জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতির সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বাংলাদেশের নদ-নদীর মরণদশার পেছনে তিনটি কারণ উল্লেখ করে বলেছেন, উজানে দেওয়া ভারতের বাঁধ, দেশের শক্তিশালী ব্যক্তিবর্গ ও কোম্পানির দখল আর সরকারের নেওয়া উন্নয়ন প্রকল্প – এ তিন কারণে বাংলাদেশের নদ–নদী ভয়ংকর বিপদের মধ্যে রয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবসে ‘ধরিত্রীর জন্য আমরা’ (ধরা) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এই তিন কারণের উল্লেখ করেন।

আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘আমরা সবাই জানি কারা নদী দখল করছে, কারা নদীকে শেষ করে দিচ্ছে, আর কী করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘এর মধ্যে আদালত কিছু রায় দিয়েছে। আদালতের রায়ে ২০০৯ সালে নদীরক্ষা কমিশন গঠিত হয়েছিল। মুজিবর রহমান হাওলাদার যখন কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন, তখন তিনি বিশাল ভলিউমে নদীর দখলদারদের তালিকা করেছিলেন। ওটা নদীরক্ষা কাজ শুরুর জন্য একটা সূচনাবিন্দু হতে পারে।’

আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, ‘গত সাত মাস পার হয়েছে। স্বৈরশাসনের প্রধান ব্যক্তি তিনি পালিয়েছেন। গণ-অভ্যুত্থানের পর আমরা শুনি নতুন বাংলাদেশ হবে, স্বাধীন বাংলাদেশ হবে, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ হবে। কিন্তু তার প্রতিফলন অনেক জায়গায় দেখি না৷ নদীর ক্ষেত্রে সেটা একেবারে দেখা যায় না।’

আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, সুনির্দিষ্টভাবে বললে বাংলাদেশের নদী যে ভয়ংকর বিপদের মধ্যে আছে তার কারণ তিনটি। এক, উজানে দেওয়া ভারতের বাঁধ। চীন এখন ব্রহ্মপুত্রে বাঁধ দিচ্ছে। ভাটির দেশ হিসেবে ভারত প্রতিবাদ জানাচ্ছে। এখন তাদের উপলব্ধি হবে ভাটির দেশের সংকটটা কী। ভারতের সঙ্গে নেগোসিয়েশনে কোনো কাজ হচ্ছে না৷ সমাধানের একটা পথ হতে পারে জাতিসংঘের ওয়াটার ট্রিটিতে অনুস্বাক্ষর করা। ভারতকে খুশি করতে বাংলাদেশ যা এত দিন করেনি’, বলেন তিনি।

আনু মুহাম্মদ প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘তখন আওয়ামী লীগ সরকার ছিল। তাই করেনি। এখন সেটা করতে অসুবিধা কোথায়? অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান করণীয় কাজ এটাতে অনুস্বাক্ষর করা।’

সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পকে দ্বিতীয় কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র সুন্দরবনকে শেষ করবে, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র কুহেলিয়া নদীকে শেষ করেছে, রূপপুরের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে যদি বর্জ্য যদি পদ্মা নদীতে আসে তাহলে বাংলাদেশ শেষ। এ ছাড়া বিভিন্ন বাহিনী নদী দখল করছে।

তৃতীয় কারণ দেশের শক্তিশালী ব্যক্তিবর্গ ও কোম্পানি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বেক্সিমকো, বসুন্ধরা, মেঘনা, সামিট এদের প্রভাবের কথা আমরা জানি। সম্পদ লুণ্ঠন, পাচার ও নদী দখলের বিষয় আসলে তাদের নাম চলে আসে।’

বিগত সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা তাদের ক্ষমতার উৎস ছিল মন্তব্য করে তিনি বলেন, সে সরকার তো নাই। এখন তাদের ক্ষমতার উৎসটা কোথায়।

সরকারকে দখল উচ্ছেদে পুরোনো তালিকা ধরে কাজ শুরু করা, বিগত সরকারের আমলে নেওয়া ডেলটা প্ল্যান পর্যালোচনা করা ও জাতিসংঘের পানি আইনে অনুস্বাক্ষরের আহ্বান জানান আনু মুহাম্মদ।

