বাংলাদেশে যাঁদের বয়স ৩৩-এর মধ্যে, তাঁদের সিংহভাগেরই ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার কোনো অভিজ্ঞতা নেই। আবার বড় হয়েই তাঁরা একদলীয় শাসন দেখে এসেছেন। এই যুবকেরা আগামী নির্বাচনের বড় গেমচেঞ্জার। পরপর তিনটি নির্বাচন গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে তাঁরা কোন দিকে ঝুঁকে পড়েছেন, সেটা বলা মুশকিল।

নব্বইয়ের গণ–অভ্যুত্থান থেকে আমরা যদি ২০০৯ সালের নির্বাচন পর্যন্ত আমাদের রাজনীতির একটি কালপর্ব বলি, তাহলে এই সময়টাকে আধা গণতান্ত্রিক দ্বিদলীয় ব্যবস্থা বলে চিহ্নিত করা যেতে পারে। এ সময়ে মোট পাঁচটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিতর্ক ও বন্দোবস্তের অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও আমাদের এখানকার গণতান্ত্রিক মানের বিচারে এর মধ্যে মোটামুটি চারটি নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য বলা যেতে পারে।

এই চারটি নির্বাচনে পৃথকভাবে ও জোট বেঁধে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নির্বাচন করেছে। চারটি নির্বাচনে যে ভোটের হার, তাতে দেখা যাচ্ছে বিএনপির ভোটের হার প্রায় সাড়ে ৩৬। আর আওয়ামী লীগের ভোটের হার ছিল ৩৯। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ভোটের হার অনেকটাই কাছাকাছি। প্রতিটি নির্বাচনে ফলাফল নির্ধারণে সুইং ভোটাররা বরাবরই নির্ধারক ভূমিকা পালন করেন।

পরিবারতন্ত্র, জনতুষ্টিবাদ, সাংস্কৃতিক ক্যাচাল ও চরমপন্থী মতাদর্শের বাইরে ব্যক্তির অধিকার, উদারনৈতিক গণতন্ত্র, সাংস্কৃতিক বহুত্ববাদ, সুযোগের ক্ষেত্রে সাম্য, নারী–কৃষক–শ্রমিক–সংখ্যালঘুর অধিকারকে জোরালোভাবে সমর্থন দেয়, এমন রাজনীতির শূন্যতা বাংলাদেশে অনেক দিনের। সেই শূন্যতা পূরণ করবে কোন দল?

সর্বশেষ ২০২৪ সালের যে আমি ও ডামির নির্বাচন হয়েছিল, সেখানে নির্বাচন কমিশন দাবি করেছিল, ৪১ শতাংশ ভোট পড়েছিল। সেটা যে ডাহা কারসাজি, সে ব্যাপারে কারোরই সংশয় থাকার কোনো কারণ নেই। তবে সেদিন বেলা আড়াইটা পর্যন্ত ভোট পড়ার যে হার ছিল, তাতে অনেকেই বলেন, ১৭ থেকে ১৮ শতাংশ ভোট পড়েছিল। এর মানে হচ্ছে, তাঁরা এমন কট্টর আওয়ামী লীগ সমর্থক, যাঁরা কিনা ভোটের ফলাফল আগে থেকে জানার পরও ভোটকেন্দ্রে গেছেন।

বাংলাদেশের মানুষদের ভোট দেওয়ার যে প্রবণতা, তাতে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী মধ্যপন্থী দলগুলোকেই সমর্থন দিয়ে এসেছে। তবে এই মধ্যপন্থা গ্রহণের পেছনে নগদ লাভ-ক্ষতির সহজ হিসাবটাই কাজ করে। কেননা, এখানে নাগরিকদের রাষ্ট্রের কোনো সেবা পেতে হলেও তঁাদের রাজনৈতিক নেতাদের শরণাপন্ন হয়ে সেটা পেতে হয়।

