উদারপন্থী ভোটাররা কোন দলে ভোট দেবেন
Published: 1st, April 2025 GMT
বাংলাদেশে যাঁদের বয়স ৩৩-এর মধ্যে, তাঁদের সিংহভাগেরই ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার কোনো অভিজ্ঞতা নেই। আবার বড় হয়েই তাঁরা একদলীয় শাসন দেখে এসেছেন। এই যুবকেরা আগামী নির্বাচনের বড় গেমচেঞ্জার। পরপর তিনটি নির্বাচন গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে তাঁরা কোন দিকে ঝুঁকে পড়েছেন, সেটা বলা মুশকিল।
নব্বইয়ের গণ–অভ্যুত্থান থেকে আমরা যদি ২০০৯ সালের নির্বাচন পর্যন্ত আমাদের রাজনীতির একটি কালপর্ব বলি, তাহলে এই সময়টাকে আধা গণতান্ত্রিক দ্বিদলীয় ব্যবস্থা বলে চিহ্নিত করা যেতে পারে। এ সময়ে মোট পাঁচটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিতর্ক ও বন্দোবস্তের অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও আমাদের এখানকার গণতান্ত্রিক মানের বিচারে এর মধ্যে মোটামুটি চারটি নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য বলা যেতে পারে।
এই চারটি নির্বাচনে পৃথকভাবে ও জোট বেঁধে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নির্বাচন করেছে। চারটি নির্বাচনে যে ভোটের হার, তাতে দেখা যাচ্ছে বিএনপির ভোটের হার প্রায় সাড়ে ৩৬। আর আওয়ামী লীগের ভোটের হার ছিল ৩৯। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ভোটের হার অনেকটাই কাছাকাছি। প্রতিটি নির্বাচনে ফলাফল নির্ধারণে সুইং ভোটাররা বরাবরই নির্ধারক ভূমিকা পালন করেন।
পরিবারতন্ত্র, জনতুষ্টিবাদ, সাংস্কৃতিক ক্যাচাল ও চরমপন্থী মতাদর্শের বাইরে ব্যক্তির অধিকার, উদারনৈতিক গণতন্ত্র, সাংস্কৃতিক বহুত্ববাদ, সুযোগের ক্ষেত্রে সাম্য, নারী–কৃষক–শ্রমিক–সংখ্যালঘুর অধিকারকে জোরালোভাবে সমর্থন দেয়, এমন রাজনীতির শূন্যতা বাংলাদেশে অনেক দিনের। সেই শূন্যতা পূরণ করবে কোন দল?সর্বশেষ ২০২৪ সালের যে আমি ও ডামির নির্বাচন হয়েছিল, সেখানে নির্বাচন কমিশন দাবি করেছিল, ৪১ শতাংশ ভোট পড়েছিল। সেটা যে ডাহা কারসাজি, সে ব্যাপারে কারোরই সংশয় থাকার কোনো কারণ নেই। তবে সেদিন বেলা আড়াইটা পর্যন্ত ভোট পড়ার যে হার ছিল, তাতে অনেকেই বলেন, ১৭ থেকে ১৮ শতাংশ ভোট পড়েছিল। এর মানে হচ্ছে, তাঁরা এমন কট্টর আওয়ামী লীগ সমর্থক, যাঁরা কিনা ভোটের ফলাফল আগে থেকে জানার পরও ভোটকেন্দ্রে গেছেন।
