তাঁরা আলাদা দেশের নেতা ও সরকারপ্রধান; এমনকি মহাদেশও ভিন্ন। একজন উত্তর আমেরিকা, একজন মধ্যপ্রাচ্য, একজন এশিয়া এবং আরেকজন ইউরোপের। তাঁদের রাজনৈতিক ‘আদর্শ’ আলাদা, ধর্ম আলাদা, আলাদা তাঁদের অনুসারী গোষ্ঠীও। এত সব ভিন্নতার পরও তাঁদের কথা ও কাজে ‘বিস্ময়কর’ সব মিল পাওয়া যায়!

সমকালীন বিশ্বরাজনীতিতে জাতীয়তাবাদ, ধর্মীয় পরিচয় এবং ব্যক্তিকেন্দ্রিক নেতৃত্বের উত্থান বেশ লক্ষণীয়। এই ধারারই চারটি উল্লেখযোগ্য মুখ হলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, ইসরায়েলের দীর্ঘতম সময়ের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান।

নিজ নিজ দেশের পটভূমিতে তাঁরা ভিন্ন ভিন্ন ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁদের মিল যেখানে সেটা হলো গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার এবং সমানাধিকারের প্রশ্নে তাঁদের অনেক পদক্ষেপ সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এই নেতারা একদিকে বিশাল জনসমর্থন পেয়েছেন, অন্যদিকে হুমকি তৈরি করেছেন গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প

ট্রাম্পের রাজনৈতিক উত্থান যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য এক মৌলিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। একজন সফল ব্যবসায়ী এবং টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব থেকে প্রেসিডেন্ট হওয়া ট্রাম্প রাজনীতিকে এক নতুন ধাঁচে চালনা করেন—যার ফলে তাঁকে অনেক সময় গণতান্ত্রিক রীতিনীতির জন্য হুমকি বলেই বিবেচনা করা হয়। ট্রাম্প রাজনীতির মূলধারার বাইরে থেকে এসে জনরোষ ও অসন্তোষকে পুঁজি করে দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় এসেছেন।

ট্রাম্প আমেরিকার সমাজকে আগের চেয়ে আরও মেরুকৃত করেছেন—বর্ণ, অভিবাসন, লিঙ্গ ও ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে। তাঁর কথাবার্তা অনেক সময় বিভাজনকে উসকে দিয়েছে। ট্রাম্প প্রায়ই ডেমোক্র্যাটদের ‘দুশমন’ বা ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। ট্রাম্পের বক্তব্য ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যবহৃত ভাষা অনেক সময় তাঁর সমর্থকদের মধ্যে সহিংসতা ও ঘৃণা উসকে দিয়েছে।

বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু

 ইসরায়েলের দীর্ঘতম সময় দায়িত্ব পালনকারী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তাঁর শাসনব্যবস্থায় গণতান্ত্রিক মানদণ্ড, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, ফিলিস্তিনি প্রশ্ন এবং ঘরোয়া রাজনীতিতে মেরুকরণ ইত্যাদি বিষয়ে গভীর বিতর্ক রয়েছে। নেতানিয়াহুর সরকারের সবচেয়ে বড় সমালোচনা আসে তাঁর সাম্প্রতিক বিচার বিভাগের সংস্কার পরিকল্পনা থেকে, যেটিকে অনেকেই বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ওপর আঘাত এবং গণতন্ত্রের জন্য হুমকি হিসেবে দেখেন। নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ঘুষ, প্রতারণা ও আস্থাভঙ্গের অভিযোগে মামলা চলছে; যদিও তিনি নিজেকে ষড়যন্ত্রের শিকার বলেই দাবি করেন, তবে তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে চলমান এই মামলা ইসরায়েলের রাজনৈতিক শুদ্ধাচারের প্রশ্নে গভীর উদ্বেগ তৈরি করেছে।

নেতানিয়াহু ফিলিস্তিনিদের প্রতি কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন। বসতি স্থাপন, গাজায় সামরিক হামলা এবং ‘দুই রাষ্ট্র সমাধান’-এর প্রতি অনীহা তাঁকে আন্তর্জাতিক পরিসরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্ত করেছে। তাঁর নেতৃত্বে ইসরায়েলের সামরিক অভিযান বহুবার আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে পড়েছে। তিনি ধর্মীয় দল ও উগ্র ডানপন্থী অংশীদারদের সঙ্গে জোট গঠন করে ইসরায়েলি সমাজে ধর্মনিরপেক্ষ ও ধর্মীয় অংশের মধ্যে তীব্র বিভাজন সৃষ্টি করেছেন। আরব-ইসরায়েলিদের অধিকারের প্রশ্নেও তাঁর অবস্থানকে বিভাজনমূলক হিসেবে দেখা হয়।