২০০৮ থেকে ২০২৫, মাঝখানে ১৭ বছর পেরিয়ে গেছে। বাংলাদেশের সমাজে একটা বড় পরিবর্তন এসেছে। সমাজে অনেকখানি মেরুকরণ ঘটে গেছে। এর পেছনে বৈশ্বিক কারণ যেমন আছে, আবার অভ্যন্তরীণ কারণও আছে। মার্কিনদের ওয়ার অ্যান্ড টেররের অভিঘাত এবং আওয়ামী লীগের তীব্র দমনমূলক স্বৈরশাসন বাংলাদেশের সমাজ কিছুটা দক্ষিণ দিকে ঝুঁকে পড়েছে। বিশেষ করে নাগরিক ও শহুরে তরুণদের একটা অংশের মাঝে সেটা প্রবলভাবে দৃশ্যমান। কিন্তু এই ডান দিকে ঝুঁকে পড়া মানে ভোটের সবটাই ধর্মভিত্তিক দলগুলোর দিকে যাবে, তা নয়। কেননা, বাংলাদেশের ধর্মভিত্তিক প্রতিটি দলের আলাদা আইডিওলজি আছে। অনড় কাঠামোর জন্য তাদের ভোটার ভিত্তিও সুনির্দিষ্ট। মতাদর্শিক ভিন্নতা ও বিরোধের কারণেই ডানপন্থী ভোটগুলো এক প্ল্যাটফর্মে আসা সম্ভব নয়। আবার এককভাবে নির্বাচন করে আসন পাওয়া কঠিন হওয়ায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ইসলামি দলগুলো বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করতে দেখেছি।

আমরা যদি বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্পেকটামের দিকে তাকাই, তাহলে বিএনপি ডান দিকে ঝুঁকে থাকা মধ্যপন্থী দল। আরও ডানে আছে জামায়াতে ইসলামী। আরও ডানে হেফাজতে ইসলামসহ অন্য দলগুলো। আওয়ামী লীগ কিছু বামে ঘেঁষা মধ্যপন্থী দল। আরও বামে আছে কমিউনিস্ট পার্টি ও বামপন্থী নামে পরিচিত দলগুলো। ভোটের সমীকরণে সব সময়ই মধ্যপন্থী দলগুলোই আধিপত্য করে। সিংহভাগ ভোটার এ ধারার দলগুলোর প্রতিই আকৃষ্ট হন।

এনসিপির প্রতি প্রত্যাশার পারদটা অনেক বেশি

জুলাই-আগস্টের কোটা সংস্কার আন্দোলন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) যাত্রা শুরু করেছে। মধ্যপন্থী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতির কথা বললেও এখন পর্যন্ত দলটি নিজেদের ঘোষণাপত্র ও কর্মসূচি দিতে পারেনি। মধ্যপন্থী রাজনীতি যে একটা মতাদর্শ, সেই অবস্থান তাদের কথা ও কাজে প্রতিফলিত হচ্ছে না। ব্যক্তির অধিকার, উদারনৈতিক গণতন্ত্র, সাংস্কৃতিক বহুত্ববাদ, সুযোগের ক্ষেত্রে সাম্য—এ রকম মৌলিক নীতির ওপর দাঁড়িয়েই মধ্যপন্থী রাজনীতির ভিত গড়ে ওঠে। ডানপন্থীর সঙ্গে কিছু বামপন্থী লোককে ভেড়ানো মানেই মধ্যপন্থী রাজনীতি নয়।

