নদীর বিপন্নতার জন্য তিন কারণকে দায়ী করলেন আনু মুহাম্মদ
Published: 13th, March 2025 GMT
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতির সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বাংলাদেশের নদ-নদীর মরণদশার পেছনে তিনটি কারণ উল্লেখ করে বলেছেন, উজানে দেওয়া ভারতের বাঁধ, দেশের শক্তিশালী ব্যক্তিবর্গ ও কোম্পানির দখল আর সরকারের নেওয়া উন্নয়ন প্রকল্প – এ তিন কারণে বাংলাদেশের নদ–নদী ভয়ংকর বিপদের মধ্যে রয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবসে ‘ধরিত্রীর জন্য আমরা’ (ধরা) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এই তিন কারণের উল্লেখ করেন।
আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘আমরা সবাই জানি কারা নদী দখল করছে, কারা নদীকে শেষ করে দিচ্ছে, আর কী করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘এর মধ্যে আদালত কিছু রায় দিয়েছে। আদালতের রায়ে ২০০৯ সালে নদীরক্ষা কমিশন গঠিত হয়েছিল। মুজিবর রহমান হাওলাদার যখন কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন, তখন তিনি বিশাল ভলিউমে নদীর দখলদারদের তালিকা করেছিলেন। ওটা নদীরক্ষা কাজ শুরুর জন্য একটা সূচনাবিন্দু হতে পারে।’
আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, ‘গত সাত মাস পার হয়েছে। স্বৈরশাসনের প্রধান ব্যক্তি তিনি পালিয়েছেন। গণ-অভ্যুত্থানের পর আমরা শুনি নতুন বাংলাদেশ হবে, স্বাধীন বাংলাদেশ হবে, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ হবে। কিন্তু তার প্রতিফলন অনেক জায়গায় দেখি না৷ নদীর ক্ষেত্রে সেটা একেবারে দেখা যায় না।’
আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, সুনির্দিষ্টভাবে বললে বাংলাদেশের নদী যে ভয়ংকর বিপদের মধ্যে আছে তার কারণ তিনটি। এক, উজানে দেওয়া ভারতের বাঁধ। চীন এখন ব্রহ্মপুত্রে বাঁধ দিচ্ছে। ভাটির দেশ হিসেবে ভারত প্রতিবাদ জানাচ্ছে। এখন তাদের উপলব্ধি হবে ভাটির দেশের সংকটটা কী। ভারতের সঙ্গে নেগোসিয়েশনে কোনো কাজ হচ্ছে না৷ সমাধানের একটা পথ হতে পারে জাতিসংঘের ওয়াটার ট্রিটিতে অনুস্বাক্ষর করা। ভারতকে খুশি করতে বাংলাদেশ যা এত দিন করেনি’, বলেন তিনি।
আনু মুহাম্মদ প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘তখন আওয়ামী লীগ সরকার ছিল। তাই করেনি। এখন সেটা করতে অসুবিধা কোথায়? অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান করণীয় কাজ এটাতে অনুস্বাক্ষর করা।’
সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পকে দ্বিতীয় কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র সুন্দরবনকে শেষ করবে, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র কুহেলিয়া নদীকে শেষ করেছে, রূপপুরের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে যদি বর্জ্য যদি পদ্মা নদীতে আসে তাহলে বাংলাদেশ শেষ। এ ছাড়া বিভিন্ন বাহিনী নদী দখল করছে।
তৃতীয় কারণ দেশের শক্তিশালী ব্যক্তিবর্গ ও কোম্পানি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বেক্সিমকো, বসুন্ধরা, মেঘনা, সামিট এদের প্রভাবের কথা আমরা জানি। সম্পদ লুণ্ঠন, পাচার ও নদী দখলের বিষয় আসলে তাদের নাম চলে আসে।’
বিগত সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা তাদের ক্ষমতার উৎস ছিল মন্তব্য করে তিনি বলেন, সে সরকার তো নাই। এখন তাদের ক্ষমতার উৎসটা কোথায়।
সরকারকে দখল উচ্ছেদে পুরোনো তালিকা ধরে কাজ শুরু করা, বিগত সরকারের আমলে নেওয়া ডেলটা প্ল্যান পর্যালোচনা করা ও জাতিসংঘের পানি আইনে অনুস্বাক্ষরের আহ্বান জানান আনু মুহাম্মদ।