নরেন্দ্র মোদি

মোদি ২০১৪ সাল থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এর আগে তিনি গুজরাট রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন দীর্ঘকাল। মোদির নেতৃত্বে ভারত একদিকে যেমন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, ডিজিটাল উন্নয়ন ও বৈশ্বিক কূটনীতিতে একটি দৃঢ় অবস্থান লাভ করেছে, অন্যদিকে তাঁর শাসনব্যবস্থাকে ঘিরে উগ্র জাতীয়তাবাদ, ধর্মীয় বিভাজন এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের হ্রাসের অভিযোগও প্রবলভাবে উঠেছে।

মোদি সরকারের সবচেয়ে বড় সমালোচনা হলো, ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের আদর্শ থেকে সরে এসে একটি হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্রে রূপান্তরের চেষ্টা। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ), জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন (এনআরসি), বাবরি মসজিদের রায় ও হিজাব ইস্যুতে সরকারের ভূমিকা সংখ্যালঘু মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে গভীর উদ্বেগ তৈরি করেছে। মোদি সরকার সমালোচনাকারী সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, মানবাধিকারকর্মীদের বিরুদ্ধে দমনমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তথ্যের অবাধ প্রবাহ, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং বিরোধী কণ্ঠ রোধ করার ক্ষেত্রে মোদি সরকারের ভূমিকা গণতান্ত্রিক মানদণ্ডের পরিপন্থী।

রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান

২০০৩ সাল থেকে তুরস্ক শাসন করছেন এরদোয়ান; প্রথমে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এবং ২০১৪ সাল থেকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে। তিনি একজন ক্যারিশম্যাটিক, একই সঙ্গে বিতর্কিত নেতা। এরদোয়ান একজন ইসলামপন্থী রাজনীতিক হলেও প্রথম দিকে তিনি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রব্যবস্থার সঙ্গে একটি ‘মডারেট’ (মধ্যপন্থী) ইসলামি রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি মিলিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।

এরদোয়ান শাসনামলে তুরস্ক অর্থনৈতিক অগ্রগতি এবং আন্তর্জাতিকভাবে কিছু নতুন কূটনৈতিক স্থান অর্জন করলেও গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি ঘটেছে বলে সমালোচনা রয়েছে। তিনি রাজনৈতিক বিরোধীদের দমন করেছেন, বিচার বিভাগকে দলীয় নিয়ন্ত্রণে এনেছেন এবং প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাহী ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করেছেন।

২০১৭ সালের সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে এরদোয়ান কার্যত একনায়কতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা চালু করেন। তুরস্ক বর্তমানে সাংবাদিকদের কারাবন্দীর সংখ্যায় শীর্ষে থাকা দেশগুলোর একটি। সরকারের বিরুদ্ধে কথা বললে মামলা, গ্রেপ্তার এবং চাকরি হারানোর ভয় রয়েছে। গণমাধ্যমকে সরকারপন্থী করে তোলা হয়েছে এবং স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিসর সংকুচিত হয়েছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প, বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, নরেন্দ্র মোদি এবং রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের মধ্যে কিছু অমিল থাকলেও নির্দিষ্ট কিছু দিক থেকে একে অপরের সঙ্গে মিলে যায়।

রাজনৈতিক দর্শন

এই চার নেতারই রাজনৈতিক দর্শনে জাতীয়তাবাদ একটি কেন্দ্রীয় জায়গা দখল করে আছে। হোয়াইট সুপ্রিমিস্ট (শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদী) ট্রাম্প ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ স্লোগানের মাধ্যমে ‘বিশ্বায়নবিরোধী’ অবস্থান দিয়েছেন। নেতানিয়াহু মূলত ইসরায়েলের অস্তিত্ব ও নিরাপত্তা রক্ষার প্রশ্নে ইহুদি জাতীয়তাবাদকে সামনে রেখেছেন। মোদি হিন্দু পরিচয় ও সংস্কৃতি পুনর্জাগরণকে রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মে পরিণত করেছেন, যেখানে হিন্দুত্ববাদ একটি নিয়ন্ত্রক শক্তি। অন্যদিকে এরদোয়ান ধর্মনিরপেক্ষ তুরস্ককে ইসলামপন্থী জাতীয়তাবাদের দিকে ঠেলে দিয়েছেন, যেখানে ইসলাম ও তুর্কি পরিচয়ের সম্মিলন ঘটেছে।

