হবিগঞ্জ মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ
Published: 15th, March 2025 GMT
হবিগঞ্জ সরকারি মেডিকেল কলেজ মানহীন দেখিয়ে অন্য স্থানে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন ও সমাবেশ করা হয়েছে। আজ শনিবার দুপুরে মেডিকেল কলেজটির শিক্ষার্থীরা শহরের প্রধান সড়কে (হবিগঞ্জ মেডিকেল কলেজের সামনে) এই কর্মসূচি পালন করেন। এ সময় সড়কে কিছু সময়ের জন্য যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলন করে তাঁদের দাবির কথা তুলে ধরেন।
সমাবেশে বক্তব্য দেন মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী মো.                
      
				
বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ শেষে শিক্ষার্থীরা একই দাবিতে মেডিকেল কলেজের হলরুমে সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আবুল হাসান বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি, দেশের ২৬টি মেডিকেল কলেজকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মানহীন দেখিয়ে পাশের অন্য মেডিকেল কলেজের সঙ্গে যুক্ত করার পরিকল্পনা করেছে। সেই ২৬টি কলেজের মধ্যে হবিগঞ্জ কলেজকে অন্যত্র সরানোর ষড়যন্ত্র চলছে। একজন দক্ষ চিকিৎসক তৈরির জন্য প্রথমেই প্রয়োজন দক্ষ শিক্ষক, প্রয়োজনীয় মেডিকেল যন্ত্রপাতি এবং হাতে–কলমে শেখার জন্য প্রয়োজনীয় রোগী ও পযাপ্ত রোগী। এর সবই আছে এ মেডিকেল কলেজের। শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩০০ জন। শিক্ষক আছেন ৫৫ জন। প্রতি ৬ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে একজন দক্ষ শিক্ষক আছেন।’
আবুল হাসান আরও বলেন, এ কলেজ থেকে দুটি ব্যাচে ডাক্তারি পড়াশোনা শেষ করে বের হয়েছেন শতাধিক শিক্ষার্থী। তাঁদের শিক্ষার ফল খুবই মানসম্পন্ন। হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা হাসপাতাল ভবনে মেডিকেল কলেজটির অস্থায়ী ক্যাম্পাস থাকায় প্রতিদিন হাসপাতালে আসা সহস্রাধিক রোগীকে কলেজের শিক্ষার্থীরা সেবা দিয়ে আসছেন। এতে হবিগঞ্জ জেলার ৩০ লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার নির্ভরতা তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় এই মেডিকেল কলেজকে অন্য স্থানে সরিয়ে নেওয়া বা অন্য কোনো কলেজের সঙ্গে যুক্ত করার যে ষড়যন্ত্র চলছে, তা এ কলেজের শিক্ষার্থীরা কোনোভাবেই মেনে নেবেন না।
হবিগঞ্জ মেডিকেল কলেজ ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠা হয়। ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে এ কলেজে তিন শতাধিক শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন। হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যার জেলা সদর হাসপাতালের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলার কয়েকটি কক্ষ নিয়ে হবিগঞ্জ মেডিকেল কলেজের কার্যক্রম চলছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কল জ র শ ক ষ র থ ম ড ক ল কল জ র কল জ র স এ কল জ র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
নামতে গেলেই চালক বাস টান দিচ্ছিলেন, পরে লাফিয়ে নামেন
‘“এ সকল নষ্ট মাইয়াদের জন্য বাসের পরিবেশ নষ্ট হয়ে যায়। যা যা বাস থেকে নেমে যা নষ্ট মাইয়াছেলে”—বাস কন্ডাক্টরের এই মন্তব্য শোনার পর নিজের ওপর আর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারিনি।’ কথাগুলো বলছিলেন বাসে হেনস্তার শিকার ওই তরুণী। আজ প্রথম আলোর সঙ্গে মুঠোফোনে দীর্ঘ আলাপে তিনি সেদিনের ঘটনার আদ্যোপান্ত জানান। বললেন, ঘটনার সময় বাসে একজন মানুষও প্রতিবাদ না করায় কষ্ট পেয়েছেন। যিনি এ ঘটনার ভিডিও করেছিলেন, তাঁর কাছ থেকেও কটু কথা শুনতে হয়েছিল। এমনকি তিনি বাস থেকে নামতে গিয়েও পারছিলেন না। যতবার নামার চেষ্টা করেন, চালক বাস টান দিচ্ছিলেন।