একটা দলের রাজনীতি কী, সেটা তার ইশতেহার ও কর্মসূচির ওপর নির্ভর করে। পুরোনো যে রাজনৈতিক বন্দোবস্ত, সেখানে দল মানে এক ব্যক্তি। সরকার মানেই এক ব্যক্তির শাসন। কে নেতা হবেন, কে এমপি হবেন, কে মন্ত্রী হবেন, সবটাই নির্ধারণ করে দেন দলের নেতা। ফলে রাজনীতি, সরকার—সবখানেই ব্যক্তিপূজা প্রতিষ্ঠা পায়। রাজনীতির এই ব্যক্তিপূজা শেষ পর্যন্ত অগণতান্ত্রিক, স্বৈরতান্ত্রিক ও ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার ভিত্তি গড়ে দেয়। রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহার ও কর্মসূচি থাকলেও সেটা কাগুজে বিষয়। না নেতা, না কর্মী, এর সঙ্গে, এই আদর্শের সঙ্গে কারও কোনো সম্পর্ক নেই। প্রবল কাণ্ডজ্ঞানে আর অভিজ্ঞতার কারণে কোনো কোনো সময়ে কোনো কোনো নেতা সঠিক সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু আদর্শগত কারণে সিদ্ধান্ত আসে না। ফলে রাজনীতি এখনো এখানে শেষ পর্যন্ত এক নেতার নির্দেশ ও সিদ্ধান্ত।

নতুন দল হিসেবে এনসিপির ওপর জনপ্রত্যাশার চাপটা অনেক বেশি। সেটা স্বাভাবিকই। পুরোনো দলগুলো কী করতে পারে, কতটা করতে পারে, সেটা জনগণ জানে। পুরোনো রাজনৈতিক চর্চাকে পেছনে ফেলে আমরা কতটা সামনে এগোতে পারব, সেটার অনেকখানিই নির্ভর করে নতুন রাজনৈতিক দলগুলো কতটা ভিন্নভাবে রাজনীতি করতে পারছে। নারী, শ্রমিক, কৃষক, জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু প্রশ্নে তারা কতটা উদারভাবে দাঁড়াতে পারছে। নতুন রাজনৈতিক দল কোথা থেকে অর্থ পাচ্ছে, নেতারা কেমন জীবন যাপন করছেন, কোন কোন প্রশ্নে তাঁরা বিবৃতি দিচ্ছেন, কোন কোন ইস্যুতে তাঁরা নিশ্চুপ থাকছেন—এ সবকিছুই কিন্তু মানুষ গভীরভাবে দেখছে। ভোটের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে এসব হিসাব-নিকাশ বিশদভাবে কাজ করবে।

আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত

এখন পর্যন্ত যে বাস্তবতা, তাতে ‘রিডেম্পশন’ ও ‘রিকনসিলিয়ন’ ছাড়া আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ফেরাটা অনিশ্চিত। সম্প্রতি প্রথম আলোর সঙ্গে সাক্ষাৎকারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ মোহাম্মদ শায়ান বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। দলটি আদৌ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে কি না, আমরা জানি না। আওয়ামী লীগ নেই, বাম দলগুলোর অবস্থা নড়বড়ে, আবার কিছু সেক্যুলার-লিবারেলের ভোটও আছে। ফলে বিশাল একটা জায়গা তো ফাঁকা পড়ে আছে।’ প্রশ্ন হচ্ছে, আগামী নির্বাচনে এই লোকগুলোর কি কোনো প্রতিনিধিত্ব থাকবে না?

আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের থাকা না–থাকা নিয়ে অনিশ্চয়তা আছে। আবার বিকল্প দল না থাকায় আওয়ামী লীগকে ভোট দিতে বাধ্য হন—এমন লিবারেল ও সেক্যুলার ভোটাররাও আছেন। আমরা ধরে নিই যে আওয়ামী লীগ না থাকলে তাদের কট্টর সমর্থকেরা ভোট দিতে যাবেন না। এর বাইরেও বিরাট অংশের ভোটারের ভোট দেওয়ার মতো কোনো রাজনৈতিক দল নেই। তাঁদের বিকল্প হতে পারত বাম দলগুলো।

