সাড়ে পাঁচশ’র ভাড়া নয়শ, অ্যাকশনে ভোক্তা অধিকার
Published: 28th, March 2025 GMT
দুয়ারে ঈদ। পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে নাড়ির টানে অনেকেই বাড়ি যাচ্ছেন। এবার ঈদে অফিস, আদালত, কলকারখানা ধাপে ধাপে ছুটি হওয়ায় অন্যবারের তুলনায় ঘুরমুখো মানুষের চাপ অনেকটা কম। রাজধানীর গুলিস্তান, ফুলবাড়িয়া এলাকার বাসস্ট্যান্ডগুলোতে এমন চিত্র দেখা গেছে।
শুক্রবার (২৮ মার্চ) সরেজমিনে দেখা যায়, যাত্রীদের চাপ অনেকটাই কম। কাউন্টারের বাসগুলো নির্দিষ্ট সময়ে ছেড়ে যাচ্ছে। নন কাউন্টার বাসগুলোর অবশ্য তাড়া নেই। তারা যাত্রীর জন্য হাঁকডাক করছেন। তবে থেমে নেই ভাড়া নৈরাজ্য। সবচেয়ে বেশি নৈরাজ্য দেখা গেছে বরিশাল রুটের বাসে। সাড়ে পাঁচশ টাকার ভাড়া নয়শ টাকা পর্যন্ত চাওয়া হচ্ছে। কারণ জানতে চাইলে বলা হচ্ছে, আসার সময় খালি বাস আসতে হবে। তাই ভাড়া বেশি। বাধ্য হয়ে বাড়তি ভাড়া গুনতে হচ্ছে যাত্রীদের।
বরিশাল রুটের ‘ইলিশ’ পরিবহনের মিরাজ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘যাত্রী নাই। আবার আসার সময় খালি গাড়ি টাইন্যা আসতে হয়। কী করুম, ভাড়াটা একটু বেশিই নিচ্ছি।’’
ওই বাসের যাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাকারিয়া বলেন, ‘‘ডাইরেক্ট গাড়িতে সিট পাইনি। বাড়ি তো যেতে হবে। বাধ্য হয়ে সাড়ে পাঁচশ টাকার ভাড়া নয়শ দিয়ে যাচ্ছি।’’
এদিকে ভাড়া নৈরাজ্য ঠেকাতে গুলিস্তান ফুলবাড়িয়া এলাকায় অভিযান চালিয়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ। অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ায় ‘ওয়েলকাম’ পরিবহনকে ৩০ হাজার এবং ‘দোলা’ পরিবহনকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের উপপরিচালক বিকাশচন্দ্র দাস। বরিশাল রুটের ‘তাজ আনন্দ’ সার্ভিসকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
অন্যদিকে নয়শ টাকার অতিরিক্ত ভাড়া পাঁচশ ৩৮ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। যাত্রীদের কাছ থেকে নেওয়া অতিরিক্ত ভাড়া ফিরিয়ে দিতেও এ সময় বাধ্য করা হয়। এ সময় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের সহকারী পরিচালক ফাহমিনা আক্তার উপস্থিত ছিলেন।
তারা//
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে
সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’
বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।
এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।
এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’
আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।
শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।