বাংলাদেশের মানুষদের ভোট দেওয়ার যে প্রবণতা, তাতে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী মধ্যপন্থী দলগুলোকেই সমর্থন দিয়ে এসেছে। তবে এই মধ্যপন্থা গ্রহণের পেছনে নগদ লাভ-ক্ষতির সহজ হিসাবটাই কাজ করে। কেননা, এখানে নাগরিকদের রাষ্ট্রের কোনো সেবা পেতে হলেও তঁাদের রাজনৈতিক নেতাদের শরণাপন্ন হয়ে সেটা পেতে হয়।
২০০৮ থেকে ২০২৫, মাঝখানে ১৭ বছর পেরিয়ে গেছে। বাংলাদেশের সমাজে একটা বড় পরিবর্তন এসেছে। সমাজে অনেকখানি মেরুকরণ ঘটে গেছে। এর পেছনে বৈশ্বিক কারণ যেমন আছে, আবার অভ্যন্তরীণ কারণও আছে। মার্কিনদের ওয়ার অ্যান্ড টেররের অভিঘাত এবং আওয়ামী লীগের তীব্র দমনমূলক স্বৈরশাসন বাংলাদেশের সমাজ কিছুটা দক্ষিণ দিকে ঝুঁকে পড়েছে। বিশেষ করে নাগরিক ও শহুরে তরুণদের একটা অংশের মাঝে সেটা প্রবলভাবে দৃশ্যমান। কিন্তু এই ডান দিকে ঝুঁকে পড়া মানে ভোটের সবটাই ধর্মভিত্তিক দলগুলোর দিকে যাবে, তা নয়। কেননা, বাংলাদেশের ধর্মভিত্তিক প্রতিটি দলের আলাদা আইডিওলজি আছে। অনড় কাঠামোর জন্য তাদের ভোটার ভিত্তিও সুনির্দিষ্ট। মতাদর্শিক ভিন্নতা ও বিরোধের কারণেই ডানপন্থী ভোটগুলো এক প্ল্যাটফর্মে আসা সম্ভব নয়। আবার এককভাবে নির্বাচন করে আসন পাওয়া কঠিন হওয়ায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ইসলামি দলগুলো বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করতে দেখেছি।
আমরা যদি বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্পেকটামের দিকে তাকাই, তাহলে বিএনপি ডান দিকে ঝুঁকে থাকা মধ্যপন্থী দল। আরও ডানে আছে জামায়াতে ইসলামী। আরও ডানে হেফাজতে ইসলামসহ অন্য দলগুলো। আওয়ামী লীগ কিছু বামে ঘেঁষা মধ্যপন্থী দল। আরও বামে আছে কমিউনিস্ট পার্টি ও বামপন্থী নামে পরিচিত দলগুলো। ভোটের সমীকরণে সব সময়ই মধ্যপন্থী দলগুলোই আধিপত্য করে। সিংহভাগ ভোটার এ ধারার দলগুলোর প্রতিই আকৃষ্ট হন।
এনসিপির প্রতি প্রত্যাশার পারদটা অনেক বেশি
জুলাই-আগস্টের কোটা সংস্কার আন্দোলন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) যাত্রা শুরু করেছে। মধ্যপন্থী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতির কথা বললেও এখন পর্যন্ত দলটি নিজেদের ঘোষণাপত্র ও কর্মসূচি দিতে পারেনি। মধ্যপন্থী রাজনীতি যে একটা মতাদর্শ, সেই অবস্থান তাদের কথা ও কাজে প্রতিফলিত হচ্ছে না। ব্যক্তির অধিকার, উদারনৈতিক গণতন্ত্র, সাংস্কৃতিক বহুত্ববাদ, সুযোগের ক্ষেত্রে সাম্য—এ রকম মৌলিক নীতির ওপর দাঁড়িয়েই মধ্যপন্থী রাজনীতির ভিত গড়ে ওঠে। ডানপন্থীর সঙ্গে কিছু বামপন্থী লোককে ভেড়ানো মানেই মধ্যপন্থী রাজনীতি নয়।
