টঙ্গীতে ওয়ালটনের এক্সক্লুসিভ শোরুম উদ্বোধন
Published: 17th, March 2025 GMT
ঢাকার টঙ্গী স্টেশন রোডে যাত্রা শুরু করেছে ইলেকট্রনিক্স জায়ান্ট ওয়ালটনের এক্সক্লুসিভ পরিবেশক শোরুম ‘ক্যাপিটা ইলেকট্রনিক্স’।
এ শোরুমে পাওয়া যাচ্ছে ওয়ালটন ব্র্যান্ডের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও ফিচারের ব্যাপক বিদ্যুৎসাশ্রয়ী ফ্রিজ, টিভি, এসি, ওয়াশিং মেশিন, ফ্যান, রাইস কুকার, ব্লেন্ডার, ওভেন, এলইডি লাইট, ল্যাপটপ, কম্পিউটার, মোবাইল ফোনসহ ইলেকট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিক্স, আইসিটি, হোম ও কিচেন অ্যাপ্লায়েন্স পণ্য।
গত ৯ মার্চ, ২০২৫ বিকেলে ক্যাপিটা ইন্টারন্যাশনাল টাইমস স্কয়ারে ফিতা কেটে আনুষ্ঠানিকভাবে ওয়ালটনের এক্সক্লুসিভ শোরুম উদ্বোধন করেন চিত্রনায়ক আমিন খান।
এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ওয়ালটনের অ্যাডিশনাল ম্যানেজিং ডিরেক্টর নজরুল ইসলাম সরকার ও ইভা রিজওয়ানা, ক্যাপিটা গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক মাহিরা হুসাইন খান ও চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার ক্যাপ্টেন এ এস এম আক্তার হাসান, ওয়ালটনের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর আহমেদ আসিফুর রহমান, অ্যাডিশনাল অপারেটিভ ডিরেক্টর (ব্র্যান্ডিং ইনাচার্জ) মাহাবুবুল হাসান মিলটন, সিনিয়র ডেপুটি অপারেটিভ ডিরেক্টর মিরাজুল হক মিনাসহ উভয় প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
অনুষ্ঠানে আমিন খান বলেন, টঙ্গীতে ক্যাপিটা ইলেকট্রনিক্স শোরুমটি আধুনিক পরিবেশে তৈরি করা হয়েছে। এ শোরুম প্রমাণ করে ওয়ালটন সত্যিকার অর্থে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিশ্বমানের পণ্য তৈরি করছে। নতুন শোরুমে ক্রেতাদের জন্য আধুনিক এবং উন্নত মানের কেনাকাটার অভিজ্ঞতা দেবে।
তিনি আরো বলেন, ওয়ালটন এখন দেশের গর্বের প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। ক্রেতারা দেশে তৈরি পণ্য গ্রহণ করছেন বলেই ওয়ালটন আজ এত বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠেছে। দেশে ইলেকট্রনিক্স পণ্যের চাহিদা মিটিয়ে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ট্যাগযুক্ত ওয়ালটনের পণ্য এখন ৪০টির বেশি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। এ এলাকায় নতুন শোরুমের মাধ্যমে ওয়ালটনের ব্যবসায়িক পরিধি আরো বাড়বে।
ক্যাপিটা গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক মাহিরা হুসাইন খান বলেন, আন্তর্জাতিক মানের পণ্য ও সেবা প্রদানের মাধ্যমে ওয়ালটন আজ বাংলাদেশের সর্বাধিক জনপ্রিয় ও বিশ্বস্ত ব্র্যান্ড। ওয়ালটনের সঙ্গে ব্যবসায় যুক্ত হয়ে আমরা আনন্দিত। আমাদের প্রত্যাশা, আমরা সফলতা পাব। নতুন এ শোরুম থেকে এ এলাকার মানুষ এখন আরো সহজেই ওয়ালটনের পণ্য ও সেবা পাবেন। এখানকার প্রতিটি ঘরে স্থান পাবে দেশে তৈরি ওয়ালটনের পণ্য।
ঢাকা/একরাম/রফিক
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধের আরও ২০০ মিটার বিলীন
পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধের আরও ২০০ মিটার অংশ পদ্মায় বিলীন হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ও গতকাল শুক্রবার বাঁধটির ওই অংশ নদীতে বিলীন হয়। এ সময় নদীগর্ভে চলে গেছে বাঁধের পাশে থাকা ২০টি বসতবাড়ি। আর ভাঙন আতঙ্কে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে ৫০টি বাড়ির বসতঘর ও বিভিন্ন স্থাপনা। এ নিয়ে ৬ দফায় বাঁধটির ৮০০ মিটার পদ্মায় বিলীন হয়ে গেল।
ভাঙন রোধে গত তিন মাসে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উদ্যোগে ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১ লাখ ৫৫ হাজার বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছিল। ভাঙনের কারণে তা–ও নদীতে তলিয়ে গেছে। বাঁধের ওই ৮০০ মিটার অংশের পাশে থাকা ৩৩টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ৫০টি বসতবাড়ি গত দুই মাসে বিলীন হয়েছে। ভাঙন বৃদ্ধি পাওয়ায় তিনটি গ্রামের ৬০০ পরিবার এবং মঙ্গল মাঝি-সাত্তার মাদবর ঘাট ও বাজারের ২৪০টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ঝুঁকিতে পড়েছে।
