Samakal:
2025-05-01@05:25:13 GMT

তারকার অল্প স্বল্প গল্প

Published: 27th, March 2025 GMT

তারকার অল্প স্বল্প গল্প

যেমন মায়ের মুখের ভাষা শুনে প্রথম ঠোঁট নাড়ানো, যেমন বাবার হাত ধরে প্রথম হাঁটতে শেখা, তেমনই, এক বা একাধিক মানুষ ও মানসের হাত ধরে মঞ্চে কিংবা পর্দায় আগমন ঘটে শিল্পীর। সাধারণ দর্শক শ্রোতার কাছে শিল্পী-নাম উচ্চারিত হয়, কিন্তু যাঁদের হাত ধরে তাঁরা মঞ্চস্থ, তাঁদের নাম ও গল্প হয়তো অনুচ্চারিতই থেকে যায়। ঋণ পরিশোধ অসম্ভব। তবে কখনও-সখনও গুরুঋণ স্বীকার করে নিয়ে, পাঠকের সঙ্গে কিছু আনন্দ ও বোধ ভাগ করে নিতে ইচ্ছে জাগে। ভক্ত-পাঠকরাও আগ্রহের সঙ্গেই জানতে চান কথাগুলো, শুনতে চান পেছনের গল্পগুলো। উভয়ের আগ্রহের বন্ধন গড়ে দিতে এ আয়োজন। কথা বলেছেন তিন পৃথক মঞ্চের তিন অতিপ্রিয় তারকা পূর্ণিমা, জাহিদ হাসান ও কনা। গ্রন্থনায় এমদাদুল হক মিলটন

সব যেন স্বপ্নের  মতো বদলে গেল 
পূর্ণিমা, চিত্রনায়িকা

আমাদের পরিবারের সবাই ছিলেন সংস্কৃতমনা। মা গান করতেন। বড় বোন দিলরুবা থিয়েটারের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, পরে সিনেমায় আসেন। তাঁর অভিনীত সিনেমার শুটিংয়ে একদিন নারায়ণগঞ্জের পাগলায় গিয়েছি, সেদিন সালমান শাহ ও মৌসুমী অভিনীত ‘অন্তরে অন্তরে’ সিনেমার শুটিং চলছিল। জমিদারবাড়ির লম্বা রাজকীয় সিঁড়ি এখনও চোখে ভাসে। সিনেমার সেট সম্পর্কে তখন প্রথম ধারণা পাই। বাবার বন্ধু ছিলেন চলচ্চিত্র নির্মাতা নূর মোহাম্মদ মনি। বাবা বেঁচে থাকতে প্রায়ই আমাদের বাসায় আসতেন। সেই সূত্রে সিনেমার অনেকের সঙ্গেই আমার পরিচয়। হঠাৎ একদিন সাংবাদিক শামীম আহমেদ মাকে বললেন, নির্মাতা জাকির হোসেন রাজু নতুন মুখ নিয়ে সিনেমা বানাবেন। আপনার ছোট মেয়েকে দিয়ে একবার চেষ্টা করে দেখতে পারেন।  আমার বয়স ছিল মাত্র তের।  একদিন রাজু ভাই [জাকির হোসেন রাজু] ও শামীম ভাই বাসায় এলেন। বাসায় কোনো মেহমান এলে আম্মার কথামতো আমাকে গান শোনাতে হতো। তাদেরও শোনালাম। গান শুনে রাজু ভাই বললেন, গায়িকা নয়, তুমি নায়িকা হবে! আমার যে বয়স, তাতে নায়িকার ‘ন’ও বুঝি না। দু’দিন পর ছবির প্রযোজক মতিউর রহমান পানুকে আমাদের বাসায় নিয়ে এলেন রাজু ভাই। তিনি দেখে বললেন, এই পিচ্চি মেয়েকে তুমি নায়িকা বানাবে! রাজু ভাই বললেন, ‘আমার ওপর ছেড়ে দিন। আমাদের ছবির দৃশ্যধারণের আরও তিন মাস বাকি। এক-দেড় মাস অনুশীলন করালে সিনেমার জন্য তৈরি হতে পারবে।’ তখন পানু আংকেল রাজি হলেন। ওই ছবির নায়ক হিসেবে রিয়াজ ভাই অভিনয় করবেন বলেছেন। ওই সময় রিয়াজ ভাইকে চিনতাম না। এরই মধ্যে আমি নাচ আর অভিনয়ের ওপর ক্লাস করছি। ভোর ৬টায় উঠে গাড়ি চালানো শিখলাম। তখন আমি সবেমাত্র নবম শ্রেণিতে। পড়ালেখা আর অভিনয় পাশাপাশি করছি। প্রথম চলচ্চিত্র ‘এ জীবন তোমার আমার’। এ সিনেমার জন্যই যত প্রস্তুতি। ছবির প্রযোজক আমার নাম রাখেন পূর্ণিমা। সেই থেকে রিতা থেকে পূর্ণিমা হয়ে গেলাম। সব যেন স্বপ্নের মতো বদলে গেল। 