একটা দলের রাজনীতি কী, সেটা তার ইশতেহার ও কর্মসূচির ওপর নির্ভর করে। পুরোনো যে রাজনৈতিক বন্দোবস্ত, সেখানে দল মানে এক ব্যক্তি। সরকার মানেই এক ব্যক্তির শাসন। কে নেতা হবেন, কে এমপি হবেন, কে মন্ত্রী হবেন, সবটাই নির্ধারণ করে দেন দলের নেতা। ফলে রাজনীতি, সরকার—সবখানেই ব্যক্তিপূজা প্রতিষ্ঠা পায়। রাজনীতির এই ব্যক্তিপূজা শেষ পর্যন্ত অগণতান্ত্রিক, স্বৈরতান্ত্রিক ও ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার ভিত্তি গড়ে দেয়। রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহার ও কর্মসূচি থাকলেও সেটা কাগুজে বিষয়। না নেতা, না কর্মী, এর সঙ্গে, এই আদর্শের সঙ্গে কারও কোনো সম্পর্ক নেই। প্রবল কাণ্ডজ্ঞানে আর অভিজ্ঞতার কারণে কোনো কোনো সময়ে কোনো কোনো নেতা সঠিক সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু আদর্শগত কারণে সিদ্ধান্ত আসে না। ফলে রাজনীতি এখনো এখানে শেষ পর্যন্ত এক নেতার নির্দেশ ও সিদ্ধান্ত।
নতুন দল হিসেবে এনসিপির ওপর জনপ্রত্যাশার চাপটা অনেক বেশি। সেটা স্বাভাবিকই। পুরোনো দলগুলো কী করতে পারে, কতটা করতে পারে, সেটা জনগণ জানে। পুরোনো রাজনৈতিক চর্চাকে পেছনে ফেলে আমরা কতটা সামনে এগোতে পারব, সেটার অনেকখানিই নির্ভর করে নতুন রাজনৈতিক দলগুলো কতটা ভিন্নভাবে রাজনীতি করতে পারছে। নারী, শ্রমিক, কৃষক, জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু প্রশ্নে তারা কতটা উদারভাবে দাঁড়াতে পারছে। নতুন রাজনৈতিক দল কোথা থেকে অর্থ পাচ্ছে, নেতারা কেমন জীবন যাপন করছেন, কোন কোন প্রশ্নে তাঁরা বিবৃতি দিচ্ছেন, কোন কোন ইস্যুতে তাঁরা নিশ্চুপ থাকছেন—এ সবকিছুই কিন্তু মানুষ গভীরভাবে দেখছে। ভোটের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে এসব হিসাব-নিকাশ বিশদভাবে কাজ করবে।
আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত
এখন পর্যন্ত যে বাস্তবতা, তাতে ‘রিডেম্পশন’ ও ‘রিকনসিলিয়ন’ ছাড়া আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ফেরাটা অনিশ্চিত। সম্প্রতি প্রথম আলোর সঙ্গে সাক্ষাৎকারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ মোহাম্মদ শায়ান বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। দলটি আদৌ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে কি না, আমরা জানি না। আওয়ামী লীগ নেই, বাম দলগুলোর অবস্থা নড়বড়ে, আবার কিছু সেক্যুলার-লিবারেলের ভোটও আছে। ফলে বিশাল একটা জায়গা তো ফাঁকা পড়ে আছে।’ প্রশ্ন হচ্ছে, আগামী নির্বাচনে এই লোকগুলোর কি কোনো প্রতিনিধিত্ব থাকবে না?
আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের থাকা না–থাকা নিয়ে অনিশ্চয়তা আছে। আবার বিকল্প দল না থাকায় আওয়ামী লীগকে ভোট দিতে বাধ্য হন—এমন লিবারেল ও সেক্যুলার ভোটাররাও আছেন। আমরা ধরে নিই যে আওয়ামী লীগ না থাকলে তাদের কট্টর সমর্থকেরা ভোট দিতে যাবেন না। এর বাইরেও বিরাট অংশের ভোটারের ভোট দেওয়ার মতো কোনো রাজনৈতিক দল নেই। তাঁদের বিকল্প হতে পারত বাম দলগুলো।
কিন্তু পুরোনো ঘরানার বামপন্থী দলগুলো শ্রমিক, কৃষক ও সাধারণ মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন। তাদের সাংগঠনিক ভিত্তিও নড়বড়ে। আবার আওয়ামী লীগের ক্ষমতা ও অপকর্মের অংশীদার হওয়ায় বামপন্থীদের একটি অংশ অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে। ব্যক্তিস্বাধীনতা ও অধিকার প্রশ্নে পুরোনো বামপন্থীদের অবস্থান অনড় ও সেকেলে। সে কারণে যারা লিবারেল ও গণতান্ত্রিক, তাদের বামপন্থী দলগুলো আকৃষ্ট করতে পারে না।
পরিবারতন্ত্র, জনতুষ্টিবাদ, সাংস্কৃতিক ক্যাচাল ও চরমপন্থী মতাদর্শের বাইরে ব্যক্তির অধিকার, উদারনৈতিক গণতন্ত্র, সাংস্কৃতিক বহুত্ববাদ, সুযোগের ক্ষেত্রে সাম্য, নারী–কৃষক–শ্রমিক–সংখ্যালঘুর অধিকারকে জোরালোভাবে সমর্থন দেয়, এমন রাজনীতির শূন্যতা বাংলাদেশে অনেক দিনের। সেই শূন্যতা পূরণ করবে কোন দল?
● মনোজ দে প্রথম আলোর সম্পাদকীয় সহকারী
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র র জন ত ক র জন ত র ন র জন ত ব মপন থ দলগ ল র অন শ চ শ ন যত আওয় ম ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
সকালের সবচেয়ে বরকতময় সময় ব্যবহারের ৭ কৌশল
সকাল মানুষের জীবনের একটি মূল্যবান সময়, যা দিনের বাকি অংশের জন্য সুর নির্ধারণ করে। সকাল আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার, শরীর ও মনকে প্রস্তুত করার এবং দিনের লক্ষ্য অর্জনের একটি সুবর্ণ সুযোগ।
সামাজিক মাধ্যম, কাজের চাপ এবং পারিবারিক দায়িত্ব আমাদের অনেক সময় কেড়ে নেয়, তাই সকালকে সঠিকভাবে ব্যবহার করে আমরা জীবনকে আরও উৎপাদনশীল করতে পারি।
১. আল্লাহর সঙ্গে দিনের শুরুফজরের নামাজের ১৫-২০ মিনিট আগে উঠে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া এবং দোয়া করা জীবনকে আমূল বদলে দিতে পারে। এই সময়টি শান্ত ও পবিত্র, যখন আল্লাহর সঙ্গে কোনো বাধা থাকে না।
কে আছে আমাকে ডাকার, আমি সাড়া দেব? কে আছে আমার কাছে চাওয়ার, আমি দান করব? কে আছে ক্ষমা প্রার্থনা করার, আমি ক্ষমা করব?সহিহ বুখারি, হাদিস: ১,১৪৫নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘প্রতি রাতে, যখন রাতের শেষ তৃতীয়াংশ বাকি থাকে, তখন আমাদের রব নিকটতম আসমানে নেমে আসেন এবং বলেন, ‘কে আছে আমাকে ডাকার, আমি সাড়া দেব? কে আছে আমার কাছে চাওয়ার, আমি দান করব? কে আছে ক্ষমা প্রার্থনা করার, আমি ক্ষমা করব?”’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১,১৪৫)।
