ভ্যাট সিঙ্গেল রেটে একবারে আনা সম্ভব নয়: অর্থ উপদেষ্টা
Published: 6th, April 2025 GMT
বাংলাদেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল থাকায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সন্তোষ প্রকাশ করেছে জানিয়ে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আইএমএফের মূল ফোকাস ট্যাক্স-জিডিপি রেশিও (অনুপাত) বাড়ানো, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরেকটু স্থিতিশীল করা, বাজেটে ঘাটতি কমানো। আমরা ভ্যাটের হার সিঙ্গেল রেটে নামিয়ে আনার চেষ্টা করছি। তবে ভ্যাট একবারে সিঙ্গেল রেটে নামিয়ে আনা সম্ভব নয়।
রোববার সচিবালয়ে আইএমএফ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এসব কথা বলেন। ভ্যাট সিঙ্গেল রেটে নামিয়ে আনার বিষয়ে আপনাদের অবস্থান কি? সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের উত্তরে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, সিঙ্গেল রেটের বিষয়ে আমরা চেষ্টা করব। তবে আমরা একবারে সিঙ্গেল রেটে পৌঁছাতে পারব না।
আইএমএফ ঋণের কিস্তির বিষয়ে তিনি বলেন, দুই কিস্তির অর্থ একবারে দেবে। ওরা এখন রিভিউ করবে। আমরা ট্যাক্স-জিডিপি রেশিও বাড়াব কীভাবে, মাত্র ৭ শতাংশ আছে। তারপর আমাদের ট্যাক্স কালেকশন কীভাবে করব। ট্যাস্ক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন লিকেজ যেন না হয়।
‘বেসিকালি আইএমএফের উদ্বেগ হলো- রেভিনিউ (রাজস্ব) জেনারেশন, আমাদের বাজেট সাইজ কত হবে, ডেফিসিট (ঘাটতি) কত হবে, এগুলো নিয়ে আপাতত কথা হয়েছে। আমার সঙ্গে ডিটেইল কথা হয়নি, এনবিআরের সঙ্গে কথা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে কথা হবে, লোন রেজুলেশন নিয়ে’ বলেন অর্থ উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, সার্বিকভাবে ব্যাংক খাতের শৃঙ্খলা, খেলাপির ঋণ আদায়, এনবিআরের ট্যাক্স জিডিপি রেশিও বাড়াবো কীভাবে, কোন কোন ক্ষেত্রে বাড়াব এগুলো নিয়ে আমার সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। সবার সঙ্গে ওরা ইন্ডিভিজুয়ালি (পৃথক) বসবে। তারপর আপনারা কয়দিন পরে জানতে পারবেন।
আইএমএফ ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ পাওয়ার বিষয়ে এর আগে আপনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন। এখন আপনাদের অবস্থান কি? সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের উত্তরে সালেউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা আশাবাদী। ওরা বলেছে, দেখব। ওরা যাওয়ার পর ১৯ এপ্রিল আমি যাব। তারপর মে-জুনের দিকে বৈঠক হবে। এই রিভিউয়ের ওপরেই তাদের সুপারিশ।
চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির ঋণের ক্ষেত্রে উনাদের মূল ফোকাস কি? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ট্যাক্স জিডিপি রেশিও বাড়ানো, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আর একটু স্থিতিশীল করা, তারপর বাজেটে ঘাটতি কমানো এগুলো মেইন ফোকাস।
বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে ওরা কি বলেছে? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ওরা বলেছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন মোটামুটি স্থিতিশীল, গতিশীল, সঠিক পথে আছে। কিন্তু রিভিউ করার পর আর একটু দেখবে। ওরা বলেছে- তারা সন্তুষ্ট, বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন স্থিতিশীল আছে। তবে ওরা ডিটেইল জিনিসগুলো দেখবে।
কোন বিষয়গুলোতে কম্প্রোমাইজ করতে হবে? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমি সোজাসুজি বলেছি আমাদের পক্ষ থেকে যা যা করার দরকার আমরা করতে চেষ্টা করছি। অলরেডি আমাদের গুড ইনটেনশন দেখিয়েছি। ওদের দিক থেকে ওদের গুড ইনটেনশন দেখাক। দেন উই এনগেজ। আমরা আলাপ করব।
ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়ার বিষয়ে আপনাদের অবস্থান কি? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলব।
রাজস্ব খাতে কি করতে হবে, ওরা কি চায়? এমন প্রশ্নের উত্তরে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের ট্যাক্স জিডিপি রেশিও ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। আমাদের জিডিপি নেপালের চেয়ে অনেক বড়, ওরা বলে নেপালের থেকে তোমাদের অনেক কম। ওদের (নেপাল) ১২-১৩ শতাংশ। ভারতে প্রায় ১৭-১৮ শতাংশ। ওরা বলছে, তোমাদের এটা (ট্যাক্স জিডিপি রেশিও কম) হওয়ার কারণ হয় নেট (আওতা) কম। লাখ লাখ লোক আছে যারা জিরো ট্যাক্সে রিটার্ন দেয়, তাদের আয় আছে কিন্তু তারা রিটার্ন দেয় না- বলেন অর্থ উপদেষ্টা।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আইএমএফ আইএমএফ ঋণ আম দ র একব র ত রপর
এছাড়াও পড়ুন:
নিট রিজার্ভও ২২ বিলিয়ন ডলার ছাড়াল
বাংলাদেশ ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার মোট মজুত বা রিজার্ভ ২৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭ দশমিক ৪১ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৭৪১ কোটি ডলার। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবপদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী, রিজার্ভ বেড়ে হয়েছে ২২ দশমিক শূন্য ৪ বিলিয়ন ডলার বা ২ হাজার ২০৪ কোটি ডলার। আজ বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা যায়। এর আগে ২০২৩ সালের আগস্টে রিজার্ভ এখন যে রিজার্ভ আছে, এর সমান ছিল।
২০২৪ সালের ৩১ জুলাই আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সপ্তাহে মোট রিজার্ভ ছিল ২৫ দশমিক ৯২ বিলিয়ন ডলার। তখন বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার। ফলে মোট রিজার্ভ ও নিট রিজার্ভ—উভয়ই বাড়ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, এর আগে ১৪ এপ্রিল রিজার্ভ বেড়ে হয় ২৬ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৬৩৯ কোটি ডলার। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবপদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী, রিজার্ভ বেড়ে হয় ২১ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলার বা ২ হাজার ১১১ কোটি ডলার।
প্রবাসীদের পাঠানো আয় আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বাড়ছে। গত মার্চ মাসে ৩২৯ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় আসে; এক মাসের হিসাবে যেকোনো সময়ের চেয়ে এটি বেশি। আর চলতি মাসের ২৬ দিনে এসেছে ২২৭ কোটি ডলার। ফলে ব্যাংকগুলো উদ্বৃত্ত ডলার বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বিক্রি করছে। ব্যাংকগুলো থেকে ডলার কিনলে আর বিদেশি ঋণ ও অনুদান এলেই রিজার্ভ বাড়ে। এতে বাড়ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ।
রিজার্ভ বৃদ্ধি পাওয়ায় বৈদেশিক লেনদেনের ওপর চাপ কমেছে। ডলারের দাম না বেড়ে ১২২ টাকায় অনেক দিন ধরে স্থির আছে। পাশাপাশি অনেক ব্যাংক এখন গ্রাহকদের চাহিদামতো ঋণপত্র খুলতে পারছে। ফলে বাজারে পণ্যের সরবরাহ ও দাম স্বাভাবিক।
২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে ডলার নিয়ে দুশ্চিন্তা শুরু হয়। ৮৫ টাকার ডলার বেড়ে ১২৮ টাকা পর্যন্ত ওঠে। সরকার পরিবর্তনের পর নানা উদ্যোগের কারণে প্রবাসী আয় বেড়েছে। পাশাপাশি ডলারের দাম বাড়ছে না। এতে বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে অনেকটা স্বস্তি ফিরেছে। ২০২২ সালের আগের পরিস্থিতিতে ফিরে গেছে অনেক ব্যাংক।