Prothomalo:
2025-11-03@05:36:00 GMT

‘আমাগো বাইত্তে কোনো ঈদ নাই’

Published: 1st, April 2025 GMT

ঢাকা বন বিভাগের উচ্ছেদ অভিযানে ঘরবাড়ি ভেঙে দেওয়ায় খোলা আকাশের নিচে মশারি টানিয়ে ঘুমিয়ে রাত পার করছেন গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বাঘাম্বর গ্রামের বাসিন্দা জরিনা বেগম। মঙ্গলবার সকালে আলাপকালে কান্নাজড়িত কণ্ঠে জরিনা বলেন, ‘ঈদের আগের দিন ঘরবাড়ি ভাইঙ্গা দেওনে আমাগো বাইত্তে (বাড়িতে) কোনো ঈদ নাই। রান্নার চুলাটাও ভাইঙ্গা দিছে, হের লাইগা রান্দন-বান্ধনও (রান্নাবান্না) করবার পারি নাই। এর-ওর বাড়িত থাইক্যা কিছু খাওনদাওন দিছে, হেগিলা খাইয়াই আছি। এটা কোনো মানুষের জীবন অইল। আমাগো দেহার (দেখার) যেন কেউ নাই।’  

একই এলাকার বাসিন্দা আসমা খাতুন জানান, রাতে মশারি টানিয়ে খোলা জায়গায় ঘুমিয়ে ছিলেন। মধ্যরাতে হঠাৎ শিয়াল ঢুকে শরীরে কামড়ে দিয়েছে।

ঈদের আগের দিন (রোববার) ঢাকার বন বিভাগ হঠাৎ অভিযান চালিয়ে এক্সকাভেটর (মাটি কাটার যন্ত্র) দিয়ে কালিয়াকৈর উপজেলার সিনাবহ ও বাঘাম্বর এলাকার ঘরবাড়িসহ আড়াই শতাধিক স্থাপনা ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। এতে অনেকে গৃহহীন হয়ে পড়েন। খোলা আকাশের নিচে মশারি টানিয়ে রাতযাপন করছেন তাঁরা। ঘরবাড়ি ও রান্নাঘর ভেঙে ফেলায় ঈদের দিনও অনেকের খাবার জোটেনি।

মঙ্গলবার দুপুরে বিপদগ্রস্ত পরিবারগুলোকে ত্রাণসহায়তা দিয়েছেন কালিয়াকৈর পৌর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইজুদ্দিন আহাম্মেদ। তিনি বলেন, ‘যে পরিমাণ ত্রাণসহায়তা দেওয়া হয়েছে, আশা করছি, আগামী ১৫-১৬ দিন তাঁরা ভালোভাবে কাটিয়ে দিতে পারবেন। প্রয়োজনে আরও সহায়তা দেওয়া হবে।’

বাগাম্বর গ্রামের গৃহহীন বাসিন্দারা জানান, ঘরবাড়ি হারিয়ে সবাই মানবেতর জীবনযাপন করছেন। যে কোনোভাবেই হোক, তাঁদের মাথার ওপর ছাদের ব্যবস্থা চান তাঁরা। গতকাল সকালে ওই দুই এলাকা ঘুরে ঘরবাড়ি ভাঙা দেখা যায়, যেন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। প্রতিটি বাড়ির খাট ও আলমারি ঘরের ভেতরেই পড়ে আছে। টিনের ও আধা পাকা মেঝেগুলো ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া রয়েছে। ভাঙা বাড়ির ঘরের ভেতরে মশারি টাঙানো। যেখানে শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিরা রাতযাপন করেছেন। কারও বাড়িতেই রান্না করতে দেখা যায়নি। অভিযানে শুধু বাড়িঘর নয়, দীর্ঘদিনের বড় বড় কাঁঠালগাছসহ বিভিন্ন ফলের গাছের শিকড় থেকে তুলে ফেলা হয়েছে।

ভাঙা ঘরের মেঝেতে বসে ছিলেন কবির হোসেন নামের এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘আমাগো কী অপরাধ ছিল। আমরা ভূমিহীন। আমরা প্রায় ৩০-৪০ বছর ধরে এই এলাকায় বসবাস করছি। হঠাৎ অভিযান চালিয়ে আমাদের ঘরবাড়ি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন কোনো রকমে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছি।’

