বার্সেলোনার তাণ্ডবে ডর্টমুন্ড বিধ্বস্ত, সেমিফাইনালে এক পা
Published: 10th, April 2025 GMT
চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনাল প্রথম লেগে বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে বড় জয় তুলে নিয়ে সেমিফাইনালে এক পা দিয়ে রাখল স্প্যানিশ জায়ান্ট বার্সেলোনা। বুধবার (০৯ এপ্রিল) দিবাগত রাতে রবার্ট লেভানডোভস্কির জোড়া গোলে ৪-০ গোলের দাপুটে জয় পেয়েছে বার্সা। গোল পেয়েছেন রাফিনহা ও বিস্ময়বালক লামিনে ইয়ামালও।
এদিন ন্যু ক্যাম্পে বার্সা যে ছন্দে খেলেছে, তা যেনো ইউরোপীয় ফুটবলের ইতিহাসে এক অনন্য নজির। হ্যান্সি ফ্লিকের তত্ত্বাবধানে টানা ২৩টি ম্যাচ ধরে অপরাজিত থাকা কাতালানরা এই ম্যাচেও নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ দিয়েছে দারুণভাবে। আর তুলে নিয়েছে নিজেদের ১৯তম জয়।
প্রথমার্ধের ২৫ মিনিটেই গোলের দেখা পায় বার্সা। স্কোরশিটে নাম লেখান রাফিনহা। এ সময় ইনিগো মার্টিনেজের ফ্রি কিক থেকে বলটি পাউ কুবার্সির থেকে গোলপোস্টের সামনে আসে এবং রাফিনহা জালে জড়ান। চলতি আসরে এটি ছিল ব্রাজিলিয়ান তারকার ১২তম গোল।
এরপর অবশ্য প্রথমার্ধে বেশ কিছু সুযোগ পেলেও ব্যবধান বাড়াতে পারেনি বার্সা।
তবে বিরতি থেকে ফিরে আরও আগ্রাসী হয়ে ওঠে তারা। ম্যাচের ৪৮ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করে। এ সময় রাফিনহার হেডে বাড়িয়ে দেওয়া বলে আবার হেড নিয়ে জালে জড়ান লেভানডোভস্কি। এরপর ৬৬ মিনিটে ফারমিন লোপেজের বাড়িয়ে দেওয়া বল থেকে দুর্দান্ত শটে নিজের দ্বিতীয় এবং আসরে নিজের ১১তম গোলটি করেন পোলিশ স্ট্রাইকার লেভানডোভস্কি।
৭৭ মিনিটে ডর্টমুন্ডের পরাজয়ের কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকেন কিশোর সেনসেশন ইয়ামাল। রাফিনহার পাস থেকে বল পেয়ে দুর্দান্ত ফিনিশিংয়ে দারুণ এক গোল করেন তিনি।
অবশ্য ম্যাচের ৮৯ মিনিটে ডর্টমুন্ড একবার বল জালে পাঠালেও অফসাইডের কারণে সেটি বাতিল হয়। তাতে ৪-০ গোলে হারের হতাশা নিয়েই মাঠ ছাড়ে জার্মানির ক্লাবটি।
আগামী ১৫ এপ্রিল ডর্টমুন্ডের মাঠ সিগনাল ইদুনা পার্কে ফিরতি লেগে মাঠে নামবে বার্সা। তবে প্রথম লেগে বড় ব্যবধানে এগিয়ে থাকায় সেমিফাইনালের যাওয়ার ক্ষেত্রে এখন অনেকটাই স্বস্তিতে বার্সা শিবির।
ঢাকা/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ ইন ল প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
বাঁশির সুরে বিরহের কষ্ট ভুলতে চান রিকশাচালক শফিকুল
বাঁশির সঙ্গে সখ্য সেই শৈশবে। গ্রামে যাত্রাপালায় গান করতেন আর বাঁশির সুরে ছড়াতেন মুগ্ধতা। জীবন-জীবিকার তাগিদে একসময় বেছে নেন রিকশাচালকের পেশা। গ্রাম ছেড়ে থিতু হন ব্যস্ত শহরে। তবে বাঁশের বাঁশিকে হাতছাড়া করেননি শফিকুল ইসলাম (৪৫)।
যানজটে গতি থামতেই রিকশার হ্যান্ডেল ছেড়ে শফিকুল কোমর থেকে হাতে নেন প্রিয় বাঁশি। হর্নের কর্কশ ধ্বনি এড়িয়ে তখন বাতাসে ভাসে সুরের মূর্ছনা। বেখেয়ালি যাত্রী আর পথচারীরা হঠাৎ মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে থাকেন বাঁশিওয়ালার দিকে।
দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে বাঁশির সঙ্গে মিতালি গড়েছেন শফিকুল। সেই বাঁশির সুরেই যেন তাঁর জীবন বাঁধা। অভাব, দুর্দশা আর দারিদ্র্যও এ বন্ধন থেকে তাঁকে আলাদা করতে পারেনি। রিকশার প্যাডেলের ছন্দে তাঁর ঠোঁটে বিমূর্ত হয়ে বাঁশির করুণ সুর। বগুড়া শহরের পথচারীদের কাছে তিনি ‘বাঁশিওয়ালা রিকশাওয়ালা’ হিসেবে পরিচিত।
