তাঁরা আলাদা দেশের নেতা ও সরকারপ্রধান; এমনকি মহাদেশও ভিন্ন। একজন উত্তর আমেরিকা, একজন মধ্যপ্রাচ্য, একজন এশিয়া এবং আরেকজন ইউরোপের। তাঁদের রাজনৈতিক ‘আদর্শ’ আলাদা, ধর্ম আলাদা, আলাদা তাঁদের অনুসারী গোষ্ঠীও। এত সব ভিন্নতার পরও তাঁদের কথা ও কাজে ‘বিস্ময়কর’ সব মিল পাওয়া যায়!

সমকালীন বিশ্বরাজনীতিতে জাতীয়তাবাদ, ধর্মীয় পরিচয় এবং ব্যক্তিকেন্দ্রিক নেতৃত্বের উত্থান বেশ লক্ষণীয়। এই ধারারই চারটি উল্লেখযোগ্য মুখ হলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, ইসরায়েলের দীর্ঘতম সময়ের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান।

নিজ নিজ দেশের পটভূমিতে তাঁরা ভিন্ন ভিন্ন ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁদের মিল যেখানে সেটা হলো গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার এবং সমানাধিকারের প্রশ্নে তাঁদের অনেক পদক্ষেপ সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এই নেতারা একদিকে বিশাল জনসমর্থন পেয়েছেন, অন্যদিকে হুমকি তৈরি করেছেন গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প

ট্রাম্পের রাজনৈতিক উত্থান যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য এক মৌলিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। একজন সফল ব্যবসায়ী এবং টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব থেকে প্রেসিডেন্ট হওয়া ট্রাম্প রাজনীতিকে এক নতুন ধাঁচে চালনা করেন—যার ফলে তাঁকে অনেক সময় গণতান্ত্রিক রীতিনীতির জন্য হুমকি বলেই বিবেচনা করা হয়। ট্রাম্প রাজনীতির মূলধারার বাইরে থেকে এসে জনরোষ ও অসন্তোষকে পুঁজি করে দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় এসেছেন।

ট্রাম্প আমেরিকার সমাজকে আগের চেয়ে আরও মেরুকৃত করেছেন—বর্ণ, অভিবাসন, লিঙ্গ ও ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে। তাঁর কথাবার্তা অনেক সময় বিভাজনকে উসকে দিয়েছে। ট্রাম্প প্রায়ই ডেমোক্র্যাটদের ‘দুশমন’ বা ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। ট্রাম্পের বক্তব্য ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যবহৃত ভাষা অনেক সময় তাঁর সমর্থকদের মধ্যে সহিংসতা ও ঘৃণা উসকে দিয়েছে।

বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু

 ইসরায়েলের দীর্ঘতম সময় দায়িত্ব পালনকারী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তাঁর শাসনব্যবস্থায় গণতান্ত্রিক মানদণ্ড, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, ফিলিস্তিনি প্রশ্ন এবং ঘরোয়া রাজনীতিতে মেরুকরণ ইত্যাদি বিষয়ে গভীর বিতর্ক রয়েছে। নেতানিয়াহুর সরকারের সবচেয়ে বড় সমালোচনা আসে তাঁর সাম্প্রতিক বিচার বিভাগের সংস্কার পরিকল্পনা থেকে, যেটিকে অনেকেই বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ওপর আঘাত এবং গণতন্ত্রের জন্য হুমকি হিসেবে দেখেন। নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ঘুষ, প্রতারণা ও আস্থাভঙ্গের অভিযোগে মামলা চলছে; যদিও তিনি নিজেকে ষড়যন্ত্রের শিকার বলেই দাবি করেন, তবে তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে চলমান এই মামলা ইসরায়েলের রাজনৈতিক শুদ্ধাচারের প্রশ্নে গভীর উদ্বেগ তৈরি করেছে।