বন বিভাগ ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, কালিয়াকৈরসহ বিভিন্ন এলাকায় গত ৫ আগস্টের পর অসাধু কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় বন বিভাগের জমি দখল করে হাজার হাজার ঘরবাড়ি ও অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। এঁদের মধ্যে অনেকেই দোতলা ভবন, কেউ টিনশেড, আবার কেউ আধা পাকা ঘর নির্মাণ করেছেন। স্থানীয় অসাধু ব্যক্তিরা অবৈধভাবে ঘর নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েছেন। কয়েক মাস ধরেই বনের লোকজন মাইকিং করে এসব অবৈধ স্থাপনা ভেঙে সরিয়ে নেওয়ার জন্য বলেছেন; কিন্তু কেউ এ বিষয়ে কর্ণপাত করেননি। অবশেষে গত রোববার সকালে যৌথ বাহিনীর সহযোগিতায় চারটি এক্সকাভেটর দিয়ে উপজেলার সিনাবহ ও বাঘাম্বর এলাকায় ঘরবাড়ি ভাঙা শুরু করা হয়। এ সময় স্থানীয় লোকজন সংঘবদ্ধ হয়ে বন বিভাগের কর্মকর্তাদের ওপর ইটপাটকেল ছোড়েন। এতে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ায় অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।  বেলা সাড়ে তিনটা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে আড়াই শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে।

আরও পড়ুনবন বিভাগের অভিযানে গাজীপুরে ঘরবাড়িসহ আড়াই শতাধিক স্থাপনা উচ্ছেদ৩০ মার্চ ২০২৫

বাঘাম্বর গ্রামের বাসিন্দা মাহমুদা বেগম বলেন, ‘আমাগো দেশে যদি ১৬ লাখ রোহিঙ্গা থাকতে পারে। সরকার যদি তাদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করতে পারে, তাইলে আমারা এই দেশের নাগরিক হয়ে কী দোষ করলাম? আমাদের ঘরবাড়ি কেন ভেঙে দেওয়া হলো? আমরা তো ভোটার আমরা তো ভোট দেই। রোহিঙ্গারা সুবিধা পাইলে আমরা কেন পাব না?’

সিনাবাহ বাজারের ব্যবসায়ী আবদুস সালাম বলেন, প্রায় ৪০ বছর ধরে এখানে দোকান নির্মাণ করে ব্যবসা করে আসছেন। নিয়মিত সরকারকে ভ্যাট-ট্যাক্স দিচ্ছেন। দোকানে ১৫ থেকে ১৬ লাখ টাকার মালামাল ছিল। সেই মালামাল বের করার সময়ও দেয়নি। অপর ব্যবসায়ী আবু হানিফ বলেন, ‘মালামালসহ দোকানঘর ভেঙে দিয়েছে। এখন একেবারে পথে বসে গেছি।’

গত রোববার ঢাকা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) বশিরুল আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় ব্যক্তিরা বনের জমি দখল করে স্থাপনা তৈরি করছিলেন। বিশেষ করে ৫ আগস্টের পর দখলের পরিমাণ আরও বেড়ে যায়। তাঁদের এসব অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিতে বলা হয়েছিল; কিন্তু সরাননি। বাধ্য হয়ে অভিযান চালিয়ে আড়াই শতাধিক স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং বনভূমি পুনরুদ্ধারে নিয়মিত অভিযান চালানো হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বন ব ভ গ র ন র ম ণ কর ব ঘ ম বর র ঘরব ড় র ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

স্তম্ভিত হারমানপ্রীত, আবেগ-রোমাঞ্চ-গর্ব-ভালোবাসায় মিলেমিশে একাকার

২০০৫ ও ২০১৭, ভারতের নারী ক্রিকেট দল ওয়ানডে বিশ্বকাপের খুব কাছে গিয়েও শিরোপা জিততে পারেননি। হারমানপ্রীত কৌররা লম্বা সেই অপেক্ষা দূর করলেন দুই হাজার পঁচিশে।

মুম্বাইয়ের নাভিতে প্রায় ষাট হাজার দর্শকের সামনে উচিুঁয়ে ধরলেন ওয়ানডে বিশ্বকাপের শিরোপা। ২০১৭ সালের ফাইনালেও খেলেছিলেন হারমানপ্রীত। রানার্সআপ হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাকে। এবার আর ভুল করলেন না। অধিনায়ক হয়ে জিতলেন শিরোপা। গড়লেন ইতিহাস। যে ইতিহাস কখনো মুছবে না। কখনো জং ধরবে না।

ঝলমলে হাসিতে হারমানপ্রীত ট্রফি হাতে নিয়ে প্রেস কনফারেন্স রুমে প্রবেশ করেন। এবার তার আবেগের ধরণ ছিল ভিন্ন, যেন স্বপ্ন পূরণের মাখামাখি। লম্বা সংবাদ সম্মেলন জুড়ে বারবার তার কণ্ঠ ধরে আসে। আবেগ, রোমাঞ্চ, গর্ব, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। তবে একটি শব্দের ওপর বারবার ফিরে আসছিলেন তিনি, তা হলো আত্মবিশ্বাস,
‘‘আমি কেবল আমার অনুভূতি প্রকাশ করার চেষ্টা করছি। আমি স্তম্ভিত, আমি বুঝতে পারছি না। আসলে, এতে উত্থান-পতন ছিল, কিন্তু দলের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ছিল। আমি প্রথম দিন থেকেই এটা বলে আসছি। আমরা বাম বা ডানে তাকাচ্ছিলাম না। আমরা কেবল আমাদের মূল লক্ষ্যের দিকে তাকিয়েছিলাম।’’ - বলেছেন হারমানপ্রীত।