শরীয়তপুর পাউবো ও স্থানীয় সূত্র জানা যায়, শরীয়তপুরের পদ্মা নদীর অংশ জাজিরার নাওডোবা এলাকা থেকে শুরু হয়েছে। পদ্মা সেতু নাওডোবার ওপর দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে পদ্মা নদীর ৫০০ মিটারের মধ্যে সার্ভিস এরিয়া ২, সেনানিবাস, পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানাসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। এসব অবকাঠামো নির্মাণের জন্য যখন জমি অধিগ্রহণ করা হয়, তখন ২০১২ সালের দিকে নাওডোবা এলাকায় পদ্মার ভাঙন শুরু হয়। পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা নদীভাঙনের কবল থেকে রক্ষা করার জন্য তখন সেতু থেকে ভাটির দিকে (পূর্ব দিকে) দুই কিলোমিটার এলাকায় ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নদীর তীররক্ষা বাঁধ নির্মাণ করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। ওই বাঁধের পাশে (দক্ষিণ দিকে) আলাম খাঁরকান্দি, ওছিম উদ্দিন মাদবরকান্দি, উকিল উদ্দিন মুন্সিকান্দি এবং মঙ্গল মাঝি-সাত্তার মাদবর ঘাট ও বাজার অবস্থিত।
পাউবো সূত্র বলছে, গত বছর নভেম্বর মাসে জাজিরার নাওডোবা জিরো পয়েন্ট এলাকায় পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধের ১০০ মিটার অংশে ভাঙন দেখা দেয়। এরপর এ বছর ৭ জুন আবার বাঁধের ১০০ মিটার, ৭ জুলাই ২০০ মিটার, ৯ জুলাই ১০০ মিটার, ২৩ জুলাই ১০০ মিটার অংশ ভেঙে নদীতে ধসে পড়ে। বৃহস্পতি ও শুক্রবার ওই বাঁধের আরও ২০০ মিটার অংশ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন ঠেকাতে অস্থায়ী ভিত্তিতে ৬০০ মিটার অংশে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলছে পাউবো। এ পর্যন্ত ওই এলাকায় ১ লাখ ৫৫ হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। তাতে ব্যয় হয়েছে ৭ কোটি টাকা। তাও কোনো কাজে লাগেনি। ভাঙনের কারণে ওই জিও ব্যাগগুলো নদীতে তলিয়ে গেছে। ওই এলাকা দিয়ে নদী অন্তত ১০০ মিটার হতে ১৫০ মিটার ভেতরে (দক্ষিণ দিকে) প্রবেশ করেছে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে পদ্মার ভাঙনে আলম খাঁরকান্দি এলাকার আবুল বাশার মাদবরের দুটি ঘরসহ বসতবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। ঘরের অবশিষ্ট জিনিসপত্র তিনি সড়কের পাশে স্তূপ করে রেখেছেন। আবুল বাশার প্রথম আলোকে বলেন, ‘পদ্মা তীরে বাড়ি হওয়ায় তিন দফা ভাঙনের কবলে পড়েছি। পদ্মা সেতু নির্মাণের সময় বাড়ির সঙ্গে বাঁধটি হওয়ায় ভেবেছিলাম আর কখনো ভাঙনে নিঃস্ব হতে হবে না। কিন্তু তা আর হলো না, আমার সব শেষ। এখন বেঁচে থাকার জন্য আর কিছুই রইল না। উদ্বাস্তু হয়ে রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছি।’
ভাঙন আতঙ্কে গতকাল শুক্র ও আজ শনিবার তিনটি গ্রামের ৫০টি বসতবাড়ির বিভিন্ন স্থাপনা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আলী হোসেন মাদবর নামের একজন শনিবার সকাল থেকে দুটি বসতঘর ভেঙে মালামাল সরাচ্ছিলেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘ভাঙনের কারণে একটু দুশ্চিন্তায় ছিলাম। রাতে আতঙ্কে ঘুমাতে পারতাম না। এখন আর পদ্মা পারে থাকতেই পারলাম না। বাপ-দাদার ভিটেমাটি ফেলে ঘর নিয়ে চলে যাচ্ছি। জানি না কোথায় গিয়ে আশ্রয় নেব।’
শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তারেক হাসান প্রথম আলোকে জানান, নদীতে অনেক স্রোত। ভাঙন ঠেকাতে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে, তাতেও কোনো কাজ হচ্ছে না। ভাঙনের কারণে বালুভর্তি জিও ব্যাগ নদীতে তলিয়ে যাচ্ছে। জাজিরার ওই স্থানে স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণ করা হবে। সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক তাহসিনা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘নদীভাঙনের শিকার হয়ে মানুষ নিঃস্ব হচ্ছে, এটা কষ্টদায়ক। আমরা ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের ঘর নির্মাণের জন্য টিন, নগদ টাকা ও খাদ্য সহায়তা দিয়েছি। যাঁরা ভিটেমাটি হারিয়ে একেবারে নিঃস্ব হয়েছেন, তাঁদের পুনর্বাসন করার জন্য খাসজমি খোঁজা হচ্ছে। সেই জমিতে তাঁদের ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হবে।’