নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ার চুরির অপবাদ দিয়ে এক নারী শ্রমিককে নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে প্রতিতী ট্রেড এজেন্সির মালিক আব্দুল হান্নান খানের বিরুদ্ধে।

মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) কদমতলী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী রুমি আক্তার আয়শা (২৫) বাদী হয়ে দুজনকে অভিযুক্ত করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।

আহত রুমি আক্তার সাতক্ষীরার আশাশুনির বড়দল এলাকার মোস্তাক মালির মেয়ে। বর্তমানে সিদ্ধিরগঞ্জের কদমতলী এলাকায় বসবাস করেন। অভিযুক্তরা হলেন, হান্নান খান (৪০) এবং রাসেল (৩০)।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ৩ মাস পূর্বে রুমি আক্তার আয়শা কদমতলী এলাকায় অবস্থিত প্রতিতি ট্রেড এজেন্সি নামীয় গার্মেন্টস ট্রেনিং সেন্টারে নিযুক্ত হোন। এরপর বিগত সময়ে আমি ঠিকভাবে কাজ করলেও হান্নান খান তার বেতন ভাতা প্রদান না করে বিভিন্ন তালবাহানা করতে থাকে।

এরই ধারবাহিকতায় একাধিকবার তার বেতনের টাকা দাবি করলে হান্নান খান তাকে বেতনের টাকা প্রদান না করে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যসহ কুপ্রস্তাব প্রদান করেন। 

গত ৩ মাস আগে থেকেই হান্নান খান, রাসেলের সাথে প্ররোচনা করে তাকে ফুসলিয়ে রাসেলের বাসায় নিয়ে যায়। পরবর্তীতে ওই নারী শ্রমিক কু প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তারা তাকে অকথ্য ভাষায় গাল-মন্দসহ নানানভাবে হুমকি প্রদর্শন করেন।

এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৮ মার্চ সকালে হান্নানের কাছে তার পাওনা বেতন দাবি করলে সে তাকে মিথ্যা চুরির অপবাদ দিয়ে এসএস পাইপ দিয়ে এলোপাথারি জখম করে এবং শ্লীলতাহীনতার চেষ্টা চালায়। 

এসময় রুমি আক্তার আয়শার সঙ্গে থাকা একটি ৪ আনি ওজনের স্বর্ণের আংটি, একটি ৭ আনি ওজনের স্বর্ণের চেইনসহ একটি ব্যাগ রেখে দেয়। এসময় তার ডাক চিৎকারে আশেপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে তাকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে খানপুর ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে পাঠায়।  

ভুক্তভোগী রুমি আক্তার আয়শা বলেন, আমি তিন মাস ধরেই এখানে কাজ করছিলাম। কিন্তু তারা বেতন নিয়ে বিভিন্ন তালবাহানা শুরু করে। একসময় প্রতিতী ট্রেড লাইসেন্সের মালিক আব্দুল হান্নান খান আমাকে কুয়াকাটা নেওয়ার কুপ্রস্তাব দেয়।

আমি এতে রাজী না হলে আমার উপর বর্বর হামলা চালায়। তাদের হামলায় ডান হাত দিয়ে আমি এখন কোনো কাজ করতে পারছি না। আমি এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।  

অভিযুক্ত হান্নান খান বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আমি বর্তমানে ঢাকায় আছি। সিদ্ধিরগঞ্জে এসে বিস্তারিত তথ্য জানাবেন বলে জানান তিনি।

তদন্ত কর্মকর্তা সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মামুন বলেন, ঘটনাস্থলে গিয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। পরে বিস্তারিত বলা সম্ভব হবে।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিনূর আলম বলেন, এ ঘটনায় থানায় একটি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। দোষীদের কাউকে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
 

.

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: স দ ধ রগঞ জ ন র য়ণগঞ জ স দ ধ রগঞ জ

এছাড়াও পড়ুন:

