‘অরে মাইরা ফালাইবো গো, ও আল্লাহ! অরে বাঁচান।’ আতঙ্কিত কণ্ঠে চিৎকার করে এ কথা বলছিলেন রাজধানীর আজিমপুর থেকে গাজীপুর রুটে চলাচল করা বাসের এক নারী যাত্রী। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা কলেজ ও ঢাকা সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ চলাকালে সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় বাসটিতে ভাঙচুর চালানো হয়। সেই সঙ্গে বাসে থাকা একজনকে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী সন্দেহে মারধর করেন লাঠিসোটা হাতে থাকা তরুণরা। এতে আতঙ্কিত হয়ে অসুস্থ বোধ করতে থাকেন মধ্যবয়সী ওই নারী। পরে তাঁকে বাস থেকে নামিয়ে আনা হয়। এমন একটি ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

শুধু ওই নারীই নন; দুই কলেজের শিক্ষার্থীদের দফায় দফায় সংঘর্ষে আতঙ্ক ছড়ায় পুরো সায়েন্স ল্যাবরেটরি ও নিউমার্কেট এলাকায়। নিউমার্কেট-মিরপুর সড়ক যেন রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সড়কটিতে যান চলাচল কখনও বন্ধ, কখনও ব্যাহত হয়। পুলিশ লাঠিপেটা করে ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এতে অন্তত ২০ জন আহত হন। চার ঘণ্টার দুর্ভোগ শেষে বিকেল ৩টার পর স্বাভাবিক হয় যান চলাচল পরিস্থিতি। পরে সিটি কলেজ দু’দিন বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

এদিকে তুচ্ছ ঘটনার জেরে বারবার সংঘর্ষে জড়াচ্ছে রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকার তিনটি কলেজের শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে ঢাকা কলেজ ও ঢাকা সিটি কলেজের মধ্যে সংঘাত সবচেয়ে বেশি। তিন কলেজ গত আট মাসে অন্তত ১১ বার সংঘর্ষে জড়িয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে কলেজগুলোর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সংকট উত্তরণের পথ খোঁজার কথা জানিয়েছে পুলিশ।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ঢাকা কলেজের এক শিক্ষার্থীকে গত সোমবার মারধর করে অশালীন ছবি তোলার অভিযোগ ওঠে। এর জেরে গতকাল বেলা ১১টার দিকে জড়ো হন কলেজটির শিক্ষার্থীরা। এর পর তারা সিটি কলেজে গিয়ে হামলা চালান। এতে ওই কলেজের কয়েক শিক্ষার্থী আহত হন। পরে তারা সংঘবদ্ধ হয়ে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালান। উভয় পক্ষের হাতে লাঠিসোটা ছিল। পরস্পরের দিকে ইটপাটকেল ছুড়তেও দেখা গেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মাঠে নেমে দুই পক্ষকে ধাওয়া করে দু’দিকে সরিয়ে দেয় পুলিশ। আবারও তারা মারমুখী হয়ে উঠলে কাঁদানে গ্যাস ছোড়া হয়; করা হয় লাঠিপেটা। দুপুর ১টা নাগাদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে। দুপুর আড়াইটার দিকে আবারও সংঘর্ষে জড়ায় দুই পক্ষ। পুলিশ বাধা দিতে গেলে তাদের ওপরেও আক্রমণ করা হয়। এর মধ্যে সিটি কলেজের একটি নামফলক খুলে নেন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা। প্রধান ফটকেও ভাঙচুর চালানো হয়।

সংঘর্ষে আহত সাতজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। তাদের মধ্যে ঢাকা কলেজের ছাত্র রাজিন সালেহ সমকালকে জানান, তিনি ওই পথ দিয়ে যাওয়ার সময় হামলার শিকার হন।
সিটি কলেজের শিক্ষার্থী মো.

শামীম দাবি করেন, বাস থেকে নামার পরপরই তাঁকে ছুরিকাঘাত করা হয়। সোমবার ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীকে তাদের কেউ মারধর করেনি বলেও দাবি তাঁর। 
পুলিশ বলছে, সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, সোমবার ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীর ওপর হামলায় জড়িতরা কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ইউনিফর্ম পরে ছিলেন না। 
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, ভিআইপি পরিবহনের বাস থেকে নামিয়ে কয়েক শিক্ষার্থীকে পেটাচ্ছে পুলিশ। এক শিক্ষার্থীকে পরপর বেশ কয়েকটি চড় মারেন টি-শার্টের ওপর ‘পুলিশ’ লেখা ভেস্ট পরা এক কর্মকর্তা। আরেক শিক্ষার্থীকে লাঠি দিয়ে পেটাতে দেখা যায়। বাসে উঠে ঢাকা কলেজের এক শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনার পর পুলিশ এই অ্যাকশনে যায় বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়।  

নিউমার্কেট থানার ওসি মোহসিন উদ্দিন বলেন, এ ঘটনায় কোনো পক্ষ থানায় মামলা করেনি বা অভিযোগ দেয়নি। ঘটনাস্থলে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের ধানমন্ডি জোনের সহকারী কমিশনার শাহ মোস্তফা তারিকুজ্জামান জানান, তিন কলেজের বারবার সংঘর্ষে জড়ানো ঠেকাতে করণীয় নির্ধারণে প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্বশীলদের সঙ্গে আলোচনা করবে পুলিশ।