 

চার বছর বয়সেই গানের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে 

দিলশাদ নাহার কনা সংগীতশিল্পী

ছোটবেলা থেকে স্কুল, গানের ক্লাস নিয়েই ব্যস্ততা ছিল আমার। আমাকে গানের শিল্পী হতেই হবে– এমন একটা প্রতীজ্ঞা মনে কাজ করত। বড় সংগীতশিল্পী হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম। সেভাবেই নিজেকে প্রস্তুত করার চেষ্টা করে গেছি। মা-বাবা, এক ভাই এবং এক বোনের দারুণ শৈশব কাটিয়েছি আমি। সেই দিনগুলোতে মাঝে মাঝে ফিরে যেতে খুব ইচ্ছা করে। আমার ভালো নাম দিলশাদ নাহার কনা হলেও পারিবারিক পরিমণ্ডলে আরও দুটি নামে পরিচিতি ছিল। বাবা-মায়ের কাছে কনা নামটি রূপান্তরিত হয়েছিল কনুতে। শিশুদের কাছে নামটি ছিল আরও মজার–‘কনামনা’। মিরপুরের টাইনি টটস স্কুলে ভর্তি হওয়ার মধ্য দিয়ে স্কুলজীবনের হাতেখড়ি। শৈশব-কৈশোরের লম্বা সময় কেটেছে রাজধানীর মগবাজারে। মগবাজার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়েছি। এর লালমাটিয়া কলেজে। পড়াশোনা ও গানের সাধনা একই সঙ্গে চালিয়ে গিয়েছি। প্রথম গানের অ্যালবাম বের হয় ২০০৬ সালে। জ্যামিতিক ভালোবাসা। ২০০৮ সালে বের হয়ে ‘ফুয়াদ ফিচারিং কনা’। এর সংগীত আয়োজক ফুয়াদ আল মুক্তাদির। ২০১১ সালে বের হয় অ্যালবাম ‘সিম্পলি কনা। এর সংগীত আয়োজক বাপ্পা মজুমদার। সবার সমর্থন ও ভালোবাসা পেয়েছি আমি।  
মাত্র চার বছর বয়সেই গানের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে আমার। ‘আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে’— রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই গানটি শেখা ও গাওয়ার মধ্য দিয়ে গানের ভুবনে পা রাখি। তবে এটা আনুষ্ঠানিক বিচারে এটা আমার প্রথম গান ছিল না। আনুষ্ঠানিক প্রথম সংগীতটিও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। ‘গ্রামছাড়া ওই রাঙা মাটির পথ’। সবার উৎসাহে জীবনের প্রথম কোনো গানের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছিলাম সেবার। দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছিলাম। তখন আমার বয়স মাত্র পাঁচ বছর। শিক্ষকদের কাছ থেকে অনেক প্রশংসা কুড়িয়েছি। জীবনের শুরুতেই এমন উৎসাহ পেয়ে আমার আত্মবিশ্বাস বেড়েছিল। অনেকখানি এগিয়ে গিয়েছিলাম। সেইসব স্মৃতি এখনও জ্বলজ্বলে। সার্বিক বিচারে বলতে পারি, আজকের কনা হওয়ার পেছনে আমার পরিবারের অবদান সবচেয়ে বেশি। জীবনে চলার পথে তারা আমাকে সহযোগিতা না করলে যতটুকু এগিয়ে যেতে পেরেছি, তা আর পারতাম না। পাশাপাশি শ্রোতার অকুণ্ঠ সমর্থন তো ছিলই। সবার ভালোবাসার ডানায় ভর করে আগামীর পথ পাড়ি দিতে চাই।   
 