নেতানিয়াহু ফিলিস্তিনিদের প্রতি কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন। বসতি স্থাপন, গাজায় সামরিক হামলা এবং ‘দুই রাষ্ট্র সমাধান’-এর প্রতি অনীহা তাঁকে আন্তর্জাতিক পরিসরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্ত করেছে। তাঁর নেতৃত্বে ইসরায়েলের সামরিক অভিযান বহুবার আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে পড়েছে। তিনি ধর্মীয় দল ও উগ্র ডানপন্থী অংশীদারদের সঙ্গে জোট গঠন করে ইসরায়েলি সমাজে ধর্মনিরপেক্ষ ও ধর্মীয় অংশের মধ্যে তীব্র বিভাজন সৃষ্টি করেছেন। আরব-ইসরায়েলিদের অধিকারের প্রশ্নেও তাঁর অবস্থানকে বিভাজনমূলক হিসেবে দেখা হয়।

নরেন্দ্র মোদি

মোদি ২০১৪ সাল থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এর আগে তিনি গুজরাট রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন দীর্ঘকাল। মোদির নেতৃত্বে ভারত একদিকে যেমন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, ডিজিটাল উন্নয়ন ও বৈশ্বিক কূটনীতিতে একটি দৃঢ় অবস্থান লাভ করেছে, অন্যদিকে তাঁর শাসনব্যবস্থাকে ঘিরে উগ্র জাতীয়তাবাদ, ধর্মীয় বিভাজন এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের হ্রাসের অভিযোগও প্রবলভাবে উঠেছে।

মোদি সরকারের সবচেয়ে বড় সমালোচনা হলো, ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের আদর্শ থেকে সরে এসে একটি হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্রে রূপান্তরের চেষ্টা। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ), জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন (এনআরসি), বাবরি মসজিদের রায় ও হিজাব ইস্যুতে সরকারের ভূমিকা সংখ্যালঘু মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে গভীর উদ্বেগ তৈরি করেছে। মোদি সরকার সমালোচনাকারী সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, মানবাধিকারকর্মীদের বিরুদ্ধে দমনমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তথ্যের অবাধ প্রবাহ, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং বিরোধী কণ্ঠ রোধ করার ক্ষেত্রে মোদি সরকারের ভূমিকা গণতান্ত্রিক মানদণ্ডের পরিপন্থী।

রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান

২০০৩ সাল থেকে তুরস্ক শাসন করছেন এরদোয়ান; প্রথমে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এবং ২০১৪ সাল থেকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে। তিনি একজন ক্যারিশম্যাটিক, একই সঙ্গে বিতর্কিত নেতা। এরদোয়ান একজন ইসলামপন্থী রাজনীতিক হলেও প্রথম দিকে তিনি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রব্যবস্থার সঙ্গে একটি ‘মডারেট’ (মধ্যপন্থী) ইসলামি রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি মিলিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।

এরদোয়ান শাসনামলে তুরস্ক অর্থনৈতিক অগ্রগতি এবং আন্তর্জাতিকভাবে কিছু নতুন কূটনৈতিক স্থান অর্জন করলেও গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি ঘটেছে বলে সমালোচনা রয়েছে। তিনি রাজনৈতিক বিরোধীদের দমন করেছেন, বিচার বিভাগকে দলীয় নিয়ন্ত্রণে এনেছেন এবং প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাহী ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করেছেন।

২০১৭ সালের সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে এরদোয়ান কার্যত একনায়কতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা চালু করেন। তুরস্ক বর্তমানে সাংবাদিকদের কারাবন্দীর সংখ্যায় শীর্ষে থাকা দেশগুলোর একটি। সরকারের বিরুদ্ধে কথা বললে মামলা, গ্রেপ্তার এবং চাকরি হারানোর ভয় রয়েছে। গণমাধ্যমকে সরকারপন্থী করে তোলা হয়েছে এবং স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিসর সংকুচিত হয়েছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প, বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, নরেন্দ্র মোদি এবং রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের মধ্যে কিছু অমিল থাকলেও নির্দিষ্ট কিছু দিক থেকে একে অপরের সঙ্গে মিলে যায়।

