পল্লবীতে ডিবির অভিযানে অস্ত্রসহ দুজন গ্রেপ্তার
Published: 27th, April 2025 GMT
রাজধানীর পল্লবী এলাকা থেকে বিদেশি পিস্তল, গুলিসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গতকাল শনিবার রাতে পল্লবীর নিউটাউন বাজার মৎস্য আড়ত থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন হুদা মামুন (৪০) ও অরিন (৩৫)।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী দুবাইপ্রবাসী মশিউর রহমান মশী গ্রুপের অন্যতম সদস্য হুদা মামুন, অরিন ও সোহেলের নেতৃত্বে একটি দল দীর্ঘদিন ধরে পল্লবী এলাকায় চাঁদাবাজিসহ মাদক কারবার করে আসছিল। ১১ থেকে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত মিল্লাত বিহারি ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তার, মাদক কারবারের নিয়ন্ত্রণ ও চাঁদাবাজির ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরপর তিন দিন গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। এতে মিল্লাত বিহারি ক্যাম্পসহ আশপাশের বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।
গুলিবর্ষণের ঘটনায় ডিবি-মিরপুর বিভাগ থানা–পুলিশের পাশাপাশি ছায়া তদন্ত শুরু করে। গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় গতকাল শনিবার গভীর রাতে পল্লবী নিউটাউন বাজার মৎস্য আড়তে অভিযান চালিয়ে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় গুলিবর্ষণের ঘটনায় ব্যবহৃত একটি বিদেশি রিভলবার ও দুটি গুলি উদ্ধার করা হয়।
ডিবি সূত্র জানিয়েছে, অরিনের বিরুদ্ধে ডিএমপির বিভিন্ন থানায় ছিনতাই, ডাকাতির প্রস্তুতি, চুরি ও মাদকের আটটি মামলা রয়েছে। আর হুদা মামুনের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইন ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একাধিক মামলা চলমান। এই গ্রুপের আরেক সদস্য সোহেলকে গত শুক্রবার গ্রেপ্তার করা হয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর র ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
ভারত-পাকিস্তান কি দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের পথে?
গত সপ্তাহে কাশ্মীরের পেহেলগামের একটি মনোরম তৃণভূমিতে ২৬ জনের প্রাণ কেড়ে নেওয়া হলো। মূলত ধর্মের ভিত্তিতে ঘাতকরা তাদের বেছে বেছে হত্যা করে। আমরা ঘটনার হৃদয়বিদারক সাক্ষ্য পড়েছি। কীভাবে কাছ থেকে পুরুষদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে– পরিবারের সদস্যদের সেই দৃশ্য দেখতে হয়েছে। এতে প্রায় সবাই ছিল হিন্দু। এসব হত্যাকাণ্ড ছিল অযৌক্তিক। এ ছাড়া আমরা পড়েছি, কীভাবে কাশ্মীরি ট্যুরিস্ট গাইড ও শিশুদের বিনোদন রাইডের পনি অপারেটররা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেক ভারতীয় পর্যটককে উদ্ধার করেছিলেন।
এই হামলা কারা ঘটিয়েছে, তা মৃতদের পরিবারের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়– সেটা পাকিস্তানি কিংবা স্থানীয় কাশ্মীরি হোক, অথবা উভয় সম্প্রদায়ের সশস্ত্র গোষ্ঠী। তাদের জীবন নিঃশেষ হয়ে গেছে। পাশাপাশি ভারত সরকারের চতুরতার সঙ্গে গড়ে তোলা স্বাভাবিকতার মুখোশও ধ্বংস হয়ে গেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পর্যটনের উত্থানের ফলে এই মুখোশ টিকেছিল।
