রামগড় স্থলবন্দর চালু না হওয়ায় ২৭৫ কোটি টাকার অবকাঠামো অবহেলায় পড়ে আছে। স্থলবন্দরে রয়েছে ১২ হাজার বর্গফুট আয়তনের আন্তর্জাতিক যাত্রী টার্মিনাল। রয়েছে সীমানাপ্রাচীর, ওয়্যারহাউস, অফিস ভবন, ট্রান্সশিপমেন্ট শেডসহ বিভিন্ন অবকাঠামো। বিশ্বব্যাংক ও সরকারের যৌথ অর্থায়নে বাংলাদেশ রিজিওনাল কানেকটিভিটি প্রকল্প-১ এর আওতায় ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে এসব অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। প্রায় ৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে অধিগ্রহণ করা হয়েছে ১০ একর জমি। ট্রান্সশিপমেন্টের আওতায় চট্টগ্রাম বন্দরে আসা পণ্য এ স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে যাওয়ার সুবিধার্থে এ বন্দর নির্মাণ করে সরকার। আলোচিত ফেনী নদীর ওপর রামগড়-সাবরুম এলাকায় সেতুও নির্মাণ করেছে ভারত।
স্থলবন্দর চালু না হওয়ায় চার বছর ধরে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অলস সময় পার করছেন। তাদের কোনো কাজ নেই। বসে বসে বেতন ভাতা নিচ্ছেন তারা।
বর্তমানে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের নিয়োগ করা পাঁচজন কর্মকর্তা-কর্মচারী, আউটসোর্সিংয়ে চারজন সিকিউরিটি গার্ড ও পরিচ্ছন্নকর্মী এবং একজন ট্রাফিক পুলিশ ইন্সপেক্টর কর্মরত রয়েছেন। এছাড়াও, সড়ক ও জনপথ বিভাগের রোড লোড স্কেল প্রকল্পে ১৩ জন আনসার সদস্য নিয়োজিত আছেন। তাদেরও কোনো কাজ নেই।
স্থলবন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো.
জানা যায়, ২০২২ সালের আগস্টে বন্দর ইনচার্জ, ট্রাফিক ইন্সপেক্টরসহ বিভিন্ন পদে লোকবল নিয়োগ দেয় স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ। ২০২৩ সালের নভেম্বরে পোস্টিং দেওয়া হয় কাস্টমসের একজন সহকারী কমিশনার, একজন রাজস্ব কর্মকর্তা, একজন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ও দুইজন সিপাহি। একই বছর পোস্টিং দেওয়া হয় পুলিশের একজন ট্রাফিক ইন্সপেক্টর।
রামগড় বন্দর ইনচার্জ মো. আমান উল্লাহ বলেন, ‘বর্তমানে আমি ছাড়াও দুইজন বন্দর ট্রাফিক ইন্সপেক্টর, একজন ওয়্যারহাউস সুপারিনটেনডেন্ট, একজন কম্পিউটার অপারেটর, পাঁচজন নিরাপত্তা প্রহরী ও তিনজন পরিচ্ছন্নকর্মী কর্মরত আছেন। ২০২৪ সালের মে মাসে এখানে যোগ দিয়েছি। এর আগে আরও দুইজন বন্দর ইনচার্জ এখানে যোগ দেওয়ার কয়েক মাস পর অন্যত্র বদলি হয়ে গেছেন। এখানে কোনো কাজকর্ম নেই। অলস সময় কাটছে আমাদের।’
রামগড় ৪৩ বিজিবি ব্যাটালিয়নের সহকারী পরিচালক রাজু আহমেদ জানান, বন্দরে বিজিবি আইসিপি ও মৈত্রী সেতুর চেক পোস্টে আটজন বিজিবি সদস্য নিয়োজিত
আছেন। আইসিপিতে কোন কাজ না থাকলেও রুটিন ডিউটি চলছে। তবে মৈত্রী সেতুর চেক পোস্টে সীমান্ত নিরাপত্তায় সার্বক্ষণিক নিয়োজিত থাকে বিজিবি।’
বন্দরের পণ্যবাহী যানবাহনের ওজন পরিমাপের জন্য প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে জাইকা নির্মিত এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রক স্কেল প্রকল্পে ১৩ জন আনসার সদস্য নিয়োজিত আছেন। কর্মরত আনসারের প্লাটুন কমান্ডার মো. আবুল হাশেম বলেন, ‘গত বছরের জুন মাসে আমাদের পোস্টিং দেয়া হয়। আমরা শুধুমাত্র প্রকল্পের নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত আছি।’
