ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের প্রতি কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। হামাসের হাতে বন্দী থাকা বাকি জিম্মিদের মুক্তি না দেওয়া হলে গাজা আংশিক দখল করে নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। পাল্টা হুমকি দিয়ে হামাস বলেছে, ইসরায়েল হামলা বন্ধ না করলে জিম্মিদের ‘কফিনে’ করে ফেরত পাঠানো হবে।

গাজায় ১৫ মাস ধরে ইসরায়েলের নির্বিচার হামলার পর গত ১৯ জানুয়ারি প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতি শুরু হয়। ইসরায়েলের ইচ্ছা, প্রথম ধাপের এই যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়িয়ে সব জিম্মিকে ইসরায়েলে ফিরিয়ে আনা। তবে হামাসের দাবি, চুক্তি অনুযায়ী যুদ্ধবিরতি দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপে নিয়ে যেতে হবে। এর মাধ্যমে গাজায় স্থায়ীভাবে যুদ্ধ বন্ধ হবে।

এমনই দ্বন্দ্বের মধ্যে ১৮ মার্চ গাজায় আবার নৃশংসতা শুরু করে ইসরায়েল। দেশটির কর্মকর্তাদের ভাষ্য, জিম্মিদের ফিরিয়ে আনতে নতুন করে হামলা শুরু করেছেন তাঁরা। প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতির সময় ৩৩ জনকে মুক্তি দেওয়ার পর এখনো হামাসের হাতে ৫৮ জন বন্দী রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৩৪ জন মারা গেছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এমন পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের পার্লামেন্টে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘আমাদের জিম্মিদের মুক্তি না দিতে হামাস যত গোঁ ধরে থাকবে, আমরা তত জোরদার চাপ দেব। এর মধ্যে (গাজার) অঞ্চল দখলসহ অন্যান্য পদক্ষেপ রয়েছে। সেগুলো আমি এখানে বিস্তারিত বলব না।’

এর আগে বুধবার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ বলেন, গাজার অন্য এলাকাগুলোয় পূর্ণ শক্তি নিয়ে অভিযান শুরু করা হবে। পাশাপাশি আরও এলাকা থেকে বাসিন্দাদের চলে যাওয়া নির্দেশ দেওয়া হবে। এরপরই গাজা নগরী ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকা খালি করার নির্দেশ দেন ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র অ্যাভিচে আদ্রি।

যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের পর বৃহস্পতিবারও গাজার বিভিন্ন এলাকায় হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এদিন উত্তর গাজায় জাবালিয়া এলাকায় আবদুল লতিফ আল-কানোউ নামে হামাসের এক মুখপাত্র নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে সংগঠনটি। এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, লতিফ আল-কানোউয়ের অবস্থান করা তাঁবুতে সরাসরি হামলা চালায় ইসরায়েল।

বৃহস্পতিবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আগের ২৪ ঘণ্টায় উপত্যকাটিতে অন্তত ২৫ জন নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের পর থেকে ইসরায়েলের হামলায় ৮৫৫ জনের মৃত্যু হলো। আর ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর থেকে গাজায় মোট নিহত হয়েছেন ৫০ হাজার ২০৮ জন। আহত ১ লাখ ১৩ হাজার ৯১০ জন।

আরও পড়ুনইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে নিয়ে যত বিতর্ক২৬ মার্চ ২০২৫

এদিকে গাজা দখলে ইসরায়েলের হুমকি ও হুঁশিয়ারির মধ্যে এক বিবৃতিতে হামাস বলেছে, ‘যতবারই ইসরায়েলের শক্তি খাটিয়ে তাদের জিম্মিদের ফিরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবে, শেষ পর্যন্ত তারা (জিম্মি) কফিনে করে ফিরে যাবে।’ তারা জিম্মিদের যতটা সম্ভব বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। তবে ইসরায়েলের বোমা হামলার কারণে তা কঠিন হয়ে পড়ছে।

গাজায় হামলার মধ্যে ইসরায়েলে চলছে বিক্ষোভ। বুধবার রাতে জেরুজালেমে দেশটির পার্লামেন্টের কাছে জড়ো হন হাজার হাজার মানুষ। বিচারকদের নিয়োগে রাজনৈতিক প্রভাব বৃদ্ধি পাবে, এমন একটি বিলের বিরোধিতা করেছেন তাঁরা। একই সঙ্গে গাজায় যুদ্ধবিরতি শুরু করে জিম্মিদের মুক্ত করার দাবিও তুলেছেন।

