আমদানি করা অর্ধেক কসমেটিকস পণ্যই ভেজাল ও মানহীন
Published: 19th, March 2025 GMT
বাংলাদেশে আমদানি করা কসমেটিকস ও স্কিন কেয়ার পণ্যের অর্ধেকই ভেজাল ও নকল, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভেজাল ও মানহীন কসমেটিকস ব্যবহার করে ক্যান্সারসহ নানা রকম রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন ভোক্তারা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভেজাল ও নকল প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ভেজালকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা হোক।
সম্প্রতি বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) পরিচালিত বেশ কয়েকটি অভিযানে উঠে এসেছে, নকল ও ভেজাল কসমেটিকসের ভয়াবহ চিত্র। বিএসটিআই বাজার থেকে ৩৪টি পণ্য পরীক্ষা করে দেখতে পায় আমদানিকৃত এসব পণ্যের ১৭টিই ভেজাল ও মানহীন, যা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ভাইরাল হয়েছে। এতে ভোক্তাদের মাঝে উদ্বেগ আরো বেড়েছে।
আরো পড়ুন:
অবৈধ ইটভাটায় অভিযান, ৮ লাখ টাকা জরিমানা
পাবনা মানসিক হাসপাতাল থেকে গ্রেপ্তার ২ দালালের কারাদণ্ড
রাজধানীর মিরপুর শাহ আলী প্লাজায় বিএসটিআইর একটি অভিযানে দেখা যায়, পূর্বে তালিকা করা আমদানিকৃত কসমেটিকস ও স্কিন কেয়ার পণ্যের বেশিরভাগই ভেজাল ও ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। এমনকি এরইমধ্যে নিষিদ্ধ করা বিদেশি স্কিন ক্রিমও সেখানে বিক্রি, বিতরণ ও বাজারজাতরত অবস্থায় পাওয়া যায়। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাবেকুন নাহারের নেতৃত্বে পরিচালিত অভিযানটিতে এই ভয়ংকর তথ্য উন্মোচিত হয়।
হাতিরঝিলে পুলিশ প্লাজায় ‘দ্য কোরিয়ান মল বাংলাদেশ’ নামে একটি ব্র্যান্ড শপে অভিযান চালায় বিএসটিআইর টিম। এ সময় বাধ্যতামূলক তালিকায় থাকা বেশ কয়েক ধরনের পণ্য বিএসটিআই সার্টিফিকেট না নিয়েই বিক্রি করা হচ্ছিল। এসব পণ্যের কোনোটিরই আমদানি তথ্য বা ছাড়পত্র দেখাতে না পারায় সাত দিনের সময় দিয়ে সতর্ক করে দেয়।
বিএসটিআইর ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ধরা পড়া ভেজাল কসমেটিকস পণ্যের মজুদ।
একই দিনে রাজধানীর মিরপুরে আরেকটি অভিযানে ‘সাজগোজ’ এর আউটলেটে বিএসটিআই মান সনদ ও ছাড়পত্র ছাড়া আমদানি করা বিদেশি কসমেটিকস পাওয়া যায়। এসব পণ্যের বিপরীতে মান সনদ ও আমদানি তথ্য না দেখাতে পারায় সতর্ক করে তাদের জরিমানা করেন বিএসটিআইর ভ্রাম্যমান আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট।
ভেজাল ও নকলের বিরুদ্ধে বিএসটিআইর এই অভিযানকে স্বাগত জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা। তারা বলেন, বাংলাদেশ হাতের নাগালের মধ্যেই পাওয়া যাচ্ছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি বিশ্বমানের কসমেটিকস ও স্কিন কেয়ার পণ্য। এরই মধ্যে অথেনটিক কসমেটিকসের রিটেইল শপও চালু হয়েছে। তারা ক্রেতাদের অনুরোধ জানিয়েছেন ভেজাল পণ্য কিনে প্রতারিত না হতে।
নামি-দামি একটি বিউটি প্রোডাক্টসের আউটলেটে অভিযান চালিয়ে ভেজাল কসমেটিকস পণ্য পান ভ্রাম্যমান আদালতের মেজিস্ট্রেট।
