অমীমাংসিত ইস্যুর সমাধান করতে গিয়ে নতুন সমস্যা
Published: 26th, April 2025 GMT
শেয়ারবাজারে মার্জিন অ্যাকাউন্টে মূলধনি লোকসানি হিসাবগুলোর কী হবে এবং বিনিয়োগকারীদের জমা অর্থের বিপরীতে সুদ আয় কে পাবে– তার সমাধানে উদ্যোগী হয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। তবে দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত ইস্যুর সমাধান করতে গিয়ে বিএসইসি নতুন সমস্যা তৈরি করেছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্রোকারদের সংগঠন ডিবিএসহ সংশ্লিষ্টরা এমনটি জানিয়েছেন।
তারা বলছেন, বিনিয়োগকারীদের জমা করা অর্থের সমন্বিত ব্যাংক হিসাবের (সিসিএ) সুদ বাবদ আয় কে পাবে, সে বিষয়ে সমাধান দিতে গিয়ে বিএসইসি নতুন সংকট ও বিতর্ক তৈরি করছে। গত কমিশন এ আয়ের শতভাগ বিনিয়োগকারীদের ফেরত দিতে বলেছিল, যার বাস্তবতা বা বাস্তবায়ন উভয়ই ছিল অসম্ভব। বর্তমান কমিশন বলছে, সিসিএ থেকে সুদ আয়ের ২৫ শতাংশ বিনিয়োগকারী সুরক্ষা তহবিলে জমা দিয়ে বাকি ৭৫ শতাংশ বিনিয়োগ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণে ব্যয় করতে হবে। আবার এ অর্থ আয় খাতে নেওয়া যাবে না।
কমিশনের এ আদেশ ‘ত্রুটিপূর্ণ’ বলে মনে করেন প্রাইম ব্যাংক সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান। তিনি সমকালকে বলেন, প্রথমত সুদ আয়কে ‘অন্যান্য আয়’ ধরতে হবে, যা আন্তর্জাতিক আর্থিক রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ড। তাছাড়া সুদ আয় অ্যাকাউন্টে জমার আগেই উৎসে ১০ শতাংশ কর কর্তন করে এনবিআর। আয়ের ক্ষেত্রে বিএসইসির এমন আদেশ সাংঘর্ষিক এবং বাস্তবায়নযোগ্য নয়।
ডিএসইর পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, বিশ্বের সব দেশে সিসিএ অ্যাকাউন্টের সুদ আয় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের। বিনিয়োগকারীরা কখনও তা দাবি করেননি। গত নভেম্বরের বৈঠকে বর্তমান কমিশন বিষয়টি মেনে নিয়েছিল। এতদিন পর কেন ভিন্ন নিয়ম করতে যাচ্ছে, তা বোধগম্য নয়। এ বিষয়ে কমিশনের কাছে বাস্তবতা পুনরায় তুলে ধরা হবে।
মার্জিন অ্যাকাউন্টে মূলধনি লোকসান (নেগেটিভ ইক্যুয়িটি) ২০৩০ সালের মধ্যে শূন্যতে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নিয়ে বিএসইসির কাছে প্রস্তাব দেওয়া হয়। এ প্রস্তাব এক বছরের জন্য ঝুলিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ ব্রোকারদের। ডিবিএ সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, সবা সঙ্গে আলোচনা করে ২০৩০ সালের মধ্যে ‘নেগেটিভ ইক্যুয়িটি’ শূন্যে নামাতে এ বছর থেকে কাজ শুরুর প্রস্তাব দিয়েছিলেন তারা। প্রস্তাবটি গ্রহণ না করে কমিশন লোকসানের বিপরীতে প্রভিশনিংয়ে এক বছর ছাড় দিয়েছে। আর ‘কেস-টু-কেস’ সিদ্ধান্ত নিতে জুনের মধ্যে আলাদাভাবে পরিকল্পনা চেয়েছে। সমস্যা হলো- ‘নেগেটিভ ইক্যুয়িটি’ সমস্যায় আটকে আছে প্রায় দেড়শ ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংক। এত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পৃথকভাবে আলোচনা করে কমিশন চলতি বছরের মধ্যে পৃথক পৃথক সিদ্ধান্ত নিতে পারবে কিনা সন্দেহ রয়েছে। পারলেও তার বাস্তবায়ন এ বছর থেকে শুরু হবে কিনা, প্রশ্ন তাঁর।
শেয়ারবাজারে দীর্ঘ মন্দাবস্থার জন্য আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ ও দীর্ঘ অমীমাংসিত ইস্যুর দ্রুত সমাধান প্রয়োজন মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা। প্রাইম ব্যাংক সিকিউরিটিজের এমডির মতে, আইপিও খরা কাটানো, মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের মেয়াদ ১০ বছরের বেশি থাকবে কিনা, বেক্সিমকো এবং ইসলামী ব্যাংকের ফ্লোর প্রাইস কতদিন থাকবে, বিএফআইইউ যেসব বিও অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করেছে, তার কী হবে– এসব বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত আসা উচিত।
