লাঙ্গলবন্দ অষ্টমী স্নান উৎসবের প্রস্তুতি সভায় দুই পক্ষের হট্টগোল
Published: 19th, March 2025 GMT
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব লাঙ্গলবন্দের অষ্টমী স্নান উদযাপনের লক্ষ্যে আয়োজিত প্রস্তুতি সভা হিন্দু সম্প্রদায়ের দুই পক্ষের হট্টগোলের মধ্যে শেষ হয়েছে। এ সময় হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে।
বুধবার (১৯ মার্চ) সকাল সাড়ে ১১টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রস্তুতি সভায় লাঙ্গলবন্দ স্নান উদযাপন পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শংকর সাহা বক্তব্য প্রদান কালে উপস্থিত সনাতন ধর্মাবলম্বী নেতৃবৃন্দ এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলতে থাকেন "এই সংকর সাহা সাধারণ সম্পাদক থাকাকালীন ৮৫টি মূর্তি ভাঙ্গা হয়েছে সেলিম ওসমানের পরামর্শে। এরপর থেকেই শুরু হয় বিশৃঙ্খলা যা এক সময় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
পরে সভার সভাপতি জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিয়া সকলকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনারা যদি দুই গ্রুপ এভাবে ঝগড়া করেন তাহলে অনুষ্ঠান আয়োজন করা কষ্ট হয়ে যাবে। পুণ্য স্নানে যারা পুণ্যার্থী আসবেন তারা আতঙ্কিত হয়ে থাকবেন আপনাদের দুই পক্ষের ঝগড়ার কারণে।
জেলা পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার বলেন, আমি একজন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক হয়ে আজ লজ্জাবোধ করছি আপনাদের এই আচরণের কারণে। আপনারা যদি এই আচরণ অব্যাহত রাখেন তাহলে পূণ্য স্নানে পাপ মোচন হবে না বরং আরো পাপের বোঝা ভারী হবে। এটা পেশি শক্তি দেখানোর জায়গা না। আপনারা নিজেরা ঝগড়া বিবাদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হন। আমরা সবাই মিলে একটা সুন্দর আয়োজন করব।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহবায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, এই স্নান উৎসব আয়োজনের লক্ষ্যে দুটি পাল্টাপাল্টি কমিটি রয়েছে। আমি নিশ্চিত এই দুই কমিটি একটা সংঘর্ষে জড়াবে। তাই আমি জেলা প্রশাসক মহোদয়কে বলবো সকলকে নিয়ে একটি আয়োজক কমিটি গঠন করে দেয়ার জন্য।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু বলেন, দীর্ঘদিন যাবত এই স্নান উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ করে এই বছর এই আয়োজনকে কেন্দ্র করে যারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চাইছে তারা এই রাষ্ট্রের শত্রু দেশের শত্রু। বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বহি:বিশ্বে নষ্ট করার জন্য এটা একটা চক্রান্ত হিসেবে আমরা ধরে নেবো। তাই আমরা চাই সকলে মিলেমিশে একটি সুন্দর আয়োজন করতে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শিখন সরকার শিপন লাঙ্গলবন্দ স্নান উৎসব আয়োজনের লক্ষ্যে যেসব প্রতিবন্ধকতা গুলো আছে সেগুলো সমাধানে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা লিখিত আকারে পড়ে শুনান এবং দ্রুত তা বাস্তবায়নের দাবি জানান।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞার সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ স্থানীয় সরকার বিষয়ক উপ-পরিচালক ( উপ- সচিব) ড.
