সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চাঁদপুর জেলার নৌ সীমানার পদ্মা-মেঘনা নদীতে জাটকা মাছ ধরার মহোৎসব চলছে। এসব জাটকা আবার প্রকাশ্য গ্রামের হাট-বাজার বাড়ি বাড়ি এবং শহরের পাড়া-মহল্লায় বিক্রি হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (৩ এপ্রিল) চাঁদপুর শহরের পুরানবাজার নতুন রাস্তা, হরিসভা, পশ্চিম শ্রীরামদী, মধ্যশ্রীরামদী, পূর্বশ্রীরামদী, রঘুনাথপুর, জাফরাবাদসহ বিভিন্ন এলাকায় জাটকার হাট এবং বিক্রির যেন ধুম পড়েছে।
মাঝে মধ্যে জেলা উপজেলা প্রশাসনের টাস্কফোর্স, কোস্টগার্ড ও নৌপুলিশ অভিযান চালালেও মৎস্য বিভাগের তেমন কোনো অভিযান নেই। জেলা পুলিশেরও জাটকার বিষয়ে কোনো তৎপরতা নেই বললেই চলে। অনেকটা ফ্রি স্টাইলে জাটকা নিধন ও ক্রয় বিক্রয় চলছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে।
জাটকা রক্ষায় মৎস্য বিভাগের এমন ভূমিকায় জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সচেতন মানুষেরা বলছেন, এমন অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে নদীতে ইলিশ সংকট দেখা দেবে। এতে জেলে পল্লীতেও অভাব দেখা দেবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, চাঁদপুরের বিভিন্ন উপজেলায় এবং পার্শ্ববর্তী জেলা শরীয়তপুরের নদীতে জেলেরা প্রকাশ্যে কারেন্ট জাল দিয়ে জাটকা ধরছেন। রাজনৈতিক দলের পরিচয়ে একশ্রেণির দুর্বৃত্ত মৌসুমী জেলে ও ভাসমান আড়ৎদার সেজে ইলিশের উৎপাদন বাধাগ্রস্ত করতে ব্যক্তিগত লাভের আশায় জাটকা ধ্বংস করছে।
মতলব উত্তর উপজেলা থেকে শুরু করে চাঁদপুর সদর উপজেলার বিষ্ণুপুর, কানুদী, সফরমালী, আনন্দবাজার, কোড়ালিয়া চর, টিলাবাড়ি, যমুনা রোড, পুরাণবাজারের অটো স্ট্যান্ড, খাল রাস্তা বাজার, বউবাজার, লোহার পোল, এসব কোম্পানির মোড়, পালপাড়া, দাসপাড়া, পূর্ব সিরান্দী রঘুনাথপুর, মধ্যশ্রীরাদী, পূর্ব জাফরাবাদ, পশ্চিম রামদাসদী, বহরিয়া, দোকানঘর, লক্ষ্মীপুর, আপনার হাট চরসহ নদীর তীরবর্তী এলাকা দিয়ে ব্যাপক জাটকা নিধন এবং হাটবাজারে, পাড়া মহল্লায় বাসা বাড়িতে ১৮০ টাকা থেকে ২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে।
এদিকে মেঘনার পশ্চিমপাড় হাইমচর চর এলাকাসহ চরভৈরবী, কাটাখালী ও চাঁদপুর সদর উপজেলার রাজরাজেশ্বর এবং ইব্রাহিমপুর মেঘনা নদীর চর এলাকা দিয়ে প্রচুর পরিমাণে জাটকা ধরা ও বিক্রি করা হয় বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়।
অপরদিকে, ভেদরগঞ্জ উপজেলার কাচিকাটা, দুলারচর নতুন বাজার, মনাই হাওলাদার বাজার, ছুরির চর, উত্তর তারাবুনিয়া, দক্ষিণ তারাবুনিয়া, মাল বাজার, কুবুদ্ধির ঘাট, বন্দুছি বাজার, নুরুদ্দি বাজার, চেয়ারম্যান বাজার, নড়ীয়া উপজেলার সুরেশ্বর বাংলা বাজার, চরআত্রা নওপাড়া, গোসাইরহাট উপজেলার খেজুর তলা, কোদালপুর লঞ্চঘাট, কুচাইপট্টি বটতলা, জালালপুর টেকপার, মেহেরজানের টেক, ঈশানবালা পদ্মা মেঘনায় নিধনকৃত জাটকা জাটকা কিনে চাঁদপুর, শরীয়তপুর শহরসহ জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে প্রকাশ্যে বিক্রি করছেন জাটকা কারবারিরা।
পর্যবেক্ষকদের মতে, এবার মা ইলিশ রক্ষা অভিযান অনেকটাই ফলপ্রসূ হওয়ায় নদীতে প্রচুর জাটকা বিচরণ করছে। এই সুযোগে একশ্রেণীর দুর্বৃত্ত জাটকা নিধন ও ক্রয় বিক্রয়ে মরিয়া হয়ে উঠেছে। তারা প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে জাতীয় মৎস্য সম্পদের বারোটা বাজাচ্ছে।
মার্চ ও এপ্রিল-এই দুই মাস নদীতে সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকলেও, নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে অবৈধ জালসহ বিভিন্ন ধরনের জাল ফেলে জাটকাসহ ইলিশ ও নদীর অন্যান্য মাছ শিকার করছে জেলেরা। এতে মদদ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কিছু আড়ৎদার ও রাজনৈতিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে।