রাজনৈতিক দর্শন

এই চার নেতারই রাজনৈতিক দর্শনে জাতীয়তাবাদ একটি কেন্দ্রীয় জায়গা দখল করে আছে। হোয়াইট সুপ্রিমিস্ট (শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদী) ট্রাম্প ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ স্লোগানের মাধ্যমে ‘বিশ্বায়নবিরোধী’ অবস্থান দিয়েছেন। নেতানিয়াহু মূলত ইসরায়েলের অস্তিত্ব ও নিরাপত্তা রক্ষার প্রশ্নে ইহুদি জাতীয়তাবাদকে সামনে রেখেছেন। মোদি হিন্দু পরিচয় ও সংস্কৃতি পুনর্জাগরণকে রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মে পরিণত করেছেন, যেখানে হিন্দুত্ববাদ একটি নিয়ন্ত্রক শক্তি। অন্যদিকে এরদোয়ান ধর্মনিরপেক্ষ তুরস্ককে ইসলামপন্থী জাতীয়তাবাদের দিকে ঠেলে দিয়েছেন, যেখানে ইসলাম ও তুর্কি পরিচয়ের সম্মিলন ঘটেছে।

নেতৃত্বের ধরন ও শাসনপ্রক্রিয়া

এই চারজন নেতার শাসনের ধরন অনেকাংশেই কেন্দ্রীয়করণ ও ব্যক্তিকেন্দ্রিক। ট্রাম্প মার্কিন রাজনীতির প্রচলিত রীতিনীতি ভেঙে দিয়ে প্রায়ই বিতর্কিত নেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন। নেতানিয়াহু অনেক বেশি কৌশলী ও বাস্তববাদী; তিনি দীর্ঘদিন ইসরায়েলি রাজনীতিতে টিকে থাকার জন্য ছোট দলগুলোর সঙ্গে জোট গঠনে পারদর্শী হয়েছেন। মোদি একটি শক্তিশালী ব্যক্তিকেন্দ্রিক প্রশাসন তৈরি করেছেন, যেখানে সরকারি উদ্যোগগুলো প্রায় সবই ‘মোদি ব্র্যান্ড’ হয়ে উঠেছে। এরদোয়ান প্রথমে একজন ‘সংস্কারপন্থী’ নেতা হিসেবে উঠে এলেও পরে তার নেতৃত্ব অধিক কর্তৃত্ববাদী রূপ নেয়।

বৈদেশিক নীতি

চার নেতার বৈদেশিক নীতিও তাঁদের আদর্শের প্রতিফলন। ট্রাম্প ছিলেন আন্তর্জাতিক চুক্তি ও জোটের বিরুদ্ধে; তিনি জলবায়ু চুক্তি ও ইরান পরমাণু চুক্তি থেকে সরে আসেন। নেতানিয়াহু ইরানবিরোধী অবস্থান এবং আরব রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে নতুন কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আগ্রহী ছিলেন। মোদি প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে একাধারে প্রতিযোগিতা ও সহযোগিতা বজায় রেখেছেন, পাশাপাশি পশ্চিমা দেশের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়েছেন। এরদোয়ান চেয়েছেন স্বাধীন কূটনীতি গড়ে তুলতে; তিনি সিরিয়া, লিবিয়া ও আজারবাইজানের সংঘাতে সরাসরি হস্তক্ষেপ করেছেন এবং ন্যাটোর সঙ্গেও একধরনের টানাপোড়েন বজায় রেখেছেন।

অভ্যন্তরীণ নীতি

চারজন নেতারই শাসনামলে অভ্যন্তরীণ নানা বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। ট্রাম্প কোভিড-১৯ ব্যবস্থাপনা, অভিবাসন আইন এবং ক্যাপিটল হিলে সহিংসতার জন্য তীব্রভাবে সমালোচিত হন। নেতানিয়াহু দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্ত হন এবং বিচারব্যবস্থা সংস্কারের নামে বিক্ষোভের মুখে পড়েন। মোদির বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে সংখ্যালঘুদের অধিকার খর্ব করার, বিশেষত কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল ও নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে। এরদোয়ান দেশজুড়ে গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ, বিচারব্যবস্থায় প্রভাব এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সমালোচিত হয়েছেন।

