চট্টগ্রামে প্রাইভেট কারে অতর্কিতে গুলি, নিহত ২ আরোহী
Published: 30th, March 2025 GMT
একটি প্রাইভেট কারের পেছনে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়া হচ্ছে। কখনো গুলি করা হচ্ছে গাড়ির দুই পাশে। গুলিতে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে পেছনের কাচ। ওই প্রাইভেট কারের দুই আরোহীকে এরপর গুলি করে হত্যা করা হয়। এর মধ্যে ছিলেন প্রাইভেট কারের চালক।
এটি কোনো সিনেমার দৃশ্য নয়, গতকাল শনিবার দিবাগত রাত পৌনে তিনটার দিকে নগরের বাকলিয়া এক্সেস রোড এলাকার মুখে এ ঘটনা ঘটেছে। তবে কী কারণে কারা গুলি ছুড়েছে, পুলিশ কিছু জানাতে পারেনি।
নিহত ব্যক্তিরা হলেন মোহাম্মদ মানিক (৩০) ও আবদুল্লাহ (৩২)।
মানিক পেশায় গাড়িচালক। তাঁর বাড়ি হাটহাজারী মদুনাঘাটে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রুপালি রঙের একটি প্রাইভেট কার কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতু এলাকা থেকে বাকলিয়া এক্সেস রোডে আসতে থাকে। গাড়িটি এক্সেস রোডের মুখে প্রবেশের পরপর পেছন দিকে তিন থেকে চারটি মোটরসাইকেল সেটিকে ধাওয়া করে। একপর্যায়ে এলোপাতাড়ি গুলি করতে থাকে। প্রাইভেট কারের ভেতর থেকে মোটরসাইকেল আরোহীদের লক্ষ্য করে কয়েকটি গুলি ছোড়া হয়। তবে মোটরসাইকেল আরোহীদের কাছে অস্ত্রের সংখ্যা ছিল বেশি। সবার মাথায় ছিল হেলমেট।
গুলিতে প্রাইভেট কারের পেছনের কাচ পুরো নষ্ট হয়ে যায়। গাড়ির বিভিন্ন অংশে গুলিতে ফুটো হয়ে যায়।
গাড়িতে চালকের আসনে বসা ছিলেন মানিক। পাঁচ থেকে ছয় মিনিট গুলি করার পর মোটরসাইকেল আরোহীরা চলে যান। পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন এসে প্রাইভেট কারে থাকা মানিক ও আবদুল্লাহকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন। গাড়িটিতে ওই দুজন ছাড়া আরও চারজন ছিলেন। তাঁরা আহত হয়েছেন।
এদিকে খবর পেয়ে মানিকের লাশ দেখতে হাসপাতালে ছুটে আসেন তাঁর মা, স্ত্রী ও সন্তানেরা। মানিকের মা বিলাপ করতে করতে বলেন, ‘আমি ময়নাতদন্ত চাই না, মামলা করব না। আমার ছেলের লাশ দিয়ে দেন।’ মানিকের সঙ্গে কারও কোনো শত্রুতা নেই বলে দাবি করেন তাঁর মা।
নতুন ব্রিজ এলাকায় জায়গা দখল নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে পূর্ববিরোধের জেরে এ ঘটনা ঘটেছে কি না, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
একটি সূত্র জানায়, ১৫ মার্চ ‘সন্ত্রাসী’ সাজ্জাদকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেওয়ায় আকরাম নামের এক ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে প্রাইভেট কারে গুলি করা হয়। আকরামের ব্যবহৃত গাড়ি ও এই গাড়ির রং একই। সাজ্জাদকে ধরিয়ে দেওয়ার পর হুমকির ঘটনায় আকরামের স্ত্রী রুমা আক্তার বাদী হয়ে মামলা করেছিলেন। এতে সাজ্জাদের স্ত্রী, হাসানসহ কয়েকজনকে আসামি করা হয়।
জানতে চাইলে নগর পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) শাকিলা সুলতানা আজ সকালে প্রথম আলোকে বলেন, গুলিতে দুজন নিহত হয়েছেন। কী কারণে কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে, তদন্ত করা হচ্ছে। সাজ্জাদকে ধরিয়ে দেওয়া কিংবা জায়গা দখল নিয়ে বিরোধ আছে কি না, সব বিষয় সামনে রেখে তদন্ত করা হচ্ছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
