Prothomalo:
2025-05-01@00:00:03 GMT

‘আমাগো বাইত্তে কোনো ঈদ নাই’

Published: 1st, April 2025 GMT

ঢাকা বন বিভাগের উচ্ছেদ অভিযানে ঘরবাড়ি ভেঙে দেওয়ায় খোলা আকাশের নিচে মশারি টানিয়ে ঘুমিয়ে রাত পার করছেন গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বাঘাম্বর গ্রামের বাসিন্দা জরিনা বেগম। মঙ্গলবার সকালে আলাপকালে কান্নাজড়িত কণ্ঠে জরিনা বলেন, ‘ঈদের আগের দিন ঘরবাড়ি ভাইঙ্গা দেওনে আমাগো বাইত্তে (বাড়িতে) কোনো ঈদ নাই। রান্নার চুলাটাও ভাইঙ্গা দিছে, হের লাইগা রান্দন-বান্ধনও (রান্নাবান্না) করবার পারি নাই। এর-ওর বাড়িত থাইক্যা কিছু খাওনদাওন দিছে, হেগিলা খাইয়াই আছি। এটা কোনো মানুষের জীবন অইল। আমাগো দেহার (দেখার) যেন কেউ নাই।’  

একই এলাকার বাসিন্দা আসমা খাতুন জানান, রাতে মশারি টানিয়ে খোলা জায়গায় ঘুমিয়ে ছিলেন। মধ্যরাতে হঠাৎ শিয়াল ঢুকে শরীরে কামড়ে দিয়েছে।

ঈদের আগের দিন (রোববার) ঢাকার বন বিভাগ হঠাৎ অভিযান চালিয়ে এক্সকাভেটর (মাটি কাটার যন্ত্র) দিয়ে কালিয়াকৈর উপজেলার সিনাবহ ও বাঘাম্বর এলাকার ঘরবাড়িসহ আড়াই শতাধিক স্থাপনা ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। এতে অনেকে গৃহহীন হয়ে পড়েন। খোলা আকাশের নিচে মশারি টানিয়ে রাতযাপন করছেন তাঁরা। ঘরবাড়ি ও রান্নাঘর ভেঙে ফেলায় ঈদের দিনও অনেকের খাবার জোটেনি।

মঙ্গলবার দুপুরে বিপদগ্রস্ত পরিবারগুলোকে ত্রাণসহায়তা দিয়েছেন কালিয়াকৈর পৌর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইজুদ্দিন আহাম্মেদ। তিনি বলেন, ‘যে পরিমাণ ত্রাণসহায়তা দেওয়া হয়েছে, আশা করছি, আগামী ১৫-১৬ দিন তাঁরা ভালোভাবে কাটিয়ে দিতে পারবেন। প্রয়োজনে আরও সহায়তা দেওয়া হবে।’

বাগাম্বর গ্রামের গৃহহীন বাসিন্দারা জানান, ঘরবাড়ি হারিয়ে সবাই মানবেতর জীবনযাপন করছেন। যে কোনোভাবেই হোক, তাঁদের মাথার ওপর ছাদের ব্যবস্থা চান তাঁরা। গতকাল সকালে ওই দুই এলাকা ঘুরে ঘরবাড়ি ভাঙা দেখা যায়, যেন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। প্রতিটি বাড়ির খাট ও আলমারি ঘরের ভেতরেই পড়ে আছে। টিনের ও আধা পাকা মেঝেগুলো ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া রয়েছে। ভাঙা বাড়ির ঘরের ভেতরে মশারি টাঙানো। যেখানে শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিরা রাতযাপন করেছেন। কারও বাড়িতেই রান্না করতে দেখা যায়নি। অভিযানে শুধু বাড়িঘর নয়, দীর্ঘদিনের বড় বড় কাঁঠালগাছসহ বিভিন্ন ফলের গাছের শিকড় থেকে তুলে ফেলা হয়েছে।

ভাঙা ঘরের মেঝেতে বসে ছিলেন কবির হোসেন নামের এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘আমাগো কী অপরাধ ছিল। আমরা ভূমিহীন। আমরা প্রায় ৩০-৪০ বছর ধরে এই এলাকায় বসবাস করছি। হঠাৎ অভিযান চালিয়ে আমাদের ঘরবাড়ি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন কোনো রকমে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছি।’

বন বিভাগ ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, কালিয়াকৈরসহ বিভিন্ন এলাকায় গত ৫ আগস্টের পর অসাধু কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় বন বিভাগের জমি দখল করে হাজার হাজার ঘরবাড়ি ও অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। এঁদের মধ্যে অনেকেই দোতলা ভবন, কেউ টিনশেড, আবার কেউ আধা পাকা ঘর নির্মাণ করেছেন। স্থানীয় অসাধু ব্যক্তিরা অবৈধভাবে ঘর নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েছেন। কয়েক মাস ধরেই বনের লোকজন মাইকিং করে এসব অবৈধ স্থাপনা ভেঙে সরিয়ে নেওয়ার জন্য বলেছেন; কিন্তু কেউ এ বিষয়ে কর্ণপাত করেননি। অবশেষে গত রোববার সকালে যৌথ বাহিনীর সহযোগিতায় চারটি এক্সকাভেটর দিয়ে উপজেলার সিনাবহ ও বাঘাম্বর এলাকায় ঘরবাড়ি ভাঙা শুরু করা হয়। এ সময় স্থানীয় লোকজন সংঘবদ্ধ হয়ে বন বিভাগের কর্মকর্তাদের ওপর ইটপাটকেল ছোড়েন। এতে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ায় অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।  বেলা সাড়ে তিনটা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে আড়াই শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে।

