কক্সবাজারে পর্যটকের উপচে পড়া ভিড়, খালি নেই হোটেল-মোটেল
Published: 4th, April 2025 GMT
ঈদের ছুটিতে পর্যটকের ঢল নেমেছে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে। শহরের পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেলে কোনো কক্ষ খালি নেই। হোটেলমালিকদের তথ্য অনুযায়ী, ঈদের দ্বিতীয় দিন গত মঙ্গলবার থেকে আজ শুক্রবার পর্যন্ত কক্সবাজার ভ্রমণ করেছেন সাড়ে সাত লাখের বেশি মানুষ।
শুক্রবার সকালে শহরের বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায়, দূরপাল্লার বাসে করে কক্সবাজারে আসছেন পর্যটকেরা। তাঁদের অনেকেই হোটেলের কক্ষ না পেয়ে সড়কে, রেস্তোরাঁয় ও বাস কাউন্টারে বসে সময় কাটাচ্ছেন। কেউ একটি কক্ষ ভাড়া পেলেই সেখানে ৮-৯ জন গাদাগাদি করে থাকছেন।
বেলা ১১টার দিকে সমুদ্রসৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে দেখা যায়, দুই কিলোমিটার সৈকতজুড়ে পর্যটকের ভিড়। এর বেশির ভাগই সমুদ্রের পানিতে নেমে গোসল করছেন। দক্ষিণের কলাতলী ও উত্তরের দিকের সিগাল ও লাবণী পয়েন্টেও মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। পর্যটকদের সেবায় সৈকতে কর্মরত দেখা যায়, লাইফগার্ডের ২৭ জন স্বেচ্ছাসেবী, ৩৪ জন বিচকর্মী ও ট্যুরিস্ট পুলিশের শতাধিক সদস্যকে।
সমুদ্রসৈকতে কথা হয় নুরুল হুদা (৪৫) নামের এক পর্যটকের সঙ্গে। পেশায় ব্যবসায়ী এই পর্যটক স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে এসেছেন ঢাকার উত্তরা থেকে। তিনি বলেন, সমুদ্রসৈকত মানুষে গিজগিজ করছে। হাঁটুসমান পানিতে নেমে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়েছেন। মানুষের ভিড়ের কারণে গোসল না করেই হোটেলে ফিরে যাচ্ছেন।
সমুদ্রসৈকতে নিয়োজিত লাইফগার্ডের কর্মীরা জানান, কক্সবাজারে ঈদের ছুটিতে এ পর্যন্ত সাগরে ভেসে গিয়ে কারও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। তবে ভেসে যাওয়ার সময় তাঁরা প্রায় ৫০ জনকে উদ্ধার করেছেন।
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত ছাড়াও পর্যটকদের ভিড় দেখা গেছে মেরিন ড্রাইভ সড়কে। টমটম, অটোরিকশা কিংবা খোলা জিপগাড়িতে পর্যটকদের ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়। দরিয়ানগর পর্যটন পল্লি, প্যারাসেইলিং পয়েন্ট, হিমছড়ি ঝরনা, ইনানী সৈকত, পাটোয়ারটেক ছাড়াও কেউ কেউ সর্বশেষ প্রান্তের উপজেলা টেকনাফ ঘুরে আসছেন। এর বাইরে জেলার রামু, মহেশখালী, চকরিয়ার পর্যটন স্পটগুলোতেও রয়েছে পর্যটকদের ভিড়।
কক্সবাজার কলাতলী-মেরিন ড্রাইভ হোটেল-রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান বলেন, ‘শুক্রবার শহরের পাঁচ শতাধিক হোটেলের কোনো কক্ষই খালি নেই। কক্ষ ভাড়া না পেয়ে অনেক পর্যটক দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। আগে কক্ষ ভাড়া নিয়ে এরপর কক্সবাজার ভ্রমণে আসতে আমরা পর্যটকদের উৎসাহিত করছি।’
কক্সবাজারের চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, পর্যটক আসায় পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসা-বাণিজ্যও বেশ চাঙা। গত কয়েক দিনে পর্যটনসংশ্লিষ্ট ১৩টি খাতে অন্তত ৬০০ কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, পর্যটকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত হোটেলভাড়া এবং রেস্তোরাঁগুলোতে খাবারের মূল্য বাড়তি আদায় করা হচ্ছে কি না, তা দেখতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতৃত্বে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চলমান।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কক্সবাজারে পর্যটকের ঢল, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ
রাজধানী ঢাকা থেকে ছুটিতে পরিবার নিয়ে কক্সবাজারে বেড়াতে এসেছেন হাবিবুল আউয়াল। ভালো হোটেলে রুম না পাওয়ায় শহরের কলাতলী এলাকায় মধ্যমমানের একটি আবাসিক হোটেলে উঠেছেন। তাঁর কাছে এক রাতের জন্য হোটেলটির দুটি রুমের ভাড়া নেওয়া হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। যদিও অন্য সময়ে ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকায় এই মানের হোটেলে রুম ভাড়া পাওয়া যায়। ঈদ মৌসুমে চাহিদা বাড়ায় অন্য সময়ের তুলনায় ১২ গুণের বেশি ভাড়া নেওয়া হয়েছে তাঁর কাছ থেকে।
কোরবানির ঈদ ও পরবর্তী ছুটির সময়ে অতিরিক্ত পর্যটক আসায় কক্সবাজার শহর ও এর আশপাশের পাঁচ শতাধিক আবাসিক হোটেল, মোটেল, গেস্টহাউস ও রিসোর্টের প্রায় প্রতিটিতেই অন্য সময়ের চেয়ে ১০ থেকে ১৫ গুণ বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। শুধু আবাসিক হোটেল নয়, রেস্টুরেন্ট থেকে শুরু করে পর্যটনসংশ্লিষ্ট সব সেবা খাতেই অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট অনেকের মতে, প্রতিটি ছুটির মৌসুমে কক্সবাজারে পর্যটকদের সংখ্যা একটু বাড়লেই তাদের কাছ থেকে ‘গলাকাটা’ টাকা নেওয়া হয়।
ঈদুল আজহার লম্বা ছুটি শেষ হচ্ছে আজ। গতকাল শুক্রবার কক্সবাজার সৈকতে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। লাবণী পয়েন্ট থেকে কলাতলী পয়েন্ট পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকায় ছিল পর্যটকের ভিড়। সাগরতীর পরিণত হয়েছিল উৎসবের বেলাভূমিতে। শুক্রবার সকাল থেকে তীব্র গরম থাকলেও পর্যটকে পূর্ণ ছিল কক্সবাজার সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্ট, লাবণী, কলাতলী, হিমছড়ি, ইনানী, পাতুয়ারটেক থেকে মেরিন ড্রাইভ পর্যন্ত পুরো এলাকা।
রাজধানীর মতিঝিল থেকে ঘুরতে আসা হুমায়ুন কবির বলেন, ‘এখন সমুদ্রে গোসল করছি। বিকেলে মেরিন ড্রাইভে ঘুরব, এরপর শনিবার রাতে ঢাকায় ফিরে যাব।’ নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা আসিফ আহমেদ বলেন, ‘অনেক মানুষ, তবুও পরিবারের সবাইকে নিয়ে আনন্দ করছি, ছবি তুলছি, বিচ বাইক ও ঘোড়ায় চড়েছি।’
কক্সবাজার শহরের পাঁচতারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইস লিমিটেডের বিপণন ব্যবস্থাপক ইমতিয়াজ নুর সোমেল সাংবাদিকদের বলেন, শুক্রবার পর্যন্ত তাদের হোটেলের ৭০-৮৫ শতাংশ রুম বুকিং রয়েছে। যদিও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক হোটেল ব্যবসায়ী জানান, ১৩ জুন পর্যন্ত অধিকাংশ আবাসিক হোটেল সম্পূর্ণ বুকিং হয়ে গেছে। তবে প্রশাসন, কর ও ভ্যাট কর্মকর্তাদের ফাঁকি দিতে তারা বিষয়টি স্বীকার করতে চান না।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের এএসপি নিত্যানন্দ দাস বলেন, এবার কোরবানির ঈদের পর গত সাত দিনে আট লাখের বেশি মানুষ কক্সবাজার ভ্রমণ করেছেন। তিনি বলেন, অতীতের মতো এবারও শহর ও সমুদ্রসৈকতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা রোধে ওয়াচ টাওয়ার থেকে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া সৈকতের প্রতিটি গোলঘরে সার্বক্ষণিক পুলিশের অবস্থান এবং মোবাইল টিমসহ কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পর্যটন স্পটগুলোতে সাদা পোশাকেও দায়িত্ব পালন করছেন পুলিশ সদস্যরা।
আবাসিক হোটেলে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে এএসপি জানান, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। গত কয়েকদিন এমন পাঁচটি অভিযোগ পাওয়া গেছে এবং ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শাহিদুল আলম বলেন, পর্যটকদের হয়রানি রোধে তিনজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন। অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি সচেতনতা বাড়াতে নিয়মিত মাইকিং করা হচ্ছে।