গেম বানিয়ে দুই উদ্যোক্তার বছরে আয় কোটি টাকা
Published: 28th, April 2025 GMT
গেম তৈরির কথা ভাবলেই মনে হয় শক্তিশালী সফটওয়্যার, কম্পিউটার ও অপারেটিং সিস্টেম ছাড়া সম্ভব নয়। তবে গেমিং ব্যবসায় সময় বদলেছে। বদলে যাওয়া এ সময়ে গেমিং জগতের নতুন প্রযুক্তির নাম এইচটিএমএলফাইভ (HTML5) গেম। এ ধরনের গেম মোবাইল, ডেস্কটপ, এমনকি স্মার্ট টিভিতে সহজেই চালানো যায়। ফলে আলাদা কোনো অ্যাপ ইনস্টল না করে সরাসরি ওয়েব ব্রাউজারে গেম খেলা যায়। আর দেশে সেই ধরনের গেম তৈরির কাজটি করছে স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান ন্যাপটেক ল্যাবস।
প্রতিষ্ঠার পর এই গেমিং স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানটি সাড়ে ৪ বছরে ৬০০টির বেশি গেম তৈরি ও প্রকাশ করেছে। অনলাইনে ন্যাপটেক ল্যাবসের গেম এখন পর্যন্ত ২ কোটির বেশিবার খেলা হয়েছে। ব্যবসা শুরুর পর থেকে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকার বেশি আয় করেছে স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যে ২০২৪ সালেই ১ কোটি টাকার বেশি আয় করেছে ন্যাপটেক ল্যাবস। চলতি বছর গত বছরের চেয়ে দ্বিগুণ আয় হবে বলে জানিয়েছে স্টার্টআপটির প্রতিষ্ঠাতা ও সহপ্রতিষ্ঠাতা। তবে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ পেলে এ বছরের মধ্যে ব্যবসা পাঁচ গুণ বড় করতে চায় প্রতিষ্ঠানটি।
মূলত গেমিফিকেশন মডেল, গেমিং প্ল্যাটফর্মগুলোতে আয় অংশীদারত্ব, গেম বিক্রি ও বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আয় করে প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানটি যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, তুরস্ক, ভিয়েতনাম, অস্ট্রেলিয়া, চীন, জাপান, ভারত, সাইপ্রাসসহ বিশ্বের ২৪টি দেশে তাদের তৈরি গেম বিক্রি ও গেমিফিকেশন সার্ভিসের মাধ্যমে কার্যক্রম চালাচ্ছে। বর্তমানে তারা বিশ্বের ১৫টি বিজ্ঞাপন নেটওয়ার্ক ও ১৮টি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করছে। ফলে বৈশ্বিক পর্যায়ে প্ল্যাটফর্মভিত্তিক রাজস্ব আয়ের সুযোগ তৈরি হয়েছে তাদের তৈরি গেমগুলোর।
যেভাবে শুরুযখন করোনার থাবায় পুরো দেশ লকডাউনে চলে যায়, তখন ন্যাপটেক ল্যাবসের প্রতিষ্ঠাতা মোসাব্বির হোসাইন তাঁর গেম তৈরির পূর্বাভিজ্ঞতা থেকে একটি স্টার্টআপ চালুর পরিকল্পনা করেন। ২০১৭ সালে স্নাতক পাস করার পর থেকেই তাঁর পরিকল্পনা ছিল নিজেই একটি গেমিং স্টার্টআপ চালু করবেন। তবে আর্থিক সমস্যার কারণে সেটি শুরু করতে কয়েক বছর সময় লেগে যায়। ২০২০ সালে লকডাউনের শুরুতে তিনি তাঁর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু করেন। এর আগে চাকরির সুবাদে ‘মোবাইল গেম অ্যাপ্লিকেশন’ নিয়ে প্রশিক্ষণ প্রদানের সময় পরিচয় হয় সুজানা হকের সঙ্গে। পরে তাঁকে সঙ্গে নিয়ে চারজনের একটি দল গঠনের মাধ্যমে কাজ শুরু করে ন্যাপটেক ল্যাবস। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে ১৫ জনের বেশি গেম ডেভেলপার, ডিজাইনার, আর্টিস্ট ও বিপণনবিশেষজ্ঞ কাজ করছেন।