বর্তমান সরকার রামগড় স্থলবন্দরের কার্যক্রম চালুর ব্যাপারে এখনও কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি। গত ১২ জানুয়ারি নৌ পরিবহন, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন রামগড় স্থলবন্দর পরিদর্শন করেন। এরপর বন্দর চালু হলে লাভ-ক্ষতি কী হতে পারে তা নিরূপণের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি সরেজমিনে পরিদর্শন করে প্রতিবেদন পেশ করার পর বন্দরটি চালু কারার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান নৌ উপদেষ্টা। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে নৌপরিবহন উপদেষ্টার কাছে কমিটির পক্ষ থেকে প্রতিবেদন দেয়ার কথা।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: কর মকর ত র মগড় স প রকল প অবক ঠ ম
এছাড়াও পড়ুন:
স্কিন ব্যাংকে পর্যাপ্ত ত্বক থাকলে ৪০ শতাংশের বেশি দগ্ধ রোগীকেও বাঁচানো যায়
রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তে হতাহত হওয়ার ঘটনার পর দেশের একমাত্র স্কিন ব্যাংকের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে এ ব্যাংকের অবস্থান। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মাইলস্টোনের ঘটনার পর অনেকেই স্কিন (চামড়া বা ত্বক) দান করার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করে ইনস্টিটিউটে যোগাযোগ করছেন। স্কিন ব্যাংকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্বক থাকলে ৪০ শতাংশের বেশি পুড়ে যাওয়া রোগীকেও বাঁচানো সম্ভব।
২১ জুলাই দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। গত সোমবার রাত ১০টায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ৩৪ জন মারা গেছে। আর সোমবার বিকেল পর্যন্ত বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি ৪৫ জন। তাদের মধ্যে বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি ৩৩ জন।
দেশে স্কিন ব্যাংকের যাত্রা শুরুর পর দান করা ত্বক ব্যবহার করে ১০ জন দগ্ধ রোগীর চিকিৎসা করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৯ জনই বেঁচে গেছেন। শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা থাকায় একজন মারা গেছেন।জীবিত ব্যক্তির শরীর থেকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় সংগ্রহ করা ত্বক মারাত্মকভাবে দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া যে কেউ চাইলে মরণোত্তর ত্বক দান করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে দাতার মৃত্যুর পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মরদেহ থেকে ত্বক সংগ্রহ করা হয়। পরে সেই ত্বক দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়।
ওজন কমানোসহ কিছু প্লাস্টিক সার্জারির পর বেঁচে যাওয়া ত্বক সংরক্ষণ করার মধ্য দিয়ে দেশের একমাত্র স্কিন ব্যাংকটি যাত্রা শুরু করে। আগে এ ধরনের অস্ত্রোপচারের পর বাড়তি ত্বক ফেলে দেওয়া হতো।
স্কিন ব্যাংকের সমন্বয়কারী ও জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মাহবুব হাসান প্রথম আলোকে বলেন, মাইলস্টোনের ঘটনার পর ত্বকদানের বিষয়ে মানুষের মধ্যে আগ্রহ বেড়েছে; বিশেষত অনেক নারী আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। এখন পর্যন্ত শতাধিক মানুষ এ বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করে যোগাযোগ করেছেন।
তবে সমস্যা হলো, আগ্রহী ব্যক্তিদের বেশির ভাগ চাইছেন, মাইলস্টোনের ঘটনায় দগ্ধ শিক্ষার্থীদের শরীরে যাতে তাঁদের দান করা ত্বক ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এটা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয় যে প্রক্রিয়া শেষে কার দান করা ত্বক কার শরীরে ব্যবহার করা হবে। এ ছাড়া ত্বক দান করার ক্ষেত্রে স্ক্রিনিংসহ পুরো প্রক্রিয়া শুনে অনেকে আর আগ্রহ দেখাননি। এখন পর্যন্ত যাঁরা যোগাযোগ করেছেন, তাঁদের মধ্যে ১৫ থেকে ১৬ জন ত্বক দান করতে চেয়েছেন বলে জানান চিকিৎসক মাহবুব হাসান।
