মেঘনায় মৎস্য অধিদপ্তরের অভিযানকারী দলের ওপর ফের জেলেদের হামলা
Published: 10th, April 2025 GMT
বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ ও হিজলাঘেষা মেঘনায় ৪৮ ঘণ্টার ব্যবধানে ফের মৎস্য অধিদপ্তরের অভিযানকারী দলের ওপর হামলা করেছে জেলেরা। বুধবার রাতে হামলার ঘটনায় কোস্টগার্ড ৪ রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আলম জানান, ৫টি অভয়াশ্রমে ইলিশ আহরণে গত ১ মার্চ থেকে দুইমাসের নিষেধাজ্ঞা চলছে। মেহেন্দিগঞ্জ ও হিজলা উপজেলাঘেষা মেঘনা ও এর শাখা নদীগুলো অভয়াশ্রমভুক্ত এলাকা। এসব নদীতে নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে অভিযানে গেলেই জেলেরা হামলা চালাচ্ছে।
তিনি জানান, বুধবার রাত ৯টার দিকে হিজলা উপজেলার মাঝেরচর এলাকায় কোস্টগার্ডসহ উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর অভিযানে যায়। হঠাৎ করে ৪০ থেকে ৫০ জনের একটি সংঘবদ্ধ দল ৭ থেকে ৮টি কাঠের নৌকা নিয়ে আভিযানিক দলের ওপর হামলা চালায়। তারা লাঠি, বাঁশ, ইট ও পাথর দিয়ে আক্রমণ করে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কোস্টগার্ড ৪ রাউন্ড ফাঁকা গুলি করেছে। পরবর্তীতে অভিযানে একটি অবৈধ পাইজাল এবং একটি ইঞ্জিনচালিত কাঠের ট্রলার জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন কোস্টগার্ড সদস্য মনজুরুল হক।
এর আগে গত মঙ্গলবার ভোর ৫টায় মেঘনার শাখা কালাবদর নদীতে হামলা হয়। জাটকা ধরার একটি ট্রলার ধাওয়া দিলে মাঝিদের হামলায় আহত হয়েছেন আনসার সদস্য সাইফুল।
গত ২০ মার্চ গজরিয়া নদীতে অভিযানে গিয়ে হামলার মুখে পড়েন ইলিশ সম্পদ ও উন্নয়ন ব্যবস্থাপনার প্রকল্প পরিচালক মোল্লা এমদাদুল্লাহ। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো.
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
কাজের আনন্দই জীবনের সার্থকতা
জন্মদিনের অনুষ্ঠান নয়, তবে অনানুষ্ঠানিক আয়োজনটি ছিল সে উপলক্ষেই। আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষাবিদ ও সুবক্তা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের জন্মদিন ছিল গত ২৫ জুলাই। তাঁর অগণিত অনুরাগীরা চেয়েছিলেন তাঁকে নিয়ে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে মিলিত হতে। উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের যে হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে গেছে, তারপর আর জন্মদিনের অনুষ্ঠান করতে কিছুতেই সম্মত হননি তিনি।
শুক্রবার সন্ধ্যায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ষষ্ঠতলায় কেন্দ্রের প্রাক্তনী ও তাঁর কিছু ঘনিষ্ঠজন আলাপচারিতার এক ঘরোয়া আয়োজন করেছিলেন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে নিয়ে। সেখানে তিনি বললেন, কাজের মধ্য দিয়ে জীবনে যে আনন্দ পেয়েছেন, সেটিই জীবনের সার্থকতা। এই আনন্দই তাঁকে অনুপ্রাণিত করে, শক্তি জোগায়।
এ আয়োজনে অংশগ্রহণকারীরা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেছেন। তিনি তাঁর চিরপরিচিত সরস অথচ বুদ্ধিদীপ্ত গভীর তাৎপর্যময় কথায় উত্তর দিয়েছেন। কবিতা, সাহিত্য, শিল্প থেকে শিক্ষা, ইতিহাস, দর্শন, ধর্ম, রাজনীতি, অর্থনীতি, সংগঠন, প্রেম–ভালোবাসা—সবকিছু উঠে আসে প্রশ্নোত্তরভিত্তিক কথোপকথনে। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল থেকে শুরু করে বিশ্বসাহিত্যের বহু কালজয়ী লেখকের রচনা থেকে প্রচুর উদ্ধৃতি দিয়েছেন তিনি। এক অন্তরঙ্গ প্রাণবন্ত আবহ বিরাজমান ছিল সন্ধ্যা থেকে অনেকটা রাত অবধি এই আয়োজনে।
আবৃত্তিশিল্পী জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় শুরুতেই আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের একটি কবিতা আবৃত্তি করে জানতে চান, তিনি কবিতার চর্চা করেননি কেন? জবাবে তিনি বলেন, কবি শামসুর রাহমান একবার তাঁকে বলেছিলেন, তাঁর মধ্যে কবিত্বের ঘাটতি আছে। তাঁর নিজেরও সে রকম মনে হয়েছে। তারপর সাহিত্য পত্রিকা কণ্ঠস্বর প্রকাশ ও অনেক রকম কাজ করতে গিয়ে আর কবিতা লেখা হয়ে ওঠেনি।
অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য প্রশ্ন করেন, এখন একটা কঠিন সময় যাচ্ছে। তরুণ প্রজন্মকে কীভাবে দেখেন, কী আশা করেন তাদের কাছে?
আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘তরুণেরা কী হবে, তা তরুণদের ওপরে নির্ভর করে না। সেটা নির্ভর করে আমরা তাদের কী বানাতে চাই, তার ওপর। দেখতে হবে তরুণদের গড়ার মতো আমাদের ক্ষমতা কতটা আছে। অর্থাৎ শিক্ষক কেমন হবে, তার ওপরে নির্ভর করে তাঁর ছাত্র কেমন হবে। সক্রেটিস শিক্ষক ছিলেন বলে ছাত্র প্লেটো হয়েছেন। প্লেটোর শিক্ষা পেয়ে ছাত্র অ্যারিস্টটল হতে পেরেছেন। বড়দের যদি বড়ত্ব না থাকে, তবে ছোটরা বড় হতে পারে না। দুর্ভাগ্য যে আমরা বড়রা তাদের সামনে আদর্শ দাঁড় করাতে পারিনি। ফলে এখন বড়দেরই ছোটদের পেছনে দাঁড়াতে হচ্ছে।’
ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম জানতে চান, তিনি এত বিচিত্র ধরনের এত বিপুল কাজ করেছেন। এই প্রাণশক্তি পান কেমন করে?
উত্তর দিতে গিয়ে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘শক্তি আসে আনন্দ থেকে। কাজ করতে পারাটাই আনন্দের। আর সব সময় আশাবাদী থাকি। আশা কখনো শেষ হয় না। আশা শেষ মানে আমি শেষ।’
আলাপচারিতায় আরও অংশ নেন দুদক চেয়ারম্যান এম এ মোমেন, ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ, চিকিৎসক আমজাদ হোসেন, অভিনয়শিল্পী খায়রুল আলম সবুজ, কথাশিল্পী আনিসুল হক, ছড়াকার আমিরুল ইসলাম, উপস্থাপক আবদুন নূর তুষার, অভিনয়শিল্পী আফসানা মিমি, মশিউর রহমান, আলী নকী প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রাক্তনী খাদিজা রহমান।