ভয়ানকভাবে প্লাস্টিক দূষণের মুখে পড়ছে পৃথিবী। মানুষের মস্তিষ্ক, রক্ত, বুকের দুধের পাশাপাশি নাড়ি ও ধমনিতেও প্রবেশ করছে ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা বা মাইক্রোপ্লাস্টিক। মাইক্রোপ্লাস্টিকের কারণে নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা হতে পারে মানুষের শরীরে। সম্প্রতি এক গবেষণায় মাইক্রোপ্লাস্টিক স্বাস্থ্যের ওপর কতটা প্রভাব ফেলছে, তা জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

যুক্তরাজ্যের বিজনেস ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টের প্লাস্টিক বর্জ্যবিশেষজ্ঞ মার্ক হল জানিয়েছেন, মানুষের ওপর মাইক্রোপ্লাস্টিকের প্রভাব নিয়ে এখন প্রাথমিক পর্যায়ের গবেষণা চলছে। এরই মধ্যে প্লাস্টিক দূষণের কারণে নানা ধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। আমরা যে নমুনাচিত্র তৈরি করেছি, তা গবেষণার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। দুর্ভাগ্যবশত মাইক্রোপ্লাস্টিক আমাদের চারপাশের পরিবেশে প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। বাতাস থেকে শুরু করে খাবার, সবকিছুকে দূষিত করে ফেলছে মাইক্রোপ্লাস্টিক। কিছু পণ্যের ব্যবহার কমাতে পারলে এ ক্ষতি কমানো যেতে পারে। যদিও প্লাস্টিক বর্জ্য বড় একটি সমস্যা। এই সমস্যা মোকাবিলা করতে না পারলে পুরোপুরি সমস্যার সমাধান হবে না।

আরও পড়ুনমানুষের নাড়ি ও ধমনিতে প্লাস্টিক কণার খোঁজ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা০১ মার্চ ২০২৪

গবেষণার তথ্য মতে, মাইক্রোপ্লাস্টিকের বেশির ভাগ লক্ষণ শরীরের অভ্যন্তরে দেখা যায়। এসব পরিবর্তনের মধ্যে ত্বকে শুষ্কতা, লালচে ভাব ও জ্বালাপোড়ার মতো সমস্যা হয়ে থাকে। ত্বকের এন্ডোক্রাইনের সঙ্গে মাইক্রোপ্লাস্টিকের মিথস্ক্রিয়ার কারণে এসব ঘটছে। পেটের ফোলা ভাব, অস্বস্তি ও হজমের সমস্যার পাশাপাশি ক্লান্তিসহ নানা শারীরিক জটিলতা হয়ে থাকে। বাতাসে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতির কারণে কাশি ও শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যার পাশাপাশি শরীরের হরমোনের স্বাভাবিক কার্যক্রমও ব্যাহত হতে পারে। এর ফলে ওজন কমে যাওয়া, স্মৃতি বিভ্রাটসহ হাতের কাঁপুনিও হতে পারে।

আরও পড়ুনমানুষের মস্তিষ্কে প্লাস্টিক কণার উপস্থিতি দ্রুত বাড়ছে, উদ্বেগে বিজ্ঞানীরা০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

মাইক্রোপ্লাস্টিক থেকে রক্ষা পেতে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন কাজাখস্তানের নাজারবায়েভ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোপ্লাস্টিক গবেষক ডানা ঝাক্সিলিকোভা। তিনি জানান, মাইক্রোপ্লাস্টিক সর্বত্র রয়েছে। এরই মধ্যে মানুষের প্রায় সব অঙ্গেই মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়েছে। প্লাস্টিকের পানির বোতল বা কাগজের মতো যে কাপ আমরা ব্যবহার করি, সেখানেও প্লাস্টিক কণা আছে। সমস্যা সমাধানে কাচ বা ধাতুর তৈরি পানির বোতল ব্যবহার করতে হবে। এ ছাড়া প্লাস্টিকের পাত্রের মাধ্যমে মাইক্রোওয়েভে খাবার গরম না করার পাশাপাশি প্লাস্টিকের পাত্র, টি-ব্যাগ, কাগজের কাপ ও প্লেট এড়িয়ে চলতে হবে।

