অফিস করছেন। হঠাৎ শুরু হলো বুকে ব্যথা। শরীরও ঘামছে। সহকর্মীরা দেরি না করে কাছের হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলেন। ইসিজি করে দেখা গেল, বড় ধরনের হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। ধরন দেখে চিকিৎসকেরা বুঝতে পারলেন, বড় ধমনিটি বন্ধ হয়ে গেছে।
এমন পরিস্থিতিতে সবচেয়ে কার্যকর ও আধুনিক চিকিৎসাপদ্ধতি হলো জরুরি ভিত্তিতে অ্যানজিওগ্রাম করে তৎক্ষণাৎ ব্লক অপসারণ করে স্টেন্ট, অর্থাৎ রিং বসিয়ে দেওয়া, যাতে হার্টের স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহ পুনঃস্থাপিত হতে পারে। একে বলা হয় প্রাইমারি পিসিআই।
কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রোগীকে হাসপাতালে নিতে অনেক দেরি হয়ে যায়; কখনো রোগীর আত্মীয়স্বজন সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করেন। মনে করেন, হার্ট অ্যাটাকের সঙ্গে সঙ্গে ওষুধ দিয়ে পরিস্থিতি স্থিতিশীল হলে পরে অ্যানজিওগ্রাম করা যাবে। কিন্তু এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা।
ইসিজির ধরন অনুযায়ী হার্ট অ্যাটাককে আমরা দুই ভাগে ভাগ করি। প্রথমটি এসটি ইএমআই (STEMI)। এ ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাক হলে হার্টের একটি বড় রক্তনালি জমাট রক্ত দিয়ে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে হার্টে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। রোগীর অবস্থা দ্রুত খারাপ হতে থাকে। দ্রুত বন্ধ হয়ে যাওয়া রক্তনালি খুলে না দিলে হৃৎপিণ্ডের মাংসপেশি স্থায়ীভাবে ধ্বংস হতে পারে। হার্ট ফেইলিউর, কার্ডিয়াক অ্যারেস্টসহ নানা মারাত্মক জটিলতা তৈরি হয়। দ্বিতীয়টি নন–এসটিইএমআই (NON STEMI)। এ ক্ষেত্রে হার্টের কোনো না কোনো রক্তনালি সম্পূর্ণ বা আংশিক বন্ধ হয়ে মাংসপেশির ক্ষতিসাধন করে। সাধারণত এক বা একাধিক ব্লক থাকে এবং প্রায়ই কিছু না কিছু ন্যাচারাল বাইপাস তৈরি হয়ে কিছু রক্ত সরবরাহ বজায় থাকে। এ ধরন কিছুটা কম ঝুঁকিপূর্ণ। চিকিৎসার ধরনও দুই রকম।
চিকিৎসা
১.
এ পদ্ধতির চিকিৎসায় হৃৎপিণ্ডের মাংসপেশি রক্ষা পায়। হার্টের পাম্পিং ক্ষমতা বজায় থাকে। পরবর্তী সময়ে হার্ট ফেইলিউর থেকে রোগীকে সুরক্ষা দেয়। তবে জরুরি অ্যানজিওপ্লাস্টির সুযোগ–সুবিধা সবখানে নেই। তাই কখনো কখনো প্রত্যন্ত এলাকায় বা যদি রোগীর অবস্থান থেকে হাসপাতালের দূরত্ব দুই ঘণ্টার বেশি হয়, তবে আগে ওষুধ দিয়ে ব্লক খুলে দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে টেনেকটিপলেজ সবচেয়ে কার্যকর ওষুধ। এর বিকল্প হলো স্ট্রেপটোকাইনেজ। তবে যা–ই ব্যবহার করা হোক না কেন, এগুলো পুশ করার ২ থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অ্যানজিওগ্রাম করতে হবে। এতে ব্লকের উপস্থিতি ধরা পড়লে তা অপসারণ করে রিং পরাতে হবে।
২. নন–এসটিইএমআই হার্ট অ্যাটাক তুলনামূলক কম ঝুঁকিপূর্ণ। তবে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে পুনরায় হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। এ ধরনের হার্ট অ্যাটাকের ক্ষেত্রেও যত দ্রুত সম্ভব অ্যানজিওগ্রাম করে ব্লকের অবস্থান, মাত্রা ও ব্যাপ্তি নির্ণয় করে পরবর্তী চিকিৎসা করতে হবে।
