গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় হামাস নেতা ও তার স্ত্রী নিহত
Published: 24th, March 2025 GMT
গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনিস শহরে ইসরায়েলি বিমান হামলায় হামাসের শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক নেতা সালাহ আল-বারদাউইল এবং তার স্ত্রী নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন হামাস কর্মকর্তারা। গত মঙ্গলবার যুদ্ধবিরতির পতনের পর এই হামলা ছিল সবচেয়ে তীব্র বিমান হামলাগুলোর মধ্যে একটি।
হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে গাজায় মৃতের সংখ্যা ৫০,০০০ ছাড়িয়েছে। শুধুমাত্র রবিবার খান ইউনিস এবং রাফাহতে অন্তত ৩০ জন নিহত হয়েছেন।
৬৬ বছর বয়সী বারদাউইল হামাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতা ছিলেন। ইয়াহিয়া সিনওয়ার এবং রাওহি মুশতাহার নিহত হওয়ার পর তিনি হামাসের সর্বোচ্চ পদস্থ রাজনৈতিক নেতা হিসেবে বিবেচিত হতেন। আট সন্তানের জনক বারদাউইল হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোতে ২০২১ সালে পুনরায় নির্বাচিত হন।
যুদ্ধবিরতির ভেঙে যাওয়ার পর ইসরায়েল আবারও গাজায় ব্যাপক বিমান হামলা শুরু করে। ইসরায়েল দাবি করে, হামাস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। অন্যদিকে, হামাস অভিযোগ করে যে ইসরায়েল কাতার, মিশর এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত মূল চুক্তি থেকে সরে এসেছে। চুক্তির আওতায় ইসরায়েলের সেনা প্রত্যাহার, ইসরায়েলি বন্দিদের মুক্তি এবং গাজার পুনর্গঠনের আলোচনা অন্তর্ভুক্ত ছিল।
ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি জানিয়েছে, রাফাহতে ইসরায়েলি হামলার পর আহতদের উদ্ধারে গিয়ে তাদের বেশ কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্স ইসরায়েলি বাহিনীর দ্বারা ঘিরে ফেলা হয়। সংস্থাটি আরও জানায়, কিছু প্যারামেডিক আহত হয়েছেন এবং একটি উদ্ধারকারী দল দীর্ঘক্ষণ ধরে অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা ভয়াবহ পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়েছেন। রাফাহর বাসিন্দা আলা আল-দিন সাবাহ বিবিসিকে বলেন, গুলিগুলো বৃষ্টির মতো ঝরছে। একজন নারী গুলিবিদ্ধ হয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন, কিন্তু অ্যাম্বুলেন্স তার কাছে পৌঁছাতে পারছে না। আমি একজন প্যারামেডিককে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখছি, তিনি চিৎকার করছেন।
গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের নেতৃত্বে ইসরায়েলের ওপর এক নজিরবিহীন হামলায় প্রায় ১,২০০ ইসরায়েলি নিহত হন এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল গাজায় ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে, যার ফলে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হন এবং অবকাঠামো ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়।
যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনার কোনো ইতিবাচক অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। আন্তর্জাতিক উদ্বেগ বাড়লেও গাজায় মানবিক সংকট ক্রমেই গভীরতর হচ্ছে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সব্যসাচী কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন
প্রথিতযশা অধ্যাপক ও পরিসংখ্যানবিদ কাজী মোতাহার হোসেন ছিলেন একজন সব্যসাচী মানুষ। তিনি নিজের কাজের মাধ্যমে বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। তাঁর ঐতিহ্য শিক্ষার্থীদের ধারণ করতে হবে।
জ্ঞানতাপস কাজী মোতাহার হোসেনের ১২৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।
অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তৃতা, বৃত্তি, পদক, পুরস্কার ও সনদ দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানের যৌথ আয়োজক কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগ এবং পরিসংখ্যান গবেষণা ও শিক্ষণ ইনস্টিটিউট।
অনুষ্ঠানে ‘যুগলের বন্ধন: কাজী নজরুল ইসলাম-কাজী মোতাহার হোসেন’ শীর্ষক স্মারক বক্তৃতা দেন অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী। তিনি দুই বন্ধুর সম্পর্কের রসায়নের নানা দিক তুলে ধরেন।
প্রধান অতিথি বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, এই অনুষ্ঠানের দুটো প্রাপ্তি আছে। প্রথমত, মানুষের অবদান ও মেধাকে স্বীকার করা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, এই উপমহাদেশের একজন প্রথিতযশা সব্যসাচী মানুষের ঋণ স্বীকার করা হচ্ছে।
কাজী মোতাহার হোসেন যেকোনো বিবেচনায় একজন দার্শনিক বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। প্রথম সারির পরিসংখ্যানবিদ, বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা ছাড়াও তিনি অনেকগুলো সামাজিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন, প্রভাব বিস্তার করেছেন। একজন মানুষের ছোট জীবদ্দশায় এত গুণ সন্নিবেশিত করা কঠিন। কিন্তু তিনি তা করে দেখিয়েছেন।
সবাইকে নিয়ে চলা, প্রতিষ্ঠান তৈরি করা, নিজের জগতের বাইরে নানা কিছুতে হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মতো ঐতিহ্য কাজী মোতাহার হোসেন করে গেছেন বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, তাঁর সম্মানে যাঁরা আজ স্বীকৃতি পেলেন, তাঁরা এই ঐতিহ্যকে ধারণ করবেন। এটা (বিশ্ববিদ্যালয়) যে সামাজিক প্রতিষ্ঠান, সে বার্তা দেবেন। যেসব শিক্ষার্থী সম্মাননা পাচ্ছেন, তাঁদের ছোট প্রোফাইল তৈরি করে ওয়েবসাইটে তুলে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল মাজেদ বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন একজন সব্যসাচী মানুষ ছিলেন। বিজ্ঞানের এমন কোনো দিক নেই, যেখানে তাঁর পদচারণা ছিল না। তিনি দাবা খুব পছন্দ করতেন। দাবা খেলার কথা শুনলে তিনি ছুটে যেতেন। কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে তাঁর শোনা নানা গল্প তিনি স্মৃতিচারণা করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জাফর আহমেদ খান বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন পরিসংখ্যান চর্চার পথিকৃৎ ছিলেন। বিজ্ঞান, দাবাচর্চারও পথিকৃৎ ছিলেন। এমন কোনো পুরস্কার নেই যে, তিনি পাননি। তাঁর দেখানো পথে যেন শিক্ষার্থীরা নিজেদের আলোকিত করতে পারেন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী রওনাক হোসেন। এই আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের সেরা শিক্ষার্থীদের বই, নগদ অর্থ ও সনদ তুলে দেওয়া হয়। এ ছাড়া কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।