কী কী রয়েছে এই স্টার্টআপে‘ন্যাপটেক গেমস’ নামের প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব একটি অনলাইন গেমিং প্ল্যাটফর্ম রয়েছে, যেখানে রয়েছে ৪০ হাজারের বেশি গেম। মোবাইল, ট্যাব, ডেস্কটপ ও স্মার্ট টিভির মাধ্যমে এই প্ল্যাটফর্মে তাৎক্ষণিকভাবে গেম খেলা যায়। প্রতিষ্ঠানটির দাবি, এটি এখন দক্ষিণ এশিয়ার বৃহৎ গেমিং পোর্টাল।
ভারতের শীর্ষ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান রিলায়েন্সের সহযোগী প্রতিষ্ঠান জিওগেমসেও এখন ন্যাপটেক ল্যাবসের এইচটিএমএলফাইভ গেম রয়েছে। এ ছাড়া দেশে গ্রামীণফোনের জিপি অ্যাপের জোস গেমস, রবির গেম বাক্স ও টেলিটকের ন্যাপটেক্স গেমস নামের গেম টুর্নামেন্ট প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। বাংলাদেশের ডিজিটাল পেমেন্ট, ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস ও এন্টারপ্রাইজ সলিউশন সেবা দেওয়া প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান এসএসএল ওয়্যারলেসের সঙ্গেও পরিবেশক অংশীদার হিসেবে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া ওয়েবভিত্তিক গেমিং প্ল্যাটফর্ম গেমপিক্স ও গেমজুপেও চাইলে যে কেউ তাদের গেম খেলার সুযোগ রয়েছে।
ন্যাপটেক ল্যাবসের প্রতিষ্ঠাতা মোসাব্বির হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গেমিং প্ল্যাটফর্মে প্রচার হওয়া বিজ্ঞাপন আয়ের ৫২ শতাংশ আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। আর বাকি আয় আসে গেম বিক্রি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অংশীদারি ব্যবসা থেকে। বর্তমানে ন্যাপটেক ল্যাবস ইনফিনিক্স, টেকনো ও আইটেলের মতো মোবাইল তৈরির চীনা বহুজাতিক কোম্পানি ট্রান্সশন হোল্ডিংসের জন্য বিশেষ ধরনের মিনি গেম তৈরি করছে। এসব গেম চীনা প্রতিষ্ঠানটির মিনি গেম প্ল্যাটফর্ম পাম স্টোর ও আহা গেমসে পাওয়া যাবে, যেখানে ইন্টারনেট সংযোগ ছাড়াও গেম খেলার সুযোগ রয়েছে।
গেম তৈরির পাশাপাশি শিক্ষাক্ষেত্রেও কাজ করছে ন্যাপটেক ল্যাবস। অনলাইনে ‘কিডি কিং গেমস’ নামে শিশুদের জন্য গাণিতিক দক্ষতা, যুক্তি, ও ভাষাশিক্ষার সহায়ক শিক্ষাপদ্ধতি গেমের সিরিজ চালু করেছে তারা। মোসাব্বির হোসাইন জানান, এই অনলাইন গেম শিশুদের পড়াশোনাকে আরও মজাদার ও কার্যকর করে তুলছে।
ন্যাপটেক ল্যাবসের সহপ্রতিষ্ঠাতা সুজানা হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘একটি গেম তৈরিতে আমাদের গড়ে ১৫ দিন সময় লাগে। আগামী কয়েক বছরে দেড় হাজারের বেশি গেম তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে থাকবে ক্যাজুয়াল (ধাপে ধাপে খেলা যায়), হাইপার-ক্যাজুয়াল (খুব সহজে খেলা যায়), শিক্ষামূলক গেম ও ব্র্যান্ডেড গেমস।’
আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিজনেস টু বিজনেস গবেষণা ও রেটিং প্ল্যাটফর্ম গুড ফার্মস। বৈশ্বিক প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান, সফটওয়্যার কোম্পানি ও সার্ভিস প্রোভাইডারদের কর্মদক্ষতা ও বিশ্বাসযোগ্যতার ভিত্তিতে মূল্যায়ন করে র্যাঙ্কিং করে প্রতিষ্ঠানটি। গুড ফার্মস ২০২৫ সালে তাদের বিশ্বসেরা গেম ডেভেলপমেন্ট কোম্পানির তালিকায় ন্যাপটেক ল্যাবসকে ৯ নম্বরে স্থান দিয়েছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশে ১ নম্বর গেম কোম্পানি হিসেবেও স্বীকৃতি দিয়েছে ন্যাপটেক ল্যাবসকে।
স্টার্টআপের বর্তমান অবস্থাগত বছরের শেষে গুগলের এক্সিলারেটেড গ্রোথ প্রোগ্রাম থেকে আমন্ত্রণ পেয়েছে ন্যাপটেক ল্যাবস। এই প্রোগ্রামের আওতায় গুগল তিন মাসের জন্য একসঙ্গে কাজ করবে ন্যাপটেকের সঙ্গে। তবে এ প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করতে প্রতিষ্ঠানের বড় বিনিয়োগ লাগে।
ন্যাপটেকের প্রতিষ্ঠাতা মোসাব্বির হোসাইন বলেন, ‘আমরা কয়েকটি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনা করছি। আশা করছি, বড় কোনো বিনিয়োগ পেলে গুগলের এই প্রোগ্রামে আমরা অংশগ্রহণ করতে পারব। এ ছাড়া কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক গেম ডেভেলপমেন্টে আরও এগিয়ে যেতে চাই। আমাদের লক্ষ্য ভবিষ্যতে ৫০টি দেশে আমাদের গেম বিক্রি ও কার্যক্রম ছড়িয়ে দেওয়া।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম স ব ব র হ স ইন প ল য টফর ম ক জ করছ ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
প্রতিদিন কেন মৃত্যুকে স্মরণ করতে হবে
মৃত্যু জীবনের একটি অবশ্যম্ভাবী সত্য, যা প্রত্যেকটি মানুষের জন্য নির্ধারিত। ইসলামে মৃত্যুকে ভয়ের বিষয় হিসেবে নয়; বরং আল্লাহর দিকে ফিরে যাওয়ার একটি স্বাভাবিক ধাপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘প্রত্যেক প্রাণী মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৮৫)
মৃত্যুর স্মরণ মুসলিমদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আধ্যাত্মিক অনুশীলন, যা জীবনের উদ্দেশ্যকে স্মরণ করিয়ে দেয় এবং আমাদের পার্থিব লোভ-লালসা থেকে দূরে রাখে।
মৃত্যু: মুমিনের জন্য স্বস্তিপৃথিবী একটি পরীক্ষার ক্ষেত্র, যেখানে মানুষ নানা দুঃখ-কষ্ট, অভাব, প্রিয়জনের মৃত্যু, দারিদ্র্য ও অন্যান্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়। মুসলিমদের জন্য এ পরীক্ষা হলো আল্লাহর নির্দেশ মেনে চলার মাধ্যমে জীবন যাপন করা।
কোরআনে বলা হয়েছে, ‘(আল্লাহ) যিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন, যাতে তিনি তোমাদের পরীক্ষা করেন, তোমাদের মধ্যে কে উত্তম কাজ করে।’ (সুরা মুলক, আয়াত: ২)