কেন সব সময় সম্ভব হয় না
চিকিৎসাব্যবস্থায় একটি প্রধান সংকট হলো আস্থার অভাব। উপযুক্ত পরামর্শ, রোগ ও চিকিৎসার অনুপুঙ্খ ব্যাখ্যা তুলে ধরা জরুরি। রোগীর পক্ষের লোকজনেরও দায় কম নয়। হার্ট অ্যাটাকের পর দ্রুত হাসপাতালে নিলে ও দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারলে রোগীকে বাঁচানো সম্ভব।
ডা. মাহবুবর রহমান, সিনিয়র কনসালট্যান্ট, ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট ও সিসিইউ ইনচার্জ, ল্যাবএইড কার্ডিয়াক হাসপাতাল, ঢাকা
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সায়েমের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে পাকিস্তানের জয়ে শুরু
জয়ের ধারাবাহিকতায় পাকিস্তান। বাংলাদেশের বিপক্ষে ঢাকায় শেষ টি-টোয়েন্টি জয়ের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথমটিতেও জয় পেয়েছে তারা।
অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে পাকিস্তানের জয়ের নায়ক সায়েম আইয়ুব। তার ৩৮ বলে ৫৭ রানের ইনিংসে ভর করে পাকিস্তান লাডারহিলে ৬ উইকেটে ১৭৮ রান করে। জবাব দিতে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৭ উইকেটে ১৬৪ রানের বেশি করতে পারেননি। দারুণ ব্যাটিংয়ের পর বোলিংয়ে সায়েম ২০ রানে ২ উইকেট নেন। ১৪ রানের জয়ে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে পাকিস্তান।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে পাকিস্তান শুরুতে শাহিবজাদা ফারহানের উইকেট হারায়। ১২ বলে ১৪ রান করে আউট হন ডানহাতি ব্যাটসম্যান। তিনে নেমে ফখর সায়েমকে সঙ্গ দেন। দুজন ৮১ রানের জুটি গড়েন। এ সময়ে ফখর ২ চার ও ১ ছক্কায় ২৪ বলে ২৮ রান করেন। বাকি রান আসে সায়েমের ব্যাটে। এ সময়ে তিনি তুলে নেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফিফটি। হোল্ডারের বলে এলবিডব্লিউ হলে থেমে যায় তার ইনিংস।
এরপর হাসান নওয়াজের ১৮ বলে ২৪, সালমান আগার ১০ বলে ১১, ফাহিম আশরাফের ৯ বলে ১৫ রানে পাকিস্তান লড়াকু পুঁজি পায়। শেষ দিকে ১ বল খেলার সুযোগ পান হারিস। ছক্কায় উড়িয়ে পাকিস্তানের শেষটা ভালো করেন তিনি।
বোলিংয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে সেরা ছিলেন শামার জোসেফ। ৩০ রানে নেন ৩ উইকেট।
লক্ষ্য তাড়ায় উদ্বোধনী জুটিতে ৭২ রান পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এরপর হঠ্যাৎ ছন্দপতন। ৫ রান পেতেই ৩ উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। ওই ধাক্কার পর তারা আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। জনসন চার্লস ও জুয়েল অ্যান্ড্রু ৩৫ রানের দুটি ইনিংস খেলেন। শেই হোপ (২), গুদাকেশ মোটি (০), শেফরন রাদারফোর্ড (১১) ও রস্টন চেজ (৫) দ্রুত আউট হন। শেষ দিকে পরাজয়ের ব্যবধান কমান হোল্ডার ও জোসেফ। হোল্ডার ১২ বলে ৪ ছক্কায় ৩০ রান করেন। ১২ বলে ১ চার ও ২ ছক্কায় ২১ রান করেন জোসেফ ।
পাকিস্তানের বোলারদের মধ্যে সেরা ছিলেন হাসান নওয়াজ। ২৩ রানে ৩ উইকেট নেন বাঁহাতি স্পিনার। সায়েমের ২ উইকেট বাদে ১টি করে উইকেট পেয়েছেন শাহীন শাহ আফ্রিদি ও সুফিয়ান মুকিম।
আগামীকাল একই মাঠে সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি অনুষ্ঠিত হবে।
ঢাকা/ইয়াসিন