আট মাসে ১১ সংঘর্ষ
সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকার ঢাকা কলেজ, ঢাকা সিটি কলেজ ও আইডিয়াল কলেজ গত আট মাসে অন্তত ১১ বার সংঘাতে জড়িয়েছে বা সড়কে মারমুখী অবস্থান নিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। তুচ্ছ ঘটনার জেরে সূত্রপাত হওয়া এসব সংঘর্ষে শিক্ষার্থী, পুলিশসহ প্রায় ২০০ জন আহত হন। গতকালের ঘটনার আগে সর্বশেষ ১৫ এপ্রিল সংঘর্ষে জড়ায় ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজ। প্রথমে ফেসবুকে বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন দুই কলেজের শিক্ষার্থীরা। এর জেরে শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ। এর আগে ২০ ফেব্রুয়ারি এ দুই কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে অন্তত সাতজন আহত হন। ৯ ফেব্রুয়ারি সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে সিটি কলেজ ও আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। 

এর আগে ৫ ফেব্রুয়ারি সিটি কলেজ ও আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মারমুখী অবস্থান তৈরি হয়। প্রায় ঘণ্টাখানেক ছিল সে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি। ২৫ জানুয়ারি সংঘর্ষে জড়ান ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা। ১৯ জানুয়ারিও কোচিং সেন্টারের সিঁড়িতে ওঠার সময় ‘ধাক্কা লাগা’র ঘটনায় দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়। 
এ ছাড়া গত ১৯ নভেম্বর বাসে ওঠাকে কেন্দ্র করে দুই কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এর পর ঢাকা কলেজের বাস ভাঙচুরের কথা ছড়িয়ে পড়লে পরদিন ২০ নভেম্বর দুই পক্ষের সংঘর্ষে ৩৭ জন আহত হন। গত ১০ সেপ্টেম্বর ঢাকা কলেজ ও আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষে আহত হন ১৮ জন। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা আইডিয়াল কলেজের সাইনবোর্ড খুলে নিয়ে যান। এর জেরে ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকা কলেজের বাসে হামলা করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে।

বিচার চাইলেন সিটি কলেজের অধ্যক্ষ
গতকাল হামলা-ভাঙচুরের পর ঢাকা সিটি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এফ এম মোবারক হোসাইন বলেছেন, ছাত্র নামের কিছু সন্ত্রাসী সিটি কলেজে অতর্কিত হামলা করেছে। আমরা এর নিন্দা জানাই এবং দেশবাসীর কাছে বিচার চাই। রমজানের আগেও এই কলেজের স্থাপনায় হামলা হয়েছিল। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাউশি, ঢাকা জেলা প্রশাসনসহ দায়িত্বশীলদের প্রতি আমাদের আহ্বান, যারা হামলা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন। 
তিনি আরও বলেন, সিটি কলেজে হামলার সময় সেখানে প্রচুর সংখ্যক পুলিশ সদস্য দাঁড়িয়ে ছিলেন। তারা কার্যকর পদক্ষেপ নিলে এমনভাবে ভাঙচুর করা সম্ভব হতো না। সংঘাত এড়াতে আজ বুধবার ও আগামীকাল বৃহস্পতিবার সিটি কলেজ বন্ধ ঘোষণার কথা জানান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ।

 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ট কল জ ঢ ক কল জ দ ই কল জ র শ ক ষ র থ কল জ র শ ক ষ র থ র ব র স ঘর ষ পর স থ ত ল কল জ র র ওপর গতক ল ঘটন র ম রধর

এছাড়াও পড়ুন:

ইসরায়েলি হামলায় আইআরজিসির গোয়েন্দাপ্রধানসহ ৩ ইরানি জেনারেল নিহত

ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেছে যে, রোববার ইসরায়েলি বিমান হামলায় ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) গোয়েন্দা প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ কাজেমি এবং তার উপপ্রধান হাসান মোহাক্কিক নিহত হয়েছেন। খবর আল জাজিরার

এছাড়া হামলায় আরও একজন ঊর্ধ্বতন গোয়েন্দা কর্মকর্তা মোহসেন বাঘেরী নিহত হন বলে জানিয়েছে ইরানি রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থাগুলো।

এই হামলা ইসরায়েলের একাধিক লক্ষ্যবস্তুতে চালানো বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার অংশ, যা শুরু হয় ১৩ জুন ভোরে। ইসরায়েল জানায়, তারা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ও সামরিক অবকাঠামো ধ্বংসের লক্ষ্য নিয়ে অভিযান শুরু করেছে।

এর আগে হামলায় ইরানের একাধিক পারমাণবিক বিজ্ঞানী ও সামরিক নেতার বাড়িতে নির্ভুল আঘাত হানার খবর পাওয়া গেছে। ইসরায়েলি পক্ষ দাবি করেছে, এসব হামলা ‌'অস্তিত্বগত হুমকি নির্মুলের অংশ'।

এদিকে আধা সরকারি সংবাদ মাধ্যম তাসনিমের খবরে বলা হয়, রেভল্যুশনারি গার্ড কোরের গোয়েন্দা শাখার প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি এবং জেনারেল হাসান মোহাক্বিক ও মোহসেন বাঘেরি তেহরানে এক বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