নির্বাহী পরিচালকের (ইডি) চেয়ার দখলের দুইদিন পরই চাকরি হারালেন বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম খান।

মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান এক অফিস আদেশে তাকে বাধ্যতামূলক অবসর দেন।

অফিস আদেশে বলা হয়েছে, ‘জাহাঙ্গীর আলম খানের চাকরিকাল ২৫ বছর পূর্ণ হয়েছে এবং যেহেতু সরকার জনস্বার্থে তাকে সরকারি চাকরি হতে অবসর প্রদান করা প্রয়োজন মর্মে বিবেচনা করে, সেহেতু সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর ধারা ৪৫ ও সরকারি চাকরি (সংশোধন) আইন, ২০১৩ এর উপধারা ২ (গ) তে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে তাকে সরকারি চাকরি হতে অবসর প্রদান করা হলো।’

জনস্বার্থে জারিকৃত এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে বলেও এই অফিস আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে।

জাহাঙ্গীর আলম খান বিএমডিএ'র সেচ শাখার প্রধান ছিলেন। গত রবিবার (২৩ মার্চ) কোনো অফিস আদেশ ছাড়াই বিএমডিএর ইডির পদ ‘দখল’ করেন। ওই পদে ছিলেন সরকারের অতিরিক্ত সচিব শফিকুল ইসলাম। তাকে রীতিমতো জোর করেই অফিস থেকে বের করা হয়।

সরকার বিভিন্ন সময় প্রশাসনিক এই পদটিতে বিএমডিএর বাইরের কর্মকর্তাদের পদায়ন করে থাকে। গত বছরের জুলাইয়ে তাঁকে বিএমডিএর ইডি হিসেবে পদায়ন করা হয়েছিল। পরে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রেষণ-১ শাখার প্রজ্ঞাপনে তাঁকে রাজশাহীতে অবস্থিত বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক হিসেবে পদায়ন করা হয়।

তবে রেশম উন্নয়ন বোর্ডে না গিয়ে শফিকুল ইসলাম এক মাস ধরে বিএমডিএতেই ছিলেন। এরই মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কিছু সিদ্ধান্ত নেন। গত রবিবার দুপুরেও তিনি তার কার্যালয়ে ছিলেন। তখন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ও সেচ শাখার প্রধান জাহাঙ্গীর আলম খানসহ কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী তার দপ্তরে যান। তারা রবিবারের মধ্যেই দপ্তর ছেড়ে রেশম বোর্ডে যাওয়ার জন্য শফিকুল ইসলামকে চাপ দেন। এ সময় উভয়ের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা হয়। তখন দুই-একজন শফিকুলকে চেয়ার থেকে তোলার জন্যও এগিয়ে যান। এ অবস্থায় শফিকুল ইসলাম দায়িত্ব ছাড়তে রাজি হন।

পরে একটি চিঠি প্রস্তুত করা হয়। এই চিঠিতে শফিকুল ইসলাম দায়িত্ব ছাড়লেন এবং জাহাঙ্গীর আলম খান দায়িত্ব গ্রহণ করলেন বলে স্বাক্ষর করেন। এভাবে আরো দুইজন জ্যেষ্ঠ অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীকে টপকে কোনো অফিস আদেশ ছাড়াই ইডির চেয়ারে বসে যান জাহাঙ্গীর আলম খান।

রবিবার দুপুরে ইডির দপ্তরে গিয়ে জাহাঙ্গীর আলম খানকে ওই চেয়ারে বসে থাকতে দেখা যায়। তখন তিনি বলেন, ‍“আমি দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। তবে অফিস আদেশ জারি হয়নি। এটা হয়ে যাবে।”

বিএমডিএ সূত্র জানিয়েছে, রবিবার বিএমডিএ’র শীর্ষ কর্মকর্তার মৌন সম্মতিতেই শফিকুল ইসলামকে জোর করে বের করা হয়েছিল। জাহাঙ্গীরকে ইডি করার ব্যাপারে শীর্ষ কর্মকর্তার সাঁয় ছিল।

বাধ্যতামূলক অবসরের বিষয়ে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর আলম খান মঙ্গলবার রাতে বলেন, “আমিও এ রকম একটা চিঠি দেখতেছি।’ 

