ঈদের ছুটিতে পর্যটকের ঢল নেমেছে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে। শহরের পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেলে কোনো কক্ষ খালি নেই। হোটেলমালিকদের তথ্য অনুযায়ী, ঈদের দ্বিতীয় দিন গত মঙ্গলবার থেকে আজ শুক্রবার পর্যন্ত কক্সবাজার ভ্রমণ করেছেন সাড়ে সাত লাখের বেশি মানুষ।

শুক্রবার সকালে শহরের বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায়, দূরপাল্লার বাসে করে কক্সবাজারে আসছেন পর্যটকেরা। তাঁদের অনেকেই হোটেলের কক্ষ না পেয়ে সড়কে, রেস্তোরাঁয় ও বাস কাউন্টারে বসে সময় কাটাচ্ছেন। কেউ একটি কক্ষ ভাড়া পেলেই সেখানে ৮-৯ জন গাদাগাদি করে থাকছেন।

বেলা ১১টার দিকে সমুদ্রসৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে দেখা যায়, দুই কিলোমিটার সৈকতজুড়ে পর্যটকের ভিড়। এর বেশির ভাগই সমুদ্রের পানিতে নেমে গোসল করছেন। দক্ষিণের কলাতলী ও উত্তরের দিকের সিগাল ও লাবণী পয়েন্টেও মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। পর্যটকদের সেবায় সৈকতে কর্মরত দেখা যায়, লাইফগার্ডের ২৭ জন স্বেচ্ছাসেবী, ৩৪ জন বিচকর্মী ও ট্যুরিস্ট পুলিশের শতাধিক সদস্যকে।

সমুদ্রসৈকতে কথা হয় নুরুল হুদা (৪৫) নামের এক পর্যটকের সঙ্গে। পেশায় ব্যবসায়ী এই পর্যটক স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে এসেছেন ঢাকার উত্তরা থেকে। তিনি বলেন, সমুদ্রসৈকত মানুষে গিজগিজ করছে। হাঁটুসমান পানিতে নেমে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়েছেন। মানুষের ভিড়ের কারণে গোসল না করেই হোটেলে ফিরে যাচ্ছেন।

সমুদ্রসৈকতে নিয়োজিত লাইফগার্ডের কর্মীরা জানান, কক্সবাজারে ঈদের ছুটিতে এ পর্যন্ত সাগরে ভেসে গিয়ে কারও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। তবে ভেসে যাওয়ার সময় তাঁরা প্রায় ৫০ জনকে উদ্ধার করেছেন।

কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত ছাড়াও পর্যটকদের ভিড় দেখা গেছে মেরিন ড্রাইভ সড়কে। টমটম, অটোরিকশা কিংবা খোলা জিপগাড়িতে পর্যটকদের ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়। দরিয়ানগর পর্যটন পল্লি, প্যারাসেইলিং পয়েন্ট, হিমছড়ি ঝরনা, ইনানী সৈকত, পাটোয়ারটেক ছাড়াও কেউ কেউ সর্বশেষ প্রান্তের উপজেলা টেকনাফ ঘুরে আসছেন। এর বাইরে জেলার রামু, মহেশখালী, চকরিয়ার পর্যটন স্পটগুলোতেও রয়েছে পর্যটকদের ভিড়।

কক্সবাজার কলাতলী-মেরিন ড্রাইভ হোটেল-রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান বলেন, ‘শুক্রবার শহরের পাঁচ শতাধিক হোটেলের কোনো কক্ষই খালি নেই। কক্ষ ভাড়া না পেয়ে অনেক পর্যটক দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। আগে কক্ষ ভাড়া নিয়ে এরপর কক্সবাজার ভ্রমণে আসতে আমরা পর্যটকদের উৎসাহিত করছি।’

কক্সবাজারের চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, পর্যটক আসায় পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসা-বাণিজ্যও বেশ চাঙা। গত কয়েক দিনে পর্যটনসংশ্লিষ্ট ১৩টি খাতে অন্তত ৬০০ কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছে।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, পর্যটকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত হোটেলভাড়া এবং রেস্তোরাঁগুলোতে খাবারের মূল্য বাড়তি আদায় করা হচ্ছে কি না, তা দেখতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতৃত্বে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চলমান।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

সৈকতে নারী পর্যটকদের গোসলের ভিডিও ধারণ, কন্টেন্ট ক্রিয়েটরের কারাদণ্ড

পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে গোসলরত নারী পর্যটকদের ভিডিও ধারণ করার দায়ে রুবেল (৩০) নামে এক কনটেন্ট ক্রিয়েটরকে এক মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সৈকতের জিরো পয়েন্ট এলাকায় এ অভিযান চালানো হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসিন সাদীক। এ সময় ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

রুবেল বরগুনা সদর উপজেলার বাসিন্দা। তিনি মুদি দোকানের ব্যবসার পাশাপাশি কনটেন্ট তৈরি করেন।

সৈকতের ফটোগ্রাফার আরিফ মিয়া  বলেন, ‘‘রুবেল নারীদের গোসলের ভিডিও করছিলেন। প্রতিবাদ করলে তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। বিষয়টি দেখত পেয়ে তাকে আটক করি।’’

অপর ফটোগ্রাফার রাসেল বলেন, “রুবেলের মোবাইল চেক করে দেখি, অনেক ভিডিও। সঙ্গে সঙ্গে ট্যুরিস্ট পুলিশকে খবর দেই। পরে তাদের কাছে সোপর্দ করি।’’

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইয়াসিন সাদেক বলেন, “অনুমতি ছাড়া নারী পর্যটকদের ভিডিও ধারণের দায়ে রুবেলকে এক মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের অপরাধে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’’

ঢাকা/ইমরান/রাজীব

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সৈকতে নারী পর্যটকদের গোসলের ভিডিও ধারণ, কন্টেন্ট ক্রিয়েটরের কারাদণ্ড