আনন্দের ধ্বংসকারীকে (মৃত্যুকে) বেশি বেশি স্মরণ করো। তিরমিজি, হাদিস: ২৩০৭মৃত্যু মুমিনের জন্য একটি স্বস্তি। এটি পার্থিব পরীক্ষা ও কষ্ট থেকে মুক্তি দেয় এবং আল্লাহর রহমতের আলিঙ্গনে নিয়ে যায়। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘মুমিন মৃত্যুর মাধ্যমে স্বস্তি পায়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬৫০৭)।
এমনকি নবীজি (সা.)-এর জীবনেও এ সত্য প্রতিফলিত হয়েছে। তাঁর মৃত্যুর সময় মৃত্যুর ফেরেশতা আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁকে মৃত্যু বিলম্বিত করার সুযোগ দিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি আল্লাহর কাছে ফিরে যাওয়ার পথ বেছে নিয়েছিলেন।
আরও পড়ুনমৃত্যু থেকে পালানোর পথ নেই১৮ মার্চ ২০২৫মৃত্যুকে স্মরণ করার গুরুত্বমৃত্যু স্মরণ একটি গভীর আধ্যাত্মিক অনুশীলন। যখন আমরা কোনো প্রিয়জনের মৃত্যু দেখি, তখন পার্থিব বিষয়গুলো তুচ্ছ মনে হয়। আমরা আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য নিয়ে পুনর্বিবেচনা করি।
নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘হৃদয় মরিচার মতো মলিন হয়।’ লোকেরা জিজ্ঞাসা করল, ‘কীভাবে তা পরিষ্কার করা যায়?’ তিনি বললেন, ‘মৃত্যু স্মরণ ও কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে।’ (নাহজুল ফাসাহা)।
এ ছাড়া তিনি বলেছেন, ‘আনন্দের ধ্বংসকারীকে (মৃত্যুকে) বেশি বেশি স্মরণ করো।’ (তিরমিজি, হাদিস: ২৩০৭)
হজরত আলী (রা) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রায়ই মৃত্যুকে স্মরণ করে, সে অল্প সম্পদেও সন্তুষ্ট থাকে। সে কখনো লোভী বা কৃপণ হয় না।’ (বিহারুল আনওয়ার)
মৃত্যুর জন্য কী কামনা করা যায়ইসলামে আত্মহত্যা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। তাই কোনো বিপদ বা কষ্টের কারণে মৃত্যুর জন্য প্রার্থনা করা অনুমোদিত নয়। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যেন বিপদের কারণে মৃত্যু কামনা না করে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬৩৫১)।
তবে শহীদ হওয়ার জন্য দোয়া করা, অর্থাৎ আল্লাহর পথে মৃত্যুবরণের জন্য প্রার্থনা করা ইসলামে অনুমোদিত।
ইসলামের দৃষ্টিকোণে মৃত্যু জীবনের সমাপ্তি নয়; বরং এটি পার্থিব জীবন থেকে চিরস্থায়ী জীবনের দিকে একটি সেতু। মৃত্যু মুমিনের জন্য এটি আল্লাহর সঙ্গে মিলিত হওয়ার একটি সুযোগ।মৃত্যুই শেষ কথা নয়ইসলামের দৃষ্টিকোণে মৃত্যু জীবনের সমাপ্তি নয়; বরং এটি পার্থিব জীবন থেকে চিরস্থায়ী জীবনের দিকে একটি সেতু। এটি ভয় বা দুঃখের বিষয় হলেও মুমিনের জন্য এটি আল্লাহর সঙ্গে মিলিত হওয়ার একটি সুযোগ। মৃত্যু স্মরণ ও এর জন্য প্রস্তুতি আমাদের জীবনকে আরও অর্থবহ করে।
বিপদে পড়লে মৃত্যু স্মরণের দোয়া আমাদের ধৈর্য ধরতে এবং আল্লাহর ওপর ভরসা রাখতে সাহায্য করে। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘যারা বিপদে পড়ে বলে, ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন (আমরা আল্লাহর জন্য এবং তাঁর দিকেই ফিরে যাব।)’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫৬)