সমর্থক গোষ্ঠী

চার নেতারই রয়েছে নির্দিষ্ট সমর্থক গোষ্ঠী। ট্রাম্প আমেরিকার গ্রামীণ, সাদা ও ধর্মীয় রক্ষণশীল ভোটারদের মধ্যে বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। নেতানিয়াহুর সমর্থক এবং জায়নবাদীরা তাঁকে ইসরায়েলের ‘নিরাপত্তার রক্ষাকর্তা’ হিসেবে দেখে। মোদি ভারতের বৃহৎ হিন্দু মধ্যবিত্ত শ্রেণি ও উগ্র জাতীয়তাবাদী তরুণদের মধ্যে বিশেষভাবে জনপ্রিয়। এরদোয়ান তুরস্কের গ্রামীণ ও ধর্মভিত্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে এখনো শক্ত অবস্থান ধরে রেখেছেন, যদিও নগরভিত্তিক জনগোষ্ঠীতে তাঁর জনপ্রিয়তা কমেছে।

শেষ কথা

ট্রাম্প, নেতানিয়াহু, মোদি ও এরদোয়ানের নীতি-আদর্শ-রাজনৈতিক দর্শনে বড় ধরনের পার্থক্য থাকলেও তাঁরা প্রত্যেকে ডানপন্থী এবং জনতুষ্টিবাদী (পপুলিস্ট)। নিজ নিজ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মাবলম্বী মানুষদের সন্তুষ্টি ও সমর্থন অর্জন করাই তাঁদের অন্যতম রাজনৈতিক কৌশল; অন্যদিক সংখ্যালঘু, উদারপন্থী এবং বামপন্থীরা হলেন তাঁদের ‘সাধারণ শত্রু’।

এই চার নেতার রাজনৈতিক উত্থান একটি বৈশ্বিক বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি—যেখানে জাতীয়তাবাদ, ধর্মীয় পরিচয় এবং ব্যক্তিনির্ভর নেতৃত্ব রাজনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলছে; যদিও তাঁদের প্রত্যেকে নিজ নিজ দেশের পটভূমিতে ভিন্ন ভূমিকা পালন করেছেন, তবু গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার এবং সমানাধিকারের প্রশ্নে তাঁদের অনেক পদক্ষেপ সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এই নেতারা একদিকে বিশাল জনসমর্থন পেয়েছেন, অন্যদিকে সমানতালে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছেন রাজনৈতিক বৈচিত্র্য ও গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে।

স্টিভেন লেভিটস্কি এবং ডেনিয়েল জিবলাট তাঁদের আলোচিত গ্রন্থ হাউ ডেমোক্রেসিস ডাই বইয়ে আধুনিককালে গণতন্ত্র ধ্বংসের চারটি স্পষ্ট লক্ষণ বা নির্দেশক চিহ্নিত করেছেন। এই নির্দেশকগুলো হলো:

১.

গণতান্ত্রিক নিয়মকানুনের প্রতি দুর্বল প্রতিশ্রুতি বা সরাসরি প্রত্যাখ্যান;

২. রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের বৈধতা অস্বীকার;

৩. সহিংসতাকে উৎসাহ দেওয়া বা সহ্য করা;

৪. বিরোধী মত, গণমাধ্যমের ও নাগরিক স্বাধীনতা খর্ব করা

এই নির্দেশকগুলো অনুসারে ট্রাম্প, নেতানিয়াহু, মোদি ও এরদোয়ান—তাঁরা প্রত্যেকেই গণতন্ত্রের জন্য হুমকিস্বরূপ।

সূত্র:

১. ক্লউস ল্যারেস (সম্পা.), ডিক্টেটরস অ্যান্ড অটোক্র্যাটস: সিকিউরিং পাওয়ার অ্যাক্রোস গ্লোবাল পলিটিকস, রাউটলেজ

২. স্টিভেন লেভিটস্কি এবং ডেনিয়েল জিবলাট, হাউ ডেমোক্রেসিস ডাই, পেঙ্গুইন বুকস

মনজুরুল ইসলাম প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গণত ন ত র ক গণতন ত র র র জন ত ক দ র র জন ত ক ইসর য় ল র ত কর ছ ন র জন ত ত স ব ধ নত এরদ য় ন ব যবস থ অবস থ ন পদক ষ প সরক র র আম র ক র জন য ত হয় ছ ত রস ক ব ভ জন ক টন ত দ র অন ইসল ম প রথম আদর শ

এছাড়াও পড়ুন:

ইরানের সঙ্গে সংঘাত: ইসরায়েলকে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা দিতে সৌদি সরকারকে অনুরোধ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র

