হাত বাড়ালেই মেলে মাদক দাপট অর্ধশত কারবারির
Published: 6th, April 2025 GMT
রাজধানীর পল্লবী থানার পূর্ব কুর্মিটোলা ক্যাম্প। সারি সারি টিনের ঘরে বসবাস স্বল্প আয়ের মানুষের। প্রধান সড়কসংলগ্ন কাকলী টি-কফি হাউস অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের পাশ দিয়ে সরু গলি গেছে ক্যাম্পে। গলি ধরে একটু এগিয়ে দেখা গেল, দু’জন নারী-পুরুষ কথা বলছে। মিনিট দুই বাদে নারীর হাতে টাকা গুঁজে কাগজে মোড়ানো বস্তু নিয়ে সটকে পড়ল পুরুষ। একটু দূরে দাঁড়িয়ে ক্যাম্পের এক যুবক বললেন, কিছুক্ষণ দাঁড়ান, অনেককে দেখতে পাবেন। ইয়াবা বিক্রি হচ্ছে। এটা গোপন কিছু নয়। হরহামেশা চলে। তারা মাদক কারবারি শাহাজাদি বেগমের সহযোগী। গলিতেই শাহাজাদির বাড়ি।
শুধু ক্যাম্পের এ গলি নয়, পল্লবী থানা এলাকায় আরও একাধিক স্পটে প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি করতে দেখা যায়। ইয়াবা, হেরোইন, গাঁজা কেনাবেচায় অতিষ্ঠ এলাকার সাধারণ মানুষ। সন্তান নিয়ে তারা চিন্তিত। রয়েছে চুরি-ছিনতাইয়ের শঙ্কা। কারণ, মাদক কেনার টাকা জোগাড়ে চুরি-ছিনতাই করে মাদকাসক্তরা।
স্থানীয়রা বলছেন, সকালে ঘর থেকে বের হলেই চোখে পড়ে মাদক কেনাবেচা। সন্ধ্যায় কিংবা রাতে ঘরে ফেরার সময়েও একই চিত্র। মাঝেমধ্যে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি) ও পুলিশ অভিযান চালালেও কমছে না বিস্তার।
ডিএনসি ও পুলিশ সূত্র জানায়, গত দুই মাসে (জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি) ডিএনসির ঢাকা উত্তর মহানগর কার্যালয় পল্লবী থানা এলাকায় অন্তত ১০ বার অভিযান চালিয়েছে। এসব অভিযানে ১১ জন গ্রেপ্তার হয়েছে। এ সময় তাদের কাছ থেকে ১১ গ্রাম হেরোইন, ৪১০ ইয়াবা, ফেনসিডিল ২ বোতল ও ২৭৫ গ্রাম গাঁজা জব্দ করা হয়। অন্যদিকে দুই মাসে পল্লবী থানা পুলিশ মাদক মামলা করেছে ৪৫টি। গ্রেপ্তার করেছে ৭৯ জনকে। তাদের কাছ থেকে ৮৯ গ্রাম হেরোইন, ৮ কেজি ৯৩০ গ্রাম গাঁজা, ২ হাজার ৭০০ ইয়াবা, ৬৭ বোতল ফেনসিডিল ও তিন লিটার চোলাই মদ জব্দ করা হয়।
পুলিশ বলছে, পল্লবী থানা পুলিশ অর্ধশতাধিক স্থানীয় মাদক কারবারির তালিকা করেছে। প্রত্যেকেই একাধিক মাদক মামলার আসামি। পল্লবী এলাকার অন্যতম মাদক কারবারি ফাতেমা খাতুন ওরফে ফতেহ। ফতু নামেই সে বেশি পরিচিত। পল্লবীর বাউনিয়াবাদ বি ব্লকের ৬ ও ৭ নম্বর লাইনে তার মাদক কারবার। এটি মাদকের গলি হিসেবেই পরিচিত। ফতুর পরিবারের প্রায় সবাই মাদক কেনাবেচায় জড়িত। তারা বিভিন্ন লোকের মাধ্যমে কেনাবেচা করে। নিজের বাড়ির সামনে আরেকটি বাড়ি বন্ধক নিয়েছে শুধুই মাদক কারবারের জন্য।
সম্প্রতি সরেজমিন কুর্মিটোলা ক্যাম্পের গলিতে মাদক কেনাবেচার চিত্র পাওয়া যায়। টিনের ঘরের দরজায় দু’জন তরুণ ইয়াবা, হেরোইন ও গাঁজা নিয়ে দাঁড়িয়ে। বাইরে থেকে লোকজন এসে টাকা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। গলির অন্তত তিন বাসিন্দার সঙ্গে কথা হয় সমকাল প্রতিবেদকের। তারা জানালেন, ফতু ২৪ ঘণ্টা মাদক কেনাবেচা করে। তাকে এ কারবার বন্ধ করতে বলার মতো দুঃসাহস নেই ক্যাম্পবাসীর। কারণ, ফতু সাঙ্গোপাঙ্গ পোষে। হুকুম দিলেই তারা যে কারও ওপর হামলা করে। বলা চলে, ভয়ে সবাই মাদক কারবার মেনে নিয়েছে।
কালশী মোড়ের অদূরে ২২ তলা নামক এলাকায় ইয়াবা ও গাঁজা বিক্রি করে কোহিনুর ও শাহিনুর। তারা পাইকার কারবারি মো.