তবে দৃঢ়তার সঙ্গে এই তরুণী জানিয়েছেন, এই হেনস্তার ঘটনা তাঁকে দমিয়ে রাখতে পারবে না। তিনি প্রতিবাদ করে যাবেন।
জুতা হাতে বাস কন্ডাক্টরের আচরণের প্রতিবাদ জানানোর ওই ঘটনা ঘটে গত ২৭ অক্টোবর। বাসের এক ব্যক্তি ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করলে তা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। গত বৃহস্পতিবার রমজান পরিবহন নামের বাসের হেনস্তাকারী কন্ডাক্টর নিজাম উদ্দিনকে (৪৫) গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় তরুণীর এজাহারের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্র বাদী হয়ে গতকাল শুক্রবার মামলা করে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০ ধারায় (যৌন নিপীড়নের অভিযোগ) মামলাটি করা হয়েছে।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছিল, বাসের সামনের আসনে বসা এক ব্যক্তির কোনো একটি মন্তব্য নিয়ে এক তরুণী তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়লেন। তিনি তেড়ে যান লোকটির দিকে। ওই সময় লোকটি আসন ছেড়ে উঠে তরুণীকে চড় মারেন। একপর্যায়ে দুজন জুতা খুলে দুজনের দিকে তুলে ধরেন। সে সময় ওই ব্যক্তি তরুণীকে আঘাত করেন এবং ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। ওই ব্যক্তি এরপর বারবার তরুণীর গায়ে ধাক্কা মারেন ও আঘাত করার চেষ্টা করেন। তরুণী চিৎকার করে বলছিলেন, ‘তুই আমার পোশাক তুলে কেন কথা বলবি?’ এ সময় সামনের দিকে থাকা দুই নারী ও একজন পুরুষ যাত্রী ছাড়া আর কেউ আঘাত করা ব্যক্তিটিকে থামানোর চেষ্টা করেননি, প্রতিবাদ করেননি।
ওই তরুণী প্রথম আলোকে জানান, তাঁর মা–বাবা ও ভাই–বোনরা চাঁদপুরে থাকেন। বাবার দোকান রয়েছে। ভাই–বোনদের মধ্যে তিনি সবার বড়। চাঁদপুর থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পর এখন ঢাকায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে পড়ছেন। পড়াশোনার খরচ চালানোর পাশাপাশি বাবাকে সহায়তা করতে নিজেও টুকটাক কাজ করেন। হাতের কাজ, ছবি আঁকার কাজ করেন, টেলিভিশন চ্যানেলে মাঝেমধ্যে কিছু অনুষ্ঠান উপস্থাপনাও করেন। রাজধানীর বছিলা এলাকায় কয়েকজন মিলে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকেন।
‘শুরুতে আমি উত্তেজিত হইনি’
সেদিনের ঘটনা বলতে গিয়ে তরুণী বলেন, তিনি মুঠোফোন ঠিক করতে হাতিরপুলে মোতালিব প্লাজায় গিয়েছিলেন। বাসায় ফেরার জন্য সেখান থেকে ধানমন্ডি–১৫ নম্বর বাসস্ট্যান্ডে আসেন এবং রমজান পরিবহনের ওই বাসটিতে ওঠেন। তখন বেলা দুইটা কি আড়াইটা। তিনি বাসে উঠে মাঝামাঝি জায়গায় একটি আসনে বসেন। বাস কন্ডাক্টর তাঁর কাছে এসে ভাড়া চাইলে ‘স্টুডেন্ট’ (শিক্ষার্থী) জানিয়ে তিনি অর্ধেক ভাড়া দেন। তরুণী দাবি করেন, বাস কন্ডাক্টর তখন বলে ওঠেন, ‘চেহারা আর পোশাক দেখলে তো মনে হয় না স্টুডেন্ট!’ তখন তিনি রাগ হলেও কন্ডাক্টরকে ‘আপনি’ বলে সম্বোধন করে বলেন, ‘স্টুডেন্টের সঙ্গে পোশাকের কী সম্পর্ক? আপনি এসব কী ধরনের কথা বলছেন? ওই সময় কিছুটা কথা-কাটাকাটি হয়। শুরুতে আমি উত্তেজিত হইনি।’
রাজধানীর বছিলায় বাসের মধ্যে পোশাক নিয়ে কটূক্তির সাহসী প্রতিবাদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণীর প্রশংসা করে এমন চিত্র ফেসবুকে পোস্ট করা হয়েছে