আরও পড়ুনট্রাম্প প্রশাসনকে ফিলিস্তিনপন্থী শিক্ষার্থীদের নাম–তথ্য দিচ্ছে, কারা এই বেতার৫ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র

এছাড়াও পড়ুন:

অফিসে আপনি কি ১১ ঘণ্টার বেশি কাজ করেন

প্ল্যান ওয়ান জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা নিয়ে চলছে আলোচনা। সেখানে দুই হাজার ফুলটাইম কর্মজীবীর ওপর একটা জরিপ পরিচালনা করা হয়। পেশাগত কাজ বা চাপের সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যের সম্পর্ক নিয়ে পরিচালিত গবেষণাটি থেকে পাওয়া গেছে চমকপ্রদ তথ্য।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, যাঁরা কর্মক্ষেত্রে ১১ ঘণ্টা বা তার বেশি কাজ করেন, তাঁদের খাদ্যাভ্যাস তুলনামূলকভাবে অস্বাস্থ্যকর, তাঁরা অন্যদের তুলনায় মানসিক চাপে ভোগেন বেশি। ঠিকমতো পানি খাওয়ার প্রবণতা কম। পরিবার, প্রকৃতি ও পোষা প্রাণীর সঙ্গে সময় কাটানোর প্রবণতাও কম। কম ঘুমান। আর যেকোনো মানসিক আঘাত থেকে সেরে ওঠার পর্যাপ্ত সময় বা সুযোগ পান না। এই মানুষেরাই বেশি হতাশায় ভোগেন।

শুধু তা-ই নয়, দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়া এবং হৃদ্‌রোগ ও স্ট্রোকের মতো কার্ডিওভাস্কুলার রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বেশি। যাঁরা ১১ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় অফিস করেন, তাঁদের মধ্যে কর্মক্ষেত্রে অসুস্থ হয়ে যাওয়ার সংখ্যাও অনেক।

আরও পড়ুন২৫ বছর ধরে অফিসে যাননি তিনি১৩ মার্চ ২০২৫যদি ১১ ঘণ্টা কর্মক্ষেত্রে থাকতেই হয়, তাহলে যেসব বিষয় খেয়াল রাখবেন

রাতে ৮ ঘণ্টা ঘুমাতেই হবে। তাতে শরীর ও মস্তিষ্ক দিনের শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রমের ধকল কাটিয়ে ওঠার সুযোগ পাবে।

কাজের ফাঁকে ফাঁকে বিরতি নিন। সবুজের দিকে তাকান। ডেস্কে গাছ রাখতে পারেন। উঠে একটু হাঁটুন। ব্যায়াম করুন। সহকর্মীর সঙ্গে চা খেতে খেতে গল্প করুন। গবেষণা জানাচ্ছে, ছোট ছোট বিরতি কাজে মনোযোগ পুনঃস্থাপন করতে সাহায্য করে এবং কাজের গুণমান বাড়ায়।

দুপুরে খাওয়ার পর একটা ন্যাপ নিতে পারেন।

২ লিটারের একটা বোতলে পানি রাখবেন। প্রতিদিন ১ বোতল পানি অবশ্যই শেষ করবেন। তা ছাড়া পানি, শরবত, জুস, ডাবের পানি, তরমুজ, শসা, আনারস ইত্যাদি খাবেন। হাইড্রেটেড থাকলে এনার্জি ধরে রেখে কাজ করা সহজ হয়।

প্রক্রিয়াজাত খাবার, কার্বোনেটেড ড্রিংক, চিনিযুক্ত খাবার বাদ দিন। এসব কেবল আপনার ক্লান্তি বাড়াবে।

আর সম্ভব হলে কর্মক্ষেত্রে কথা বলে আপনার কর্মঘণ্টা ৮ ঘণ্টায় নিয়ে আসতে পারলে তো কথাই নেই।

সূত্র: এনবিসি নিউজ

আরও পড়ুনঅফিসের বাড়তি কাজকে যেভাবে ‘না’ বলবেন১৩ মার্চ ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