স্বপ্ন পূরণের রাতে হারমানপ্রীত কাছে পেয়েছিলেন সাবেক তিন ক্রিকেটার মিতালি রাজ, ঝুলন গোস্বামী এবং অঞ্জুম চোপড়াকে। প্রত‌্যেকেই স্বপ্ন দেখেছিলেন ভারতকে বিশ্বকাপ জেতানোর। তাদের অধরা সেই স্বপ্ন পূরণ করেছেন জেমিমা, দীপ্তি, শেফালি, স্মৃতিরা।

শিরোপা উৎসবে যোগ দেন মিতালি, ঝুলন, আঞ্জুমরা। তাদের হাতেও ট্রফি তুলে দেওয়া হয়। প্রাক্তন খেলোয়াড়দের সাথে সেই মুহূর্তটি ভাগ করে নেওয়ার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে হারমানপ্রীত বলেন, ‘‘ঝুলন দি আমার সবচেয়ে বড় আইডল ছিলেন। যখন আমি দলে যোগ দিই, তখন তিনি নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। আমি যখন খুব কাঁচা ছিলাম এবং ক্রিকেট সম্পর্কে তেমন কিছু জানতাম না, তখনও তিনি সবসময় আমাকে সমর্থন করতেন। অঞ্জুম দি-ও তাই। এই দুজন আমার জন্য দারুণ সমর্থন ছিলেন। আমি কৃতজ্ঞ যে আমি তাদের সাথে এই বিশেষ মুহূর্তটি ভাগ করে নিতে পেরেছি। এটি খুব আবেগপূর্ণ মুহূর্ত ছিল। আমার মনে হয় আমরা সবাই এটার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। অবশেষে, আমরা এই ট্রফি স্পর্শ করতে পেরেছি।’’

তার জন‌্য বিশ্বকাপের পুরো অভিযানটিই ছিল গভীরভাবে আবেগপূর্ণ। রাউন্ড রবিন লিগে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ম‌্যাচ হার। চোট, অফ ফর্ম, জড়তা। সব সামলে সেরা হয়েছেন। তাইতো নিজেদের নিয়ে গর্বটাও বেশি হারমানপ্রীতদের, ‘‘আমরা প্রথম বল থেকেই অনুভব করেছিলাম যে আমরা জিততে পারি, কারণ শেষ তিন ম্যাচে আমাদের দল যেভাবে খেলছিল, তাতে আমাদের জন্য অনেক কিছুর পরিবর্তন এসেছিল, বিশেষ করে আমাদের আত্মবিশ্বাস। আমরা অনেকদিন ধরেই ভালো ক্রিকেট খেলছি। আমরা জানতাম দল হিসেবে আমরা কী করতে পারি।”

"গত এক মাস খুব আকর্ষণীয় ছিল। সেই দিনটির (ইংল্যান্ডের কাছে হারের) পর আমাদের মধ্যে অনেক পরিবর্তন আসে। সেই রাত আমাদের জন্য অনেক কিছু বদলে দিয়েছিল। এটি প্রত্যেকের উপর প্রভাব ফেলেছিল। আমরা বিশ্বকাপের জন্য আরও প্রস্তুত হলাম। আমরা ভিজ্যুয়ালাইজেশন এবং মেডিটেশন শুরু করেছিলাম। আমরা বারবার বলছিলাম, যে জন‌্য আমরা এখানে এসেছি এবং এবার আমাদের এটা করতেই হবে।" - যোগ করেন হারমানপ্রীত।

প্রথম যে কোনো কিছুই আনন্দের। রোমাঞ্চের। এই অভিজ্ঞতা শব্দে বয়ান করা যায় না। বয়ান করা সম্ভব হয় না। হারমানপ্রীতও পারেন না নিজের সবটা উজার করে বলতে। তবে এই শিরোপায় তাদের নাম লিখা হবে সেই আত্মবিশ্বাস তারও ছিল, ‘‘আমরা বহু বছর ধরে এটি নিয়ে কথা বলছি—আমরা ভালো ক্রিকেট খেলছি, কিন্তু আমাদের একটি বড় শিরোপা জিততেই হতো।"

ঢাকা/ইয়াসিন

সম্পর্কিত নিবন্ধ