কিন্তু পুরোনো ঘরানার বামপন্থী দলগুলো শ্রমিক, কৃষক ও সাধারণ মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন। তাদের সাংগঠনিক ভিত্তিও নড়বড়ে। আবার আওয়ামী লীগের ক্ষমতা ও অপকর্মের অংশীদার হওয়ায় বামপন্থীদের একটি অংশ অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে। ব্যক্তিস্বাধীনতা ও অধিকার প্রশ্নে পুরোনো বামপন্থীদের অবস্থান অনড় ও সেকেলে। সে কারণে যারা লিবারেল ও গণতান্ত্রিক, তাদের বামপন্থী দলগুলো আকৃষ্ট করতে পারে না।

পরিবারতন্ত্র, জনতুষ্টিবাদ, সাংস্কৃতিক ক্যাচাল ও চরমপন্থী মতাদর্শের বাইরে ব্যক্তির অধিকার, উদারনৈতিক গণতন্ত্র, সাংস্কৃতিক বহুত্ববাদ, সুযোগের ক্ষেত্রে সাম্য, নারী–কৃষক–শ্রমিক–সংখ্যালঘুর অধিকারকে জোরালোভাবে সমর্থন দেয়, এমন রাজনীতির শূন্যতা বাংলাদেশে অনেক দিনের। সেই শূন্যতা পূরণ করবে কোন দল?

● মনোজ দে প্রথম আলোর সম্পাদকীয় সহকারী

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র র জন ত ক র জন ত র ন র জন ত ব মপন থ দলগ ল র অন শ চ শ ন যত আওয় ম ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

শিক্ষার্থীর গবেষণাপত্রের অংশ অনুমতি না নিয়ে প্রকাশের অভিযোগ, শিক্ষক বলছেন ‘ভিত্তিহীন’

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ইসরাত জাহানের বিরুদ্ধে তাঁর আগের কর্মস্থলের এক শিক্ষার্থীর তৈরি করা গবেষণাপত্রের অংশ নিজের নামে প্রকাশ করার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ওই শিক্ষার্থী কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। এরই মধ্যে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত কমিটিও গঠন করেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

লিখিত অভিযোগ দেওয়া ওই সাবেক শিক্ষার্থীর নাম রিফাত সুলতানা। তিনি নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। বর্তমানে তিনি ফেনী শহরের বাসিন্দা এবং সেখানে একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। ২০১৯ সালে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলেন ইসরাত জাহান। ওই সময়ের শিক্ষার্থী রিফাত সুলতানার থিসিসের সুপারভাইজার ছিলেন তিনি। প্রায় আড়াই বছর আগে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিয়েছেন ইসরাত জাহান।

জানতে চাইলে ইসরাত জাহান মঙ্গলবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সেই শিক্ষার্থী আমাকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলবে, কখনো ভাবিনি। আমার সঙ্গে ওই শিক্ষার্থীর দীর্ঘদিনের সম্পর্ক এবং সে নিজেই একাধিকবার আমার সঙ্গে যৌথভাবে জার্নাল প্রকাশের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আমি দীর্ঘদিন তাকে পড়িয়েছি, আমিই তাকে সব সময় উৎসাহিত করেছি থিসিসে। কিন্তু অভিযোগে এবং গণমাধ্যমে সে যেসব কথা বলেছে, তার সবই ভিত্তিহীন। আমি তার সঙ্গে অসংখ্যবার আলোচনা করেই জার্নালে প্রবন্ধ জমা দিয়েছি। আমার কাছে সব প্রমাণ রয়েছে। কিন্তু কেন সে অভিযোগ করল, এটাই বুঝতে পারছি না।’