নেতৃত্বের ধরন ও শাসনপ্রক্রিয়া

এই চারজন নেতার শাসনের ধরন অনেকাংশেই কেন্দ্রীয়করণ ও ব্যক্তিকেন্দ্রিক। ট্রাম্প মার্কিন রাজনীতির প্রচলিত রীতিনীতি ভেঙে দিয়ে প্রায়ই বিতর্কিত নেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন। নেতানিয়াহু অনেক বেশি কৌশলী ও বাস্তববাদী; তিনি দীর্ঘদিন ইসরায়েলি রাজনীতিতে টিকে থাকার জন্য ছোট দলগুলোর সঙ্গে জোট গঠনে পারদর্শী হয়েছেন। মোদি একটি শক্তিশালী ব্যক্তিকেন্দ্রিক প্রশাসন তৈরি করেছেন, যেখানে সরকারি উদ্যোগগুলো প্রায় সবই ‘মোদি ব্র্যান্ড’ হয়ে উঠেছে। এরদোয়ান প্রথমে একজন ‘সংস্কারপন্থী’ নেতা হিসেবে উঠে এলেও পরে তার নেতৃত্ব অধিক কর্তৃত্ববাদী রূপ নেয়।

বৈদেশিক নীতি

চার নেতার বৈদেশিক নীতিও তাঁদের আদর্শের প্রতিফলন। ট্রাম্প ছিলেন আন্তর্জাতিক চুক্তি ও জোটের বিরুদ্ধে; তিনি জলবায়ু চুক্তি ও ইরান পরমাণু চুক্তি থেকে সরে আসেন। নেতানিয়াহু ইরানবিরোধী অবস্থান এবং আরব রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে নতুন কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আগ্রহী ছিলেন। মোদি প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে একাধারে প্রতিযোগিতা ও সহযোগিতা বজায় রেখেছেন, পাশাপাশি পশ্চিমা দেশের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়েছেন। এরদোয়ান চেয়েছেন স্বাধীন কূটনীতি গড়ে তুলতে; তিনি সিরিয়া, লিবিয়া ও আজারবাইজানের সংঘাতে সরাসরি হস্তক্ষেপ করেছেন এবং ন্যাটোর সঙ্গেও একধরনের টানাপোড়েন বজায় রেখেছেন।

অভ্যন্তরীণ নীতি

চারজন নেতারই শাসনামলে অভ্যন্তরীণ নানা বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। ট্রাম্প কোভিড-১৯ ব্যবস্থাপনা, অভিবাসন আইন এবং ক্যাপিটল হিলে সহিংসতার জন্য তীব্রভাবে সমালোচিত হন। নেতানিয়াহু দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্ত হন এবং বিচারব্যবস্থা সংস্কারের নামে বিক্ষোভের মুখে পড়েন। মোদির বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে সংখ্যালঘুদের অধিকার খর্ব করার, বিশেষত কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল ও নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে। এরদোয়ান দেশজুড়ে গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ, বিচারব্যবস্থায় প্রভাব এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সমালোচিত হয়েছেন।

সমর্থক গোষ্ঠী

চার নেতারই রয়েছে নির্দিষ্ট সমর্থক গোষ্ঠী। ট্রাম্প আমেরিকার গ্রামীণ, সাদা ও ধর্মীয় রক্ষণশীল ভোটারদের মধ্যে বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। নেতানিয়াহুর সমর্থক এবং জায়নবাদীরা তাঁকে ইসরায়েলের ‘নিরাপত্তার রক্ষাকর্তা’ হিসেবে দেখে। মোদি ভারতের বৃহৎ হিন্দু মধ্যবিত্ত শ্রেণি ও উগ্র জাতীয়তাবাদী তরুণদের মধ্যে বিশেষভাবে জনপ্রিয়। এরদোয়ান তুরস্কের গ্রামীণ ও ধর্মভিত্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে এখনো শক্ত অবস্থান ধরে রেখেছেন, যদিও নগরভিত্তিক জনগোষ্ঠীতে তাঁর জনপ্রিয়তা কমেছে।

