শেয়ারবাজারে মার্জিন অ্যাকাউন্টে মূলধনি লোকসানি হিসাবগুলোর কী হবে এবং বিনিয়োগকারীদের জমা অর্থের বিপরীতে সুদ আয় কে পাবে– তার সমাধানে উদ্যোগী হয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। তবে দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত ইস্যুর সমাধান করতে গিয়ে বিএসইসি নতুন সমস্যা তৈরি করেছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্রোকারদের সংগঠন ডিবিএসহ সংশ্লিষ্টরা এমনটি জানিয়েছেন। 
তারা বলছেন, বিনিয়োগকারীদের জমা করা অর্থের সমন্বিত ব্যাংক হিসাবের (সিসিএ) সুদ বাবদ আয় কে পাবে, সে বিষয়ে সমাধান দিতে গিয়ে বিএসইসি নতুন সংকট ও বিতর্ক তৈরি করছে। গত কমিশন এ আয়ের শতভাগ বিনিয়োগকারীদের ফেরত দিতে বলেছিল, যার বাস্তবতা বা বাস্তবায়ন উভয়ই ছিল অসম্ভব। বর্তমান কমিশন বলছে, সিসিএ থেকে সুদ আয়ের ২৫ শতাংশ বিনিয়োগকারী সুরক্ষা তহবিলে জমা দিয়ে বাকি ৭৫ শতাংশ বিনিয়োগ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণে ব্যয় করতে হবে। আবার এ অর্থ আয় খাতে নেওয়া যাবে না।

কমিশনের এ আদেশ ‘ত্রুটিপূর্ণ’ বলে মনে করেন প্রাইম ব্যাংক সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান। তিনি সমকালকে বলেন, প্রথমত সুদ আয়কে ‘অন্যান্য আয়’ ধরতে হবে, যা আন্তর্জাতিক আর্থিক রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ড। তাছাড়া সুদ আয় অ্যাকাউন্টে জমার আগেই উৎসে ১০ শতাংশ কর কর্তন করে এনবিআর। আয়ের ক্ষেত্রে বিএসইসির এমন আদেশ সাংঘর্ষিক এবং বাস্তবায়নযোগ্য নয়।

ডিএসইর পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, বিশ্বের সব দেশে সিসিএ অ্যাকাউন্টের সুদ আয় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের। বিনিয়োগকারীরা কখনও তা দাবি করেননি। গত নভেম্বরের বৈঠকে বর্তমান কমিশন বিষয়টি মেনে নিয়েছিল। এতদিন পর কেন ভিন্ন নিয়ম করতে যাচ্ছে, তা বোধগম্য নয়। এ বিষয়ে কমিশনের কাছে বাস্তবতা পুনরায় তুলে ধরা হবে। 
মার্জিন অ্যাকাউন্টে মূলধনি লোকসান (নেগেটিভ ইক্যুয়িটি) ২০৩০ সালের মধ্যে শূন্যতে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নিয়ে বিএসইসির কাছে প্রস্তাব দেওয়া হয়। এ প্রস্তাব এক বছরের জন্য ঝুলিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ ব্রোকারদের। ডিবিএ সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, সবা সঙ্গে আলোচনা করে ২০৩০ সালের মধ্যে ‘নেগেটিভ ইক্যুয়িটি’ শূন্যে নামাতে এ বছর থেকে কাজ শুরুর প্রস্তাব দিয়েছিলেন তারা। প্রস্তাবটি গ্রহণ না করে কমিশন লোকসানের বিপরীতে প্রভিশনিংয়ে এক বছর ছাড় দিয়েছে। আর ‘কেস-টু-কেস’ সিদ্ধান্ত নিতে জুনের মধ্যে আলাদাভাবে পরিকল্পনা চেয়েছে। সমস্যা হলো- ‘নেগেটিভ ইক্যুয়িটি’ সমস্যায় আটকে আছে প্রায় দেড়শ ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংক। এত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পৃথকভাবে আলোচনা করে কমিশন চলতি বছরের মধ্যে পৃথক পৃথক সিদ্ধান্ত নিতে পারবে কিনা সন্দেহ রয়েছে। পারলেও তার বাস্তবায়ন এ বছর থেকে শুরু হবে কিনা, প্রশ্ন তাঁর।