আমরা আগেও অনেকবার এখানে এসেছি। প্রায় চার দশক ধরে কাশ্মীর রক্তপাতের চক্রে ঘুরপাক খাচ্ছে। মাঝে মাঝে শান্ত থাকে। স্বাভাবিকতার জয়ধ্বনিপূর্ণ ঘোষণা এবং শান্তির সঙ্গে নীরবতার ইচ্ছাকৃত মিশ্রণের মধ্যে কেটেছে, যাতে এখানে আবারও ভ্রমণে যাওয়া যায়। ২০১৯ সালেও এখানে বিরাজমান স্বাভাবিক অবস্থা এবং সংঘাতের অবসানের কথা বলা হয়েছিল।
কিন্তু সেই ভাবমূর্তি ভেঙে যায় ফেব্রুয়ারিতে, যখন জইশ-ই-মোহাম্মদ নামে পাকিস্তানভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী একটি আধাসামরিক বাহিনীর গাড়িতে আক্রমণ করে। এতে ৪০ ভারতীয় সৈন্য হত্যা করা হয় এবং দুই দেশকে যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দেয়। ১৯৪৮ সাল থেকে তারা যে তিনটি যুদ্ধ করেছে, তাতে বহু দিক থেকে দেশ দুটি সর্বদা যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে ছিল। নির্দিষ্ট সময় পরপর তারা যুদ্ধের চারপাশে ঘুরতে থাকে; তারপর ফিরে আসে এবং অস্ত্র ও বাগ্বিতণ্ডা চলে।
এই বিপর্যয়কর বৈপরীত্যের মধ্য দিয়ে একটি প্রজন্ম এখন শেষের দিকে, যার বেশির ভাগ ক্ষতি কাশ্মীরিদের গুনতে হয়েছে। তাদের ৭০ হাজারেরও বেশি লোক নিহত হয়েছে, প্রায় ১০ হাজার হয়েছে নিখোঁজ এবং ২ লাখের বেশি কাশ্মীরি পণ্ডিত (হিন্দু) বাস্তুচ্যুত। এর কারণ ১৯৮৯ সালে ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ এবং বোমা বিস্ফোরণ বা পেহেলগামের মতো হামলায় ভারতীয় নাগরিকের নিহত হওয়ার ঘটনা। এটা বলা অযৌক্তিক– এ ধরনের সহিংসতা শূন্য থেকে উদ্ভূত। কারণ ব্যাপক সহিংসতার উৎস আমাদের ইতিহাস ও রাজনীতি উভয় ক্ষেত্রেই রয়েছে। যেমন ১৯৪৭ সালে ধর্মীয় ভিত্তিতে দেশভাগের এখনও জ্বলন্ত ক্ষত এবং কাশ্মীর নিয়ে বিরোধের অমীমাংসিত প্রকৃতি।
২০১৮ সাল থেকে ভারত দিল্লির নিযুক্ত করা গভর্নরের মাধ্যমে সরাসরি এ অঞ্চল শাসন করে আসছে। পরের বছর মোদি সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীরের সীমিত স্বায়ত্তশাসন বাতিল করে। যদিও এখন একজন নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী আছেন, তবু পদকে কার্যকরভাবে নামমাত্র করে তোলা হয়েছে। সরকারের এসব সিদ্ধান্ত এতটাই বিকৃত হয়ে ওঠে, এই মাসের শুরুতে একটি উচ্চস্তরের নিরাপত্তা সভায় বর্তমান ক্ষমতাসীন এক কাশ্মীরিকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। অঞ্চলটির ওপর নিয়ন্ত্রণ নিতে ভারত কাশ্মীরের অভ্যন্তরে এবং পাকিস্তানের সঙ্গে বিদ্যমান সীমান্তে প্রায় পাঁচ লাখ সৈন্য নিয়ে একটি বিশাল সামরিক বাহিনী বলবৎ রেখেছে। স্থানীয় বা পাকিস্তানি পৃষ্ঠপোষকতায় সশস্ত্র গোষ্ঠীদের জন্য এসব উর্বর ভূমি অবাক করার মতো কিছু নয়।
মির্জা ওয়াহিদ: ইংল্যান্ডভিত্তিক কাশ্মীরের লেখক; দ্য গার্ডিয়ান থেকে সংক্ষিপ্ত ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম