সংসদে দাঁড়িয়ে জোর গলায় পঞ্চগড়ের মানুষের কথা বলার অভিপ্রায় প্রকাশ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। তিনি বলেন, জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে জোর গলায় পঞ্চগড়ের মানুষের দাবি তুলে ধরতে চাই। কৃষি পণ্যের দরে সামঞ্জস্য আনতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, যেন কৃষকেরও লোকসান না হয়। ক্রেতারাও কিনতে পারেন। 

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার আগে পঞ্চগড় সদর উপজেলার মাগুরা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ শেষে তিনি এসব কথা বলেন।

সারজিস আলম বলেন, প্রত্যেক মানুষ একজন থেকে আরেকজন আলাদা। এই দলে কেউ কারো দাস নয়। আমাদের স্বাধীনতা আছে যে, আমরা আমাদের মতামত প্রকাশ করতে পারি। যারা খুনি হাসিনাকে দেশছাড়া করতে পারে, তারা দেশেরও দায়িত্ব নিতে পারে। আমাদের সুযোগ দেওয়া হলে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে পুরো বাংলাদেশের জন্য কাজ করে যাবো।

উল্লেখ্য, সারজিস আলম বর্তমানে পঞ্চগড়ে নিজ বাড়িতে অবস্থান করছেন। প্রতিদিন তিনি বিভিন্ন এলাকার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন এবং তাদের সমস্যা সংকট জানার চেষ্টা করছেন। পাশাপাশি এনসিপির পক্ষে জনমত তৈরি করছেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: করছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আন্দোলনরত ‘তথ্য আপা’দের দা‌বি মানার আহ্বান

চাকরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তর ও পাওনা টাকার দাবিতে আন্দোলনরত ‘তথ্য আপা’ প্রকল্পের নারীদের দা‌বি মে‌নে নেওয়ার আহ্বান জা‌নি‌য়ে‌ছেন বি‌ভিন্ন রাজ‌নৈ‌তিক দলগু‌লোর নেতারা। এত‌দিন ধ‌রে জাতীয় প্রেসক্লা‌বের সাম‌নে যৌক্তিক আ‌ন্দোলন কর‌লেও সাড়া না ‌দেওয়ায় স‌রকা‌রের কড়া সমা‌লোচনা ক‌রে‌ছেন তারা।

আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ‘তথ্য আপাদের’ সঙ্গে আলোচনায় বসে প্রধান উপ‌দেষ্টা‌কে যৌক্তিক সমাধানের আহ্বানও জানান তারা।

সোমবার (১৬ জুন) প্রেসক্লাবের সামনে তথ্য আপনাদের দাবির প্রতি সংহতি জানান গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ্ কায়সার, ভাসানী জনশক্তি পার্টির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক শামান্তা শারমিন, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের নেতা দিদারুল আলম ভূঁইয়াসহ বিভিন্ন দলের নেতারা।

অনশনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, “সরকার যেভাবে দাবি আদায়ের পথ রুদ্ধ করেছে, তাতে মনে হয় এটি নতুন এক দমনমূলক সময়। আন্দোলন ছাড়া সাধারণ মানুষের দাবির প্রতি নজর নেই সরকারের।”

তিনি প্রধান উপদেষ্টাকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তথ্য আপা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বসার আহ্বান জানান।

সা‌কি বলেন, “যেহেতু প্রকল্পটি তৃতীয় ফেজে যাচ্ছে, এই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন জনবল হিসেবে পরবর্তী ধাপে যুক্ত করলেই সমস্যার সমাধান সম্ভব। কেবল দলীয় সরকারের আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত বলে এদের বাদ দেওয়ার চিন্তা হলে, রাষ্ট্রের সর্বত্রই সংকট দেখা দেবে।”

আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, “আমরা প্রায় বিশ দিন ধরে দেখছি, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা আমাদের বোনেরা তাদের ন্যায্য দাবির জন্য রোদের মধ্যে অবস্থান করছেন।কিন্তু সরকার নির্বিকার। জনগণের কথা শোনা, তা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মৌলিক দায়িত্ব।”