শেয়ারবাজারে দীর্ঘ মন্দাবস্থার জন্য আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ ও দীর্ঘ অমীমাংসিত ইস্যুর দ্রুত সমাধান প্রয়োজন মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা। প্রাইম ব্যাংক সিকিউরিটিজের এমডির মতে, আইপিও খরা কাটানো, মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের মেয়াদ ১০ বছরের বেশি থাকবে কিনা, বেক্সিমকো এবং ইসলামী ব্যাংকের ফ্লোর প্রাইস কতদিন থাকবে, বিএফআইইউ যেসব বিও অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করেছে, তার কী হবে– এসব বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত আসা উচিত। 
ডিএসইর পরিচালক মিনহাজ মান্নান আরও বলেন, শেয়ারবাজার অত্যন্ত সংবেদনশীল বাজার। এখানে একটি ‘ভুল’ সিদ্ধান্ত যেমন বাজারকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, তেমনি বিলম্বিত সিদ্ধান্তের ফলও ভালো হয় না। কমিশনের উচিত, সংবেদনশীলতাকে আমলে নিয়ে কাজ করা। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: শ য় রব জ র প রস ত ব ব এসইস স দ আয় সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

পুঁজিবাজারে মূলধন কমেছে ১১ হাজার ১০ কোটি টাকা

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে (২৬ থেকে ৩০ অক্টোবর) সূচকের পতনের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। এ সময়ে ডিএসই ও সিএসইতে টাকার পরিমাণে লেনদেন কিছুটা বেড়েছে। তবে বিদায়ী সপ্তাহে উভয় পুঁজিবাজারে বাজার মূলধন বেশ কমেছে  ১১ হাজার ১০ কোটি ২০ লাখ টাকা।

শনিবার (১ নভেম্বর) ডিএসইর সাপ্তাহিক বাজার পর্যালোচনা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

তথ্য মতে, সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২৭.৬৭ পয়েন্ট বা ০.৫৪ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ১২২ পয়েন্টে। অপর সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক ১০.৩৪ পয়েন্ট বা ০.৫২ শতাংশ কমে ১ হাজার ৯৮৭ পয়েন্টে, ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৫.৯২ পয়েন্ট বা ০.৫৪ শতাংশ কমে ১ হাজার ৮২ পয়েন্টে এবং ডিএসএমইএক্স সূচক (এসএমই ইনডেক্স) ৩৩.৭২ পয়েন্ট বা ৩.৩৪ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৯৭৬ পয়েন্টে।

বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৯৯ হাজার ৫৪৭ কোটি ১১ লাখ টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহের আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৭ লাখ ৫ হাজার ৩৪৩ কোটি ৩ লাখ কোটি টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন কমেছে ৫ হাজার ৭৯৫ কোটি ৯১ লাখ টাকা।

বিদায়ী সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ২৮৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহের আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ২ হাজার ১৩৮ কোটি ৭১ লাখ টাকার। সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে লেনদেন বেড়েছে ১৪৮ কোটি ১৫ লাখ টাকা।

বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে মোট ৩৯২টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ১৭৭টির, দর কমেছে ১৭৯টির ও দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৬টির। তবে লেনদেন হয়নি ২১টির।

অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১২৭.৩৩ পয়েন্ট বা ০.৮৮ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ২৮৬ পয়েন্টে। সিএসইর অপর সূচকগুলোর মধ্যে সিএসই-৩০ সূচক ০.৫৯ শতাংশ কমে ১২ হাজার ৬৫১ পয়েন্টে, সিএসসিএক্স সূচক ০.৭৭ শতাংশ কমে ৮ হাজার ৮১৩ পয়েন্টে, সিএসআই সূচক ০.৯৮ শতাংশ কমে ৮৯৮ পয়েন্টে এবং এসইএসএমইএক্স (এসএমই ইনডেক্স) ২.৮০ শতাংশ কমে ১ হাজার ৯৪৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৯৮ হাজার ৭০৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহের আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে সিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৭ লাখ ৩ হাজার ৯১৭ কোটি ৯২ লাখ টাকা। টাকায়। সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন কমেছে ৫ হাজার ২১৪ কোটি ২৯ লাখ টাকা।

বিদায়ী সপ্তাহে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন হয়েছে ৯৮ কোটি ২৪ লাখ টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহের আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৬৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে সিএসইতে লেনদেন বেড়েছে ৩০ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।

বিদায়ী সপ্তাহে সিএসইতে মোট ৩০৬টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নিয়েছে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ১১৫টির, দর কমেছে ১৭০টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২১টির শেয়ার ও ইউনিট দর।

ঢাকা/এনটি/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ২০৩০ সালের মধ্যে চাঁদে নভোচারী পাঠাবে চীন
  • ডিএসইতে সাপ্তাহিক দাম বাড়ার শীর্ষে আনোয়ার গ্যালভানাইজিং
  • ডিএসইতে সাপ্তাহিক দাম কমার শীর্ষে প্রিমিয়ার লিজিং
  • ডিএসইতে সাপ্তাহিক লেনদেনের শীর্ষে সিভিও ওরিয়ন ইনফিউশন
  • ডিএসইর পিই রেশিও কমেছে ১ শতাংশ
  • পুঁজিবাজারে মূলধন কমেছে ১১ হাজার ১০ কোটি টাকা