গত বছরের আগস্টে দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিদেশ থেকে প্রবাসী আয় আসা ও অন্য দেশে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরবির্তন এসেছে। তবে প্রবাসী আয় আনা ও বাংলাদেশিদের বিদেশে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার যুক্তরাষ্ট্রনির্ভর হয়ে পড়েছে।

প্রবাসী আয় ও ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারসংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে এই তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী সর্বশেষ ফেব্রুয়ারিতে দেশে প্রবাসী আয়ের প্রধান উৎস ছিল যুক্তরাষ্ট্র। এ মাসে দেশটি থেকে সর্বোচ্চ ৪৯ কোটি মার্কিন ডলারের প্রবাসী আয় এসেছে। গত আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকে পেছনে ফেলে প্রবাসী আয়ের শীর্ষ উৎস হিসেবে উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র। একইভাবে বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশিদের ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহারও সবচেয়ে বেশি হয় সে দেশে। গত জানুয়ারিতে দেশটিতে ক্রেডিট কার্ডে বাংলাদেশিরা সর্বোচ্চ ৬৯ কোটি টাকা খরচ করেছেন। অথচ ২০২৪ সালের জুনেও বাংলাদেশিরা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে সবচেয়ে বেশি অর্থ খরচ করতেন প্রতিবেশী ভারতে। সে মাসে ভারতে বাংলাদেশিরা ক্রেডিট কার্ডে খরচ করেছিলেন ৯২ কোটি টাকা। ওই মাসে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ডে খরচ হয়েছিল ৭৭ কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের ক্ষেত্রে ছয় মাসের ব্যবধানে ভারত শীর্ষ স্থান থেকে নেমে এসেছে ষষ্ঠ স্থানে। অর্থাৎ ছয় মাসে পাঁচ ধাপ নিচে নেমে গেছে দেশটি। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আগস্টে দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বাংলাদেশিদের ভিসা প্রদানের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করে ভারত। তাতে ভ্রমণ ও চিকিৎসার প্রয়োজনে বাংলাদেশিদের ভারত যাত্রা উল্লেখযোগ্য হারে কমে যায়। এর প্রভাব পড়েছে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে। চিকিৎসা ও ভ্রমণের ক্ষেত্রে ভারতের বড় বিকল্প হয়ে উঠেছে থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়া। এ কারণে থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় এখন বাংলাদেশিদের ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার দ্রুত বাড়ছে।

— বিদেশে জানুয়ারিতে মোট খরচ হয় ৪৪৬ কোটি টাকা, যা ডিসেম্বরে ছিল ৪৯২ কোটি টাকা।
— যুক্তরাষ্ট্র, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও যুক্তরাজ্য—এ পাঁচ দেশেই খরচ হয় ২৩৯ কোটি টাকা।
— বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের ক্ষেত্রে ছয় মাসের ব্যবধানে ভারত শীর্ষ স্থান থেকে ষষ্ঠ স্থানে নেমে গেছে।
— জানুয়ারিতে দেশের ভেতরে ক্রেডিট কার্ডে খরচ হয় ৩,১২৫ কোটি টাকা, যা ডিসেম্বরে ছিল ৩,২১৫ কোটি টাকা।
— ফেব্রুয়ারিতে দেশে সর্বোচ্চ ৪৯ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় এসেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের বাইরে বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ডের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যবহার হয় এখন থাইল্যান্ডে। দেশটিতে গত জানুয়ারিতে খরচ হয়েছে ৬৪ কোটি টাকা, যা ডিসেম্বরে বেড়ে দাঁড়ায় ৬৫ কোটি টাকা। থাইল্যান্ডের পর তৃতীয় অবস্থান পায় সিঙ্গাপুর। জানুয়ারিতে বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ডে দেশটিতে খরচ হয় ৩৮ কোটি টাকা; ডিসেম্বরে যার পরিমাণ ছিল ৪১ কোটি টাকা।

বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ডে গত জানুয়ারিতে সব মিলিয়ে খরচ হয় ৪৪৬ কোটি টাকা, যা ডিসেম্বরে ছিল ৪৯২ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক মাসে বিদেশে বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ডে খরচ ৪৬ কোটি টাকা কম। জানুয়ারিতে বিদেশে বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ডে যে অর্থ খরচ হয়েছে তার অর্ধেকের বেশি খরচ হয়েছে পাঁচটি দেশে। দেশগুলো হলো যুক্তরাষ্ট্র, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও যুক্তরাজ্য। এই পাঁচ দেশে গত জানুয়ারিতে খরচ হয়েছে ২৩৯ কোটি টাকা।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, বিদেশের পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরেও ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার ডিসেম্বরের তুলনায় জানুয়ারিতে কিছুটা কমেছে। গত জানুয়ারিতে দেশের অভ্যন্তরে ক্রেডিট কার্ডে খরচ হয়েছে ৩ হাজার ১২৫ কোটি টাকা। ডিসেম্বরে যার পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ২১৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক মাসে দেশের ভেতরে ক্রেডিট কার্ডে খরচ কমেছে ৯০ কোটি টাকা বা প্রায় ৩ শতাংশ।