ডিএসইর পরিচালক মিনহাজ মান্নান আরও বলেন, শেয়ারবাজার অত্যন্ত সংবেদনশীল বাজার। এখানে একটি ‘ভুল’ সিদ্ধান্ত যেমন বাজারকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, তেমনি বিলম্বিত সিদ্ধান্তের ফলও ভালো হয় না। কমিশনের উচিত, সংবেদনশীলতাকে আমলে নিয়ে কাজ করা।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: শ য় রব জ র প রস ত ব ব এসইস স দ আয় সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
বাজেটে লভ্যাংশ আয় ও বিনিয়োগে কর ছাড় থাকবে
শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ এবং তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে বিনিয়োগে বিশেষ কর ছাড় দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা) ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেকের সঙ্গে বৈঠকের পর মঙ্গলবার রাতে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে সংস্থাটি।
‘বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে বিএসইসির তাৎক্ষণিক কর্মপরিকল্পনা’ শিরোনামে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে আস্থা বাড়াতে ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সূচক পতনের কারণ খুঁজতে যেসব শেয়ারদরের ওঠা-নাম সূচকে বেশি প্রভাব ফেলছে, সেগুলোর লেনদেনে নজদারি বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে।
এছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত, বহুজাতিক, বস্ত্র ও ওষুধ খাতের লাভজনক কোম্পানিগুলোর শেয়ারবাজারে আনার উদ্যোগ নেওয়া হবে জানিয়েছে বিএসইসি। পাশাপাশি অতালিকাভুক্ত কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে আসতে উৎসাহ দিতে কর ছাড়, ব্যাংক থেকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নে সীমিত করা এবং শেয়ারবাজারকে বিকল্প অর্থায়নের উৎস হিসেবে গড়ে তুলতে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এর বাইরে শেয়ারবাজারের উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট সব নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে বিএসইসির সমন্বয় বাড়ানো, আসন্ন বাজেটে লভ্যাংশ ও বিনিয়োগের ওপর কর ছাড় সুবিধা দেওয়ার কথাও জানিয়েছে বিএসইসি।
শেয়ারবাজার বিষয়ে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াতে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতে টকশো এবং বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা, ফেসবুক ও ইউটিউব ব্যবহার করে বার্তা দেওয়া হবে।
কমিশন আশা করছে, এসব পদক্ষেপ এবং কর্মপরিকল্পনার দ্রুত বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আসবে এবং বাজারে স্থিতিশীল হবে।
এদিন রাজধানীর আগারগাঁওস্থ বিএসইসি কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী, বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক, কমিশনার মো. মোহসিন চৌধুরী, মো. আলী আকবর ও ফারজানা লালারুখ, যুগ্ম সচিব ড. দেলোয়ার হোসেন, শেয়ারবাজার সংস্কারে গঠিত টাস্ক ফোর্সের প্রতিনিধি এবং বিএসইসির নির্বাহী পরিচালকদের এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
চলতি এপ্রিলে লাগাতার দরপতনের পরও বিএসইসির নিষ্ক্রিয়তাকে দায়ী করে কিছু বিনিয়োগকারী রাজধানীর মতিঝিলে বিক্ষোভ করছেন। তারা সংস্থার চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ এ পদে ‘অযোগ্য’ এমন অভিযোগ করে তার পদত্যাগ দাবি করেন।
সরকারি একটি সংস্থার চাপে বিএসইসির চেয়ারম্যান পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন- এমন গুজবে রোববার পতনের ধারা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল শেয়ারবাজার। পতন করছেন না- এমন খবরে ফের দরপতন শুরু হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ও এফআইডির সচিব বিএসইসির কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন।
বিএসইসি সূত্র জানিয়েছে, মঙ্গলবার বিকাল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বৈঠক হয়। বৈঠকের পরই বিএসইসির পক্ষ থেকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে কিছু জরুরি কর্মপরিকল্পনা জানানো হয়।