শেষ কথা

ট্রাম্প, নেতানিয়াহু, মোদি ও এরদোয়ানের নীতি-আদর্শ-রাজনৈতিক দর্শনে বড় ধরনের পার্থক্য থাকলেও তাঁরা প্রত্যেকে ডানপন্থী এবং জনতুষ্টিবাদী (পপুলিস্ট)। নিজ নিজ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মাবলম্বী মানুষদের সন্তুষ্টি ও সমর্থন অর্জন করাই তাঁদের অন্যতম রাজনৈতিক কৌশল; অন্যদিক সংখ্যালঘু, উদারপন্থী এবং বামপন্থীরা হলেন তাঁদের ‘সাধারণ শত্রু’।

এই চার নেতার রাজনৈতিক উত্থান একটি বৈশ্বিক বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি—যেখানে জাতীয়তাবাদ, ধর্মীয় পরিচয় এবং ব্যক্তিনির্ভর নেতৃত্ব রাজনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলছে; যদিও তাঁদের প্রত্যেকে নিজ নিজ দেশের পটভূমিতে ভিন্ন ভূমিকা পালন করেছেন, তবু গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার এবং সমানাধিকারের প্রশ্নে তাঁদের অনেক পদক্ষেপ সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এই নেতারা একদিকে বিশাল জনসমর্থন পেয়েছেন, অন্যদিকে সমানতালে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছেন রাজনৈতিক বৈচিত্র্য ও গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে।

স্টিভেন লেভিটস্কি এবং ডেনিয়েল জিবলাট তাঁদের আলোচিত গ্রন্থ হাউ ডেমোক্রেসিস ডাই বইয়ে আধুনিককালে গণতন্ত্র ধ্বংসের চারটি স্পষ্ট লক্ষণ বা নির্দেশক চিহ্নিত করেছেন। এই নির্দেশকগুলো হলো:

১.

গণতান্ত্রিক নিয়মকানুনের প্রতি দুর্বল প্রতিশ্রুতি বা সরাসরি প্রত্যাখ্যান;

২. রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের বৈধতা অস্বীকার;

৩. সহিংসতাকে উৎসাহ দেওয়া বা সহ্য করা;

৪. বিরোধী মত, গণমাধ্যমের ও নাগরিক স্বাধীনতা খর্ব করা

এই নির্দেশকগুলো অনুসারে ট্রাম্প, নেতানিয়াহু, মোদি ও এরদোয়ান—তাঁরা প্রত্যেকেই গণতন্ত্রের জন্য হুমকিস্বরূপ।

সূত্র:

১. ক্লউস ল্যারেস (সম্পা.), ডিক্টেটরস অ্যান্ড অটোক্র্যাটস: সিকিউরিং পাওয়ার অ্যাক্রোস গ্লোবাল পলিটিকস, রাউটলেজ

২. স্টিভেন লেভিটস্কি এবং ডেনিয়েল জিবলাট, হাউ ডেমোক্রেসিস ডাই, পেঙ্গুইন বুকস

মনজুরুল ইসলাম প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গণত ন ত র ক গণতন ত র র র জন ত ক দ র র জন ত ক ইসর য় ল র ত কর ছ ন র জন ত ত স ব ধ নত এরদ য় ন ব যবস থ অবস থ ন পদক ষ প সরক র র আম র ক র জন য ত হয় ছ ত রস ক ব ভ জন ক টন ত দ র অন ইসল ম প রথম আদর শ

এছাড়াও পড়ুন:

ডেঙ্গু-করোনায় দুই মৃত্যু, আক্রান্ত ২৭৫ জন

ডেঙ্গু ও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৭৫ জন। তাদের মধ্যে ডেঙ্গুতে ২৪৯ ও করোনা নিয়ে ভর্তি ২৬ জন।

রাজধানীর মহাখালীর ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কভিড-১৯ ৩০০ শয্যার হাসপাতাল ডেঙ্গু ও করোনা রোগীর চিকিৎসায় প্রস্তুত। বর্তমানে করোনা আক্রান্ত ১০ ও ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়ার ১৫ রোগী চিকিৎসাধীন। কর্তৃপক্ষের দাবি, রোগীদের ৬০ শতাংশের বেশি ঢাকার বাইরে থেকে আসা। করোনা আক্রান্ত তিনজনকে আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে রোববার পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন একজনসহ চলতি বছর ডেঙ্গুতে ৩০ ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৯৮৮ জনে। মারা যাওয়া ব্যক্তি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। বরিশাল বিভাগে সবচেয়ে বেশি ১৩৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ ছাড়া ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় ৪৩, ঢাকা বিভাগে ৯, চট্টগ্রামে ৩৯, ময়মনসিংহে ৭, খুলনায় ৮, রাজশাহীতে ৫, রংপুরে ৩ ও সিলেট বিভাগে একজন ভর্তি হয়েছেন। দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি ৬৫৯ জন।

