মায়ের কোল থেকে ছিটকে পড়ে গাড়ির চাকায় পিষ্ট শিশু
Published: 4th, April 2025 GMT
মা-বাবা ও নানা-নানির সঙ্গে আত্মীয়ের বাড়িতে অনুষ্ঠানে যাচ্ছিল চার মাসের নাঈম। ব্যাটারিচালিত ভ্যানে সে ছিল মায়ের কোলে। গাড়িটি মোড় ঘোরার সময় নাঈম কোল থেকে ছিটকে সড়কে পড়ে যায়। এ সময় বিপরীত দিক থেকে একটি ইঞ্জিনচালিত ভ্যান (করিমন) এসে শিশুটিকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। শুক্রবার মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনা ঘটেছে কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে। এদিকে সড়ক দুর্ঘটনায় টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও রাজধানীতে একজন করে নিহত হয়েছেন।
কুমারখালীতে নিহত শিশু নাঈম উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের নগর সাঁওতা গ্রামের রিকশাচালক নাজমুল হোসেনের ছেলে।
পুলিশ, স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, মা-বাবাসহ কয়েকজন স্বজনের সঙ্গে ব্যাটারিচালিত ভ্যানে পাশের উপজেলা খোকসায় সুন্নতে খতনা অনুষ্ঠানে যাচ্ছিল নাঈম। কুমারখালীর আমতলা এলাকায় গাড়িটি মোড় ঘোরার সময় মায়ের কোল থেকে ছিটকে সে সড়কে পড়ে যায়। সে সময় বিপরীত দিক থেকে আসা একটি করিমন তাকে চাপা দেয়। স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ঘাতক গাড়ির চালক আমিনুলকে মারধর করে পুলিশে দিয়েছে স্থানীয়রা।
কুমারখালী থানার ওসি সোলায়মান শেখ বলেন, করিমনের চালককে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলায় মাটি বহনকারী ডাম্প ট্রাকের চাপায় শফিউল্লাহ মিয়া নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। শুক্রবার ভোরে উপজেলা হাসপাতালের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। শফিউল্লাহর বাড়ি মৌলভীপাড়া গ্রামে। তিনি কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যদের কমান্ডার (পিসি) হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
রাজধানীর মুগদার মানিকনগর এলাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ধাক্কায় সুমি আক্তার নামে এক নারী নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাতে রাস্তা পার হওয়ার সময় এ দুর্ঘটনা ঘটে। মানিকনগরের ওয়াসা রোডে পরিবারের সঙ্গে থাকতেন সুমি। তিনি শিক্ষার্থীদের বাসায় গিয়ে পড়াতেন। তাঁর স্বামীর নাম মাহফুজ রহমান।
চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় মোটরসাইকেল ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার সংঘর্ষে দিলীপ বড়ুয়া নামে একজন নিহত হয়েছেন। আজ বিকেলে উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের মঘাইছড়ি এলাকায় এ দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন নারীসহ দু’জন। এদিন গোপালগঞ্জে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের সোনাকুড়ে বাস-ট্রাকের সংঘর্ষে ১৫ যাত্রী আহত হয়েছেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সড়ক দ র ঘটন ন হত এ দ র ঘটন উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
প্রথম আলোর সাংবাদিককে বৈষম্যবিরোধী নেতার হুমকি, থানায় জিডি
প্রথম আলোর চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নিজস্ব প্রতিবেদক আনোয়ার হোসেনকে ফেসবুকে হুমকি দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার মুখ্য সংগঠক মোত্তাসিন বিশ্বাস। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে এক ফেসবুক পোস্টে এ হুমকি দেন তিনি।
এ ঘটনায় গতকাল রাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন আনোয়ার হোসেন।
ফেসবুক পোস্টে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আনোয়ার হোসেনের দুটি ছবি লাল দাগ দিয়ে ক্রস চিহ্ন দেন মোত্তাসিন। ক্যাপশনে তিনি আনোয়ার হোসেনের উদ্দেশে লিখেছেন, ‘....সত্য লিখুন, না হলে আপনিও ছাড় পাবেন না। ইনকিলাব জিন্দাবাদ।’
মোত্তাসিন বিশ্বাসের পোস্টের পর মন্তব্যের ঘরে আনোয়ার হোসেনকে একাধিক আইডি থেকে মারধরের হুমকি দেওয়া হয়েছে। তবে আজ বুধবার বেলা ৩টা ১৬ মিনিটে মোত্তাসিনের আইডি থেকে পোস্টটি সরিয়ে নেওয়া হয়। ঘণ্টাখানেক পর পোস্টটি তাঁর ওয়ালে আবার দেখা যায়। এ হুমকির প্রতিবাদ জানিয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সাংবাদিকদের সংগঠনগুলোর সম্মিলিত প্ল্যাটফর্ম ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জ সাংবাদিক সমাজ’।