রিমার্ক-হারল্যানের ডিরেক্টর ও মেগাস্টার শাকিব খান বলেন, “আমি গর্বের সাথে বলতে পারি, কসমেটিকস ও স্কিন কেয়ার খাতে এখন আর বাংলাদেশ পরনির্ভরশীল নয়। শুরু থেকেই কঠোর মান নিয়ন্ত্রণ করে পণ্য উৎপাদন করে আসা রিমার্ক-হারল্যান দেশের বাজারে সর্বোচ্চ মানসম্পন্ন পণ্য সরবরাহ করছে। শুধু তাই নয়, সম্মানজনক হালাল সার্টিফিকেট অর্জন করে এখন শত বিলিয়ন ডলারের বৈশ্বিক হালাল মার্কেটেও প্রবেশ করতে যাচ্ছে রিমার্ক-হারল্যান। তাই আমি সবাইকে আহ্বান জানাব, অল্প কিছু লাভের আশায় নকল ভেজাল কসমেটিকস ও স্কিন কেয়ার পণ্য বিক্রি না করে সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি অথেনটিক পণ্যের বিপণনে যুক্ত হওয়ার এখনই সময়।”
এ সময় বাংলাদেশে জাতীয় মান নির্ধারণের জন্য সরকার স্বীকৃত একমাত্র দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা বিএসটিআইকে ধন্যবাদ জানিয়ে মেগাস্টার শাকিব খান বলেন, “দেশের মানুষের ভালো থাকার জন্য রাত দিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাওয়া এই প্রতিষ্ঠানটি আমাদের অন্যতম সম্পদ। আমি বিএসটিআইকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।”
বিএসটিআইর ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে উদ্ধার ভেজাল কসমেটিকস পণ্য।
এ প্রসঙ্গে অ্যাসোসিয়েশন অব স্কিন কেয়ার অ্যান্ড বিউটি প্রোডাক্টস ম্যানুফ্যাকচারারস অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অব বাংলাদেশ-এর জেনারেল সেক্রেটারি জামাল উদ্দীন বলেন, “বিএসটিআইর অভিযানে যে চিত্র উঠে এসেছে, তা উদ্বেগজনক। যারা ভেজাল ও নকল কসমেটিকস আমদানি করছে, তাদের কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত। বাংলাদেশ এখন বিশ্ববাজারে কসমেটিকস ও স্কিন কেয়ার পণ্যের রপ্তানিকারক দেশ হতে চলেছে। যেখানে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের পণ্যের চাহিদা রয়েছে, সেখানে ভেজাল ও নিম্নমানের পণ্য আমদানি মোটেও কাম্য নয়। বরং এখনই সময় ভেজাল পণ্য আমদানির বিপক্ষে শক্তিশালী অবস্থান গড়ে তোলার।”
তিনি বলেন, “বর্তমানে দেশেই সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে অ্যাক্রিডেটেড ল্যাবে কঠোর মান নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বিশ্বমানের কালার কসমেটিকস এবং স্কিন কেয়ার পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করা হচ্ছে। আমাদের অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য রিমার্ক-হারল্যান ইতোমধ্যে সারা দেশে হারল্যান স্টোরের মাধ্যমে অথেনটিক কসমেটিকস বিক্রি করছে। হাতের কাছেই সহজলভ্য গুণগত মানসম্পন্ন এসব পণ্য থাকায় ভেজাল কসমেটিকস ও স্কিন কেয়ার পণ্য আমদানির বিষয়টি এখন অন্যায় ও অযৌক্তিক। ক্রেতাসাধারণের কাছেও আমাদের অনুরোধ থাকবে, দেখে শুনে মানসম্মত কসমেটিকস কিনবেন। ভেজাল ও নকল পণ্য কিনে প্রতারিত হবেন না।”
ঢাকা/হাসান/রাসেল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আমদ ন ভ জ ল ও নকল ব এসট আইর র জন য আমদ ন
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইসরায়েলের হামলা
রবিবার বিকেল থেকে ইরানজুড়ে নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সামরিক স্থাপনার পাশাপাশি ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
রবিবার রাতে ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইদ খাতিবজাদেহ ইসরায়েলি হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে তিনি জানান, রবিবার রাজধানী তেহরানে ইসরায়েলি হামলায় ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খবর তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলুর।