আরেক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, করোনায় আক্রান্ত হয়ে নতুন করে একজনের মৃত্যু হয়েছে। ঢাকা বিভাগের ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী পুরুষ এ রোগী একটি সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এ নিয়ে চলতি বছর করোনায় চারজনের মৃত্যু হলো। নতুন করে ২৬ জনসহ এ বছর আক্রান্ত দাঁড়িয়েছে ২৪৬ জনে। গত এক দিনে ২৯১ নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে ৮ দশমিক ৯৩ শতাংশ রোগী পজিটিভ হয়েছেন।

ঢাকায় বাড়ছে বাইরের রোগী

ডেঙ্গু ও করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসায় রাজধানীর মহাখালীর ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কভিড-১৯ হাসপাতালের ৩০০ শয্যা প্রস্তুত করেছে কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে এখানে ২৫ রোগী চিকিৎসাধীন। তাদের মধ্যে আইসিইউতে থাকা তিনজনের অবস্থা জটিল।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, চিকিৎসাধীন রোগীর বড় অংশ ঢাকার বাইরের। প্রকোপ বাড়লে আগের মতো ধাপে ধাপে লোকবলের পাশাপাশি শয্যা বৃদ্ধি করা হবে।

সরেজমিন হাসপাতালটির বহির্বিভাগে ২০ থেকে ৩০ রোগী ও তাদের স্বজনের ভিড় দেখা যায়। জ্বর-সর্দি নিয়ে এসেছেন। লক্ষণ দেখে চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরামর্শ দিলেও, অনেকেই তা না করে ফিরে যান। প্রায় আধা ঘণ্টার অপেক্ষায় অ্যাম্বুলেন্সে গাজীপুর থেকে এক রোগীকে পাওয়া যায়। স্বজন জানান, চার দিন ধরে শরীর ব্যথা, জ্বর। পরীক্ষা করে রোগ শনাক্ত না হওয়ায় এ হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে।

মাকে ভর্তি করেছেন লক্ষ্মীপুরের রামগতির আলেকজান্ডার ইউনিয়নের বাহার হোসেন। তিনি সমকালকে জানান, স্থানীয় হাসপাতালে অবস্থার পরিবর্তন না হওয়ায় ডিএনসিসি হাসপাতালে মাকে নিয়ে এসেছেন তিনি। বর্তমানে অবস্থা ভালো। পেটে একটু ব্যথা আছে, আলট্রাসনোগ্রাম করে ছাড়পত্র দেবেন বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।

হাসপাতালের পরিচালক কর্নেল তানভীর আহমেদ জানান, গত মাস থেকে রোগী বাড়ছে। মে মাসে করোনা নিয়ে ভর্তি হন ২৪ জন। এ মাসের ১৫ দিনে ভর্তি হয়েছেন ১৪ জন। ডেঙ্গু নিয়ে মে মাসে ভর্তি হন ৪৭ জন। চলতি মাসে এ পর্যন্ত এসেছেন ২৬ জন। রোববার বহির্বিভাগে পাঁচ শতাধিক রোগীর চিকিৎসা দেওয়া হয়। বেশির ভাগ রোগী আসছেন জ্বর-সর্দি ও গায়ে ব্যথা নিয়ে। গুরুতর রোগীরা অন্য হাসপাতালের রেফারে আসছেন।

বাইরের রোগী বেশি হলেও তা সুনির্দিষ্টভাবে জানাতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। এক চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ভর্তি রোগীদের ৬০ শতাংশের বেশি ঢাকার বাইরের বাসিন্দা।
কর্নেল তানভীর আহমেদ বলেন, হাসপাতালে প্রতিটি শয্যার সঙ্গে অক্সিজেন লাইন রয়েছে। বর্তমানে একসঙ্গে ৩০০ শয্যায় চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব। ৪৫ আইসিইউ সক্রিয়, ৭৯ চিকিৎসক ও নার্স রয়েছেন ৮৪ জন।

