ভবন থেকে পড়ে যুবকের মৃত্যু ঘিরে রহস্য
Published: 20th, March 2025 GMT
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে নির্মাণাধীন সাততলা ভবন থেকে পড়ে যুবকের মৃত্যু ঘিরে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। বুধবার রাত ১টার দিকে শহরের রাণীবাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
মারা যাওয়া যুবক মেহেদী হাসান (৩০) কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার আমলাবাড়ি গ্রামের মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে। মেহেদী দীর্ঘ তিন বছর ধরে ওই ভবনে ইলেকট্রিশিয়ান ও ফোরম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। এ তথ্য নিশ্চিত করেন ভৈরব শহর ফাঁড়ি পুলিশের উপপরিদর্শক এসআই নরুল হুদা।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শহরের ব্যবসায়ী দুলাল চন্দ্র সাহার সাততলা ভবনে তিন বছর ধরে ইলেকট্রিশিয়ান হিসেবে কাজ করছেন মেহেদী। তাঁর সঙ্গে আরও চারজন ইলেকট্রিশিয়ান আছেন। সবাই একসঙ্গে ওই ভবনের সপ্তম তলায় থাকেন। বুধবার সারাদিন কাজ শেষ করে সবাই কক্ষে ঘুমিয়ে ছিলেন। রাত ১টায় হঠাৎ ভবনের ছাদ থেকে নিচে পড়ে যান মেহেদী। পরে বিকট শব্দ শুনে আশপাশের লোকজন এসে মেহেদীকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
ভৈরব বাজার কমিউনিটি পুলিশ সদস্য সাদ্দাম মিয়া বলেন, রাত ১টার দিকে আমি ভবনের পাশে দায়িত্ব পালন করছিলাম। হঠাৎ একটি বিকট আওয়াজ পেয়ে দৌড়ে এসে দেখি এক যুবক রক্তাক্ত অবস্থায় ভবনের নিচে পড়ে আছেন। এ সময় তাঁর সহকর্মীরা নিচে নেমে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যান। তিনি পুলিশকে ফোন করে বিষয়টি জানান।
মেহেদীর সহকর্মী ইমন মিয়ার ভাষ্য, তিন বছর ধরে ব্যবসায়ী দুলালের ভবনে মেহেদী কাজ করছেন। তারা তিন বছরে কয়েক দফায় এই ভবনে কাজ করতে আসেন। দুই দিন আগে তারা আবারও কাজের জন্য এসেছেন। রাতে কী কারণে মেহেদী ভবনের ছাদ থেকে পড়ে মারা গেলেন, তা তারা কেউ জানেন না।
ভবনের ইলেকট্রিশিয়ানের ঠিকাদার ইউনুস মিয়া বলেন, নিহত মেহেদী সাত বছর ধরে তাঁর বিভিন্ন সাইটে কাজ করছেন। তিনি ভালো মানুষ, কোনো ঝামেলায় জড়াতেন না। কেন ও কীভাবে তিনি মারা গেলেন, তা তিনি বুঝতে পারছেন না।
এ বিষয়ে ভৈরব শহর ফাঁড়ির এসআই নরুল হুদা জানান, মেহেদীর লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে। এই ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে জানান তিনি।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক শ রগঞ জ ত ন বছর ভবন র
এছাড়াও পড়ুন:
রাজশাহীতে যুবদল–ছাত্রদলের চাঁদাবাজির মামলার এজাহার ফাঁস, এসআইকে বদলি
রাজশাহীতে যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা রুজুর আগে এজাহার ফাঁসের ঘটনায় এবার এক উপপরিদর্শককে (এসআই) বদলি করা হয়েছে। ওই পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে ছাত্রদলের এক নেতার ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে রাজশাহীতে তুমুল আলোচনা চলছে।