গত জুনে সংঘাতের সময় ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে উপর্যুপরি আঘাত হানছিল। তা প্রতিরোধ করতে গিয়ে দেশটির ভান্ডারে থাকা টার্মিনাল হাই অল্টিটিউড এরিয়া ডিফেন্সে (থাড) টান পড়েছিল। সংঘর্ষ চলাকালে সৌদি আরবের হাতে এই প্রতিরক্ষাব্যবস্থা না থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি অন্য আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা তাদের ছিল। তাই সংকটকালে ইসরায়েলকে কিছু আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা দিতে সৌদি আরবকে অনুরোধ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু রিয়াদ তাতে রাজি হয়নি।

অনুরোধের বিষয়টি জানেন, এমন দুজন মার্কিন কর্মকর্তা মিডল ইস্ট আইকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

দুজনের একজন বলেন, ‘যুদ্ধ চলাকালে আমরা সবাইকে (মধ্যপ্রাচ্যের যেসব দেশে মার্কিন প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ছিল) তাদের সবাইকে (ইসরায়েলকে কিছু ধার দেওয়া) অনুরোধ করেছিলাম। যখন কাজ হলো না, তখন আমরা চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছিলাম। শুধু কোনো একটি দেশকে অনুরোধ করা হয়েছিল, তা কিন্তু নয়।’

কিন্তু ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলকে সাহায্য করার জন্য সবচেয়ে ভালো অবস্থানে ছিল সৌদি আরব। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা জোর দিয়ে বলে আসছিলেন, ইরান শুধু ইসরায়েল নয়, সৌদি আরবের জন্যও হুমকি।

তেলসমৃদ্ধ উপসাগরীয় এই দেশের হাতে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা আগেই নিজেদের বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হয়েছিল। কিছুদিন আগেও এসব প্রতিরক্ষাব্যবস্থা লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন দিয়ে হামলা চালিয়েছিল ইয়েমেনের হুতিরা।

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যখন সংঘর্ষ চলছিল, ঠিক তখনই নিজেদের কেনা থাড ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার প্রথম ব্যাটারিটি গ্রহণের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল সৌদি আরব। ব্যাটারিটি নিজেদের সার্বভৌম তহবিল দিয়েই কিনেছিল রিয়াদ। ঘটনা হলো, ইসরায়েল ও ইরানের যুদ্ধবিরতির মাত্র ৯ দিন পর ৩ জুলাই সৌদি সেনাবাহিনী এই ব্যাটারি আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করেছে।

ইরান-ইসরায়েলের সংঘাতের একপর্যায়ে মার্কিন কর্মকর্তাদের মধ্যে নিজেদের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার মজুত ফুরিয়ে যাওয়া নিয়ে উদ্বেগ ছিল। কারণ, তখন ইসরায়েলের বিভিন্ন নিশানায় ব্যাপক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাচ্ছিল ইরান।

ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের সময় মিডল ইস্ট আই-ই প্রথম জানিয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা এবং ইসরায়েলের নিজস্ব আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা অ্যারো দ্রুত শেষ হয়ে আসছে। পরে দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ও দ্য গার্ডিয়ান নিজেদের প্রতিবেদনে মিডল ইস্ট আইয়ের তথ্য নিশ্চিত করেছিল।

চলতি মাসে এক প্রতিবেদনে গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের পর যুক্তরাষ্ট্রের হাতে মাত্র ২৫ শতাংশ প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা অবশিষ্ট ছিল, যা পেন্টাগনের পরিকল্পনামাফিক বিশ্বব্যাপী দেশটির সামরিক অভিযানের জন্য প্রয়োজনীয় মজুতের তুলনায় অনেক কম।

এক মার্কিন কর্মকর্তা ওই সময় যুক্তরাষ্ট্রের হাতে কী পরিমাণ প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ছিল, সেই গোপন সংখ্যা মিডল ইস্ট আইকে নিশ্চিত করেছেন।

ইরানের হামলা থেকে ইসরায়েলকে রক্ষা জন্য যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের স্ট্যান্ডার্ড মিসাইল-৩ (এসএম-৩) ছুড়েছিল। এসব ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছিল দেশটির রণতরি আরলি বার্ক ক্লাসের গাইডেড-মিসাইল ডেস্ট্রয়ার থেকে।

