শারমিন-ফারজানায় টাইগ্রেসদের চ্যালেঞ্জিং স্কোর
Published: 17th, April 2025 GMT
নারী বিশ্বকাপ বাছাইয়ের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ব্যাট হাতে চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ দাঁড় করেছে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল। বৃহস্পতিবার লাহোর সিটি ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন গ্রাউন্ডে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ২২৭ রান তোলে টাইগ্রেসরা।
দলের এই সংগ্রহে সবচেয়ে বড় অবদান শারমিন আখতার ও ফারজানা হক পিংকির। প্রথমদিকে দ্রুত উইকেট হারালেও এ দুই ব্যাটার গড়ে তোলেন দুর্দান্ত জুটি। উদ্বোধনী জুটিতে ১৬ রান ওঠার পর সুবহানা মোস্তারি ৬ রানে বিদায় নেন। তবে এরপর দৃঢ় ব্যাটিংয়ে ম্যাচের রঙ বদলে দেন শারমিন ও ফারজানা।
দ্বিতীয় উইকেটে এই দুই ব্যাটার গড়েন ১১৮ রানের জুটি, যা ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশের নারীদের যেকোনো উইকেটে সর্বোচ্চ রানের জুটি। ফিফটির দেখা পান দুজনই—শারমিন আউট হন ৬৭ রানে, ফারজানা ফেরেন ৪২ রানে। তবে এক বলের ব্যবধানে দুজনই আউট হয়ে গেলে ছন্দপতন ঘটে ইনিংসে।
১৩৫ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর দ্রুত উইকেট হারাতে থাকে বাংলাদেশ। দলীয় ১৪২ রানে মাত্র ৫ রান করে সাজঘরে ফেরেন অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতিও। এরপর মাত্র ৪৯ রানের ব্যবধানে আরও ৫ উইকেট হারিয়ে ১৮৩ রানে ৮ উইকেটের বিপর্যয়ে পড়ে টাইগ্রেসরা।
দলকে আবার কিছুটা এগিয়ে নিয়ে যান রিতু মনি (১৫), নাহিদা আক্তার (২৫) ও রাবেয়া খান (২৩)। শেষ দিকে অতিরিক্ত রান থেকেও আসে ২৪ রান। শেষ পর্যন্ত অলআউট না হলেও ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের রান দাঁড়ায় ২২৭। বল হাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে সবচেয়ে সফল ছিলেন আলিয়া অ্যালিন, ৪ উইকেট তুলে নেন তিনি। অ্যাফি ফ্লেচার ও হ্যালেই ম্যাথুস নেন ২টি করে উইকেট। একটি উইকেট শিকার করেন কিনেল্লে হেনরি।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: উইক ট হ র
এছাড়াও পড়ুন:
বাঁশির সুরে বিরহের কষ্ট ভুলতে চান রিকশাচালক শফিকুল
বাঁশির সঙ্গে সখ্য সেই শৈশবে। গ্রামে যাত্রাপালায় গান করতেন আর বাঁশির সুরে ছড়াতেন মুগ্ধতা। জীবন-জীবিকার তাগিদে একসময় বেছে নেন রিকশাচালকের পেশা। গ্রাম ছেড়ে থিতু হন ব্যস্ত শহরে। তবে বাঁশের বাঁশিকে হাতছাড়া করেননি শফিকুল ইসলাম (৪৫)।
যানজটে গতি থামতেই রিকশার হ্যান্ডেল ছেড়ে শফিকুল কোমর থেকে হাতে নেন প্রিয় বাঁশি। হর্নের কর্কশ ধ্বনি এড়িয়ে তখন বাতাসে ভাসে সুরের মূর্ছনা। বেখেয়ালি যাত্রী আর পথচারীরা হঠাৎ মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে থাকেন বাঁশিওয়ালার দিকে।
দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে বাঁশির সঙ্গে মিতালি গড়েছেন শফিকুল। সেই বাঁশির সুরেই যেন তাঁর জীবন বাঁধা। অভাব, দুর্দশা আর দারিদ্র্যও এ বন্ধন থেকে তাঁকে আলাদা করতে পারেনি। রিকশার প্যাডেলের ছন্দে তাঁর ঠোঁটে বিমূর্ত হয়ে বাঁশির করুণ সুর। বগুড়া শহরের পথচারীদের কাছে তিনি ‘বাঁশিওয়ালা রিকশাওয়ালা’ হিসেবে পরিচিত।
শফিকুলের পৈতৃক ভিটা বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার শালিখা গ্রামে। তবে জীবিকার তাগিদে থাকেন বগুড়া শহরের মালতীনগর এলাকার একটি গ্যারেজে। গত রোববার বিকেলে তাঁর দেখা মেলে বগুড়া শহরের কোর্ট হাউস স্ট্রিটের ব্যস্ত সড়কে। শেষ বিকেলে যানজটে যখন পথচারীরা বিরক্ত, তখন বাতাসে ভেসে আসে ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই’ ভাওয়াইয়া গানটির সুর।
দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে বাঁশির সঙ্গে মিতালি গড়েছেন শফিকুল। রিকশার প্যাডেলের ছন্দে তাঁর ঠোঁটে বিমূর্ত হয়ে বাঁশির করুণ সুর। বগুড়া শহরের পথচারীদের কাছে তিনি ‘বাঁশিওয়ালা রিকশাওয়ালা’ হিসেবে পরিচিত।এরই একফাঁকে আলাপ হয় শফিকুল ইসলামের সঙ্গে। কথায় কথায় তিনি জানান, দারিদ্র্যের কারণে পঞ্চম শ্রেণির গণ্ডি পেরোতে না পেরোতেই পড়ালেখা বন্ধ করতে হয়। এরপর জড়িয়ে পড়েন গ্রামের একটি যাত্রাপালার দলে। ‘কাজলরেখা’, ‘সাগরভাসা’, ‘গুনাইবিবি’, ‘রাখালবন্ধু’, ‘রূপবান’সহ নানা লোককাহিনিনির্ভর যাত্রাপালায় অভিনয় ও গান করেছেন। শুধু তা–ই নয়, গানের সুরে হারমোনিয়ামও বাজাতেন। এসবের ফাঁকে ফাঁকে টুকটাক রিকশা চালাতেন তখন।
পরিবারের বিষয়ে জানতে চাইলে শফিকুল বলেন, ২০০০ সালে বিয়ে করেন। স্ত্রী মোর্শেদা গৃহিণী। তাঁদের তিন মেয়ে—শরীফা, শম্পা ও শাকিলা। এক মেয়ের বিয়ে হয়েছে। স্ত্রী ও দুই মেয়ে গ্রামের বাড়িতে থাকেন। মাসে দুবার তিনি বাড়িতে যান। শফিকুলের দাবি, বগুড়া শহরে রিকশা চালিয়ে দিনে পান ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। থাকা-খাওয়া ও রিকশার জমা খরচ ছাড়া ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা থেকে যায়। সেই টাকায় চলে সংসার।
শুরুতে শহুরে জীবন শফিকুলের একদম ভালো লাগত না, মন পড়ে থাকত সেই গ্রামে। মন ভালো রাখতে রিকশা চালানোর সময় গুনগুন করে গাইতেন। এর মধ্যে শহরের রাস্তায় একদিন এক বাঁশিওয়ালার সঙ্গে তাঁর দেখা। তাঁর কাছ থেকে উপার্জনের ৮০ টাকা দিয়ে একটি বাঁশি কেনেন তিনি। এরপর রাতে গ্যারেজে শুয়ে সেই বাঁশিতে সুর তোলেন। এখন বাঁশি তাঁর নিত্যসঙ্গী।
বাঁশি বাজাতে বাজাতে রিকশা চালানো অভ্যাস হয়ে গেছে জানিয়ে শফিকুল বলেন, যানজটে আটকা পড়লে বাঁশিতে সুর তোলেন। যাত্রী না পেলে রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে একমনে বাঁশি বাজান। সুর শুনে যাত্রীরা ১০-২০ টাকা বেশি ভাড়া দেন কখনো কখনো।
গরিব হওয়ার কারণে মেয়ের পরিবারের লোকজন প্রেমে বাধা হয়। বড়লোকের ছলের লগে বিয়ে হয় মেয়েটার। সেই থাকে গান আর সুর সঙ্গী।শফিকুল ইসলামস্মৃতি হাতড়ে শফিকুল বলেন, একবার ঢাকায় রিকশা চালাতে গিয়েছিলেন। দৈনিক বাংলার মোড়ে রিকশা থামিয়ে একমনে বাঁশি বাজাচ্ছিলেন। হঠাৎ একটি ২০ তলা ভবন থেকে মধ্যবয়সী এক ব্যক্তির চিৎকার শুনতে পান। ওপরে তাকাতেই ৫০ টাকার একটা নোট নিচে ফেলে দেন ওই ব্যক্তি। প্রশংসা করেন বাঁশির সুরের।
আলাপচারিতা একসময় আনমনে হয়ে পড়েন শফিকুল। বলেন, ‘মন তো (মনে) না পাওয়ার কষ্ট আচে। ১৬ বছর বয়সে এলাকার এক মেয়ের প্রেমে পড়চিনু। ৬ মাস ভালোই চলিচ্চিল সেই প্রেম। গরিব হওয়ার কারণে মেয়ের পরিবারের লোকজন প্রেমে বাধা হয়। বড়লোকের ছলের লগে বিয়ে হয় মেয়েটার। সেই থাকে গান আর সুর সঙ্গী। আরও পরে সঙ্গী হয় বাঁশি। এহন বাঁশির সুরে বিরহের কষ্ট ভুলে থাকপার চেষ্টা করি।’