এ আয়াত মৃত্যুর সংবাদ শোনার সময়ও পাঠ করা হয়। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে বিপদ আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে এবং তিনি আমাদের সামর্থ্যের বাইরে পরীক্ষা দেন না। (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৮৬)।
প্রতিটি বিপদের মধ্যে আমাদের জন্য কল্যাণ নিহিত রয়েছে। এ বিপদ ক্ষণস্থায়ী। কারণ, আমরা আল্লাহর কাছে ফিরে যাব।
আরও পড়ুনসন্তান জন্মের আগে মৃত্যু কামনা করেন নবীর মা৩১ মে ২০২৫কয়েকটি দোয়ামৃত্যু ভাবাপন্ন বিপদ হলে: কঠিন বিপদের সময় পাঠ করা যায়, তা হলো নবীজি (সা.)-এর শেখানো: ‘হে আল্লাহ, যতক্ষণ জীবন আমার জন্য কল্যাণকর, ততক্ষণ আমাকে জীবিত রাখো এবং যখন মৃত্যু আমার জন্য উত্তম, তখন আমাকে মৃত্যু দাও।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬৩৫১)
মৃত্যু নিকটবর্তী হলে: মৃত্যুর সময় শুধু আল্লাহই জানেন। তবে আমরা বা আমাদের প্রিয়জন মৃত্যুর কাছাকাছি থাকি এবং ভয় বা উদ্বেগ অনুভব করি, তবে এই দোয়া পাঠ করা যায়: ‘হে আল্লাহ, মৃত্যুর যন্ত্রণা ও কষ্ট থেকে আমাকে সাহায্য করো।’ (তিরমিজি, হাদিস: ৯৭৮)।
নবীজি (সা.) নিজেও তাঁর মৃত্যুর সময় এই দোয়া পাঠ করেছিলেন।
হে আল্লাহ, যতক্ষণ জীবন আমার জন্য কল্যাণকর, ততক্ষণ আমাকে জীবিত রাখো এবং যখন মৃত্যু আমার জন্য উত্তম, তখন আমাকে মৃত্যু দাও।সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬৩৫১সহজ মৃত্যুর জন্য দোয়া: নবীজি (সা.) একটি দীর্ঘ দোয়ার শেষে বলেছেন, ‘এবং আমার মৃত্যুকে আমার জন্য স্বস্তির উৎস করো, যা আমাকে সব অনিষ্ট থেকে রক্ষা করবে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৬৮৮)
এখানে সহজ মৃত্যু বলতে পার্থিব অর্থে আরামদায়ক মৃত্যু (যেমন ঘুমের মধ্যে মৃত্যু) বোঝায় না; বরং এটি বোঝায় মৃত্যুর ফেরেশতার আগমন থেকে শুরু করে পরকালে স্থানান্তর পর্যন্ত একটি সহজ প্রক্রিয়া।
মৃত্যুর কঠিন পরীক্ষা থেকে আশ্রয়: একটি দোয়ায় নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘হে আল্লাহ, আমি তোমার কাছে অলসতা, বার্ধক্য, কাপুরুষতা, অক্ষমতা এবং জীবন ও মৃত্যুর পরীক্ষা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি।’ (সুনানে নাসাঈ, হাদিস: ৫৪৯১)
মৃত্যুর সময় শয়তান থেকে বাঁচতে: নবীজি (সা.) এ–সময় দোয়া করেছেন, ‘আমি তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করি যেন শয়তান আমার মৃত্যুর সময় আমাকে ক্ষতি করতে না পারে।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ১৫৫২)
ইসলামে মৃত্যুকে ভয়ের বিষয় হিসেবে নয়; বরং আল্লাহর সঙ্গে পুনর্মিলনের একটি সুযোগ হিসেবে দেখা হয়। নিয়মিত মৃত্যু স্মরণ আমাদের জীবনের উদ্দেশ্যকে স্মরণ করিয়ে দেয়, লোভ-লালসা থেকে দূরে রাখে এবং আমাদের ভালো কাজের পথে রাখে।
আরও পড়ুনমৃত্যু কি শেষ, মৃত্যু আসলে কী৩১ জুলাই ২০২৩