বাংলাদেশে আমদানি করা কসমেটিকস ও স্কিন কেয়ার পণ্যের অর্ধেকই ভেজাল ও নকল, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভেজাল ও মানহীন কসমেটিকস ব্যবহার করে ক্যান্সারসহ নানা রকম রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন ভোক্তারা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভেজাল ও নকল প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ভেজালকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা হোক। 

সম্প্রতি বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) পরিচালিত বেশ কয়েকটি অভিযানে উঠে এসেছে, নকল ও ভেজাল কসমেটিকসের ভয়াবহ চিত্র। বিএসটিআই বাজার থেকে ৩৪টি পণ্য পরীক্ষা করে দেখতে পায় আমদানিকৃত এসব পণ্যের ১৭টিই ভেজাল ও মানহীন, যা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ভাইরাল হয়েছে। এতে ভোক্তাদের মাঝে উদ্বেগ আরো বেড়েছে।

আরো পড়ুন:

অবৈধ ইটভাটায় অভিযান, ৮ লাখ টাকা জরিমানা

পাবনা মানসিক হাসপাতাল থেকে গ্রেপ্তার ২ দালালের কারাদণ্ড

রাজধানীর মিরপুর শাহ আলী প্লাজায় বিএসটিআইর একটি অভিযানে দেখা যায়, পূর্বে তালিকা করা আমদানিকৃত কসমেটিকস ও স্কিন কেয়ার পণ্যের বেশিরভাগই ভেজাল ও ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। এমনকি এরইমধ্যে নিষিদ্ধ করা বিদেশি স্কিন ক্রিমও সেখানে বিক্রি, বিতরণ ও বাজারজাতরত অবস্থায় পাওয়া যায়। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাবেকুন নাহারের নেতৃত্বে পরিচালিত অভিযানটিতে এই ভয়ংকর তথ্য উন্মোচিত হয়।

হাতিরঝিলে পুলিশ প্লাজায় ‘দ্য কোরিয়ান মল বাংলাদেশ’ নামে একটি ব্র্যান্ড শপে অভিযান চালায় বিএসটিআইর টিম। এ সময় বাধ্যতামূলক তালিকায় থাকা বেশ কয়েক ধরনের পণ্য বিএসটিআই সার্টিফিকেট না নিয়েই বিক্রি করা হচ্ছিল। এসব পণ্যের কোনোটিরই আমদানি তথ্য বা ছাড়পত্র দেখাতে না পারায় সাত দিনের সময় দিয়ে সতর্ক করে দেয়। 

বিএসটিআইর ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ধরা পড়া ভেজাল কসমেটিকস পণ্যের মজুদ। 

একই দিনে রাজধানীর মিরপুরে আরেকটি অভিযানে ‘সাজগোজ’ এর আউটলেটে বিএসটিআই মান সনদ ও ছাড়পত্র ছাড়া আমদানি করা বিদেশি কসমেটিকস পাওয়া যায়। এসব পণ্যের বিপরীতে মান সনদ ও আমদানি তথ্য না দেখাতে পারায় সতর্ক করে তাদের জরিমানা করেন বিএসটিআইর ভ্রাম্যমান আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট।

ভেজাল ও নকলের বিরুদ্ধে বিএসটিআইর এই অভিযানকে স্বাগত জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা। তারা বলেন, বাংলাদেশ হাতের নাগালের মধ্যেই পাওয়া যাচ্ছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি বিশ্বমানের কসমেটিকস ও স্কিন কেয়ার পণ্য। এরই মধ্যে অথেনটিক কসমেটিকসের রিটেইল শপও চালু হয়েছে। তারা ক্রেতাদের অনুরোধ জানিয়েছেন ভেজাল পণ্য কিনে প্রতারিত না হতে।

নামি-দামি একটি বিউটি প্রোডাক্টসের আউটলেটে অভিযান চালিয়ে ভেজাল কসমেটিকস পণ্য পান ভ্রাম্যমান আদালতের মেজিস্ট্রেট।

রিমার্ক-হারল্যানের ডিরেক্টর ও মেগাস্টার শাকিব খান বলেন, “আমি গর্বের সাথে বলতে পারি, কসমেটিকস ও স্কিন কেয়ার খাতে এখন আর বাংলাদেশ পরনির্ভরশীল নয়। শুরু থেকেই কঠোর মান নিয়ন্ত্রণ করে পণ্য উৎপাদন করে আসা রিমার্ক-হারল্যান দেশের বাজারে সর্বোচ্চ মানসম্পন্ন পণ্য সরবরাহ করছে। শুধু তাই নয়, সম্মানজনক হালাল সার্টিফিকেট অর্জন করে এখন শত বিলিয়ন ডলারের বৈশ্বিক হালাল মার্কেটেও প্রবেশ করতে যাচ্ছে রিমার্ক-হারল্যান। তাই আমি সবাইকে আহ্বান জানাব, অল্প কিছু লাভের আশায় নকল ভেজাল কসমেটিকস ও স্কিন কেয়ার পণ্য বিক্রি না করে সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি অথেনটিক পণ্যের বিপণনে যুক্ত হওয়ার এখনই সময়।”

এ সময় বাংলাদেশে জাতীয় মান নির্ধারণের জন্য সরকার স্বীকৃত একমাত্র দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা বিএসটিআইকে ধন্যবাদ জানিয়ে মেগাস্টার শাকিব খান বলেন, “দেশের মানুষের ভালো থাকার জন্য রাত দিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাওয়া এই প্রতিষ্ঠানটি আমাদের অন্যতম সম্পদ। আমি বিএসটিআইকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।”

