবস্থাপক মিজানুর রহমান, অবসরপ্রাপ্ত উপমহাব্যবস্থাপক আবদুর রহিম, সাবেক মহাব্যবস্থাপক শহিদুল হক, অবসরপ্রাপ্ত ডিজিএম (রপ্তানি বিভাগ) মমতাজুল ইসলাম, সিনিয়র অফিসার রফিকুল ইসলাম, ব্যবস্থাপক সালেহ আহম্মেদ, অবসরপ্রাপ্ত এজিএম মোয়াজ্জেম হোসেন, সাবেক এজিএম (রপ্তানি) মোহাম্মদ শাজাহান, সাবেক এজিএম (রপ্তানি) হুমায়ুন কবির ঢালী ও প্রিন্সিপাল অফিসার শ ম মাহাতাব হোসাইন বাদশাকে।

দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আসামিদের যোগসাজশে জনতা ব্যাংকের লোকাল অফিস থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ ও বিদেশে পাচার করা হয়। এর মধ্যে পিয়ারলেস গার্মেন্টস লিমিটেডের নামে ৫ কোটি ২ লাখ ৫০ হাজার ৭৭২ দশমিক ২৫ ডলার, প্লাটিনাম গার্মেন্টস লিমিটেডের নামে ১ কোটি ৮৮ লাখ ৩ হাজার ৬৫৮ দশমিক ৯১ ডলার, কাঁচপুর অ্যাপারেলস লিমিটেডের নামে ৮ কোটি ৪০ লাখ ২৯ হাজার ৫৪৭ দশমিক ৪৫ ডলার, স্কাইনেট অ্যাপারেলস লিমিটেডের নামে ১ কোটি ৪৭ লাখ ২৯ হাজার ৩৪০ ডলার এবং ঢাকা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের নামে ৪ কোটি ৭৭ লাখ ১৫ হাজার ৪৮২ দশমিক ৪৬ ডলার আত্মসাৎ হয়।

সব মিলিয়ে আত্মসাৎ করা অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ২১ কোটি ৫৫ লাখ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা।

সাবেক সংসদ সদস্য সালমান এফ রহমান গত বছর জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের কয়েক দিনের মধ্যে গ্রেপ্তার হয়ে এখন কারাগারে রয়েছেন। এরপর তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগে বেশ কয়েকটি মামলা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