হাতের গ্রিপ বা আঁকড়ে ধরার শক্তি কীভাবে উন্নত করা যায়
Published: 21st, March 2025 GMT
দৈনন্দিন জীবনে আমাদের যেসব কাজ করতে হয়, তার সিংহভাগই হাত দিয়ে। রান্না, খাওয়া, লেখালেখি, দরজা খোলা কিংবা বয়ামের মুখ খোলা—সবখানেই হাত দিয়ে কাজ করতে হয়, যা গ্রিপের শক্তি বা সোজা বাংলায় হাত দিয়ে কোনো কিছু ধরতে পারার শক্তির ওপর নির্ভরশীল। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে এই গ্রিপ বা হাতের শক্তি কমে আসতে থাকে। তখন একটা বয়াম খোলা বা বোতাম লাগানোর মতো কাজেও অনেক সময় অন্যের সাহায্য নিতে হয়।
হাত দিয়ে আঁকড়ে ধরার শক্তি কতটা হবে, তা কতগুলো বিষয়ের ওপর নির্ভর করে:
১.
শারীরিক দুর্বলতা: শরীর দুর্বল থাকলে হাতের শক্তি কমই থাকবে।
২. হাড়ের ঘনত্ব: শরীরে হাড় মোটা নাকি চিকন, তার ওপর এই শক্তি নির্ভর করে। দেখা যায়, যাঁদের হাড় মোটা, তাঁদের শক্তি চিকন হাড়ের মানুষের থেকে সাধারণত বেশি হয়ে থাকে।
৩. হাত ভাঙা: কারও আগে হাত ভেঙে যাওয়ার মতো দুর্ঘটনা ঘটে থাকলে তাঁদের ক্ষেত্রে এই শক্তি বেশ খানিকটা কমে যায়।
৪. অপুষ্টি: পুষ্টিহীনতায় ভুগতে থাকা মানুষের শারীরিক দুর্বলতার সঙ্গে হাতের গ্রিপের শক্তিও কম হয়।
৫. স্ট্রোক: স্ট্রোকের থেকে আসা দুর্বলতা হাতের শক্তি কমার আরেকটি অনেক বড় কারণ।
৬. বয়স: একটি নির্দিষ্ট বয়সের পর শরীরে দুর্বলতা বাড়তে থাকে। তখন হাতের শক্তিও কমে যায়।
৭. অন্যান্য: স্মৃতিভ্রম, বিষণ্নতা (ডিপ্রেসিভ ডিজঅর্ডার), ঘুম কম হওয়া (ইনসমনিয়া) হাতের শক্তি কমার পেছনে বিশেষভাবে দায়ী।
আরও পড়ুনযেসব খাবার পায়ের মাংসপেশিতে টান লাগা কমায়১৫ মার্চ ২০২৫কীভাবে বাড়ানো যাবে এই শক্তি
১. পুষ্টিকর খাবার: প্রতিদিনের পুষ্টিকর খাবার শরীরের শক্তি বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে হাতের শক্তিও বাড়ায়।
২. ব্যায়াম: শরীর এবং হাতের সুনির্দিষ্ট কিছু ব্যায়ামের মাধ্যমের গ্রিপের শক্তি বেশ উন্নত করা যায়। সে ক্ষেত্রে একজন দক্ষ প্রশিক্ষকের থেকে প্রশিক্ষণ নিতে হবে। নয়তো বিপদের আশঙ্কা থাকে। অনেকে মনে করেন, গ্রিপের শক্তির জন্য শুধু গ্রিপের ব্যায়ামই যথেষ্ট। কিন্তু গ্রিপের শক্তি বাড়াতে গেলে শরীর তথা পুরো হাতের ব্যায়াম প্রয়োজন। অস্থিসন্ধির কোনো রোগ, যেমন রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস হলে চিকিৎসকের কাছে থেকে ওষুধের পাশাপাশি সঠিক ব্যায়াম শিখে নিতে হবে। এবং তা নিয়মিত অনুশীলন করতে হবে। নয়তো হাতের অস্থিসন্ধির ব্যথা বাড়তে পারে, যা আঁকড়ে ধরার শক্তি কমিয়ে দেয় এবং ব্যথা বাড়ায়।
৩. ফিজিওথেরাপি: স্ট্রোক–পরবর্তী হাতের শক্তি বাড়াতে ফিজিওথেরাপির বিকল্প নেই, অবশ্যই এ ক্ষেত্রে প্রশিক্ষিত ফিজিওথেরাপিস্টের সাহায্য নেওয়া প্রয়োজন।
ডা. হিমেল বিশ্বাস, ক্লিনিক্যাল স্টাফ, নিউরোলজি বিভাগ, স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেড, ঢাকা
আরও পড়ুনজিমে না গিয়েও তাঁরা কীভাবে পৃথিবীর সবচেয়ে স্বাস্থ্যবান মানুষ০৬ মার্চ ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ র বলত
এছাড়াও পড়ুন:
অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক
অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।
বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক।
আরো পড়ুন:
রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী
‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত
সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।
প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।
জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।
আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।
লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড
ঢাকা/লিপি