সূত্র: ডেইলি মেইল

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

নড়াইলে সরকারি গাছ বিক্রির অভিযোগে চেয়ারম্যানসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা

নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়নে সড়কের পাশে সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে শাহবাদ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মশিউর রহমান বাদী হয়ে সদর থানায় মামলাটি করেন।

মামলায় ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানসহ ১৩ জন আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকা ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন ও প্রশিকার গঠিত সংগঠন প্রভাতী যুব সংঘের সভাপতি নড়াইল সদর উপজেলার তুজরডাঙ্গা এলাকার মুজিবুর রহমান, সদস্য একই এলাকার জরিনা বেগম, রজব আলী, মো. আজিবর, মো. ইলিয়াছ, ইমান আলী, মো. ওমর, মো. হায়দার, আবু সাঈদ, মো. এনামুল ও মো. শরিফুল।

এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মামলার এজহারে বাদী অভিযোগ করেছেন, গত ২৯ এপ্রিল নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ বাজার থেকে হাজির বটতলা পর্যন্ত সরকারি রাস্তার জায়গা থেকে গাছ কাটা ও চুরি করে বিক্রির সংবাদ পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। উপস্থিত হয়ে দেখেন, কাটা গাছবোঝাই একটি ট্রাক এবং নছিমন জব্দ করেছেন নড়াইল সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার দেবাশীষ অধিকারী। তখন ঘটনাস্থলে শ্রমিকদের জিজ্ঞাসাবাদ ও খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, মামলার আসামিরা কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই খাসজমি থেকে গাছ কেটে বিক্রি করেছেন। এর আগেও একবার তাঁরা ওই জমি থেকে গাছ বিক্রি করেছিলেন। জব্দ করা গাছের লগ, ডালপালা এবং আগে কাটা গাছের অবশিষ্ট ভূমিসংলগ্ন গুঁড়ি পর্যবেক্ষণ করে বোঝা গেছে, ওই স্থান থেকে আনুমানিক পাঁচ লাখ টাকার অধিক গাছ চুরি করে কাটা ও বিক্রি হয়েছে।  

প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকার ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন বলেন, ২০০৯ সালে প্রশিকা, ইউনিয়ন পরিষদ ও প্রভাতী যুব সংঘের যৌথ উদ্যোগে একটি চুক্তির মাধ্যমে সড়কের পাশে গাছগুলো রোপণ করেছিল। সে সময় সড়কটি খাস খতিয়ানভুক্ত ছিল না। বর্তমানে তা সরকারের আওতায় পড়ায় গাছ কাটার অনুমতি চেয়ে ইউএনওর কাছে আবেদন করা হয়েছিল, তবে প্রশাসন কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি।  কিছুদিন আগে ইউপি সদস্য ইব্রাহিম তাঁকে ফোনে জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালা বিক্রি করতে চান চেয়ারম্যান। বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালাগুলো পড়ে থেকে নষ্ট হবে ভেবে তিনি বিক্রিতে সম্মতি দেন। পরে গাছ কীভাবে বা কারা কেটেছে, তা তিনি জানেন না।

মামলা করার আগে অবৈধভাবে গাছ কাটার অভিযোগের ব্যাপার জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, প্রশিকার সঙ্গে চুক্তির একটি পক্ষ ছিল ইউনিয়ন পরিষদ। সেই হিসেবে গাছ কাটার অনুমতি নিতে ইউএনও বরাবর প্রশিকার আবেদন তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে সুপারিশ করেছিলেন। তবে গাছ কেটেছে প্রশিকা আর তাদের সংগঠন। এখানে চেয়ারম্যান-মেম্বরের কিছু নেই।

নড়াইল সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবাশীষ অধিকারী বলেন, প্রশিকার চুক্তির সময় সড়কটি ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে ছিল, পরে ২০১৫ সালে এটি খাস খতিয়ানভুক্ত হয়। খাসজমি থেকে গাছ কাটা বেআইনি। এ কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