পল্লবী থানা পুলিশের কাছে অর্ধশতাধিক মাদক কারবারির তালিকা রয়েছে। শুরুতেই রয়েছে পূর্ব কুর্মিটোলা ক্যাম্পের শাহাজাদি বেগম, সেকশন ১০-এর এ ব্লকের ১৮ নম্বর গলির মফিজ, সেকশন-১১-এর বি ব্লকের লিটন, ১২ নম্বর সেকশনের কুর্মিটোলা ক্যাম্পের ই ব্লকে শাহানাজ, মোহাম্মদ আলামিন, লাইলী, মর্জিনা, ফজর আলী মাতব্বর, রাজ্জাক ও রনি, ১১ নম্বর সেকশনের বি ব্লকে মো. রিপন, জামিলা বেগম, সাইমা বেগম, মুন্না, দুলারা, ডলার, মো. আনোয়ার, নওশাদ, মিল্লাত ক্যাম্পে জুম্মন, কাহানা, রহমত, বিজলী, সাব্বো, সনি, বাউনিয়াবাঁধে ফতু, হুমায়ন, রহমান, আমির, মুসা, হারুন ও স্বপন এবং ইরানি ক্যাম্পের দেলোয়ার। তাদের প্রত্যেকর বিরুদ্ধে একাধিক মাদক মামলা রয়েছে।
পল্লবী থানার ওসি নজরুল ইসলাম সমকালকে জানান, বস্তি এলাকায় মাদকের উৎপাত বেশি। তারা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছেন। প্রতিদিনই মাদক কারবারি ও মাদকাসক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) ঢাকা মহানগর উত্তর কার্যালয়ের উপপরিচালক শামীম আহম্মেদ বলেন, গোপনে অনেকে সক্রিয় থাকলেও প্রকাশ্যে বিক্রির তথ্য নেই।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক রব র র এল ক য় হ র ইন স কশন ড এনস
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলি হামলায় আইআরজিসির গোয়েন্দাপ্রধানসহ ৩ ইরানি জেনারেল নিহত
ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেছে যে, রোববার ইসরায়েলি বিমান হামলায় ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) গোয়েন্দা প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ কাজেমি এবং তার উপপ্রধান হাসান মোহাক্কিক নিহত হয়েছেন। খবর আল জাজিরার
এছাড়া হামলায় আরও একজন ঊর্ধ্বতন গোয়েন্দা কর্মকর্তা মোহসেন বাঘেরী নিহত হন বলে জানিয়েছে ইরানি রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থাগুলো।
এই হামলা ইসরায়েলের একাধিক লক্ষ্যবস্তুতে চালানো বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার অংশ, যা শুরু হয় ১৩ জুন ভোরে। ইসরায়েল জানায়, তারা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ও সামরিক অবকাঠামো ধ্বংসের লক্ষ্য নিয়ে অভিযান শুরু করেছে।
এর আগে হামলায় ইরানের একাধিক পারমাণবিক বিজ্ঞানী ও সামরিক নেতার বাড়িতে নির্ভুল আঘাত হানার খবর পাওয়া গেছে। ইসরায়েলি পক্ষ দাবি করেছে, এসব হামলা 'অস্তিত্বগত হুমকি নির্মুলের অংশ'।
এদিকে আধা সরকারি সংবাদ মাধ্যম তাসনিমের খবরে বলা হয়, রেভল্যুশনারি গার্ড কোরের গোয়েন্দা শাখার প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি এবং জেনারেল হাসান মোহাক্বিক ও মোহসেন বাঘেরি তেহরানে এক বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন।