লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ১৫ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ৮ জনকে রায়পুর, লক্ষ্মীপুর সদর ও চাঁদপুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে স্বজনরা জানিয়েছেন। 

শুক্রবার (২১ মার্চ) রাত ১০টার দিকে উত্তর চরআবাবিল ইউপির হারুনগন্জ বাজারের বটতলা এলাকায় ইউপি পরিষদের সামনে এ সংঘর্ষ ঘটে। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রায়পুর ও হায়দরগন্জ ফাঁড়ি পুলিশ ঘটনাস্থলে অবস্থান নেন। 

জানা যায়, রায়পুরে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতির বিরুদ্ধে বিরূপ মন্তব্য করে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতার ফেসবুকে পোস্ট দেওয়াকে কেন্দ্র করে এই সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে।

আহতদের মধ্যে বিএনপি নেতা লিটন হাওলাদার, মর্তুজা মাহি, জয়নাল,  মো.

হেলাল, মো. কাউছার, ইশা রুহুল্লা, মো. মামুন, কালাম বলি, এল এক্স সোহেল ও আল আমিন মামুনকে রায়পুর, লক্ষ্মীপুর সদর ও চাঁদপুর চক্ষু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যদের রায়পুরে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।  

স্থানীয়রা জানান, উত্তর চরআবাবিল ইউপির সেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক আল আমিন মামুন তার ফেসবুক ওয়ালে একই ইউনিয়ন সভাপতি আবদুল বাসেদ হাওলাদারকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য লিখেন। এর প্রতিবাদে শুক্রবার সন্ধ্যায় বাসেদ হাওলাদারের নাতি বিএনপির কর্মী মর্তুজা মাহি তার অনুসারীদের নিয়ে হায়দরগন্জ বাজারে বিক্ষোভ করে ইউনিয়ন পরিষদের সামনে অবস্থান নেন।

এসময় মাহির প্রতিপক্ষ সর্দার গোষ্ঠির উত্তর চরআবাবিল ইউপির সেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক আল আমিন মামুন, যুগ্ম আহবায়ক কালাম বলি ও এলএক্স সোহেলের নেতৃত্বে তাদের ২০-২৫ জন অনুসায়ী বিএনপির সভাপতি বাসেদ হাওলাদারের ছেলে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য পরিদর্শক লিটন হাওলাদার, তার ছেলে যুবদল নেতা মর্তুজা মাহিসহ তার লোকজনের উপর হামলা করলে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। এতে উভয়পক্ষের অন্তত ১৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়।

এ ব্যাপারে রায়পুর উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব সফিকুর রহমান ভুইয়া বলেন, “ফেসবুকে পোস্ট দেয়া নিয়ে 'উত্তর চরআবাবিল ইউপির বিএনপির আহবায়ক আবদুল বাসেদ হাওলাদারের পক্ষের এবং সর্দার গোষ্ঠির স্বেচ্ছাসেবকদলের আহবায়ক আল আমিন মামুন ও কালাম বলির লোকদের মধ্যে মিছিল ও মারামারি হয়। আমি খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে মিমাংসা করে দিয়েছি। প্রয়োজনে দুই গ্রুপকে নিয়ে আবার বসবো।”

রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিজাম উদ্দিন ভুইয়া বলেন, “উত্তর চরআবাবিল ইউপির বিএনপি ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীদের মধ্য ফেসবুকে পোস্ট দেওয়াকে কেন্দ্র করে হায়দরগন্জ বাজারে দুই গ্রুপের বিক্ষোভ ও সংঘর্ষ হয়। পুলিশ ঘটনাস্থল উপস্থিত হয়ে উভয়পক্ষকে শান্ত করেছে। তবে এখনও কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ দিলে আইন গত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ঢাকা/লিটন/টিপু 

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ র স ঘর ষ ফ সব ক

এছাড়াও পড়ুন:

৯ ঘণ্টা ধরে শাহবাগ অবরোধ, জনভোগান্তি চরমে

জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ বাস্তবায়ন এবং দ্রুত স্থায়ী বিধানে যুক্ত করার দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড় ৯ ঘণ্টা ধরে অবরোধ করে রেখেছেন ‘জুলাই যোদ্ধারা’। আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে জুলাই শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের (আহত) ব্যানারে তাঁরা এ ‘অবস্থান কর্মসূচি’ পালন করছেন।

রাজধানীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই মোড় দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এর প্রভাব পড়ে আশপাশের সড়কগুলোতে। এসব সড়কে দিনভর ব্যাপক যানজট তৈরি হয়। ফলে বৃষ্টির মধ্যে জীবনের তাগিদে ঘর থেকে বের হওয়া মানুষদের বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়। বাধ্য হয়ে বিকল্প পথে চলে গণপরিবহন, অনেক যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছাতে দেখা গেছে হেঁটে হেঁটে। বিশেষ করে অফিসফেরত মানুষকে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

বেলা ১১টায় শাহবাগ মোড়ের সঙ্গে যুক্ত সব সড়কের মুখ আটকে দিয়ে সড়কের মাঝখানে অবস্থান নেন অবরোধকারীরা। এ সময় তাঁরা জুলাই সনদ দ্রুত বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন দাবি জানান। অবরোধকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জুলাই যোদ্ধা সংসদ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম ওই কর্মসূচির উদ্যোগ নেয়। এ সময় অবরোধকারীরা ‘জুলাই নিয়ে টালবাহানা, চলবে না চলবে না’, ‘জুলাইয়ের চেতনা দিতে হবে ঘোষণা’, ‘জুলাই সনদ দিতে হবে, দিতে হবে, দিতে হবে’ স্লোগান দিতে থাকেন।

বন্ধ হয়ে পড়ে শাহবাগ থেকে ফার্মগেট, সায়েন্স ল্যাব ও গুলিস্তানগামী প্রধান সড়কগুলোও। ফলে সকাল থেকেই এসব এলাকায় যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এসব সড়কে চলাচলকারী গণপরিবহনগুলো বিকল্প পথে চলাচল করে।

বেলা তিনটার দিকে দেখা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ–সংলগ্ন মূল সড়কে পুলিশের ব্যারিকেড ও বাঁশ ব্যবহার করে সড়ক আটকে রেখেছেন অবরোধকারীরা। শাহবাগ থানার সামনের সড়কেও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেন তাঁরা।

বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ষাটোর্ধ্ব নূরে আলম বলেন, ‘কেরানীগঞ্জে যাব। কোনো বাস পাচ্ছি না। রিকশায় যে কিছু দূর যাব, তারাও ভাড়া বেশি চাচ্ছে।’ একপর্যায়ে হেঁটেই রওনা দেন তিনি।

এক পথচারী ইমরান হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘দুই দিন পরপর সড়ক অবরোধ হয়। এর ভোগান্তি পোহাতে হয় আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের।’

বেলা সাড়ে তিনটার দিকে শাহবাগ থানার সামনে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডা হতে দেখা যায় মোটরবাইক আরোহীদের। শাহবাগ থানার সামনে সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশাকে বাধা দিলে চালক বলেন, ‘এত দাবিদাওয়া এত দিন আছিলো কই।’ তবে গণপরিবহন আটকে দেওয়া হলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যানবাহন এবং তাদের ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করতে দেখা গেছে। এ ছাড়া রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স শুরু থেকেই চলাচল করতে দেখা গেছে।

অবরোধকারীদের দাবি

অবরোধকারীদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে জুলাই শহীদ ও জুলাই যোদ্ধাদের স্বীকৃতি; শহীদ পরিবার ও আহতদের আজীবন সম্মান; চিকিৎসা, শিক্ষা ও কল্যাণের পূর্ণ নিশ্চয়তা প্রদান করা; শহীদ পরিবার ও আহতদের প্রতি দায়িত্ব গ্রহণ করা; আহতদের চিকিৎসা, পুনর্বাসন, কর্মসংস্থান ও কল্যাণমূলক ব্যয় রাষ্ট্রকে বহন করা; আহত ও শহীদ পরিবারের জন্য আজীবন সম্মানজনক ভাতা নিশ্চিত করা; শহীদ পরিবার ও আহতদের জন্য বিশেষ আইনি সুরক্ষা ও সহায়তাকেন্দ্র গঠন করা; শহীদ ও আহতদের ওপর সংগঠিত দমন-পীড়নের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বিচারকাজ সম্পন্ন করা এবং একটি স্বাধীন সত্য ও ন্যায় কমিশন গঠন করা।

শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খালিদ মনসুর বলেন, সকাল থেকেই শাহবাগে অবরোধের কারণে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। শাহবাগ থানা-পুলিশ আলোচনার মাধ্যমে অবরোধকারীদের সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।

তবে জুলাই যোদ্ধা সংসদের মুখ্য সংগঠক মাসুদ রানা জানান, তাঁদের আন্দোলন চলছে। সনদ ঘোষণা না আসা পর্যন্ত তাঁরা এখানেই থাকবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • হতাহতের ছবি-ভিডিও সরাতে ও ছড়িয়ে পড়া বন্ধে পদক্ষেপ চেয়ে রিট, আদেশ ৩ আগস্ট
  • ৯ ঘণ্টা ধরে শাহবাগ অবরোধ, জনভোগান্তি চরমে
  • জুলাই সনদের দাবিতে শাহবাগ অবরোধ, যান চলাচল বন্ধ