মুখ্য আলোচকের বক্তব্যে নদীরক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান হাওলাদার গত সাত মাসেও কমিশনে কোনো চেয়ারম্যান নিয়োগ না দেওয়ায় সরকারের সমালোচনা করে আনু মুহাম্মদ বলেন, এটা যাঁরা করেছেন, তাঁরা অপরাধ করেছেন।

প্রধান উপদেষ্টা হয়তো বিষয়টি জানেন না। তাঁর তিনটা ভিশনের একটা জিরো কার্বন। জিরো কার্বন মানে পৃথিবীকে দূষণমুক্ত রাখা। নদী না থাকলে দূষণমুক্ত কীভাবে হবে।

মন্ত্রণালয়ে যাঁরা বসে আছেন, তাঁরা দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন বলেন মুজিবুর রহমান। ৫ আগস্টের পরে নদী দখল অপ্রতিরোধ্য গতিতে চলছে বলেন তিনি। নদী রক্ষায় নিয়োজিত সব সংগঠন মিলে ছায়া নদী রক্ষা কমিশন গঠনের আহ্বান জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি ড.

আদিল খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং ও ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোশাহিদা সুলতানা। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ধরার সদস্য সচিব শরীফ জামিল।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম হ ম মদ সরক র র

এছাড়াও পড়ুন:

ইসরায়েলে ফের ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়লো ইরান

ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান। রবিবার মধ্যরাতে ইসরায়েলজুড়ে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালানোর পর, সোমবার (১৬ জুন) ভোর হতে না হতেই দ্বিতীয় দফায় ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে তেহরান।সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলে ইরানের এটি দশম আক্রমণ।

টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, সোমবার ভোরে ইরান নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার পরপরই ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) হোম ফ্রন্ট কমান্ড সাধারণ ইসরায়েলিদের বোমা শেল্টার ও আশ্রয়কেন্দ্রে প্রবেশের নির্দেশ দিয়েছে।

তেহরান টাইমস জানিয়েছে, রবিবার রাতে ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের বন্দরনগরী হাইফায় সরাসরি আঘাত হানে। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের কঠোর সেন্সরশিপ সত্ত্বেও, অনলাইনে প্রচারিত ফুটেজে হাইফায় একটি বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্র আগুনে পুড়ে গেছে বলে দেখা গেছে। অঞ্চল জুড়ে ব্যাপক বিদ্যুৎ বিভ্রাটের খবর পাওয়া গেছে। তেল আবিবের একাধিক স্থানও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। 

আরো পড়ুন:

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইসরায়েলের হামলা

ইসরায়েলের নতুন হামলায় ইরানের আইআরজিসির গোয়েন্দা প্রধান নিহত

রবিবার রাতে ইরান ইসরায়েলের নেগেভ মরুভূমি এবং কিরিয়াত গাটের কৌশলগত স্থানগুলোর পাশাপাশি হাইফার অন্যান্য অঞ্চলগুলোকেও লক্ষ্যবস্তু করেছে। এতে ইসরায়েলের সামরিক ও অর্থনৈতিক অবকাঠামোর উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছে তেহরান।

আগের দিনগুলোতে, ইরান ইসরায়েলের বৃহত্তম তেল শোধনাগার এবং ১৫০টিরও বেশি সামরিক ও গোয়েন্দা স্থাপনায় হামলা চালানোর দাবি করেছে।

শুক্রবার ভোরে তেহরানের আবাসিক ভবন ও পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে ইসরায়েলের ব্যাপক হামলা চালানোর পর ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়।

তেহরান জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৭ জন ইরানি সামরিক কর্মকর্তা, ৯ জন পরমাণু বিজ্ঞানী এবং ২২০ জনেরও বেশি ইরানি বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন।

ইরান ইসরায়েলকে ‘অসহায়’ না করা পর্যন্ত আক্রমণ চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