আরও পড়ুনবন বিভাগের অভিযানে গাজীপুরে ঘরবাড়িসহ আড়াই শতাধিক স্থাপনা উচ্ছেদ৩০ মার্চ ২০২৫

বাঘাম্বর গ্রামের বাসিন্দা মাহমুদা বেগম বলেন, ‘আমাগো দেশে যদি ১৬ লাখ রোহিঙ্গা থাকতে পারে। সরকার যদি তাদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করতে পারে, তাইলে আমারা এই দেশের নাগরিক হয়ে কী দোষ করলাম? আমাদের ঘরবাড়ি কেন ভেঙে দেওয়া হলো? আমরা তো ভোটার আমরা তো ভোট দেই। রোহিঙ্গারা সুবিধা পাইলে আমরা কেন পাব না?’

সিনাবাহ বাজারের ব্যবসায়ী আবদুস সালাম বলেন, প্রায় ৪০ বছর ধরে এখানে দোকান নির্মাণ করে ব্যবসা করে আসছেন। নিয়মিত সরকারকে ভ্যাট-ট্যাক্স দিচ্ছেন। দোকানে ১৫ থেকে ১৬ লাখ টাকার মালামাল ছিল। সেই মালামাল বের করার সময়ও দেয়নি। অপর ব্যবসায়ী আবু হানিফ বলেন, ‘মালামালসহ দোকানঘর ভেঙে দিয়েছে। এখন একেবারে পথে বসে গেছি।’

গত রোববার ঢাকা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) বশিরুল আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় ব্যক্তিরা বনের জমি দখল করে স্থাপনা তৈরি করছিলেন। বিশেষ করে ৫ আগস্টের পর দখলের পরিমাণ আরও বেড়ে যায়। তাঁদের এসব অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিতে বলা হয়েছিল; কিন্তু সরাননি। বাধ্য হয়ে অভিযান চালিয়ে আড়াই শতাধিক স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং বনভূমি পুনরুদ্ধারে নিয়মিত অভিযান চালানো হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বন ব ভ গ র ন র ম ণ কর ব ঘ ম বর র ঘরব ড় র ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

শেখ হাসিনার সঙ্গে আসামি ৮ প্রাক্তন ভিসিসহ ২০১ জন

ঢাকার সরকারি আলিয়া মাদ্রাসার এক ছাত্রকে ‘হত্যাচেষ্টা’র অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর বোন শেখ রেহানাসহ ২০১ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য, শিক্ষক, সাংবাদিক, অভিনেতা-অভিনেত্রীদেরও আসামি করা হয়েছে। 

ঢাকা মহানগর হাকিম মনিরুল ইসলাম বুধবার অভিযোগটি আমলে নিয়ে শাহবাগ থানাকে এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। গত ২০ মার্চ সরকারি আলিয়া মাদ্রাসার ছাত্র সাইফুদ্দিন মোহাম্মদ এমদাদের পক্ষে ছাত্রদলের সাবেক নেতা এম এ হাশেম রাজু আদালতে এ মামলার আবেদন করেন। 

মামলায় অপর আসামিদের মধ্যে রয়েছেন– শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সালমান এফ রহমান, আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ প্রমুখ। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্যসহ কয়েকজন শিক্ষক আছেন আসামির তালিকায়। তারা হলেন– ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. আখতারুজ্জামান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. হারুন-অর-রশিদ, ঢাবি শিক্ষক অধ্যাপক মেসবাহ কামাল ও অধ্যাপক আবু জাফর মো. শফিউল আলম ভূঁইয়া, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য মুহম্মদ জাফর ইকবাল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য আনোয়ার হোসেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য মীজানুর রহমান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য আবদুল মান্নান, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য এম অহিদুজ্জামান, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ড. অনুপম সেন, সাংবাদিক নাঈমুল ইসলাম খান, নঈম নিজাম, শ্যামল দত্ত, মোজাম্মেল বাবু, আলমগীর হোসেন, আবেদ খান প্রমুখ।

মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে– ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় গত ৪ আগস্ট সকালে মামলার বাদী এম এ হাশেম রাজুর নেতৃত্বে একটি মিছিল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে পরীবাগে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনের মোড়ে এসে পৌঁছায়। তখন ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী পথরোধ করে ছাত্র-জনতাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলিবর্ষণ, হাতবোমা, পেট্রোল বোমা ও ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। এ গুলিতে আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থী সাইফুদ্দিন মোহাম্মদ এমদাদের ডান চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। 

এদিকে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে আব্দুন নূর নামে এক সাংবাদিক নিহতের ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনাসহ ১৬২ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। নিহতের বাবা হাফেজ আবুল বাশার গত মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর হাকিম এম মিজবাউর রহমানের আদালতে এ মামলা করেন। 

মামলায় অপর আসামিদের মধ্যে রয়েছেন– সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামাল, আনিসুল হক, হাছান মাহমুদ, সালমান এফ রহমান প্রমুখ। 

মামলার বাদী আবুল বাশার বলেন, আব্দুন নূর ময়মনসিংহের গফরগাঁও এলাকায় অভিযান নিউজ নামে পত্রিকার রিপোর্টার ছিল। আন্দোলনের সময় ১ আগস্ট সে ঢাকায় আসে এবং যাত্রাবাড়ীতে ৫ আগস্ট গুলিতে মারা যায়। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