চাঁদপুর সদর উপজেলার মেঘনা নদীর বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, জেলে নামধারী কতিপয় দুর্বৃত্ত নির্বিঘ্নে মাছ শিকার করছে। এসব মাছ প্রকাশ্যে বিক্রি করা হচ্ছে হাটবাজার ও আড়তে। সংরক্ষণ করে পাঠানো হচ্ছে মাওয়া, মুন্সিগঞ্জ, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মেহেদী বলেন, “নিষেধাজ্ঞা কার্যকর রাখতে প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে। নিয়মিত অভিযানও চলছে। তবে কিছু অসাধু জেলে এখনো জাটকা শিকারের চেষ্টা করছে। তাদের ধরতে অভিযান অব্যাহত থাকবে।”
প্রসঙ্গত, ২০০৬ সাল থেকে জাটকা সংরক্ষণ ও ইলিশ উৎপাদন বাড়াতে প্রতি বছর মার্চ-এপ্রিল দুই মাস মেঘনার একটি নির্দিষ্ট অংশে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়। লক্ষ্মীপুরের চর আলেকজান্ডার থেকে চাঁদপুরের মতলব উপজেলার ষাটনল পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এই নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আগামী ৩০ এপ্রিল এই নিষেধাজ্ঞা শেষ হবে।
ঢাকা/অমরেশ/এস
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র উপজ ল উপজ ল র মৎস য
এছাড়াও পড়ুন:
অফিসে আপনি কি ১১ ঘণ্টার বেশি কাজ করেন
প্ল্যান ওয়ান জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা নিয়ে চলছে আলোচনা। সেখানে দুই হাজার ফুলটাইম কর্মজীবীর ওপর একটা জরিপ পরিচালনা করা হয়। পেশাগত কাজ বা চাপের সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যের সম্পর্ক নিয়ে পরিচালিত গবেষণাটি থেকে পাওয়া গেছে চমকপ্রদ তথ্য।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, যাঁরা কর্মক্ষেত্রে ১১ ঘণ্টা বা তার বেশি কাজ করেন, তাঁদের খাদ্যাভ্যাস তুলনামূলকভাবে অস্বাস্থ্যকর, তাঁরা অন্যদের তুলনায় মানসিক চাপে ভোগেন বেশি। ঠিকমতো পানি খাওয়ার প্রবণতা কম। পরিবার, প্রকৃতি ও পোষা প্রাণীর সঙ্গে সময় কাটানোর প্রবণতাও কম। কম ঘুমান। আর যেকোনো মানসিক আঘাত থেকে সেরে ওঠার পর্যাপ্ত সময় বা সুযোগ পান না। এই মানুষেরাই বেশি হতাশায় ভোগেন।
শুধু তা-ই নয়, দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়া এবং হৃদ্রোগ ও স্ট্রোকের মতো কার্ডিওভাস্কুলার রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বেশি। যাঁরা ১১ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় অফিস করেন, তাঁদের মধ্যে কর্মক্ষেত্রে অসুস্থ হয়ে যাওয়ার সংখ্যাও অনেক।
আরও পড়ুন২৫ বছর ধরে অফিসে যাননি তিনি১৩ মার্চ ২০২৫যদি ১১ ঘণ্টা কর্মক্ষেত্রে থাকতেই হয়, তাহলে যেসব বিষয় খেয়াল রাখবেনরাতে ৮ ঘণ্টা ঘুমাতেই হবে। তাতে শরীর ও মস্তিষ্ক দিনের শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রমের ধকল কাটিয়ে ওঠার সুযোগ পাবে।
কাজের ফাঁকে ফাঁকে বিরতি নিন। সবুজের দিকে তাকান। ডেস্কে গাছ রাখতে পারেন। উঠে একটু হাঁটুন। ব্যায়াম করুন। সহকর্মীর সঙ্গে চা খেতে খেতে গল্প করুন। গবেষণা জানাচ্ছে, ছোট ছোট বিরতি কাজে মনোযোগ পুনঃস্থাপন করতে সাহায্য করে এবং কাজের গুণমান বাড়ায়।
দুপুরে খাওয়ার পর একটা ন্যাপ নিতে পারেন।
২ লিটারের একটা বোতলে পানি রাখবেন। প্রতিদিন ১ বোতল পানি অবশ্যই শেষ করবেন। তা ছাড়া পানি, শরবত, জুস, ডাবের পানি, তরমুজ, শসা, আনারস ইত্যাদি খাবেন। হাইড্রেটেড থাকলে এনার্জি ধরে রেখে কাজ করা সহজ হয়।
প্রক্রিয়াজাত খাবার, কার্বোনেটেড ড্রিংক, চিনিযুক্ত খাবার বাদ দিন। এসব কেবল আপনার ক্লান্তি বাড়াবে।
আর সম্ভব হলে কর্মক্ষেত্রে কথা বলে আপনার কর্মঘণ্টা ৮ ঘণ্টায় নিয়ে আসতে পারলে তো কথাই নেই।
সূত্র: এনবিসি নিউজ
আরও পড়ুনঅফিসের বাড়তি কাজকে যেভাবে ‘না’ বলবেন১৩ মার্চ ২০২৫