মুখ্য আলোচকের বক্তব্যে নদীরক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান হাওলাদার গত সাত মাসেও কমিশনে কোনো চেয়ারম্যান নিয়োগ না দেওয়ায় সরকারের সমালোচনা করে আনু মুহাম্মদ বলেন, এটা যাঁরা করেছেন, তাঁরা অপরাধ করেছেন।
প্রধান উপদেষ্টা হয়তো বিষয়টি জানেন না। তাঁর তিনটা ভিশনের একটা জিরো কার্বন। জিরো কার্বন মানে পৃথিবীকে দূষণমুক্ত রাখা। নদী না থাকলে দূষণমুক্ত কীভাবে হবে।
মন্ত্রণালয়ে যাঁরা বসে আছেন, তাঁরা দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন বলেন মুজিবুর রহমান। ৫ আগস্টের পরে নদী দখল অপ্রতিরোধ্য গতিতে চলছে বলেন তিনি। নদী রক্ষায় নিয়োজিত সব সংগঠন মিলে ছায়া নদী রক্ষা কমিশন গঠনের আহ্বান জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি ড.
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
জামায়াতের পর এবার সমাবেশে অংশ নিতে বিশেষ ট্রেন ভাড়া ছাত্রদলের
জামায়াতে ইসলামীর পর এবার বিশেষ ট্রেন ভাড়া করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ৩ আগস্ট ছাত্র সমাবেশে অংশ নিতে প্রায় ১০ লাখ টাকার বিনিময়ে চট্টগ্রাম ছাত্রদল ২০ বগির এই বিশেষ ট্রেন ভাড়া করেছে।
জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে মাসব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে ৩ আগস্ট ছাত্র সমাবেশ করবে ছাত্রদল।
এই কর্মসূচিতে অংশ নিতে চট্টগ্রাম নগর ছাত্রদলের পক্ষ থেকে ২০ বগির একটি বিশেষ ট্রেনের জন্য আবেদন করা হয়। ছাত্রদলের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার বিশেষ ট্রেন বরাদ্দ রেলওয়ে। আগামী রোববার সকাল সোয়া ৭টায় চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে এই ট্রেন ছেড়ে যাবে। আর ঢাকায় পৌঁছাবে বেলা সোয়া ১টায়। এই ট্রেন সন্ধ্যা সাতটায় আবার ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছেড়ে আসবে।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, ২০ বগির ট্রেনটিতে ১ হাজার ১২৬টি আসন রয়েছে। বিশেষ ট্রেন পরিচালনার জন্য রেলওয়ের চট্টগ্রাম, ঢাকা বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
রেলওয়ের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা তৌষিয়া আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ছাত্রদলের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রেল ভবনের অনুমোদন সাপেক্ষে বিশেষ ট্রেন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এই কারণে নিয়মিত ট্রেন চলাচলে কোনো সমস্যা হবে না।
চট্টগ্রাম নগর ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক (দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত) সাব্বির আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, এই ট্রেনে চট্টগ্রাম নগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলার প্রায় দেড় হাজার নেতা-কর্মী যাবেন। সবাই একসঙ্গে যেতে চাওয়ায় ট্রেন ভাড়া করেছেন। বাসে হলে তা সম্ভব ছিল না।
এর আগে গত ১৯ জুলাই রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় সমাবেশ করেছিল জামায়াতে ইসলামী। সমাবেশে নেতা-কর্মীদের যাতায়াতের জন্য ময়মনসিংহ, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম থেকে চার জোড়া বিশেষ ট্রেন ভাড়া করে দলটি। এই চার ট্রেন ভাড়া করতে দলটিকে গুনতে হয়েছে প্রায় ৩২ লাখ টাকা।
জামায়াতের ট্রেন ভাড়া করা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে এ বিষয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয় জানায়, বিশেষ ট্রেন পরিচালনায় স্বাভাবিক নিয়মের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি।