মো. নুরুল আফছার, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক, ইলেকট্রো মার্ট গ্রুপ

প্রশ্ন: একজন ক্রেতা গ্রী এসি কেন কিনবেন, এর বিশেষ বৈশিষ্ট্য ও সুবিধা কী?

মো. নুরুল আফছার: গ্রী এসি বর্তমানে বিশ্বে ‘নাম্বার ওয়ান ব্র্যান্ড’। পাশাপাশি বাংলাদেশেও দীর্ঘদিন ধরেই এটি ১ নম্বর স্থানে আছে। এটার পেছনে অনেক কারণ রয়েছে, একজন ক্রেতা যখন কোনো পণ্য ক্রয় করেন, তিনি আসলে পণ্যটি ক্রয় করেন না, তিনি ক্রয় করেন সুবিধা বা তাঁর সমস্যার সমাধান। আমরা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন প্রযুক্তি নেওয়ার মাধ্যমে ক্রেতার সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করে থাকি। যখন যে ধরনের চাহিদা তৈরি হয়, আমরা আমাদের প্রযুক্তির মাধ্যমে সেটা নিশ্চিত করি। যেমন আপনি জানেন বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে সাম্প্রতিক প্রযুক্তি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই। আমরা সম্প্রতি আমাদের ক্লিভিয়া সিরিজে এই প্রযুক্তি যুক্ত করেছি। যেটার মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঘরের তাপমাত্রা বাইরের তাপমাত্রার সঙ্গে সমন্বয় করে, ঘরে কী পরিমাণ মানুষ আছে, সেটা বুঝে গ্রী এসি আরামদায়কভাবে বাতাস দেয়। এর মাধ্যমে ঘরের বাতাসকে আরামদায়ক করার পাশাপাশি বিদ্যুতের সাশ্রয় করে এবং পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখে। 

আমাদের এসিগুলো বাংলাদেশের পরিবেশের সঙ্গে মানানসই। বাংলাদেশের ক্রেতারা এসি কেনার ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি বিষয়ে গুরুত্ব প্রদান করে থাকেন। ক্রেতাদের এই সব বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে গ্রী এসি উৎপাদন করা হয়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো আই–ফ্লো টেকনোলজি, যার মাধ্যমে যেমন বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে, পাশাপাশি আরামদায়ক তাপমাত্রা পাওয়ার জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা। 

প্রশ্ন: আপনাদের বাজারে অংশীদারত্ব কত?

মো.

নুরুল আফছার: বর্তমানে বাংলাদেশের বাজারে যতগুলো এসি বিক্রি হয়, তার অধিকাংশই গ্রী এসি। বাংলাদেশের এসি বাজারের সিংহভাগই আমাদের দখলে। 

প্রশ্ন: এসি কি এখনো আমদানিনির্ভর শিল্প? কেন?

মো. নুরুল আফছার: এই খাত এখনো পুরোপুরি স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। কারণ, এর প্রায় ৮০-৯০ শতাংশ কাঁচামাল আমদানিনির্ভর। ফলে আমরা আশা করি, ভবিষ্যতে এ খাতকে আরও শক্তিশালী করার জন্য সরকার বিগত সময়ে প্রদত্ত সুযোগ-সুবিধা ২০৩৫ সাল পর্যন্ত বর্ধিত করবে এবং বছরভিত্তিক না করে দীর্ঘমেয়াদের ভিত্তিতে সুবিধা প্রদান করবে। তাহলে আমরা দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করতে পারব। এর মাধ্যমে রপ্তানির একটি নতুন খাত এবং দেশে বিশাল কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে বলে আশাবাদী।

প্রশ্ন: দেশে কোন ধরনের এসির চাহিদা বেশি?

মো. নুরুল আফছার:  দেশে বর্তমানে দেড় টন থেকে তিন টন পর্যন্ত স্প্লিট টাইপ এসির চাহিদা সবচেয়ে বেশি। তবে আমাদের উৎপাদিত এসির চাহিদা বাণিজ্যিক ভবন ও বাসাবাড়ি—দুই জায়গায়ই বেশি। এক টন থেকে পাঁচ টনের এসিও আমাদের রয়েছে। তবে যেহেতু সবাই এখন স্মার্ট প্রযুক্তি চায়, সেহেতু দিন দিন ইনভার্টার এসির চাহিদা বাড়ছে। কারণ, ইনভার্টার এসি বিদ্যুৎসাশ্রয়ী। 

প্রশ্ন: বিক্রয়োত্তর সেবা নিয়ে আপনাদের নীতিমালা কী?

মো. নুরুল আফছার: ইলকেট্রনিক যন্ত্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে। সার্ভিস যদি ভালোভাবে না হয়, সে ক্ষেত্রে ইলেকট্রনিক যন্ত্র ব্যবহার করা খুবই কষ্টকর। সেই জায়গা থেকে আমরা আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারভিত্তিতে সার্ভিস নিশ্চিত করে থাকি। আমাদের পণ্যের যেকোনো সমস্যা হলে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে সমাধান নিশ্চিত করি। এটি বাংলাদেশের যেকোনো প্রান্তেই হোক। গ্রাহকের আমাদের পণ্য নিয়ে কোথাও যেতে হয় না। যেকোনো সমস্যা হটলাইন নম্বর ১৬৬৪৯ কল করে গ্রাহক তাঁর সমস্যা জানাতে পারবেন এবং স্বল্পতম সময়ের মধ্যে আমরা এটার সমাধান নিশ্চিত করি। এ ছাড়া বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা এবং থানা পর্যায়েও আমাদের নিজস্ব সার্ভিস সেন্টার এবং দক্ষ জনবল রয়েছে সার্বক্ষণিক সেবা নিশ্চিত করার জন্য।

প্রশ্ন: এসি শিল্পের বিকাশে সরকারের কিছু করার আছে?

মো. নুরুল আফছার: যেহেতু এখন পর্যন্ত এসির কাঁচামালরে একটি বড় অংশই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়, সে ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে শুল্কের ব্যাপারে সহযোগিতা করলে এই শিল্পে আরও উত্তরোত্তর বাংলাদেশের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বাইরেও রপ্তানি করা সম্ভব। কয়েক বছর ধরে দেশের ইলেকট্রনিকস ও হোম অ্যাপ্লায়েন্স খাতকে এগিয়ে নিতে শুল্ক, কর, ভ্যাট অব্যাহতিসহ নানা সুবিধা সরকার দিয়ে আসছে। ফলে আমরা আশা করি, ভবিষ্যতে এ খাতকে আরও শক্তিশালী করার জন্য সরকার বিগত সময়ে প্রদত্ত সুযোগ-সুবিধা ২০৩৫ সাল পর্যন্ত বর্ধিত করবে এবং বছরভিত্তিক না করে দীর্ঘমেয়াদের ভিত্তিতে দেবে।

প্রশ্ন: এসিতে উদ্ভাবনী প্রযুক্তির প্রয়োগ আপনারা কীভাবে করছেন? এসি নিয়ে আপনাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

মো. নুরুল আফছার: আমাদের গবেষণাকেন্দ্রে সার্বক্ষণিক এসি নিয়ে গবেষণা করা হচ্ছে। বর্তমান দেশের আবহাওয়া ও মানুষের চাহিদার সঙ্গে ভারসাম্য করে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন প্রযুক্তি আমরা নিচ্ছি। ভবিষ্যতেও যে ধরনের চাহিদা তৈরি হবে, তা মেটানোর জন্য আমরা প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছি। আমরা গ্রীর সঙ্গে প্রযুক্তি শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন প্রযুক্তি এসিতে সংযোজনের পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি।

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন: পল্লব মোহাইমেন

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন শ চ ত কর এস র চ হ দ র জন য আম দ র সরক র সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইসরায়েলের হামলা

রবিবার বিকেল থেকে ইরানজুড়ে নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সামরিক স্থাপনার পাশাপাশি ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

রবিবার রাতে ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইদ খাতিবজাদেহ ইসরায়েলি হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে তিনি জানান, রবিবার রাজধানী তেহরানে ইসরায়েলি হামলায় ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খবর তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলুর।

এক্স-পোস্টে সাইদ বলেছেন, “ইসরায়েলের অপরাধী শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঠিক বিপরীতে অবস্থিত ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবনে ইচ্ছাকৃত এবং নির্মম হামলা চালিয়েছে।”

আরো পড়ুন:

ইসরায়েলের নতুন হামলায় ইরানের আইআরজিসির গোয়েন্দা প্রধান নিহত

ইসরায়েলে ৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ইরান, তেল আবিব ও হাইফাতে সরাসরি আঘাত

উপ-মন্ত্রী আরো বলেন, “এই হামলায় বেশ কয়েকজন বেসামরিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন, আমার বেশ কয়েকজন সহকর্মীও আহত হয়েছেন, যাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।”

সাইদ বলেন, “এটি আরো একটি স্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি শাসকগোষ্ঠীর চলমান ও নিয়মতান্ত্রিক আগ্রাসন অভিযানের অংশ।”

এর আগে শনিবার ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা তেহরানের অস্ত্র উৎপাদন ক্ষমতা ধ্বংস করার লক্ষ্যে ইরানের আইআরজিসি ও সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে রবিবার নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে।

বিবৃতিতে  বলা হয়, এই হামলায় ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি), গার্ডস কুদস ফোর্স এবং ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর অবকাঠামো লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আরো জানিয়েছে, ইরানজুড়ে অসংখ্য অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রে হামলা চালানো হয়েছে। 

ইরানি বার্তাসংস্থা তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েলের এই হামলায় আইআরজিসিরি গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি এবং তার সহকারী হাসান মোহাকিক নিহত হয়েছেন। এছাড়া মোহসেন বাঘারি নামে আইআরজিসির আরো একজন জেনারেল নিহত হয়েছেন। এর প্রতিশোধ নিতে রবিবার রাতে ইসরায়েলে ৫০টি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও শতাধিক ড্রোন ছুড়েছে ইরান।

ইসরায়েলের ফায়ার ও রেসকিউ সার্ভিসের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, উত্তর ইসরায়েলে দুটি এবং হাইফায় একটি আবাসিক ভবনে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হানার খবর পেয়েছে তারা।

ইসরায়েলি জাতীয় জরুরি সেবা সংস্থা জানিয়েছে, হাইফায় ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে সাতজন আহত হয়েছেন। এছাড়া কিরিয়াত গাটের কাছে দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি শহরে একজন আহত হয়েছেন।

এ ঘটনায় ইসরায়েলি সেনাপ্রধান ইয়াল জামির ইরানের ওপর আক্রমণ আরো তীব্র করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একটি বিবৃতি জারি করে ইসরায়েরি সেনাপ্রধান বলেছেন, “আমরা আমাদের অভিযান তীব্রতর করে যাব এবং এটি করে, আগামী বছরগুলোতে আমাদের নিরাপত্তা জোরদার করব। আমরা জানতাম এর একটি মূল্য দিতে হবে এবং এটিই বোঝায় যে, আমরা কেন এখনই পদক্ষেপ নিয়েছি, তা অনেক দেরি হওয়ার আগেই।”

ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে ইসরায়েলি হামলায় ২২৪ জন নিহত এবং ৯০০ জন আহত হয়েছেন।

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ১৩ জন নিহত এবং ৩৭০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