জেমকন গ্রুপের কর্ণধার ও যশোর-৩ আসনের সাবেক এমপি কাজী নাবিল আহমেদ, তাঁর পরিবারের সদস্য ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে দেশের বিভিন্ন স্থানে থাকা ৩৬২ দশমিক ৪৩ একর জমি, ঢাকায় থাকা সাতটি ফ্ল্যাট, জমিসহ কয়েকটি বাড়ি জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত। 

দুদকের করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিব গতকাল বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন। দুদকের অনুসন্ধান চলমান থাকায় এসব সম্পদ জব্দ ও অবরুদ্ধের আদেশ চেয়ে আবেদন করেন সংস্থাটির উপপরিচালক রেজাউল করিম। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিতে নাবিলের ভাই কাজী আনিস আহমেদের বিপুল অর্থের বিনিয়োগ অবরুদ্ধের আদেশ দেওয়া হয়েছে। 

এসব সম্পত্তির মধ্যে কাজী নাবিল আহমেদের নামে রয়েছে– পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার ৩৪ দশমিক ৬৩ একর জমি, একই জেলার বোদা উপজেলায় থাকা ২৫ দশমিক ৫৫ একর জমি, সদরে ১০ একর জমি; খুলনার ২৪৬ একর জমি, একই জেলার রূপসায় থাকা ২৬ দশমিক ৫১ একর জমি, রাজধানীর ধানমন্ডিতে ১১ শতক জমিসহ ছয়তলা ভবনের এক-তৃতীয়াংশ, মোহাম্মদপুরে থাকা দুটি প্লট ও গুলশানে একটি ফ্ল্যাট।

এ ছাড়া নাবিলের বাবা মৃত কাজী শাহেদ আহমেদের জব্দকৃত সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে ধানমন্ডিতে ১৬ দশমিক ৫০ শতাংশ জমিসহ ছয়তলা ভবন, যশোরে জমিসহ দোতলা বাড়ি। যশোরের কাজীপাড়ায় থাকা ১৫ দশমিক ৯৮ একর জমি ও কক্সবাজারের টেকনাফে থাকা ২ দশমিক ২৪ একর জমি। 

জব্দের আদেশ দেওয়া সম্পত্তির মধ্যে কাজী নাবিলের মা আমিনা আহমেদের নামে রয়েছে ধানমন্ডির তিনটি ফ্ল্যাট ও কক্সবাজারের সেন্টমার্টিনে থাকা ১ দশমিক ৪৪ একর জমি। 

এ ছাড়া জব্দের আদেশ দেওয়া সম্পত্তির মধ্যে কাজী আনিসের নামে রয়েছে ধানমন্ডিতে ১১ শতক জমিসহ ছয়তলা বাড়ির এক-তৃতীয়াংশ ও গুলশানে একটি ফ্ল্যাট। অপর ভাই কাজী ইনামের নামে ধানমন্ডিতে ১১ শতক জমির ওপর থাকা ছয়তলা ভবনের এক-তৃতীয়াংশ, ধানমন্ডি ও গুলশানে থাকা আরও দুটি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দেওয়া হয়েছে। 

বিদেশি কোম্পানির শেয়ার জব্দ
যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগকৃত কাজী আনিস আহমেদের ৬১ লাখ ৩৯ হাজার ৩১ মার্কিন ডলার মূল্যের শেয়ার (৭৫ কোটি টাকা) অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছেন একই আদালত। 
দুদকের আবেদন সূত্রে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিষ্ঠানে কাজী আনিস এসব টাকা বিনিয়োগ করেন। তিনি অর্থ বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে কোনো অনুমতি নেননি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ধ নমন ড ত আহম দ র দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

আবারও জমজমাট চাঁদপুর লঞ্চঘাট, দিনে পারাপার অর্ধ লক্ষ যাত্রী

ঝিমিয়ে পড়া চাঁদপুর লঞ্চঘাট নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আবারও জমজমাট হয়ে উঠেছে। সুসজ্জিত ঘাট, চমৎকার আলোকসজ্জা, সিসি ক্যামেরা ও বিভিন্ন বাহিনীর তৎপরতায় দিনে প্রায় অর্ধ লক্ষ মানুষ এখান দিয়ে যাতায়াত করছে।

শনিবার (১৪ জুন) দিবাগত রাতে ঘাট জমজমাট হওয়ার কারণ জানিয়েছেন নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগ চাঁদপুরের উপপরিচালক (ট্রাফিক) বাবু লাল বৈদ্য।

