যে হোটেলে রুম সার্ভিসের কাজ করতেন, সেই হোটেলে অতিথি বোমান ইরানি
Published: 26th, March 2025 GMT
বলিউডের দাপুটে অভিনেতা বোমান ইরানি। অভিনয়ে পা রাখার আগে একটি হোটেলে রুম সার্ভিস বয়ের চাকরি করতেন। সেই পাঁচতারকা হোটেলে অতিথি হলেন বোমান ইরানি। স্মৃতিবিজড়িত হোটেলে দাঁড়িয়ে গল্প শোনাতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন ‘থ্রি ইডিয়টস’খ্যাত এই তারকা।
বোমান ইরানি তার ইনস্টাগ্রামে একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন। তাতে তিনি বলেন, “অ্যাপোলো বান্দার কোলাবায় অবস্থিত তাজ মহল প্যালেস হোটেলে দাঁড়িয়ে আছি। আইকনিক তাজ হোটেলের গমনাগমনের এই পথটি দেখুন, চমৎকার আর্কিটেক্ট, দেয়ালে পেইন্টিং। ১৯৭৯ সালে এখানে আমি কাজ করেছি। যার কারণে এই জায়গাটি আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ।”
‘মুন্না ভাই এমবিবিএস’ তারকা বোমান ইরানি রুমে রুমে খাবার পৌঁছে দিতেন। তা জানিয়ে এই অভিনেতা বলেন, “আমি অন্যান্য বিভাগেও কাজ করতাম। তবে সবচেয়ে বেশি কাজ করেছি এই প্যাসেজে। রুম সার্ভিসে কাজ করার সময়ে হেঁটে ওঠানামা করতাম। চা-কফি, খাবার, ড্রিংকস, ফল-ফ্রুটস ঝুড়িতে করে রুমে রুমে নিয়ে যেতাম। এখান থেকে অনেক কিছু শিখেছি।”
আরো পড়ুন:
আলিয়ার সঙ্গে কেন রোমান্স করতে চান না ইমরান হাশমি?
ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনার কবলে সোনু সুদের স্ত্রী
পাঁচতারকা হোটেলে রুম সার্ভিসের চাকরি করলেও অনেক কিছু শিখেছেন। এ তথ্য উল্লেখ করে বোমান ইরানি বলেন, “এটি আমাকে শৃঙ্খলা শিখিয়েছে, এটি আমাকে শিখিয়েছে জীবনে কোনো কিছু সহজে আসে না। আপনাকে আপনার পাওনা পরিশোধ করতে হবে, আপনাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। একটি শোয়ের জন্য আজ এখানে এসেছি। করপোরেট কথাবার্তা শেষ। তারা চমৎকার স্যুট দিয়েছে, তারা আমাদের এখানে রাতের খাবারও খাওয়াবেন। এখানে ফিরে এসে খুব ভালো লাগছে।”
ভিডিওর শেষের দিকে কথা বলতে বলতে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন বোমান ইরানি। তবু মুখে হাসি রেখেই এই অভিনেতা বলেন, “আমি আজ গর্বিত। কারণ আমার জীবনের সাইকেল পূর্ণ হয়েছে। আমি অভিভূত।”
বোমান ইরানির ছোটবেলা এমন জৌলুশে ভরা ছিল না। বাবাকে কাছে না পাওয়ায় অনেক ছোটবেলায় মায়ের সঙ্গে সংসারের হাল ধরতে হয়েছিল। স্নাতক ডিগ্রি লাভের পর বোমান ইরানি এই হোটেলে চাকরি নেন।
তাজ হোটেলের রুম সার্ভিসের চাকরি ছেড়ে মায়ের সঙ্গে পৈতৃক বেকারি পরিচালনায় নামেন বোমান। মঞ্চনাটক দিয়ে তার অভিনয়জীবন শুরু হয়। তার আগে ফটোগ্রাফির দিকে ঝুঁকেছিলেন। অভিনয়কে পেশা হিসেবে নেওয়ার আগ পর্যন্ত ছবি তোলার কাজ করতেন বোমান।
তথ্যসূত্র: লাইভ মিন্ট
ঢাকা/শান্ত
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চলচ চ ত র ক জ কর
এছাড়াও পড়ুন:
রংপুর সমন্বিত শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে পালিয়েছে ৪ কিশোরী
রংপুর সমন্বিত শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্র (বালিকা) থেকে চার কিশোরী নিখোঁজের ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। গতকাল রোববার পুলিশ দু’জনকে উদ্ধার করলেও এখনও খোঁজ মেলেনি দু’জনের। উদ্ধার হওয়া কিশোরীদের অভিযোগ, পুনর্বাসন কেন্দ্রে তাদের ওপর শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতন হতো। তাই জীবন বাঁচাতে তারা পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে পালিয়ে গিয়েছিল।
জানা যায়, রংপুর নগরীর দেওডোবা ডাংগীরপাড় এলাকায় সমাজসেবা কার্যালয়ের অধীন ১০০ শয্যাবিশিষ্ট সমন্বিত শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্রে বর্তমানে প্রায় ৬৮ জন শিশু-কিশোর রয়েছে। এখানে সাধারণ হারিয়ে যাওয়া, প্রতিবন্ধী, এতিম ও মামলা সংক্রান্ত কারণে আদালত থেকে পাঠানো শিশু-কিশোরদের ঠাঁই হয়। গত ১২ জুন রাতে প্রতিষ্ঠানটি থেকে চার কিশোরী পালিয়ে যায়। তাদের উদ্ধারে সমাজসেবা কার্যালয়ের তেমন উদ্যোগ না থাকলেও পরিবারের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ দু’দিন পর রোববার দুই কিশোরীকে উদ্ধার করে। ওই দিনই পুলিশ তাদের আদালতের মাধ্যমে আবার সমন্বিত শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠায়। কিন্তু আদালতের বারান্দায় থাকা এক কিশোরীর মা মেয়েকে আবার পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠাতে আপত্তি জানান।