নগরের বোয়ালিয়া থানা থেকে বদলি হওয়া ওই পুলিশ কর্মকর্তার নাম এস এম রকিবুল ইসলাম। চাঁদাবাজির মামলার এজাহার থানায় রেকর্ড হওয়ার আগেই তিনি সেটি হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে দেন ছাত্রদল নেতা এমদাদুল হক ওরফে লিমনের কাছে। এমদাদুল হক রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজ ছাত্রদলের সদস্যসচিব। ২৩ জুলাই রাতে আবাসন ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমান তাঁর বিরুদ্ধে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে বোয়ালিয়া থানায় মামলা করেন। মামলায় এমদাদুল হকসহ ৩৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়।
এজাহার ফাঁসের ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর গতকাল সোমবার এসআই রকিবুলকে থানার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে রাজশাহী পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়।
এসআই রকিবুলের সঙ্গে সেই রাতে হওয়া কথোপকথনের রেকর্ড ফাঁস করে দেন এমদাদুল হক নিজেই। হোয়াটসঅ্যাপের ওই কথোপকথন ভিডিও করে রেখেছিলেন তিনি। ভিডিওতে দেখা যায়, এমদাদুল হক সালাম দিয়ে কথা শুরু করেন। এসআই রকিবুল তাঁর উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘মামলা রেকর্ড হচ্ছে, হচ্ছে...রেকর্ডটা করতে দে।’ এমদাদুল জানতে চান, ‘আচ্ছা, ওর (মোস্তাফিজুর রহমানের) মামলাডা হলো, কে কে ভাই বলেন তো একটু। বলা যাবে?’ এসআই বলেন, ‘তুই ফোন দিছিস তোর পরে আমি গেছি। যায়ে এজাহার নিসি, তোরে দিসি। আমি জানি? কমিশনার অফিস থেকে এজাহার লিখিসে।’ এমদাদুল প্রশ্ন করেন, ‘ওখানেই এজাহার লিখেছে? কমিশনার অফিসে?’ এসআই বলেন, ‘হ্যাঁ, ওখান থাইকা অফিসে থেকে এজাহার পাঠায়ে দিসে। অপারেটর তাই কলো যে স্যার, পেনড্রাইভে করে এজাহার পাঠায় দিসে ফোর্স দিয়ে।’
ভিডিওতে আরও দেখা যায়, এমদাদুল বলেন, ‘ও, কমিশনার নিজেই লিখেছে?’ এসআই বলেন, ‘তা জানি না। সে (পুলিশ কমিশনার) তো আর নিজে লেখে না। ওই অফিস (আরএমপি সদর দপ্তর) থেকে পাঠায়ছে। আমি কাজ করতেছি, ফ্রি হয়ে ফোন দিচ্ছি। রাখো।’
পরে মামলাটি প্রত্যাহারের দাবি ও বাদীকে গ্রেপ্তারের দাবিতে রাজশাহীতে মানববন্ধন করেন বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা–কর্মীরা। সেখানে মাইকে বাজিয়ে শোনানো হয় এসআই রকিবুল ও এমদাদুলের এই কল রেকর্ড।
এরপর বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে পুলিশ। বিষয়টি বোয়ালিয়া জোনের উপকমিশনারকে তদন্ত করতে বলা হয়। প্রাথমিক তদন্ত শেষে এসআই রকিবুল ইসলামকে থানার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে গতকাল পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম শাখার অতিরিক্ত উপকমিশনার গাজিউর রহমান বলেন, ‘রকিবুল ইসলামের গত তিন মাসের চাকরির পারফরম্যান্স খারাপ হওয়ায় তাকে থানা থেকে বদলি করা হয়েছে। এর সঙ্গে ওই কল রেকর্ডের কোনো সম্পর্ক নেই। আর কল রেকর্ডে সে যা বলেছে, তার ব্যাপারে অবশ্য ডিপার্টমেন্ট তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে।’
পুলিশ কমিশনার কার্যালয় থেকে কোনো মামলার এজাহার পাঠানোর প্রসঙ্গে গাজিউর রহমান বলেন, ‘এটা কখনো হয় না। মামলার বাদী থানায় এসে লিখিত এজাহার ওসির কাছে জমা দেন অথবা লিখতে না পারলে অন্য কাউকে দিয়ে লিখে তা বাদীকে পড়ে শোনানো হয়। তিনি তাতে সায় দিলে টিপসই নেওয়া হয়।’ কমিশনার কার্যালয় থেকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মামলা পাঠানো হতে পারে কি না, এমন প্রশ্নে গাজিউর রহমান বলেন, ‘এটা কখনোই সম্ভব নয়। রাতে কমিশনার অফিসে কেউ থাকে না। তা ছাড়া আমি রেকর্ডটি শুনেছি। বলেছে, কমিশনার অফিস থেকে। এখন কমিশনার তো আরও আছে। সেটা ঠিক নয়।’