দেশে–বিদেশে জানুয়ারিতে বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার কমলেও দেশে অবস্থানকারী বিদেশি নাগরিকদের ক্রেডিট কার্ডে খরচ বেড়েছে। বাংলাদেশে অবস্থানকারী বিদেশিরা গত জানুয়ারিতে ক্রেডিট কার্ডে খরচ করেছেন ২৫৩ কোটি টাকা, যা ডিসেম্বরে ছিল ২৪১ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক মাসে বাংলাদেশে বিদেশিদের ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার বেড়েছে ১২ কোটি টাকার। জানুয়ারিতে এ দেশে অবস্থানকারী যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেডিট কার্ডে সবচেয়ে বেশি অর্থ খরচ হয়েছে, যার পরিমাণ ৬৭ কোটি টাকা। এর পরের অবস্থানে ছিল যুক্তরাজ্য, দেশটির ক্রেডিট কার্ডে খরচ হয়েছে ২৮ কোটি টাকা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক র ড ট ক র ড র ব যবহ র ক র ড ট ক র ড ব যবহ র গত জ ন য় র ত ড স ম বর অবস থ ন প রব স র পর ম সবচ য়

এছাড়াও পড়ুন:

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে যুক্তরাষ্ট্রের যুক্ততার অভিযোগ মিথ, বললেন মার্কিন সাবেক কূটনীতিক

সাবেক মার্কিন কূটনীতিক জন ড্যানিলুইৎজ বলেছেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে যুক্তরাষ্ট্র যুক্ত ছিল বলে প্রচার করে থাকে বিগত সরকার আর তার সমর্থকেরা। তাদের ওই প্রচারণা মিথ। কারণ, তারা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি।

আজ সোমবার সকালে রাজধানীর নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে (এনএসইউ) অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে ড্যানিলুইৎজ বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় এ মন্তব্য করেন। ‘যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্কের প্রেক্ষিতে জুলাই বিপ্লবের তাৎপর্য: পেছন ফিরে দেখা, সামনে এগিয়ে চলা’ শীর্ষক ওই সেমিনারের আয়োজন করে এনএসইউর সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্ন্যান্স (এসআইপিজি)।

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য আবদুল হান্নান চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জেনেভায় বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি এবং এসআইপিজির জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো মুহাম্মদ সুফিউর রহমান। জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান কীভাবে ভবিষ্যতে দুই দেশের সম্পর্কে প্রভাব ফেলবে তা বলতে গিয়ে ২০০৭-০৮ সালের সেনা–সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শাসনামলের প্রসঙ্গ টানেন।

ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের রাজনীতি বিভাগের সাবেক প্রধান জন ড্যানিলুইৎজ বলেন, গত জুলাই-আগস্টে এখানে যে রাজনৈতিক পরিবর্তন সূচিত হয়েছে, তাতে যুক্তরাষ্ট্র কোনো না কোনোভাবে যুক্ত ছিল বলে বিগত সরকার আর তাদের সমর্থকেরা প্রচার করে থাকে। তাদের এই প্রচারণা মিথ। তিনি বলেন, ‘মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে আমি যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের কোনো প্রমাণ পাইনি। আমি তাদের (বিগত সরকার আর তাদের সমর্থকেরা) যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের প্রমাণ দিতে বলেছি। কিন্তু তারা কোনো প্রমাণ হাজির করতে পারেনি। বরং যুক্তরাষ্ট্র যে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিবর্তনে যুক্ত ছিল না, তার প্রমাণ আমরা পেয়েছি।’

জন ড্যানিলুইৎজ গত আগস্টের প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে এক-এগারোর কথাও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘অনেকে বিশ্বাস করেন, যেসব ঘটনাপ্রবাহের কারণে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হয়েছিল, তাতে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জড়িত ছিল। হয়তো আপনারা আমার কথা বিশ্বাস করবেন না। যুক্তরাষ্ট্রের এতে কোনো ভূমিকা ছিল না। পরের দুই বছর বাংলাদেশের কাজের ধারা কেমন হবে, সে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তখনকার সেনা নেতৃত্ব।’ তিনি বলেন, এর মানে কিন্তু এটা নয় যে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারির আগের ঘটনাপ্রবাহে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো উদ্বেগ ছিল না। এর মানে আবার এটাও নয় যে যুক্তরাষ্ট্র ২০০৭-০৮ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত থেকে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে কাজ করেনি।

ড্যানিলুইৎজ বলেন, ওই সময়কালের (এক-এগারো) প্রসঙ্গ এ জন্যই উল্লেখ করছেন, কারণ এখনকার (গত জুলাই-আগস্ট) পরিবর্তনের জন্যও যুক্তরাষ্ট্রের যুক্ততার কথা বলা হচ্ছে।

এসআইপিজির পরিচালক শেখ তৌফিক এম হক আলোচনায় সঞ্চালনা করেন। আলোচনায় আরও অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক এম শাহীদুজ্জামান, এনএসইউ বিজনেস স্কুলের ডিন এ কে এম ওয়ারেসুল ইসলাম এবং বিজিএমওএ সভাপতি ফয়সল সামাদ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে যুক্তরাষ্ট্রের যুক্ততার অভিযোগ মিথ, বললেন মার্কিন সাবেক কূটনীতিক