তিনি জানান, ঈদের ছুটি কাটিয়ে কর্মস্থলে মানুষ ফেরার জন্য লঞ্চকে গুরুত্ব দেওয়ায় ঘাট জমজমাট হয়ে উঠেছে। বর্তমানে চাঁদপুর ঢাকা নৌরুটসহ অন্যান্য স্থানে বড় বড় ৩০টি লঞ্চ যাত্রী পারাপারে নিয়োজিত রয়েছে। এছাড়াও চাঁদপুর নারায়ণগঞ্জ নৌরুটে ছোট ১৬টি লঞ্চ যাত্রী পারাপার করছে। 

তিনি আরো জানান, বড় লঞ্চগুলো ভোর ৬টা হতে শুরু করে রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত চলাচল করছে। তবে দূর দূরান্তের কিছু লঞ্চ আরো গভীর রাতেও ঘাটে ভিড়ছে। 

তিনি বলেন, “বড় ছোট সব লঞ্চেই ফায়ার স্টিংগুইশার, বয়াসহ নিরাপত্তা সারঞ্জামাদি প্রতিনিয়ত আমরা তদারকি করছি। তাছাড়া ভাড়া ও যাত্রী অতিরিক্ত কিনা সেটাও দেখভাল করতে নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের অন্তত ১০ জন কাজ করছি।”

নীরব নামে এক যাত্রী জানান, চাঁদপুর থেকে ঢাকায় লঞ্চে করে মাত্র ১৮০ টাকায় যাওয়া যাচ্ছে। ঘাটে বেশ কিছু হোটেল আছে, এতে যাত্রীদের সুবিধা হচ্ছে। ঘাটের সামনে অটো সিএনজি চালকদের কোনো বাড়াবাড়ি নেই। তবে লঞ্চগুলো ঢাকা থেকে চাঁদপুর আসা-যাওয়ায় ৩ ঘণ্টা ৪৫ মিনিটের মতো সময় লাগাচ্ছে যা বিরক্তিকর। এটা আরও কমিয়ে আনতে পারলে নদীতে নিরাপদ এই লঞ্চযাত্রায় যাত্রীরা আরও স্বস্তি পেতো।

এ বিষয়ে চাঁদপুরের বন্দর ও পরিবহন কর্মকর্তা মুহাম্মদ বাছির আলি খান বলেন, “ঈদ পরবর্তী সময়ে কর্মব্যস্ত মানুষের কল্যাণে যাত্রী সাধারণের চলাচল নির্বিঘ্ন ও নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছাতে বিআইডব্লিউটিএ’র সুনাম ধরে রাখতে নিয়মিত তদারকি অব্যাহত রেখেছি। এই ঘাট দিয়ে দিনে প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষ যাতায়াত করছে। সময় কতক্ষণ লাগে সেটা বড় কথা নয়, বরং যারা নিরাপদ নৌ ভ্রমণপ্রেমী তারা নিরিবিলি যাত্রা হিসেবেই নৌপথ ব্যবহার করছে।”

চাঁদপুরের পুলিশ সুপার রকিব উদ্দিন বলেন, “ঈদ এলেই আমরা এখানে পুলিশের পক্ষ থেকে জরুরি তদারকির জন্য কন্ট্রোল রুম চালু রাখি। এতে নৌপথে অপরাধ প্রবণতা অনেকটা কমে এসেছে। যার কারণে এখানকার লঞ্চঘাটে যাত্রীদের আসা যাওয়ার আনাগোনা বেড়েছে। তাছাড়া দক্ষিণাঞ্চলের এই লঞ্চঘাট যাত্রীসেবায় অন্যন্য নজির হিসেবে সবার কাছে পরিচিতি রয়েছে। যা অব্যাহত রাখতে পুলিশ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য ইউনিটকে সাথে নিয়ে একযোগে কাজ করে যাচ্ছে।”

চাঁদপুর নৌ অঞ্চলের পুলিশ সুপার ছৈয়দ মোশফিকুর রহমান বলেন, “নৌপথে ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, অজ্ঞান পার্টি ও মলম পার্টির অপতৎপরতা রোধে নিয়মিত টহল চলছে। বড় অঙ্কের নগদ অর্থ বা মূল্যবান জিনিস বহনের ক্ষেত্রে নৌ পুলিশ সহায়তা দিচ্ছে। যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে টার্মিনালে প্রবেশের সময় তল্লাশি জোরদার, লঞ্চে ভ্রমণকারী কেবিন যাত্রীদের পূর্ণ তথ্য রেজিস্টারে সংরক্ষণ, যাত্রী টিকিটে নাম-ঠিকানা ও জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য রাখা, সিসিটিভি ফুটেজ সংরক্ষণ এবং লঞ্চ ছাড়ার আগে যাত্রীদের স্থিরচিত্র ও ভিডিও ধারণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া লঞ্চের স্টাফদের ওপরও নজরদারি বাড়ানোয় এখন এই লঞ্চঘাট জমজমাট।”

ঢাকা/অমরেশ/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