এটা কি বাধ্যতামূলক অবসরের চিঠি জানতে চাইলে তিনি বলেন, “দেখে তাই তো মনে হচ্ছে।’ অফিসের কারো কাছে জেনে বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছেন কি না -এ প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীর আলম খান বলেন, “দেখি, জানার চেষ্টা করছি।”

বিএমডিএ পরিচালনা পর্ষদের সদস্য সাইফুল ইসলাম হীরক বলেন, “ইডি হিসেবে ছিলেন একজন অতিরিক্ত সচিব। এটা সরকারি পোস্ট, শফিকুল ইসলামকে জোর করে বের করে সেই পোস্টকে অসম্মান করা কোনো অবস্থায় সমীচিন হয়নি। এ ধরনের ঘটনার পর ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে ভবিষ্যতে বিএমডিএতে আরো খারাপ ধরনের দৃষ্টান্ত হতো। বাধ্যতামূলক অবসরের যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেটা যথাযোগ্য হয়েছে। বিএমডিএ’র জন্য এটা শিক্ষণীয় হয়ে থাকবে।”

ঢাকা/কেয়া/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জ হ ঙ গ র আলম খ ন কর মকর ত ব এমড এ রব ব র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ঘোড়ার গাড়িতে চড়িয়ে শিক্ষক ও অফিস সহায়ককে বিদায়

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে ঘোড়ার গাড়িতে চড়িয়ে স্কুল শিক্ষক ও অফিস সহায়ককে বিদায় জানিয়েছেন স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সরকারি নলডাঙ্গা ভূষণ পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ইংরেজি বিষয়ের সিনিয়র শিক্ষক আজিবর রহমান ও অফিস সহায়ক মশিয়ার রহমানকে বিদায় সংবর্ধনা জানানো হয়।

বিদায় সংবর্ধনা উপলক্ষে বিদ্যালয়ের হলরুমে স্মৃতিচারণামূলক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় বক্তব্য রাখেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও বিদ্যালয়ের সভাপতি মো. দেদারুল ইসলাম, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহীন আলম, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মকবুল হোসেন তোতা, সিনিয়র শিক্ষক রুহুল আমিন প্রমুখ।

আরো পড়ুন:

সাতক্ষীরায় নিখোঁজের ৩৬ দিনেও স্কুলছাত্রী উদ্ধার হয়নি

স্কুল ভবনে ক্লাস চলাকালে বিধ্বস্ত হয় প্রশিক্ষণ বিমান

আয়োজকরা জানান, দীর্ঘদিন শিক্ষক আজিবর রহমান ও অফিস সহায়ক মশিয়ার রহমান এই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছেন। সম্প্রতি তারা অবসরে গেছেন। তাদের বিদায় সংবর্ধনা স্মরণীয় করে রাখতে ঘোড়ার গাড়িতে চড়িয়ে বিদায় জানানো হয়েছে। এ সময় বিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

শিক্ষক আজিবর রহমান বলেন, ‘‘দীর্ঘ ২১ বছর এই বিদ্যালয়ে চাকরি করেছি। চলার পথে কোনো ভুল-ত্রুটি হলে সবাই ক্ষমা করবেন। চাকরি জীবন শেষে এমন সংবর্ধনা পাব কল্পনাও করিনি। এ জন্য আয়োজকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’’ এ সময় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

প্রধান শিক্ষক মকবুল হোসেন তোতা বলেন, ‘‘চাকরি জীবনে সবাইকেই অবসর নিতে হবে। আজ আমরা ইংরেজি শিক্ষক আজিবর রহমান ও অফিস সহায়ক মশিয়ার রহমানকে বিদায় জানিয়েছি। এটা কষ্টের হলেও সবাইকে মেনে নিতে হবে। বিদায়ের দিনটি স্মরণীয় করে রাখতে তাদের দুজনকে ঘোড়ার গাড়িতে চড়িয়ে বিদায় জানানো হয়েছে।’’

ঢাকা/সোহাগ/রাজীব

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঘোড়ার গাড়িতে চড়িয়ে শিক্ষক ও অফিস সহায়ককে বিদায়