চট্টগ্রামে দুই হাসপাতালে শুরু পরীক্ষা

চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের ৬৫ শয্যা করোনা চিকিৎসায় প্রস্তুত করা হয়েছে। গতকাল এখানে নমুনা পরীক্ষা শুরু হয়েছে। তবে রোগীদের মধ্যে তেমন কোনো আগ্রহ দেখা যায়নি। দুই হাসপাতালে বর্তমানে তিনজন চিকিৎসাধীন। পাঁচ শয্যার আইসিইউ প্রস্তুত করার কথা থাকলেও পারেনি কর্তৃপক্ষ। আজ তিনজনের নমুনা পরীক্ষা করে একজনের করোনা শনাক্ত হয়।

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আকরাম হোসেন বলেন, ‘আইসোলেশন ওয়ার্ড প্রস্তুত হলেও যন্ত্রপাতির অভাবে আইসিইউ শয্যাগুলো সক্রিয় করা সম্ভব হয়নি।’ চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তসলিম উদ্দীন বলেন, ‘আপাতত ডেঙ্গু ওয়ার্ডকে করোনা রোগীর জন্য আইসোলেশন ওয়ার্ড করা হয়েছে। আইসিইউ প্রয়োজন হলে ব্যবস্থা করব।’

খুলনার পিসিআর ল্যাব বিকল

খুলনা ব্যুরো জানায়, জেলায় সরকারিভাবে করোনা পরীক্ষার একমাত্র আরটিপিসিআর ল্যাব খুলনা মেডিকেল কলেজে। মেরামত না করায় দীর্ঘদিন পিসিআর ল্যাবটি বিকল পড়ে আছে। বর্তমানে র্যা পিড অ্যান্টিজেন্ট কিট দিয়ে নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে।

খুমেক হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মিজানুর রহমান জানান, ৪০ শয্যা করোনা রোগীর জন্য প্রস্তুত করেছেন তারা।

সিলেটের দুই বন্দরে বিকল থার্মাল স্ক্যানার

সিলেট ব্যুরো জানায়, সরকারি নির্দেশে সিলেটে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও এর অধীনে শহীদ ডা. শামসুদ্দিন হাসপাতাল প্রস্তুত করা হয়েছে। দুয়েক দিনের মধ্যে এখানে করোনার নমুনা পরীক্ষা শুরু হবে। অবশ্য গত শুক্রবার শামসুদ্দিন হাসপাতালে দুই করোনা রোগী ভর্তি হয়েছেন।

স্বাস্থ্যের বিভাগীয় পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান জানান, দুই নারী-পুরুষ চিকিৎসাধীন। একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় আইসিইউতে রাখা হয়েছে।

এদিকে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও তামাবিল স্থলবন্দরের থার্মাল স্ক্যানার বিকল হয়ে যাওয়ায় শরীরের তাপমাত্রা মাপা সম্ভব হচ্ছে না। তবে ওসমানী বিমানবন্দরে বিকল্প পদ্ধতি ইনফারেড থার্মোমিটার দিয়ে তাপমাত্রা মাপা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।


 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • খামেনিকে হত্যার ইসরায়েলি পরিকল্পনা আটকে দিয়েছিলেন ট্রাম্প
  • খামেনিকে হত্যায় ইসরায়েলি পরিকল্পনা আটকে দেন ট্রাম্প
  • সাংবাদিক পরিচয়ে গেস্ট হাউসের কক্ষে কক্ষে তল্লাশি, দম্পতির কাছে বিয়ের প্রমাণ দাবি
  • ডেঙ্গু-করোনায় দুই মৃত্যু, আক্রান্ত ২৭৫ জন
  • রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে জনগণের হিস্যা কোথায়
  • প্রধান উপদেষ্টা অনেক বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন: ফখরুল
  • ইউনূস-তারেকের বৈঠক দেশের মানুষের জন্য স্বস্তির বার্তা, আশার আলো
  • বর্তমান সংকটে হবস, রবীন্দ্রনাথ ও অমর্ত্য সেন যেখানে প্রাসঙ্গিক
  • ড. ইউনূস ও তারেকের বৈঠক জাতির জন্য স্বস্তির বার্তা: ১২ দলীয় জোট
  • লন্ডনে ড. ইউনূস-তারেক রহমানের বৈঠককে স্বাগত জানাল জেএসডি