মোবাইল চুরির অভিযোগে যুবককে গাছে বেঁধে নির্যাতন
Published: 13th, March 2025 GMT
হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার যমুনাবাদ গ্রামে মোবাইল ফোন চুরির অপবাদে এক যুবকের ওপর চালানো হয়েছে অমানুষিক নির্যাতন। মারধরের পর তার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও দেখে নিন্দার ঝড় উঠেছে সর্বত্র। জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি করেছে নির্যাতিত যুবকের পরিবার।
স্থানীয়রা জানান, ৮ মার্চ রাতে যমুনাবাদ গ্রামের আব্দুল কাইয়ূমের বাড়ি থেকে দুইটি মোবাইল চুরি হয়। পরদিন সন্দেহভাজন হিসেবে একই উপজেলার তারাপাশা গ্রামের কিম্মত আলীর ছেলে সহিদুলকে ধরে মারধর করা হয়। তাকে চাপ প্রয়োগ করলে তিনি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বনদক্ষিণ গ্রামের ইউসুফ আলীর ছেলে জাহেদ মিয়ার নাম বলেন। উত্তেজিত লোকজন কটিয়াদি বাজার থেকে জাহেদকে ধরে এনে গাছে বেঁধে নির্যাতন চালায়। একপর্যায়ে তার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পরিবারের লোকজন মোবাইল ফোনের টাকা দেওয়ার শর্তে তাকে উদ্ধার করে হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন।
বুধবার (১২ মার্চ) সকালে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি অবস্থায় নির্যাতনের শিকার জাহেদ মিয়া বলেন, “আমি কটিয়াদি বাজারে একটি দর্জির দোকানে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছি। ঘটনার দিন রাতে আমাকে ফোন করে নিয়ে যায় কয়েকজন। পরে তারা আমাকে গাছে বেঁধে নির্যাতন চালায়। একপর্যায়ে আমার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয় তারা। আমি বারবার প্রাণ ভিক্ষা চাইলেও তারা আমাকে ছাড়েনি। আমি কখনো চুরির সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। মূলত পূর্ব শত্রুতার জেরেই আমার ওপর এমন নির্যাতন চালানো হয়েছে।”
জাহেদের ছোট বোন পিংকি আক্তার বলেন, “আমার ভাই কোনো অন্যায় করেননি। মানুষকে দুই-একটি ঘুষি বা গালি দিলে সহজেই স্বীকার করে নেয়। অথচ তাকে মেরে গায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার পরও তিনি চুরির কথা স্বীকার করেননি। যদি তিনি চুরি করতেন, তাহলে অবশ্যই স্বীকার করতেন। আমরা এ ঘটনার বিচার চাই।”
হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা সদর হাসপাতালের ডা.
যমুনাবাদ গ্রামে অভিযুক্ত আব্দুল কাইয়ূমের বাড়িতে বাড়ির নারীরা জানান, সহিদুলের কথাতেই স্থানীয়রা জাহেদকে ধরে এনেছিল। উপস্থিত লোকজন তাকে মারধর করে শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। তারা এতে জড়িত না।
জায়েদ মিয়া স্থানীয় কটিয়াদি বাজারের এম মাস্টার্স টেইলার্স ও মোছাব্বির ক্লথ স্টোরে দর্জি হিসেবে কাজ করেন। প্রতিষ্ঠানের মালিক মোছাব্বির হোসেন বলেন- “জাহেদ শান্ত স্বভাবের ছেলে। সে আমার দোকানে দর্জির কাজ করে। তার ওপর এমন অমানবিক নির্যাতন মেনে নেওয়া যায় না।”
বাহুবল উপজেলার লামাতাসী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান উস্তার মিয়া বলেন- “আমার জানামতে মোবাইল ফোন চুরির সঙ্গে সহিদুল জড়িত। তবে মারধর করা ঠিক হয়নি।”
ঢাকা/মামুন/টিপু
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপজ ল র ম রধর
এছাড়াও পড়ুন:
মোহাম্মদপুরে বাসে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণীকে হেনস্তার ভিডিও ভাইরাল, হেনস্তাকারী গ্রেপ্তার
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বাসে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণীর পোশাক নিয়ে কটূক্তি ও হেনস্তার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার তিন দিন পর হেনস্তাকারীকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গ্রেপ্তার নাজিম উদ্দিন (৪৫) ওই বাসের কন্ডাক্টর ও চালকের সহকারী বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মোহাম্মদপুরের বছিলা এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, একটি বাসে এক তরুণী তাঁর পোশাক নিয়ে কটূক্তির প্রতিবাদ করছেন। বাসে ওঠার পর সামনের আসনে বসা ওই ব্যক্তি তাঁর পোশাক নিয়ে অশোভন মন্তব্য করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তরুণী প্রতিবাদ জানাতে সামনে এগিয়ে যান এবং প্রশ্ন করেন, ‘আমার পোশাক নিয়ে আপনার সমস্যা কী?’ পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে ওই ব্যক্তি উঠে দাঁড়িয়ে তরুণীকে চড় মারেন। মুহূর্তেই তরুণী জুতা খুলে পাল্টা আঘাত করেন। ভিডিওতে আরও দেখা যায়, ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে দুজনই বাসের সামনের দিকে পড়ে যান। তরুণী নিজেকে সামলে নিয়ে আবারও প্রতিরোধ করেন।
ঘটনার ভিডিওটি ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর নানামুখী প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অনেকেই তরুণীর সাহসী অবস্থানের প্রশংসা করেছেন, অন্যদিকে কেউ কেউ ঘটনাটিতে উভয় পক্ষের আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
নাজিম উদ্দিনকে আটক করার সঙ্গে যুক্ত র্যাব-৪–এর মেজর আবরার ফয়সাল সাদী প্রথম আলোকে বলেন, তরুণীকে কটূক্তি ও হেনস্তা করার ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর হেনস্তকারী ব্যক্তিকে আটক করতে র্যাব-৪–এর একটি দল অভিযান শুরু করে। গতকাল সন্ধ্যায় নাজিম উদ্দিনকে শনাক্ত করে আটক করা হয়। পরে তাঁকে মোহাম্মদপুর থানায় সোপর্দ করা হয়।
যোগাযোগ করা হলে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী রফিক প্রথম আলোকে বলেন, হেনস্তার শিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী শ্লীলতাহানির অভিযোগ এনে আজ শুক্রবার সকালে নাজিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। ওই মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। নাজিম উদ্দিন ধানমন্ডি ১৫ থকে মোহাম্মদপুরের বছিলায় চলাচলরত রমজান পরিবহনের কন্ডাক্টর। ভাড়া নিয়ে কথা–কাটাকাটির জের ধরে তাঁদের দুজনের মধ্যে মারামারি হয়। ছাত্রীটি মোহাম্মদপুরের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন।
আজ সন্ধ্যায় পাঠানো র্যাব-৪–এর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি রমজান পরিবহনের একটি বাস ধানমন্ডি ১৫ থেকে মোহাম্মদপুরের বছিলায় যাচ্ছিল। বাসটি বছিলার মেট্রো হাউজিংয়ের সামনে পৌঁছালে চালকের সহকারী মো. নিজাম উদ্দিন বাসটির যাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণীর দিকে তাকিয়ে তাঁর পোশাক নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন। এতে ওই তরুণী প্রতিবাদ করায় নাজিম উদ্দিন তাঁর সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন এবং তাঁকে চড় মারেন। একপর্যায়ে তরুণীও আত্মরক্ষার্থে নিজের পায়ের জুতা খুলে অভিযুক্ত নাজিম উদ্দিনকে আঘাত করেন।