ফেসবুক পোস্টের বিষয়ে জানতে চাইলে মোত্তাসিন বিশ্বাস আজ বেলা সাড়ে তিনটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ফেসবুক পোস্টে হলুদ কথাটা লেখা ঠিক হয়নি। এটি গত শনিবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরের শহীদ সাটু অডিটরিয়ামে জেলা পুলিশ আয়োজিত সুধী সমাবেশে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে বক্তব্য দেওয়ার সময় বাধা দিয়ে থামিয়ে দেন জামায়াতে ইসলামীর একজন নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য। এ নিয়ে প্রথম আলোয় ‘পুলিশের সুধীসমাবেশে বীর মুক্তিযোদ্ধার বক্তব্যে জামায়াত নেতার বাধা’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ খবরের বিষয়ে আপত্তি জানিয়েই এমন পোস্ট করেছেন বলে জানিয়েছেন মোত্তাসিন।
তাৎক্ষণিকভাবে লিখে ফেলেছিলেন, পরে মুছে দিয়েছেন। আনোয়ার হোসেনের করা কোন সংবাদটির বিষয়ে পোস্ট করেছেন, জানতে চাইলে তিনি মুক্তিযোদ্ধাকে বাধা দেওয়ার সংবাদটির কথা জানান।
মোত্তাসিন বিশ্বাস আরও বলেন, প্রথম আলোর চাঁপাইনবাবগঞ্জের নিজস্ব প্রতিবেদক আনোয়ার হোসেন চব্বিশের আন্দোলনে তাঁদের সঙ্গেই ছিলেন। কিন্তু সংবাদটি এভাবে কেন লিখেছেন, তা জানার জন্য তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তিনি তাঁদের এড়িয়ে গেছেন। সে জন্যই তিনি ফেসবুকে লিখেছেন।
আনোয়ার হোসেন জিডিতে উল্লেখ করেছেন, স্ট্যাটাসে তাঁর দুটি ছবি ক্রস চিহ্ন দিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে। ওই পোস্টে মোত্তাসিনের অনুসারীসহ আরও অনেকে খারাপ মন্তব্য করে তাঁকে হুমকি দিয়েছেন। জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হওয়ায় জিডি করার কথা জানান তিনি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মতিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল রাতে এ ঘটনায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন। এটি একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে তদন্ত করতে দিয়েছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার আহ্বায়ক আবদুর রাহিম বলেন, এই পোস্ট দেওয়ার পর রাতে তাঁরা এটি নিয়ে সভা করেছেন। সেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, পোস্টটি ডিলিট করা হবে।
আরও পড়ুনপুলিশের সুধীসমাবেশে বীর মুক্তিযোদ্ধার বক্তব্যে জামায়াত নেতার বাধা২৭ এপ্রিল ২০২৫সাংবাদিক সমাজের নিন্দা-প্রতিবাদআনোয়ার হোসেনকে হুমকি দেওয়ার ঘটনায় জরুরি সভা করে ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সাংবাদিক সমাজ। বিষয়টি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের লিখিতভাবে অবহিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে গতকাল মঙ্গলবারের সভায়। অবহিত করার পরবর্তী তিন দিনের মধ্যে এ বিষয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নিলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যাবতীয় সংবাদ বর্জন করা হবে বলেও সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সভায় সভাপতিত্ব করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের (সিটিজেএ) সভাপতি রফিকুল আলম। উপস্থিত ছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রেসক্লাব, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রেসক্লাব, সিটি প্রেসক্লাব, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও সিটিজেএর নেতা ও সদস্যরা।
সভার পর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘পরিবর্তিত বাংলাদেশে একজন পেশাদার সাংবাদিককে নিয়ে আপত্তিজনক ও হুমকিস্বরূপ বক্তব্য কোনোভাবেই কাম্য নয়। যেসব অধিকারের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান হয়, তার মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে বাক্স্বাধীনতার অধিকার। একজন পেশাদার সাংবাদিককে নিয়ে ফেসবুকে এমন পোস্ট সেই আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এটা স্বাধীন সাংবাদিকতার ওপর হস্তক্ষেপ, যা আমাদের উদ্বিগ্ন ও উৎকণ্ঠিত করেছে।’ অবিলম্বে মোত্তাসিন বিশ্বাস তাঁর দেওয়া পোস্টটি প্রত্যাহার করে দুঃখ প্রকাশ না করলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সাংবাদিক সমাজ সম্মিলিতভাবে কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে বিবৃতিতে।