দালাল চক্রের সঙ্গে চুক্তি ছিল, ১৬ লাখ টাকার বিনিময়ে সোহাগ মিয়া (২৮) নামের এক যুবককে লিবিয়া হয়ে সাগর পথে ইতালি পৌঁছে দেওয়া হবে। ৫ লাখ টাকা পাওয়ার পর প্রায় ৭ মাস আগে তাঁকে লিবিয়া নেওয়া হয়। এরপর দফায় দফায় আদায় করা হয় পুরো টাকা। এর মধ্যে ৭ মাস পেরিয়ে গেলেও সোহাগের স্বপ্ন পূরণ হয়নি। গত রোববার দালাল চক্রের জিম্মায় লিবিয়ায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে।

সোহাগ কিশোরগঞ্জের ভৈরব পৌর শহরের কালিপুর দক্ষিণপাড়ার বাসিন্দা। এই তথ্য নিশ্চিত করে পরিবারের সদস্যেরা অভিযোগ করেন, দালাল চক্রের ক্রমাগত শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনে সোহাগের মৃত্যু হয়েছে। ইতালি পৌঁছে না দিতে পারলেও, এ সময়ের মধ্যে নানা অজুহাতে চুক্তির সব টাকা আদায় করে নিয়েছে তাঁরা।

ইতালিতে থাকেন সোহাগের বড় ভাই সুজন মিয়া। ভাইয়ের মৃত্যুর তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সোহাগ দালাল চক্রের জিম্মায় ছিল। দালালেরা আমার মাধ্যমে ১৬ লাখ টাকা নেয়। সোহাগকে প্রতিনিয়ত টাকার জন্য নির্যাতন চালাত। প্রয়োজনীয় ও পর্যাপ্ত খাবার দিত না। কয়েক দিন আগে শারীরিকভাবে নির্যাতন করলে সোহাগ অসুস্থ হয়ে পড়েন। কিন্তু তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়নি। সর্বশেষ গত রোববার তাঁর মৃত্যুর খবর এসেছে। এর পর থেকে দালালদের কারও মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।’

পরিবারের সদস্যরা জানায়, সোহাগের বাবা বেঁচে নেই। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। এর আগে ৮ বছর তিনি কাতারে ছিলেন। বছরখানিক আগে দেশে ফিরে বিয়ে সেরেছেন। সেই সংসারে দুই মাস বয়সী একটি কন্যাসন্তানও আছে। দেশে থাকা অবস্থায় নরসিংদীর বেলাব উপজেলার বারৈচা এলাকার সেন্টু মিয়া নামের এক দালালের সঙ্গে সোহাগের পরিচয় হয়। পরে সেন্টুর মাধ্যমে লিবিয়া হয়ে সাগরপথে ইতালি যাওয়ার চুক্তি হয়। লিবিয়ায় তাঁকে আটকে রেখে কৌশলে এবং দফায় দফায় চুক্তির পুরো টাকা আদায় করে চক্রটি। এটি নিয়ে কথা বললে তাঁর ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হতো।

সোহাগের স্ত্রী লিজা বেগম জানান, নিজের ইচ্ছামতো তাঁর স্বামীর সঙ্গে কথা বলা যেত না। কথা হলেই বলতেন, সমস্যায় আছেন। দালালের দাবি করা টাকার বিনিময়ে সোহাগের সঙ্গে বলতে হতো।

সোহাগের মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে পরিবারটি। একই সঙ্গে দালাল চক্রের সদস্যের বিচারও দাবি করেছেন।
এদিকে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত সেন্টু মিয়া বর্তমানে দেশে নেই। তাঁর মুঠোফোন নম্বরটিও বন্ধ পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শবনম শারমিন বলেন, ‘সোহাগের লাশ দেশে মরদেহ ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে আমার সহযোগিতা থাকবে।’

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

কুমিল্লায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ৩৫ কিলোমিটারজুটে যানজট

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার নিমশার থেকে দাউদকান্দি পর্যন্ত প্রায় ৩৫ কিলোমিটারজুড়ে যানজট দেখা দিয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন মহাসড়কে চলাচলকারী যাত্রী ও চালকেরা। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি কাভার্ড ভ্যান উল্টে যাওয়ায় আজ বৃহস্পতিবার ভোর থেকে এ যানজট দেখা দেয়। 

হাইওয়ে পুলিশ  জানায়, বৃহস্পতিবার ভোরে মহাসড়কে কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার নূরীতলা এলাকায় একটি কাভার্ড ভ্যান নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায়। ফেনী থেকে রেকার এনে কাভার্ড ভ্যানটি উদ্ধারের কাজ শুরু করে পুলিশ। 

সকাল সাড়ে ১০টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মহাসড়কে যানজট দেখা গেছে। 

ঢাকাগামী রয়েল পরিবহনের চালক রমিজ উদ্দিন বলেন, সকাল সাড়ে ৮টায় ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা করে বুড়িচংয়ের নিমশার বাজারে যানজটে এক ঘণ্টা বসে থাকতে হয়েছে। ৫ মিনিট গাড়ি চললে ২০ মিনিট বসে থাকতে হয়। এভাবে ১০টা ৪০ মিনিটে চান্দিনায় পৌঁছেছি। এ সময়ে ঢাকার কাছাকাছি থাকার কথা ছিল। 

নিমশার বাজারে আটকে থাকা প্রাইভেট কারের যাত্রী তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ভোর থেকে যানজট অথচ সড়কে হাইওয়ে পুলিশ দেখছি না। 

ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রুহুল আমিন বলেন, মহাসড়কের নূরীতলা এলাকায় উল্টে কাভার্ড ভ্যানটি আড়াআড়িভাবে পড়ে ছিল। পরে ঢাকামুখী লেনের বেশ কিছু গাড়ি উল্টো পথে ঢোকায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। ফেনী থেকে ক্রেন এনে গাড়িটি উদ্ধার করা হয়েছে। যান চলাচল স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে। 

হাইওয়ে কুমিল্লা রিজিওনের পুলিশ সুপার অতিরিক্ত ডিআইজি মো. খাইরুল আলম সমকালকে বলেন, দুর্ঘটনার কারণেই যানজট দেখা দিয়েছে। দুর্ঘটনা কবলিত কাভার্ড ভ্যানটি উদ্ধার করা হয়েছে। যান চলাচল স্বাভাবিক হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