২০১৯ সালে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক ইসরাত জাহানের অধীন রিফাত সুলতানা একটি থিসিস করেন। যার শিরোনাম ‘সাবজুগেশন, মার্জিনালাইজেশন অ্যান্ড ডাবল কলোনিজেশন: আ রিডিং অব দ্য অবরোধবাসিনী, দ্য ডার্ক হোল্ডস নো টেররস অ্যান্ড দ্য গড অব স্মল থিংস’। ওই থিসিসের বিষয়বস্তুর ওপর ভিত্তি করে গত ৩১ ডিসেম্বর ‘ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব ইংলিশ লিটারেচার অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্সেস’ জার্নালে ‘ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স: আ কোয়েস্ট ফর সেলফ ইন শশী দেশপান্ডে’স দ্য ডার্ক হোল্ডস নো টেররস’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেন ইসরাত জাহান। এই প্রবন্ধে রিফাত সুলতানাকে দ্বিতীয় লেখক হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

এরপর গত ১৩ মার্চ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর অভিযোগ পাঠান রিফাত সুলতানা। যার পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
রিফাত সুলতানা অভিযোগ করেন, ইসরাত জাহান তাঁর অনুমতি ছাড়া এমএ থিসিসের ৩ নম্বর অধ্যায় থেকে সরাসরি অনুলিপি করেছেন। এ ছাড়া থিসিসের অন্যান্য অংশও, যেমন ৬ জানুয়ারি ২০১৯ এবং ২৩ আগস্ট ২০১৯ তারিখে পাঠানো থিসিসের খসড়া নমুনা এবং থিসিস প্রেজেন্টেশন থেকেও তিনি উদ্ধৃতি এবং প্যারাফ্রেজিং ব্যবহার করেছেন। তা ছাড়া ইসরাত জাহান থিসিসের মৌলিক লেখকের নাম প্রকাশে তাঁর সম্মতি নেননি। গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর ইসরাত জাহান তাঁর মুঠোফোনে কল করলেও তিনি ব্যস্ততার কারণে ধরতে পারেননি। এরপর তাঁর সঙ্গে শিক্ষকের আর কোনো যোগাযোগ হয়নি।

রিফাত সুলতানা প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গত ২২ এপ্রিল আমার সাক্ষাৎকার নিয়েছে। তবে সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় তদন্ত কমিটি পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করেছে এবং নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। তদন্ত চলাকালীন আমার অভিযোগের তদন্ত না করে আমাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছে তারা। তদন্ত কমিটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমাকে মানসিকভাবে হেনস্তা করেছে।’

তদন্ত কমিটির সদস্যরা তাঁদের মত চাপিয়ে দিতে চেয়েছেন উল্লেখ করে রিফাত সুলতানা আরও বলেন, ‘তাঁরা মনে করেন, থিসিস থেকে শিক্ষার্থী এবং সুপারভাইজার দুজনেই নাকি একক লেখক হিসেবে গবেষণা আর্টিকেল প্রকাশ করতে পারেন এবং কোনো সুপারভাইজার চাইলেই শিক্ষার্থীর থিসিস থেকে প্রথম লেখক হিসেবে আর্টিকেল প্রকাশ করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে থিসিসকারী শিক্ষার্থী অনুমতি না নিয়ে আর্টিকেল প্রকাশ করাকে তাঁরা অন্যায় বলে মনে করেন না।’

জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির সদস্য কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (চলতি দায়িত্ব) অধ্যাপক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এগুলো সব মিথ্যা ও বানোয়াট কথাবার্তা। ইসরাত জাহান এই গবেষণা দিয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনো প্রকার সুবিধা নেননি। এটি তাঁদের ব্যক্তিগত বিষয়। কারণ, পূর্বের প্রতিষ্ঠানে এটি তাঁদের যৌথ কাজ ছিল। ইসরাত যে গবেষণা জার্নালে প্রকাশ করেছেন, সেখানে তিনি শিক্ষার্থীর নামও দিয়েছেন। এরপরও আমাদের কাছে অভিযোগ করায় আমরা এ নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করেছি এবং অভিযোগকারীর কাছ থেকে বিস্তারিত জানান চেষ্টা করেছি। কিন্তু তিনি যেসব কথা বলছেন সেগুলো সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও বানোয়াট।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