ভবিষ্যতে দগ্ধ রোগীর চিকিৎসায় ত্বক সংরক্ষণ করে রাখতে হয়। ত্বক সংগ্রহের পর বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তরল নাইট্রোজেনে ডুবিয়ে মাইনাস ৯০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়। তাহলে সেই ত্বক পাঁচ বছর পর্যন্ত ভালো থাকে।মাহবুব হাসান, জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক।৩ জুলাই মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত হয় পঞ্চম আন্তর্জাতিক দগ্ধ ও আঘাতপ্রাপ্তদের সম্মেলন। এই সম্মেলনে ‘এস্টাবলিশমেন্ট অব ফার্স্ট স্কিন ব্যাংক ইন বাংলাদেশ: দ্য ওয়ে অব ওভার কামিং দ্য চ্যালেঞ্জেস’ শিরোনামের বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মাহবুব হাসান। প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়, দেশে স্কিন ব্যাংকের যাত্রা শুরুর পর দান করা ত্বক ব্যবহার করে ১০ জন দগ্ধ রোগীর চিকিৎসা করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৯ জনই বেঁচে গেছেন। আর শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা থাকায় একজন মারা গেছেন।
আপাতত রেজিস্ট্রেশন ও স্ক্রিনিংদেশের একমাত্র স্কিন ব্যাংক উদ্বোধন করা হয় গত ৯ জানুয়ারি। তবে গত ২০ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু হয়। ব্যাংকটিতে কারিগরি সহায়তা দিয়েছে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতাল। বর্তমানে এই ব্যাংকে দুজন চিকিৎসক ও একজন নার্স দায়িত্ব পালন করছেন।
স্কিন ব্যাংক যাত্রা শুরুর পর মোট ১৪ হাজার ৫০০ সেন্টিমিটার স্কয়ার ত্বক সংরক্ষণ করা হয়েছিল। মাইলস্টোনের ঘটনার আগপর্যন্ত ৯ হাজার সেন্টিমিটার স্কয়ার ত্বক ব্যাংকে ছিল। মাইলস্টোনের ঘটনায় দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসায় গত রোববার পর্যন্ত এ ব্যাংক থেকে সাড়ে ৩ হাজার সেন্টিমিটার স্কয়ার ত্বক ব্যবহার করা হয়েছে।
স্কিন ব্যাংক যাত্রা শুরুর পর মোট ১৪ হাজার ৫০০ সেন্টিমিটার স্কয়ার ত্বক সংরক্ষণ করা হয়েছিল। মাইলস্টোনের ঘটনার আগপর্যন্ত ৯ হাজার সেন্টিমিটার স্কয়ার ত্বক ছিল। মাইলস্টোনের ঘটনায় দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসায় গত রোববার পর্যন্ত এ ব্যাংক থেকে সাড়ে তিন হাজার সেন্টিমিটার স্কয়ার ত্বক ব্যবহার করা হয়েছে।মাইলস্টোনের ঘটনার পর ত্বকদানের বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ আলোচনা হচ্ছে। ত্বকদানের আহ্বান জানিয়ে অনেকেই পোস্ট দিচ্ছেন। তবে কিছু কিছু ভুল তথ্যও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছে।
আরও পড়ুনস্কিন ব্যাংক চালু হলো বাংলাদেশে, দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসায় নতুন দিগন্ত২৫ জুলাই ২০২৫মাইলস্টোনের ঘটনার পর জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের পরিচালক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, অনেকেই ত্বক দান করতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। তবে স্কিন ব্যাংকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্বক সংরক্ষিত আছে।
এ বিষয়ে চিকিৎসক মাহবুব হাসান বলেন, এ মুহূর্তে ত্বকদানে আগ্রহী ব্যক্তিদের রেজিস্ট্রেশন আর স্ক্রিনিং করে রাখার বিষয়ে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে, যাতে জরুরি প্রয়োজনে তাঁদের কাছ থেকে ত্বক সংগ্রহ করা যায়।
সংগ্রহ করা ত্বক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তরল নাইট্রোজেনে ডুবিয়ে মাইনাস ৯০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখলে পাঁচ বছর পর্যন্ত ভালো থাকে