এক্স-পোস্টে সাইদ বলেছেন, “ইসরায়েলের অপরাধী শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঠিক বিপরীতে অবস্থিত ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবনে ইচ্ছাকৃত এবং নির্মম হামলা চালিয়েছে।”
আরো পড়ুন:
ইসরায়েলের নতুন হামলায় ইরানের আইআরজিসির গোয়েন্দা প্রধান নিহত
ইসরায়েলে ৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ইরান, তেল আবিব ও হাইফাতে সরাসরি আঘাত
উপ-মন্ত্রী আরো বলেন, “এই হামলায় বেশ কয়েকজন বেসামরিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন, আমার বেশ কয়েকজন সহকর্মীও আহত হয়েছেন, যাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।”
সাইদ বলেন, “এটি আরো একটি স্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি শাসকগোষ্ঠীর চলমান ও নিয়মতান্ত্রিক আগ্রাসন অভিযানের অংশ।”
এর আগে শনিবার ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা তেহরানের অস্ত্র উৎপাদন ক্ষমতা ধ্বংস করার লক্ষ্যে ইরানের আইআরজিসি ও সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে রবিবার নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, এই হামলায় ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি), গার্ডস কুদস ফোর্স এবং ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর অবকাঠামো লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আরো জানিয়েছে, ইরানজুড়ে অসংখ্য অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রে হামলা চালানো হয়েছে।
ইরানি বার্তাসংস্থা তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েলের এই হামলায় আইআরজিসিরি গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি এবং তার সহকারী হাসান মোহাকিক নিহত হয়েছেন। এছাড়া মোহসেন বাঘারি নামে আইআরজিসির আরো একজন জেনারেল নিহত হয়েছেন। এর প্রতিশোধ নিতে রবিবার রাতে ইসরায়েলে ৫০টি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও শতাধিক ড্রোন ছুড়েছে ইরান।
ইসরায়েলের ফায়ার ও রেসকিউ সার্ভিসের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, উত্তর ইসরায়েলে দুটি এবং হাইফায় একটি আবাসিক ভবনে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হানার খবর পেয়েছে তারা।
ইসরায়েলি জাতীয় জরুরি সেবা সংস্থা জানিয়েছে, হাইফায় ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে সাতজন আহত হয়েছেন। এছাড়া কিরিয়াত গাটের কাছে দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি শহরে একজন আহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় ইসরায়েলি সেনাপ্রধান ইয়াল জামির ইরানের ওপর আক্রমণ আরো তীব্র করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একটি বিবৃতি জারি করে ইসরায়েরি সেনাপ্রধান বলেছেন, “আমরা আমাদের অভিযান তীব্রতর করে যাব এবং এটি করে, আগামী বছরগুলোতে আমাদের নিরাপত্তা জোরদার করব। আমরা জানতাম এর একটি মূল্য দিতে হবে এবং এটিই বোঝায় যে, আমরা কেন এখনই পদক্ষেপ নিয়েছি, তা অনেক দেরি হওয়ার আগেই।”
ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে ইসরায়েলি হামলায় ২২৪ জন নিহত এবং ৯০০ জন আহত হয়েছেন।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ১৩ জন নিহত এবং ৩৭০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।
ঢাকা/ফিরোজ