বাউফলে বেদখল সরকারি ৭ গণমিলনায়তন

পটুয়াখালীর বাউফলে সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের উদাসীনতায় সরকারি ৭টি গণমিলনায়তন বেদখল হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় প্রভাবশালীরা এসব গণমিলনায়তনে দোকান তুলে ভাড়া দেওয়াসহ নানা কাজে ব্যবহার করছেন। 
স্থানীয়দের অভিযোগ, উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের নির্মিত এসব গণমিলনায়তনের কার্যক্রম দীর্ঘদিন বন্ধ রয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তদারকির অভাবে এগুলো স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও যুবলীগ নেতারা দখল করেন। পরে দোকান তুলে ভাড়া দেন। অনেকে গণমিলনায়তনের জমিতে লাগানো গাছও কেটে বিক্রি করেন। এ ছাড়া পরিত্যক্ত ভবনে মাদক ও জুয়ার আসর বসে। 
১৯৮৯ সালে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে দক্ষ ও কর্মঠ করে তোলার লক্ষ্যে জনগণকে উদ্বুদ্ধকরণ ও জনসচেতনতা তৈরিতে গণমিলনায়তন কেন্দ্র তৈরির প্রকল্প হাতে নেয় সমাজসেবা অধিদপ্তর। এ প্রকল্পের অংশ হিসেবে উপজেলার কালাইয়া বন্দর, বীরপাশা, কালিশুরি বাজার, চন্দ্রপাড়া, মমিনপুর, বগাবাজার ও পৌরসভার কালীবাড়ি এলাকায় গণমিলনায়তন নির্মাণ করা হয়। আধাপাকা টিনশেড ভবনে গণমিলনায়তন নির্মাণে জমিও অধিগ্রহণ করে সমাজসেবা অধিদপ্তর। 
সরেজমিন দেখা যায়, চন্দ্রদ্বীপের চেয়ারম্যান উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক আলকাছ কালাইয়া বন্দরের গণমিলনায়তনটি দলীয় সাইন বোর্ড লাগিয়ে দখলে নিয়েছেন। স্থানীয়রা জানান, এনামুল হক সেখানে দুটি দোকান ঘর তুলে ভাড়া দিয়েছেন। এ ছাড়া সেখানে তাস ও ক্যারম বোর্ডের নামে জুয়ার আসর জমে। গত বছরের আগস্টে দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর চেয়ারম্যান এনামুল এলাকা ছেড়ে চলে যান। পরে কালাইয়া বিএনপির আহ্বায়ক জসিম উদ্দিন তুহিনের সমর্থিত নেতাকর্মীরা মিলনায়তনটি দখল করে। 
অভিযোগ প্রসঙ্গে জসিম উদ্দিন তুহিন বলেন, তিনি মিলনায়তনটি দখল করেননি। স্থানীয় তরুণ ও যুবকরা সেখানে ক্যারাম বোর্ড খেলে। 
চন্দ্রপাড়ার আবদুল খালেক মাতুব্বর বাড়ির সামনে ১৫ শতাংশ জমিতে গণমিলনায়তন নির্মিত হয়। কয়েক বছর বিভিন্ন প্রশিক্ষণও হয়েছে সেখানে। কার্যক্রম বন্ধ থাকায় কেন্দ্রটিকে ওই বাড়ির এক ব্যক্তি গোয়াল ঘর হিসেবে ব্যবহার করছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় স্থানীয় প্রভাবশালীরা গণমিলনায়তন কেন্দ্রের ইট ও টিন খুলে নেয়। এ ছাড়া সেখানে থাকা চারটি পুরোনো রেইন্ট্রি গাছ কেটে নিয়ে যায় তারা। 
স্থানীয় বাসিন্দা জাহাঙ্গীর হোসেন মৃধা বলেন, যুবলীগ নেতা মো. জহির মাতুব্বর গণমিলনায়তন কেন্দ্রের ইট ও টিন খুলে নেওয়ার পাশাপাশি চারটি রেইন্ট্রি গাছ কেটে বিক্রি করেন। ওই চারটি গাছের মূল্য লক্ষাধিক টাকা। 
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, জহির মদনপুরা ইউনিয়ন যুবলীগের সহসভাপতি ছিলেন। অভিযোগ অস্বীকার করে জহির মাতুব্বর বলেন, কে বা কারা এ কাজ করেছে তা তিনি জানেন না। 
কনকদিয়ার বীরপাশা এলাকার বাসিন্দা ফোরকান মাস্টার বলেন, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বীরপাশা গ্রামের গণমিলনায়তনটি বখাটেদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। 
কেশবপুরের মমিনপুরের গণমিলনায়তনটিরও একই দশা। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) শাহজাহান বলেন, তাঁর এলাকার গণমিলনায়তন ভবনটির নিয়ন্ত্রণ নিতে তিনি উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাদের বেশ কয়েকবার অনুরোধ করেছেন। কিন্তু তারা কর্ণপাত করেন না।
এদিকে বাউফল পৌরসভার বাজার রোড এলাকায় গণমিলনায়তন কেন্দ্রের ৫ শতাংশ জমি রয়েছে। সেখানে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ গণশৌচাগার নির্মাণের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে। 
এ বিষয়ে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. মুসফিকুর রহমান বলেন, তিনি সম্প্রতি এখানে যোগদান করেছেন। এসব বিষয়ে তাঁর জানা নেই। খোঁজ নিয়ে এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন তিনি। 
পটুয়াখালী জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. শাহজাদা বলেন, এ বিষয়ে তিনি খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেবেন। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