শফিকুলের পৈতৃক ভিটা বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার শালিখা গ্রামে। তবে জীবিকার তাগিদে থাকেন বগুড়া শহরের মালতীনগর এলাকার একটি গ্যারেজে। গত রোববার বিকেলে তাঁর দেখা মেলে বগুড়া শহরের কোর্ট হাউস স্ট্রিটের ব্যস্ত সড়কে। শেষ বিকেলে যানজটে যখন পথচারীরা বিরক্ত, তখন বাতাসে ভেসে আসে ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই’ ভাওয়াইয়া গানটির সুর।
দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে বাঁশির সঙ্গে মিতালি গড়েছেন শফিকুল। রিকশার প্যাডেলের ছন্দে তাঁর ঠোঁটে বিমূর্ত হয়ে বাঁশির করুণ সুর। বগুড়া শহরের পথচারীদের কাছে তিনি ‘বাঁশিওয়ালা রিকশাওয়ালা’ হিসেবে পরিচিত।এরই একফাঁকে আলাপ হয় শফিকুল ইসলামের সঙ্গে। কথায় কথায় তিনি জানান, দারিদ্র্যের কারণে পঞ্চম শ্রেণির গণ্ডি পেরোতে না পেরোতেই পড়ালেখা বন্ধ করতে হয়। এরপর জড়িয়ে পড়েন গ্রামের একটি যাত্রাপালার দলে। ‘কাজলরেখা’, ‘সাগরভাসা’, ‘গুনাইবিবি’, ‘রাখালবন্ধু’, ‘রূপবান’সহ নানা লোককাহিনিনির্ভর যাত্রাপালায় অভিনয় ও গান করেছেন। শুধু তা–ই নয়, গানের সুরে হারমোনিয়ামও বাজাতেন। এসবের ফাঁকে ফাঁকে টুকটাক রিকশা চালাতেন তখন।
পরিবারের বিষয়ে জানতে চাইলে শফিকুল বলেন, ২০০০ সালে বিয়ে করেন। স্ত্রী মোর্শেদা গৃহিণী। তাঁদের তিন মেয়ে—শরীফা, শম্পা ও শাকিলা। এক মেয়ের বিয়ে হয়েছে। স্ত্রী ও দুই মেয়ে গ্রামের বাড়িতে থাকেন। মাসে দুবার তিনি বাড়িতে যান। শফিকুলের দাবি, বগুড়া শহরে রিকশা চালিয়ে দিনে পান ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। থাকা-খাওয়া ও রিকশার জমা খরচ ছাড়া ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা থেকে যায়। সেই টাকায় চলে সংসার।
শুরুতে শহুরে জীবন শফিকুলের একদম ভালো লাগত না, মন পড়ে থাকত সেই গ্রামে। মন ভালো রাখতে রিকশা চালানোর সময় গুনগুন করে গাইতেন। এর মধ্যে শহরের রাস্তায় একদিন এক বাঁশিওয়ালার সঙ্গে তাঁর দেখা। তাঁর কাছ থেকে উপার্জনের ৮০ টাকা দিয়ে একটি বাঁশি কেনেন তিনি। এরপর রাতে গ্যারেজে শুয়ে সেই বাঁশিতে সুর তোলেন। এখন বাঁশি তাঁর নিত্যসঙ্গী।
বাঁশি বাজাতে বাজাতে রিকশা চালানো অভ্যাস হয়ে গেছে জানিয়ে শফিকুল বলেন, যানজটে আটকা পড়লে বাঁশিতে সুর তোলেন। যাত্রী না পেলে রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে একমনে বাঁশি বাজান। সুর শুনে যাত্রীরা ১০-২০ টাকা বেশি ভাড়া দেন কখনো কখনো।
গরিব হওয়ার কারণে মেয়ের পরিবারের লোকজন প্রেমে বাধা হয়। বড়লোকের ছলের লগে বিয়ে হয় মেয়েটার। সেই থাকে গান আর সুর সঙ্গী।শফিকুল ইসলামস্মৃতি হাতড়ে শফিকুল বলেন, একবার ঢাকায় রিকশা চালাতে গিয়েছিলেন। দৈনিক বাংলার মোড়ে রিকশা থামিয়ে একমনে বাঁশি বাজাচ্ছিলেন। হঠাৎ একটি ২০ তলা ভবন থেকে মধ্যবয়সী এক ব্যক্তির চিৎকার শুনতে পান। ওপরে তাকাতেই ৫০ টাকার একটা নোট নিচে ফেলে দেন ওই ব্যক্তি। প্রশংসা করেন বাঁশির সুরের।
আলাপচারিতা একসময় আনমনে হয়ে পড়েন শফিকুল। বলেন, ‘মন তো (মনে) না পাওয়ার কষ্ট আচে। ১৬ বছর বয়সে এলাকার এক মেয়ের প্রেমে পড়চিনু। ৬ মাস ভালোই চলিচ্চিল সেই প্রেম। গরিব হওয়ার কারণে মেয়ের পরিবারের লোকজন প্রেমে বাধা হয়। বড়লোকের ছলের লগে বিয়ে হয় মেয়েটার। সেই থাকে গান আর সুর সঙ্গী। আরও পরে সঙ্গী হয় বাঁশি। এহন বাঁশির সুরে বিরহের কষ্ট ভুলে থাকপার চেষ্টা করি।’