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ ন র য়ণগঞ জ স ন ন উৎসব সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
বকুলতলায় বৃষ্টির সুর
নীল-সাদা পোশাকে সজ্জিত হয়ে নানা বয়সী মানুষ এসে জড়ো হতে থাকেন। যেন শহরের হৃদয়ে নেমে আসে গ্রামবাংলার ঘ্রাণ। মেঘলা আকাশের নিচে কণ্ঠে সুর, পায়ে তাল, কল্পনায় বর্ষার রূপই দেখা যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় গতকাল রোববার এভাবে উদযাপন হলো ‘বর্ষা উৎসব ১৪৩২’।
বর্ষা উৎসব উদযাপন পরিষদের আয়োজনে আষাঢ়ের প্রথম দিনে রাগ, রস ও রং মিলে তৈরি হলো এক বর্ষামুখর ক্যানভাস। এবারের আয়োজনে সহযোগিতায় ছিল সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন নবীন সংগীতশিল্পী সোহানী মজুমদার। সেতারের কোমল তারে বেজে ওঠে রাগ ‘আহীর ভৈরব’। রাগভিত্তিক এ পরিবেশনার মধ্য দিয়ে মিলে যায় প্রাচ্যের সংগীত ঐতিহ্য ও বর্ষার আধ্যাত্মিকতা। সেই মুহূর্তে বকুলতলায় যেন ভেসে বেড়ায় বৃষ্টির সুর আর আকাশের নরম আলো।
‘বর্ষাকথন’ পর্বে বর্ষার ভাবনা, পরিবেশ ও সময়ের প্রেক্ষাপটে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ গণসংগীত সমন্বয় পরিষদের সভাপতি শিল্পী কাজী মিজানুর রহমান।
ঘোষণা পাঠ করেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী সুইট এবং সভাপতিত্ব করেন লেখক ও গবেষক অধ্যাপক ড. নিগার চৌধুরী। সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন সংস্কৃতিকর্মী নুসরাত ইয়াসমিন রুম্পা।
ঘোষণাপত্র পাঠে জানানো হয়, ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশে আজ ঋতুচক্রে দেখা দিচ্ছে অসামঞ্জস্য। গ্রীষ্ম হয়ে উঠছে খরতর, বর্ষা রুষ্ট, বসন্ত ক্ষীয়মাণ। এই পরিবর্তনের মূলে রয়েছে মানুষের সীমাহীন ভোগবাদী আচরণ, প্রকৃতির ওপর অনবরত অনাচার। ভূপৃষ্ঠ উত্তপ্ত, সমুদ্রজল স্ফীত, ওজোনস্তর ক্ষতিগ্রস্ত– প্রকৃতি আজ সংকটে।
এ প্রসঙ্গে মানজার চৌধুরী সুইট সমকালকে বলেন, এ উৎসব শহুরে জীবনে আমরা প্রায় ১৮ বছর ধরে পালন করে আসছি। উৎসবের শিকড় নিহিত রবীন্দ্রনাথের ‘বর্ষামঙ্গল’-এ। আমরা তারই উত্তরসূরি হয়ে আষাঢ়ের প্রথম দিনটিকে উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিই। এতে শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্য নয়, বরং তার সংকটও তুলে ধরা হয়। আমরা চাই, আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্ক
গড়ুক, তার বিপন্নতাকে বুঝুক এবং তা রক্ষায় সক্রিয় হোক।
তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা যে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলাম, এ ধরনের উৎসবই সেই স্বপ্নের বাস্তব রূপ। শিকড়ের দিকে ফিরে যাওয়ার মধ্যে নিহিত আমাদের সংস্কৃতি ও চেতনার পুনর্জাগরণ।
বর্ষা মানে নতুন জন্মের বারতা। সেই বারতা ছড়িয়ে দিতে উৎসবে প্রতীকীভাবে শিশু-কিশোরের হাতে তুলে দেওয়া হয় বনজ, ফলদ ও ঔষধি গাছের চারা। এই চারাগুলো শুধু বৃক্ষ নয়, বরং হয়ে উঠেছে সবুজ ভবিষ্যতের আশ্বাস।
উৎসবে একক সংগীত পরিবেশন করেন ইয়াসমিন মুশতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, বিজন চন্দ্র মিস্ত্রী ও নবনীতা জাইদ চৌধুরী অনন্যা।
রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন করেন অণিমা রায়, শামা রহমান, মকবুল হোসেন ও ফেরদৌসী কাকলি। লোকসংগীত পরিবেশন করেন বিমান চন্দ্র বিশ্বাস, শ্রাবণী গুহ রায় ও এস এম মেজবাহ। আধুনিক গান গাইতে মঞ্চে ওঠেন রত্না সরকার।
দলীয় সংগীতে অংশ নেয় সীমান্ত খেলাঘর আসর (শিশু-কিশোর), সুর বিহার, বহ্নিশিখা, সুর নন্দন এবং সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী। আবৃত্তি পরিবেশন করেন নায়লা তারাননুম চৌধুরী কাকলি ও আসান উল্লাহ তমাল। শিল্পবৃত্ত শিশু-কিশোর দল পরিবেশন করে আবৃত্তি ও নৃত্য কোলাজ।
নৃত্য পরিবেশনায় অংশ নেয় ধৃতি নর্তনালয়, নৃত্যাক্ষ, স্পন্দন, বেমুকা ললিতকলা কেন্দ্র, সিনথিয়া একাডেমি অব আর্টস ও নৃত্যম।