তাহাজ্জুদের সময় আপনার হৃদয়ের কথা আল্লাহর কাছে প্রকাশ করুন। এতে মানসিক শান্তি বাড়বে এবং দিনের জন্য ইতিবাচক মনোভাব তৈরি হবে। যদি আপনি নতুন হন, সপ্তাহে এক দিন থেকে শুরু করুন এবং ধীরে ধীরে এটি অভ্যাসে পরিণত করুন।
ফজরের আগে অবশিষ্ট সময়ে কোরআন তিলাওয়াত করুন, কারণ কোরআনে বলা হয়েছে, ‘ভোরে কোরআন পড়া (ফেরেশতাদের) দ্বারা প্রত্যক্ষ করা হয়।’ (সুরা ইসরা. আয়াত: ৭৮)।
আরও পড়ুনইশরাকের নামাজ: সকালের আলোয় আল্লাহর নৈকট্য ০৪ জুলাই ২০২৫২. ফজরের পর ঘুম থেকে দূরে থাকুনফজরের নামাজের পর ঘুমিয়ে পড়া অনেকের অভ্যাস, কিন্তু এটি সকালের বরকতময় সময় নষ্ট করে। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ আমার উম্মতের জন্য সকালের সময়কে বরকতময় করেছেন।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ২৬,৪৮১)।
এই সময়ে বড় বড় কাজ সহজে সম্পন্ন করা যায়, কারণ এতে আল্লাহর বিশেষ বরকত রয়েছে।
আল্লাহ আমার উম্মতের জন্য সকালের সময়কে বরকতময় করেছেন। মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ২৬,৪৮১ফজরের পর ঘুমের প্রলোভন এড়াতে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন। এই সময়ে পড়াশোনা, কোরআন মুখস্থ করা বা কোনো ব্যক্তিগত প্রকল্পে কাজ করা যায়। এটি দিনের বাকি সময়ে অবসরের জন্য সময় বাঁচায় এবং আগামী দিনে আরও তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস তৈরি করে।
বিশ্বের সফল ব্যক্তিরাও ভোর চারটা বা পাঁচটায় উঠে কাজ শুরু করার কথা বলেন, যা তাদের সাফল্যের একটি রহস্য।
৩. করণীয় তালিকা তৈরি করুনএকটি করণীয় তালিকা তৈরি করা দিনের পরিকল্পনাকে সুসংগঠিত করে। আমরা প্রায়ই মনে মনে কাজের পরিকল্পনা করি, কিন্তু মস্তিষ্কের ধারণক্ষমতা সীমিত। একটি ডায়েরি বা ফোনের নোট অ্যাপে কাজের তালিকা লিখে রাখলে সময় ও শক্তি সঠিকভাবে ব্যবহার করা যায়। সম্পন্ন হওয়া কাজগুলো তালিকা থেকে কেটে দেওয়ার একটা আলাদা আনন্দ আছে।
এই তালিকায় দৈনন্দিন কাজের পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যও অন্তর্ভুক্ত করুন। যেমন কোরআনের একটি নির্দিষ্ট অংশ মুখস্থ করা বা একটি নতুন দক্ষতা শেখার পরিকল্পনা। এটি আপনাকে দিনের শুরুতে ফোকাসড রাখবে এবং উৎপাদনশীলতা বাড়াবে।
আরও পড়ুনযে ৪টি পরীক্ষা নবীজি (সা.)–এর জীবনকে দৃঢ়তা দিয়েছে২২ জুলাই ২০২৫বিশ্বের সফল ব্যক্তিরাও ভোর চারটা বা পাঁচটায় উঠে কাজ শুরু করার কথা বলেন, যা তাদের সাফল্যের একটি রহস্য।৪. সকালে স্ক্রিন থেকে দূরে থাকুনসকালের মূল্যবান সময় সামাজিক মাধ্যমে বা ফোনে অযথা স্ক্রল করে নষ্ট করা উচিত নয়। অনেকে সকালে ফোন হাতে নিয়ে ‘শুধু একটু দেখে নিই’ ভেবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা হারিয়ে ফেলেন। এটি মানসিক চাপ বাড়ায় এবং সকালের শান্তি নষ্ট করে।
নিয়ম করুন, সকালের নাশতা বা কিছু কাজ শুরু না করা পর্যন্ত ফোন বা সামাজিক মাধ্যমে যাবেন না। সকালে খবর পড়া এড়িয়ে চলুন। কারণ, এটি নেতিবাচক মনোভাব তৈরি করতে পারে। যখন ফোন ব্যবহার করবেন, তখন ইতিবাচক ও প্রেরণাদায়ক কনটেন্ট দেখুন, যা আপনার দিনকে উজ্জ্বল করবে।