শৈশবে প্রচুর নাটক 
দেখেছি 
জাহিদ হাসান, অভিনয়শিল্পী
মায়ের দেওয়া ডাক নাম পুলক। নিজ এলাকা সিরাজগঞ্জের ছেলেবেলার বন্ধুরা এখনও এ নামেই ডাকেন। জাহিদ নামটি রেখেছিলেন দাদা। পুলক থেকে জাহিদ হাসান–লম্বা পথ। ক্যারিয়ারে এতদূর আসার পেছনে আব্দুল লতিফ বাচ্চু, আনোয়ার হোসেন বুলু ও তারিক আনাম খানের অবদানের কথা না বললেই নয়। চলার পথে তাদের অনেক সহযোগিতা পেয়েছি। পেছনে ফিরে তাকালে অনেক কথা মনে পড়ে। নানা স্মৃতি চোখে ভাসে। মনে পড়ে, শৈশবে সিরাজগঞ্জে থাকাকালীন প্রচুর নাটক দেখেছি। স্কাউটের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। অনুষ্ঠানাদিতে সুযোগ পেলে অভিনয় করতাম। শীতের সময় যাত্রাপালা দেখার কথাও বেশ মনে পড়ে। কলেজে ভর্তি হওয়ার পর বিশেষ করে, নাটকের দিকে ঝুঁকে যাই। যোগ দিই তরুণ সম্প্রদায় নাট্যদলে। পরবর্তীতে নাটক করব বলে ঢাকায় আসি। বাড়ি থেকে অবশ্য কেউ তা চাচ্ছিলেন না। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহে পড়ার সুযোগ পেয়েছিলাম, ভর্তিও হয়েছিলাম। কিন্তু, মনটা পড়ে থাকত ঢাকায়। কিছুদিন সেখানে পড়ার পর আবার ঢাকায় চলে আসি। অভিনেতা হতে হবে। পড়ালেখা শুরু করি এই শহরে। ভেতরে ভেতরে অপেক্ষায় থাকি, কখন অভিনয়ের সুযোগ আসবে। ১৯৮৬ সালে ‘বলবান’ নামের একটি সিনেমায় অভিনয় করার সুযোগ পাই। এর তিন বছর পর ১৯৮৯ সালে বিটিভিতে তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য অডিশন দিই, পাসও করি। এটি আমার ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। ১৯৯০ সাল আমার জীবনের বড় ধরনের ঘুরে দাঁড়ানোর বছর। ‘নাট্যকেন্দ্র’ দলে যোগ দিই । পুরোদমে মঞ্চনাটক শুরু করি। ওই বছরই ‘জীবন যেমন’ টিভি নাটকে প্রথম অভিনয় করি। ওই নাটকে অভিনয় করে ১২০০ টাকা পেয়েছিলাম। আমার ক্যারিয়ারের সৌভাগ্যের বছর নব্বই, বলাই যায়। তারিক আনাম খানে নির্দেশনায় নাট্যকেন্দ্রের ‘বিচ্ছু’ নামের একটি মঞ্চ নাটক করেছিলাম। ওই নাটকে বিচ্ছু চরিত্রে আমার অভিনয় প্রশংসিত হয়েছিল। 
এরপর রচিত হয় এগিয়ে যাওয়ার গল্প। টিভি নাটকেও ব্যস্ততা বাড়তে থাকে।  সততা ও ভালোবাসা নিয়ে লেগে থেকেছিলাম। আমি মনে করি, এ কারণেই, সবার আশীর্বাদে, আজ এতদূর আসতে পেরেছি।  v
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আম দ র জ বন র বলল ন র বয়স প রথম হওয় র র বছর

এছাড়াও পড়ুন:

তিন সাংবাদিকের চাকুরিচ্যুতির ঘটনায় ডিআরইউ’র উদ্বেগ

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সদস্য সাংবাদিক রফিকুল বাসার, মুহাম্মদ ফজলে রাব্বি ও মিজানুর রহমানসহ কয়েকজন সংবাদকর্মীর চাকরিচ্যুতির ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছে ডিআরইউ।

বুধবার (৩০ এপ্রিল) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির কার্যনির্বাহী কমিটির পক্ষে সভাপতি আবু সালেহ আকন ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল সংবাদকর্মীদের চাকুরিচ্যুতির ঘটনায় এ উদ্বেগ জানান।

উল্লেখ্য, চ্যানেল আই’র সাংবাদিক রফিকুল বাসার, এটিএন বাংলার মুহাম্মদ ফজলে রাব্বি ও দীপ্ত টিভির সাংবাদিক মিজানুর রহমানকে মঙ্গলবার কোনো রকম পূর্ব নোটিশ ছাড়াই চাকরিচ্যুত করে কর্তৃপক্ষ।

ডিআরইউ নেতৃবৃন্দ তিন সাংবাদিককে চাকরিচ্যুতির কারণ ব্যাখ্যা করার দাবি জানিয়েছেন।

এএএম//

সম্পর্কিত নিবন্ধ