ওই কিশোরীর মা সাংবাদিকদের জানান, পুনর্বাসন কেন্দ্রে তাঁর মেয়ের ওপর শারীরিক মানসিক ও যৌন নির্যাতন হতো। মেয়ের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত তিনি। এ ছাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে মেয়ে নিখোঁজ হলে তিনি থানায় জিডি করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তা করতে দেয়নি সমাজসেবা কর্মকর্তারা। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে সমাজসেবা কর্মকর্তারা থানায় জিডি করেন। এমন পরিস্থিতিতে মেয়েকে পুনর্বাসন কেন্দ্রে নয়, থানার ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখতে পুলিশের কাছে আবেদন করেন। কিন্তু আদালতের আদেশ ছাড়া এটি সম্ভব নয় বলে পুলিশ জানায়।
পালিয়ে যাওয়া ওই কিশোরী বলেন, পুনর্বাসন কেন্দ্রে নিবাসীদের ওপর নানা ধরনের শারীরিক-মানসিক ও যৌন নির্যাতন করা হয়। সম্প্রতি একটি মেয়ে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছিল। এর পর ওই মেয়েটির ওপর শারীরিক-মানসিক নির্যাতন চালানো হয়। সেই মেয়েটিকে এখন আর কেন্দ্রে দেখা যাচ্ছে না। আমি এর প্রতিবাদ করলে আমাকে গালাগাল করা হয়। আদালত আমার মঙ্গলের জন্য পুনর্বাসন কেন্দ্রে রেখেছিল। কিন্তু সেখানকার অবস্থা দেখে জীবন বাঁচাতে পালিয়ে গিয়েছিলাম। কেন্দ্রে আমার সঙ্গে পালিয়ে যাওয়া আরও দু’জন শারীরিক-মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে। অনেক মেয়েই নির্যাতনের শিকার হয়ে সেখানে আর থাকতে চায় না, প্রায় সময় কান্নাকাটি করে।
আলাপকালে পুনর্বাসন কেন্দ্রের দায়িত্বরত এক নারী গণমাধ্যম থেকে মেয়েটিকে আড়াল করতে তাকে টেনে নিয়ে দ্রুত আদালতপাড়া ত্যাগ করার চেষ্টা করেন। এ সময় সাংবাদিকরা কিশোরীকে নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে দায়িত্বরত ওই নারী কিছু বলতে অস্বীকৃতি জানান। একই বিষয়ে উদ্ধার হওয়া আরেক কিশোরীর বক্তব্য নিতে চাইলে নির্যাতনের ভয়ে মুখ খোলেনি সে।
আজ সোমবার সমন্বিত শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্রে (বালিকা) সরেজমিন দেখা যায়, গেট বাইরে থেকে বন্ধ। পরিদর্শনের জন্য গণমাধ্যমকর্মীর পরিচয় দিলেও প্রথমে গেট খুলতে রাজি হননি দায়িত্বপ্রাপ্তরা। পরে গেট খুলে গণমাধ্যমকর্মীরা তাদের সঙ্গে কথা বলেন।
জেরার মুখে চার কিশোরী পালিয়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করেন কেন্দ্রের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম। তাঁর দাবি, নির্যাতনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। মেয়েরা নিজ ইচ্ছায় পালিয়ে গেছে। সাধারণত কেন্দ্রের গেটের চাবি আউটসোর্সিংয়ে কর্মরত আয়া রুমা বেগমের কাছে থাকে। চার কিশোরী পালিয়ে যাওয়ায় তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া এ ঘটনায় রংপুর জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মনিমুন আক্তারকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক অনিল চন্দ্র বর্মণের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি কোনো কথা বলতে চাই না।
এদিকে নিরাপদ আশ্রয় প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অবিলম্বে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তসহ দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন মানবাধিকার কর্মীরা। মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট এ এ এম মুনীর চৌধুরী বলেন, যে শিশু-কিশোরীদের নিরাপদ আশ্রয় দেওয়া ও দেখভালের জন্য রাষ্ট্র দায়িত্ব নিয়েছে, তাদের কেউ যদি হারিয়ে যায়, নির্যাতনের শিকার হওয়ার অভিযোগ করে তাহলে তা উদ্বিগ্নের বিষয়। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দ্রুত তদন্তসহ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ এবং নিবাসীদের রক্ষা করতে সমাজসেবা অধিদপ্তর, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।