বিএসটিআইর ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে উদ্ধার ভেজাল কসমেটিকস পণ্য।

এ প্রসঙ্গে অ্যাসোসিয়েশন অব স্কিন কেয়ার অ্যান্ড বিউটি প্রোডাক্টস ম্যানুফ্যাকচারারস অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অব বাংলাদেশ-এর জেনারেল সেক্রেটারি জামাল উদ্দীন বলেন, “বিএসটিআইর অভিযানে যে চিত্র উঠে এসেছে, তা উদ্বেগজনক। যারা ভেজাল ও নকল কসমেটিকস আমদানি করছে, তাদের কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত। বাংলাদেশ এখন বিশ্ববাজারে কসমেটিকস ও স্কিন কেয়ার পণ্যের রপ্তানিকারক দেশ হতে চলেছে। যেখানে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের পণ্যের চাহিদা রয়েছে, সেখানে ভেজাল ও নিম্নমানের পণ্য আমদানি মোটেও কাম্য নয়। বরং এখনই সময় ভেজাল পণ্য আমদানির বিপক্ষে শক্তিশালী অবস্থান গড়ে তোলার।”

তিনি বলেন, “বর্তমানে দেশেই সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে অ্যাক্রিডেটেড ল্যাবে কঠোর মান নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বিশ্বমানের কালার কসমেটিকস এবং স্কিন কেয়ার পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করা হচ্ছে। আমাদের অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য রিমার্ক-হারল্যান ইতোমধ্যে সারা দেশে হারল্যান স্টোরের মাধ্যমে অথেনটিক কসমেটিকস বিক্রি করছে। হাতের কাছেই সহজলভ্য গুণগত মানসম্পন্ন এসব পণ্য থাকায় ভেজাল কসমেটিকস ও স্কিন কেয়ার পণ্য আমদানির বিষয়টি এখন অন্যায় ও অযৌক্তিক। ক্রেতাসাধারণের কাছেও আমাদের অনুরোধ থাকবে, দেখে শুনে মানসম্মত কসমেটিকস কিনবেন। ভেজাল ও নকল পণ্য কিনে প্রতারিত হবেন না।”

ঢাকা/হাসান/রাসেল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আমদ ন ভ জ ল ও নকল ব এসট আইর র জন য আমদ ন

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাবি থেকে ড. জাকির নায়েককে ডক্টরেট দেওয়ার দাবি শিক্ষার্থীদের

তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের ওপর বিশ্ববরেণ্য ইসলামী বক্তা ড. জাকির নায়েককে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) পক্ষ থেকে সম্মানসূচক ‘ডক্টরেট ডিগ্রি’ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন একদল শিক্ষার্থী।

সোমবার (৩ নভেম্বর) এ দাবিতে ঢাবি উপ-উপাচার্যের (প্রশাসন) কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন তারা। স্মারকলিপি প্রদান শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন এ তথা জানান তারা।

আরো পড়ুন:

বিএনপি ক্ষমতার একচ্ছত্র দখলদারি বহাল রাখতে চায়: ডাকসু

ঢাবি শিক্ষার্থীদের মানবিক মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ করতে ২ কমিটি

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা বলেন, ড. জাকির নায়েক একজন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ইসলামী চিন্তাবিদ ও মানবতাবাদী সংগঠক। তিনি শুধু ইসলাম প্রচারই করেননি, বরং মানবকল্যাণে নানা উদ্যোগ নিয়েছেন। তার প্রতিষ্ঠিত ‘ইউনাইটেড এইড’ নামের সংগঠনের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের হাজারো শিক্ষার্থী বৃত্তি ও সহযোগিতা পাচ্ছে। এসব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তিনি বিশ্বমঞ্চে মানবতার প্রতিনিধি হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন।

তারা বলেন, ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদী সরকারের ষড়যন্ত্রে তাকে দেশত্যাগে বাধ্য করা হলেও মালয়েশিয়া তাকে রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসেবে গ্রহণ করেছে। এমন একজন মানবতাবাদী ও জ্ঞানচর্চার প্রতীক ব্যক্তিত্বকে যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সম্মানসূচক ডক্টরেট উপাধিতে ভূষিত করে, তাহলে তা দেশের মর্যাদাকে আরো উজ্জ্বল করবে।

এ সময় তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে বিশেষ সমাবর্তনের মাধ্যমে ড. জাকির নায়েককে ডিগ্রি প্রদান করে দাবি জানান।

এছাড়া তারা ক্যাম্পাসে নারী শিক্ষার্থীদের প্রতি ক্রমবর্ধমান বুলিং, হ্যারাসমেন্ট ও ধর্মীয় উস্কানিমূলক বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জ্ঞানচর্চার স্থানে নারী শিক্ষার্থীদের প্রতি অশোভন আচরণ ও অনলাইন বুলিং উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। আমরা উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনায় জেনেছি, ইতোমধ্যেই হ্যারাসমেন্ট ও সাইবার ট্যাগিং প্রতিরোধে কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে এসব কমিটি দ্রুত কার্যকর করতে হবে, যাতে অপরাধীরা শাস্তির আওতায় আসে।
 

ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