চীনের সঙ্গে পারস্পরিক আস্থা, সহযোগিতা ও বন্ধুত্বের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনার ইঙ্গিত দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।

দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের পঞ্চাশ বছর পূর্তির প্রেক্ষাপটে এই সাক্ষাৎকে দুদেশের সম্পর্কের ‘টার্নিং পয়েন্ট’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন ইউনূস। কূটনৈতিক সৌহার্দ্যের পাশাপাশি স্বাস্থ্য, শিক্ষা, যুব বিনিময় ও বাণিজ্যসহ বহুবিধ খাতে সহযোগিতা সম্প্রসারণের প্রতিশ্রুতি উঠে আসে আলোচনায়। একে শুধু রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের সম্পর্ক নয়, বরং জনগণের মধ্যে সম্প্রীতির সেতুবন্ধ গড়ে তোলার এক বাস্তব পদক্ষেপ হিসেবেও বিবেচনা করছেন উভয় পক্ষ।

সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় চীনের ইউনান প্রদেশের গভর্নর ওয়াং ইউবোর সঙ্গে এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে তিনি বলেন, এটা সবে শুরু। আমরা এত কাছাকাছি আছি, তবু এত দূরে। আসুন, আমরা এটি পরিবর্তন করি। আমরা আশা করি, আপনি শিগগিরই আবার আমাদের সঙ্গে দেখা করবেন। আমরা ভালো প্রতিবেশী হতে চাই, তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, খুব ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী হতে চাই।

প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় চীনের ইউনান প্রদেশের গভর্নর ওয়াং ইউবোর সঙ্গে এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে চীনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক গভীর করতে বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। এ সময় গভর্নরকে বাংলাদেশ সফরে স্বাগত জানান তিনি।

প্রধান উপদেষ্টা তার সাম্প্রতিক চীন সফরের কথা স্মরণ করে বলেন, এই সফর দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে এক টার্নিং পয়েন্ট। তিনি উষ্ণ আতিথেয়তার জন্য চীনের প্রশংসা করেন এবং দুদেশের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করার বিষয়ে উৎসাহমূলক বক্তব্যের জন্য রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

গভর্নর ইউবো উষ্ণ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরও জোরদার করার লক্ষ্যে আমার এই সফর। ইউনান দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের উন্মুক্ত কেন্দ্র হিসেবে কাজ করতে প্রস্তুত।

বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ও গভর্নর যুব বিনিময়, স্বাস্থ্যসেবা সহযোগিতা, শিক্ষা ও বাণিজ্যসহ বিভিন্ন সহযোগিতামূলক উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা করেন। গভর্নর ইউবো বৈঠকে জানান, প্রফেসর ইউনূসের প্রবর্তিত ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থা ইতোমধ্যে ইউনানের একটি চীনা ব্যাংক গ্রহণ করেছে।

দুই দেশের মধ্যে অভিন্ন সামাজিক লক্ষ্যের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, চীনের অনেক মানুষ এই পদ্ধতির মাধ্যমে উপকৃত হচ্ছে।

গভর্নর ইউবো বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ এবং ডিজিটাল ও ভাষা শিক্ষায় সহযোগিতা সম্প্রসারণের পাশাপাশি সামুদ্রিক খাদ্য, আম ও কৃষি পণ্যের মতো খাতে বাণিজ্য বৃদ্ধির প্রস্তাব দেন।

ওয়াং ইউবো বলেন, আমাদের উচিত, মানুষে-মানুষে সম্পর্কের দিকে নজর দেওয়া এবং আমাদের অঞ্চলগুলোকে আরও কাছাকাছি নিয়ে আসা।

প্রধান উপদেষ্টা গভর্নরের পরামর্শকে সমর্থন করে বলেন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা থেকে শুরু করে বাণিজ্য ও প্রশিক্ষণ– আপনি যা বলেছেন তার সবকিছুতেই আমরা একমত। আমরা এই বিষয়গুলো আগের চেয়ে দ্রুত বাস্তবায়ন করতে চাই। আমরা ঘনিষ্ঠ অংশীদার এবং সত্যিকারের বন্ধু হতে চাই।

বৈঠকে স্বাস্থ্যসেবার বিষয়টিকে মূল ফোকাস হিসেবে তুলে ধরা হয়। প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশি রোগীদের জন্য কুনমিংয়ে চারটি হাসপাতালের সুনির্দিষ্ট করাসহ চিকিৎসা পর্যটন চালুর ক্ষেত্রে চীনের সহায়তার জন্য প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, এই সহযোগিতা আমাদের অংশীদারিত্বের একটি নতুন অধ্যায়।