৫. শরীরচর্চা করুনশরীরচর্চার উপকারিতা আমরা সবাই জানি। বিশেষ করে এই সময়ে, যখন অনেকে বাড়ি থেকে কাজ করছেন, শরীরচর্চা শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। বাড়িতে কাজ করার ফলে ঘাড়ে ও পিঠে ব্যথা, পেশির সমস্যা বাড়ছে।
সকালে মাত্র ৩০ মিনিট শরীরচর্চা, যেমন যোগ, পাইলেটস, হাই-ইনটেনসিটি ইন্টারভাল ট্রেনিং বা ব্রিস্ক ওয়াক, আপনার শরীরে রক্ত সঞ্চালন বাড়াবে এবং মনকে সতেজ করবে।
ইউটিউবে হাজারো ধরনের ব্যায়ামের ভিডিও পাওয়া যায়, যা বাড়িতে সামান্য জায়গায় করা যায়। যদি বাইরে যাওয়ার সুযোগ থাকে, তবে সকালে ৩০ মিনিট হাঁটুন। লক্ষ্য হলো শরীরকে সচল রাখা এবং শক্তি বৃদ্ধি করা।
আরও পড়ুনসুস্থ জীবন যাপনে মহানবী (সা.)-এর ৯ অভ্যাস২৪ জুলাই ২০২৫সকালে মাত্র ৩০ মিনিট শরীরচর্চা, যেমন যোগ, পাইলেটস, হাই-ইনটেনসিটি ইন্টারভাল ট্রেনিং বা ব্রিস্ক ওয়াক, আপনার শরীরে রক্ত সঞ্চালন বাড়াবে এবং মনকে সতেজ করবে।৬. পুষ্টিকর নাশতা গ্রহণব্যস্ততার কারণে অনেকে সকালের নাশতা বাদ দেন, কিন্তু গবেষণা বলছে, পুষ্টিকর নাশতা দিনভর মনোযোগ বাড়ায়, অপ্রয়োজনীয় চিনির লোভ কমায় এবং শক্তি জোগায়। নাশতায় উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার, যেমন ওটস বা মাল্টিগ্রেইন রুটি, স্বাস্থ্যকর চর্বি যেমন অ্যাভোকাডো বা বাদাম, গ্রিক ইয়োগার্ট এবং ফল অন্তর্ভুক্ত করুন।
সময় কম থাকলে একটি স্মুদি তৈরি করুন—পালংশাক, আপেল এবং হিমায়িত কলা ব্লেন্ড করে সুস্বাদু ও পুষ্টিকর নাশতা তৈরি করা যায়। এটি দিনের শুরুতে সবুজ শাকসবজি গ্রহণের একটি সহজ উপায়।
৭. নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপনবাড়ি থেকে কাজ করার সময় অনেকে ক্যাজুয়াল পোশাকে থাকেন। বরং সকালে সুন্দর পোশাক পরুন, যা আপনার মেজাজ উজ্জ্বল করবে। একটু পছন্দের সুগন্ধি ব্যবহার করলে আত্মবিশ্বাস বাড়বে।
আল্লাহ সুন্দর এবং তিনি সৌন্দর্য পছন্দ করেন।সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯১নবীজি (সা) বলেছেন, ‘আল্লাহ সুন্দর এবং তিনি সৌন্দর্য পছন্দ করেন।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯১)। নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা শুধু বাহ্যিক নয়, বরং এটি আপনার মানসিক প্রস্তুতি ও দিনের জন্য উৎসাহ বাড়ায়।
সকাল আমাদের দিনের ভিত্তি। ইসলাম আমাদের শেখায় যে সকাল আল্লাহর বরকত নিয়ে আসে। তাহাজ্জুদ, ফজরের পর জাগ্রত থাকা, করণীয় তালিকা তৈরি, স্ক্রিন থেকে দূরে থাকা, শরীরচর্চা, পুষ্টিকর নাশতা এবং নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন—এই সাতটি অভ্যাস আমাদের সকালকে উৎপাদনশীল করবে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
সূত্র: দ্য মুসলিম ভাইব ডট কম
আরও পড়ুনরহমতের দুয়ারে হাজিরা১৫ জুন ২০২৪