তিনি বলেন, “আজ যদি হাজারো নারী প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন বা কার্যালয় ঘেরাও করতেন, তাহলে হয়তো সরকারের টনক নড়ত। তাই আমরা সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি-অবিলম্বে তথ্য আপা প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবির যৌক্তিকতা বিবেচনায় নিয়ে ন্যায্য সমাধানের উদ্যোগ নিন।”

এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক শামান্তা শারমিন বলেন, “দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দায়িত্বশীলতা ও নিষ্ঠার সাথে কর্মরত এত সংখ্যক মেয়েকে দলীয় পরিচয় বা রাজনৈতিক ট্যাগ দিয়ে চাকরি থেকে বঞ্চিত করা কখনোই সমীচীন নয়। এটি একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ও অমানবিক সিদ্ধান্ত। নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার কাছে আমরা জোরালোভাবে অনুরোধ করছি—আপনারা অংশীজনদের সাথে বসুন, তাদের বক্তব্য শুনুন। কারা প্রকৃত অপরাধী, কারা ফ্যাসিবাদ ও অনিয়মের দোসর-তাদের খুঁজে বের করুন।সবাইকে একসূত্রে গেঁথে অপমান ও বঞ্চনার শিকার করা অন্যায়।”

রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের অর্থ সমন্বয়ক দিদারুল ভূঁইয়া বলেন, “বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে লাখ লাখ কোটি কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু তথ্য আপা প্রকল্প নিয়ে বড় কোনো দুর্নীতির খবর পাওয়া যায়নি। এই প্রকল্পের মাধ্যমে তথ্য আপারা প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌঁছাতেন। প্রকল্প সফল হয়েছে বলেই তা তৃতীয় মেয়াদে নেওয়া হচ্ছে। তৃতীয় মেয়াদে তথ্য আপাদের অভিজ্ঞতার মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। এই সরকার একটা কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পেরেছে এমন তথ্য নেই, বরং বেকারত্ব বাড়ছে, সামাজিক সুযোগ নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে।”

আন্দোলন পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও ঝালকাঠি তথ্যসেবা কর্মকর্তা সঙ্গীতা সরকার জানান, বর্তমান সম‌য়ে অন্যায়ভাবে প্রকল্পের ১ হাজার ৯৬৮ জন নারীকে চাকরিচ্যুত করা হ‌লে প‌রিবা‌রে বিপর্যয় নে‌মে আস‌বে।

তিনি বলেন, “প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে তারা নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। কারো সুপারিশে নয়। প্রকল্পে নিয়োগের সময় প্রকল্প শেষে নতুন পদ সৃষ্টি করে জনবলকে রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করতে হবে এমন কথা বলা হয়েছিল। উচ্চশিক্ষিত নারীরা সেসব দেখেই প্রকল্পের চাকরিতে আকৃষ্ট হয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে রাজস্ব খাতে নিতে সুবিধা হবে জানিয়ে তাদের যা বেতন ধরা হয়েছিল, তা থেকে টাকা কেটে নেওয়া হয়। সেই পাওনাও তারা পাচ্ছেন না।”

প্রসঙ্গত, ২০১১ সালে পাইলট আকারে ১৩টি উপজেলায় তথ্য আপা প্রকল্প শুরু হয়। পরে ২০১৮ সালের শেষ দিকে ৪৯২টি উপজেলায় প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু হয়। ২০২২ সালের ৩০ জুন প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়। পরে তা দুই বছর বাড়িয়ে ২০২৪ সালের ৩০ জুন করা হয়। গত বছর আরো এক বছর বাড়িয়ে ২০২৫ সালের ৩০ জুন করা হয়। সে হিসাবে এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হতে আর ১৪ দিন বাকি।

মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন ‘জাতীয় মহিলা সংস্থা’র বাস্তবায়ন করা এ প্রকল্পের পুরো নাম ছিল ‘তথ্য আপা: ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তথ্য-যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে মহিলাদের ক্ষমতায়ন’। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত একনেক সভায় প্রকল্পটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে ‘তথ্য আপা: তথ্য-যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে নারীদের ক্ষমতায়ন প্রকল্প (২য় পর্যায়) (২য় সংশোধিত)’।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