উভয় পক্ষই শিক্ষা বিনিময় বৃদ্ধির গুরুত্বের বিষয়েও একমত হয়েছে। বর্তমানে চীনে প্রায় ৪০০ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে এবং প্রফেসর ইউনূস এই সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, আমরা আমাদের তরুণদের চীনে পড়াশোনা করতে এবং ভাষা শিখতে উৎসাহিত করবো।

দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিতে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং সমৃদ্ধির নতুন সুযোগ উন্মোচনে চীনের সঙ্গে আরও নিবিড়ভাবে কাজ করতে বাংলাদেশের আগ্রহের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। সভায় আরও ছিলেন সিনিয়র সচিব ও এসডিজি সমন্বয়কারী লামিয়া মোরশেদ।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সহয গ ত র জন য আম দ র ইউন ন র ইউন ইউন স

এছাড়াও পড়ুন:

বৃষ্টিস্নাত রমনায় সবুজের উল্লাস

রমনা উদ্যানের গাছগুলো বৃষ্টিতে ভিজছে, ভিজছে মাটি ও মাটির ওপরের ঘাসগুলো। বর্ষায় রমনার রূপ হয় দেখার মতো। চারদিকে কেবল সবুজ আর সবুজ। বসন্তের মতো ফুল নেই তো কী হয়েছে? আছে শ্যামল রূপ, আছে অপার স্নিগ্ধতা। বুকভরে ধুলাহীন নিশ্বাস নেওয়ার অবকাশ, প্রকৃতির উদার আমন্ত্রণ।

‘পাগলা হাওয়ার বাদল-দিনে’ ঢাকার রমনা পার্কের গাছের পাতাগুলো এখন আরও সবুজ। টলটলে জলের নয়নাভিরাম ঝিলটা টইটম্বুর। ধুলাময়লাহীন পায়ে চলার পথ। আর গাছের পাতার ফাঁকে রয়েছে অজস্র ফুল। কোনোটা লাল, কোনোটা বেগুনি আবার কোনোটা সাদা। বৃষ্টির মধুর আশকারা পেয়ে রমনা পার্কে এখন সবুজের উল্লাস।

এই পার্কটিকে ঢাকার ফুসফুস বলা হয়। এর যথেষ্ট কারণ আছে অবশ্য। এ রকম প্রগাঢ় নিরেট সবুজ এ শহরে কমই আছে। রমনা তাই ঢাকার জনজীবনের স্পন্দন। এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।

সম্প্রতি ‘বৃষ্টি নেশাভরা’ এক বিকেলে অরুণোদয় ফটক দিয়ে রমনা পার্কে প্রবেশ করলাম। অনেকে শরীরচর্চায় ব্যস্ত। কেউ দল বেঁধে করছেন, কেউ একাকী। কোনো দল ব্যায়াম করে ভোরে, কেউ আবার বিকেলে বা সন্ধ্যায়। আবার অনেকে আছেন দুই বেলাই হাঁটাহাঁটি করেন। হাঁটা সেরে কেউ কেউ লেকের পাশে এসে দুদণ্ড জিরিয়ে নেন। লেকে চলছিল বোট।

বর্ষার ফুলের উৎসব

বর্ষা এলেই রমনা পার্ক যেন রঙের নতুন ভাষা শেখে। আমাদের ঋতুচক্র অনুযায়ী, বসন্ত ও গ্রীষ্মকালেই এ দেশে ফোটে অধিকাংশ ফুল। তবে বর্ষারও নিজস্ব কিছু ফুল আছে, আর গ্রীষ্মের কিছু ফুল টিকে থাকে বর্ষা পর্যন্ত। সেদিন রমনায় গিয়ে এমনই কিছু ফুল চোখে পড়ল—বৃষ্টিভেজা পাতার ফাঁকে তাদের রং যেন আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। মনে হলো, প্রকৃতির এই নিঃশব্দ উৎসবেও কত কথা লুকিয়ে থাকে!

রমনার গোলাপবিথি সেদিন দর্শনার্থীদের সবচেয়ে বেশি মনোযোগ কাড়ছিল। সারি সারি ঝোপে ফুটে আছে হরেক রঙের গোলাপ—লাল, সাদা, হলুদ, কমলা, গাঢ় গোলাপি। বর্ষার ভেজায় যেন আরও সতেজ, আরও তাজা হয়ে উঠেছে প্রতিটি পাপড়ি। নরম আলো আর বৃষ্টিজলে ভেজা ফুলগুলোর সৌন্দর্য মোহিত করেছে পথচলার মানুষকে। কেউ থেমে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন, কেউ ভিডিও করছেন—মুঠোফোনে বন্দী হচ্ছে বর্ষার রঙিন রমনা।

এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