ইসরায়েলের তিন স্তরের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা তো ছিলই, সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত শক্তি। তা সত্ত্বেও যুদ্ধবিরতির আগপর্যন্ত ইসরায়েলি শহরগুলোতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাতে সক্ষম হয়েছিল ইরান।

যুক্তরাজ্যের দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের পাঁচটি সামরিক স্থাপনায় সরাসরি আঘাত করতে সক্ষম হয়েছিল।

বিশ্লেষকদের মতে, ইরান যেভাবে বৃষ্টির মতো ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে, সেটার বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা প্রত্যাশার চেয়ে ভালো করেছে। তবে সংঘাত দীর্ঘ সময় ধরে চলায় ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার দুর্বল দিকটি বুঝে গিয়েছিল ইরান। তাই তারা ইসরায়েলে বেশি পরিমাণে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাতে পেরেছিল।

মিচেল ইনস্টিটিউট ফর অ্যারোস্পেস স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক ডগলাস বারকি বলেন, দুর্বলতাটা হলো, যুদ্ধের একটা পর্যায়ে আপনার প্রতিরক্ষাব্যবস্থার মজুত ফুরিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি আছে। আমাদের হাতে যে পরিমাণ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা আছে, সেগুলো শেষ হয়ে যাওয়ার পর নতুন করে তৈরি করার সক্ষমতা সীমিত।

গত শুক্রবার দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার ঘাটতির এই পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু কর্মকর্তা সৌদি আরবের কেনা থাড প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ইসরায়েলে পাঠানোর বিষয়েও রিয়াদের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন।

একজন মার্কিন কর্মকর্তা মিডল ইস্ট আইকে নিশ্চিত করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সৌজন্য অনুরোধ ও চুক্তির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার পরই সৌদি আরবের সঙ্গে এ বিষয়ে গভীর আলোচনা শুরু হয়েছিল।

উভয় মার্কিন কর্মকর্তা মিডল ইস্ট আইকে আরও বলেছেন, ইসরায়েলকে আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা দিতে যুক্তরাষ্ট্র সংযুক্ত আরব আমিরাতকেও অনুরোধ করেছিল। তবে দেশটির কাছ থেকে ইসরায়েল আদৌ কোনো আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা পেয়েছিল কি না, এই দুই কর্মকর্তার কেউ তা নিশ্চিত করতে রাজি হননি।

যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে আমিরাতই প্রথম দেশ, যারা প্রথম থাড কিনেছিল এবং ব্যবহার করেছিল। দেশটি থাড কিনেছিল ২০১৬ সালে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান যেভাবে ইসরায়েলের উন্নত আকাশ প্রতিরক্ষা ভেদ করে হামলা চালাতে পেরেছে, তা উপসাগরীয় অঞ্চলের তুলনামূলক কম সুরক্ষিত দেশগুলোকে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যেভাবে সুষ্ঠু ভোটে বাধা হতে পারে
  • মিয়ানমারে ডিসেম্বরে নির্বাচনের ঘোষণা জান্তা সরকারের, জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার
  • বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী সরাসরি ছাত্র সংসদ নির্বাচনের পক্ষে
  • ট্রাম্পের বিরুদ্ধে লুলার প্রতিবাদে অন্যরাও শামিল হোক
  • এমন কিছু করবেন না যাতে গণতন্ত্র ব্যাহত হয়: মির্জা ফখরুল
  • রাবিতে আ.লীগ ট্যাগ দিয়ে চিকিৎসা কর্মীকে বিবস্ত্র করে মারধর
  • ইরানের সঙ্গে সংঘাত: ইসরায়েলকে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা দিতে সৌদি সরকারকে অনুরোধ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র
  • সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক ৭ দিনের রিমান্ডে
  • বিতর্কমুক্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকারব‍্যবস্থা না হলে গণতন্ত্র আবার হুমকিতে পড়বে: এবি পার্টি
  • মানুষ ঠিকমতো ইভিএম বোঝে না, পিআর বুঝবে কী করে: মির্জা ফখরুল