রাজশাহীতে বইমেলায় বিক্রি কম, এখনো আশায় আছেন প্রকাশকেরা
রাজশাহী বিভাগীয় বইমেলার প্রথম তিন দিনে লোকজনের ভিড় থাকলেও বেচাকেনা তেমন হয়নি। এতে অনেক প্রকাশকের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। তবে আগামী কয়েক দিনে বেচাকেনা বাড়বে বলে আশা করছেন প্রকাশকেরা ও আয়োজক কর্তৃপক্ষ।
গত শুক্রবার রাজশাহী জেলা কালেক্টরেট মাঠে ৯ দিনব্যাপী এই বইমেলার উদ্বোধন করা হয়। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায়, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের উদ্যোগে এবং রাজশাহী বিভাগীয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত এ মেলা চলবে ৮ নভেম্বর পর্যন্ত। মেলায় ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ৭০টি বেসরকারি প্রকাশনাসহ মোট ৮১টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন বাদে মেলা চলছে বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। আর ছুটির দিনে মেলা শুরু হয় বেলা ১১টায়।
উদ্বোধনের আগের দিন বৃষ্টিতে মেলার মাঠ কাদাপানিতে একাকার হয়ে যায়। সেই কর্দমাক্ত পরিবেশেই মেলার উদ্বোধন হয়। দর্শনার্থীদের ভোগান্তি কমাতে পরে প্রতিটি স্টলের সামনে ইট বিছিয়ে দেওয়া হয়। এতে কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও বিক্রির খরা কাটেনি বলে জানালেন বিক্রেতারা।
গতকাল রোববার সন্ধ্যায় মেলা প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায়, মাঠের বিভিন্ন অংশে তখনো পানি জমে আছে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য নির্ধারিত মঞ্চের সামনের প্যান্ডেলেও কাদা। সেখানেই কাজী নজরুল ইসলামের জীবন ও সাহিত্য নিয়ে আলোচনা চলছিল, তবে দর্শক-শ্রোতার উপস্থিতি ছিল নগণ্য। স্টলের সামনে ইটের সলিংয়ের তৈরি রাস্তা দিয়ে হাঁটছেন অনেকে। অনেকে বই দেখছেন।
সূর্যোদয় প্রকাশনীর বিক্রেতা রিপন আলী বলেন, প্রথম দিন তো কাদাপানির মধ্যেই দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। তখনো মানুষ ছিলেন। এখন ইট বিছানোর পর আরও বেশি মানুষ আসছেন, ভিড়ও করছেন, কিন্তু বই কিনছেন খুব কম।
ঐতিহ্য প্রকাশনীর স্টলে কাদার ওপর চেয়ার পেতে বসে থাকতে দেখা গেল বিক্রয়কর্মী ও চিত্রশিল্পী অর্ণব পাল সন্তুকে। তিনি বলেন, মানুষ আসছেন, ঘুরে দেখছেন, কিন্তু বিক্রি নেই বললেই চলে। মেলার ব্যবস্থাপনা আরও ভালো হতে পারত। আরেক বিক্রেতা আবদুল্লাহ হীল বাকি জানালেন, এমনও স্টল আছে, যেখানে সারা দিনে ২০০ থেকে ৩০০ টাকার বইও বিক্রি হচ্ছে না।
তবে হতাশার ভিড়ে আশার কথাও শোনালেন কেউ কেউ। চট্টগ্রাম থেকে আসা নন্দন বইঘর প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী সুব্রত কান্তি চৌধুরী বলেন, বেচাবিক্রি আজ না হোক কাল হবে। মানুষ যে মেলায় এসে বই হাতে নিয়ে দেখছেন, এটাই বড় পাওয়া। এতে তাঁদের মধ্যে বই কেনার আগ্রহ তৈরি হবে।
মেলায় আসা পাঠকদের মধ্যে অবশ্য ভিন্ন চিত্র। দুই সন্তানের জন্য শিশুতোষ বই কিনে এক অভিভাবক বলেন, বাচ্চাদের হাতে বই তুলে দেওয়ার আনন্দটাই অন্য রকম।
মেলা থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম ও তারাশঙ্কর বন্দ্যোপ্যাধ্যায়ের বই কিনেছেন মনির হোসেন। তিনি বলেন, মেলায় একসঙ্গে অনেক বই পাওয়া যায়, যা বই কেনার জন্য দারুণ সুযোগ।