চীন সরকারের সহযোগিতায় বাংলাদেশে যে তিনটি বিশেষায়িত হাসপাতাল হবে, তার একটি বরিশাল বিভাগে স্থাপন এবং ভাঙ্গা থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত বিদ্যমান দুই লেনের মহাসড়ককে ছয় লেনে উন্নীত করার দাবি জানিয়েছেন দক্ষিণাঞ্চলের বাসিন্দারা।

সোমবার (২৮ এপ্রিল) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে দক্ষিণাঞ্চলের ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, পেশাজীবী, রাজনীতিকসহ সর্বস্তরের জনগণের ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার সার্বিক মান উন্নয়নে বিভিন্ন দাবি তুলে ধরা হয়। সেগুলো হলো:

ভাঙ্গা থেকে পায়রা বন্দর পর্যন্ত রেললাইন স্থাপন করতে হবে। বরিশাল-ভোলা সেতু নির্মাণ করতে হবে। ভোলার গ্যাস দক্ষিণাঞ্চলের সব জেলায় সরবরাহ করতে হবে। পটুয়াখালীর বগা নদীতে সেতু স্থাপন করতে হবে। বাবুগঞ্জ থেকে মুলাদী (ময়দানের হাটে) সেতু নির্মাণ করতে হবে। পাথরঘাটা থেকে বরগুনা সদর (কাকচিড়ায়) সেতু নির্মাণ করতে হবে। দক্ষিণাঞ্চলে একটি আন্তর্জাতিক মানের ইপিজেড নির্মাণ করতে হবে। কুয়াকাটাকে আন্তর্জাতিক মানের পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। ভ্যাট কমিশনারেট অফিস বরিশালে স্থাপন করতে হবে। পূর্ণাঙ্গ আয়কর আপিল আদালত বরিশালে স্থাপন করতে হবে। বিস্ফোরক অধিদপ্তরের পূর্ণাঙ্গ বিভাগীয় অফিস বরিশালে স্থাপন করতে হবে। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পূর্ণাঙ্গ বিভাগীয় কার্যালয় বরিশালে স্থাপন করতে হবে। আমদানি ও রপ্তানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের দপ্তরের বিভাগীয় অফিস বরিশালে স্থাপন করতে হবে।

এছাড়াও বাংলার শষ্যভাণ্ডার হিসেবে খ্যাত দক্ষিণাঞ্চলের পতিত জমিতে কৃষকরা প্রতিবছর যেন তিনটি করে ফসল চাষ করতে পারেন, সে লক্ষ্যে আধুনিক সেচ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। কৃষকদের ৫০ হাজার টাকা থেকে ৫০ লাখ টাকা ৫ শতাংশ সুদে কৃষি ঋণ দিতে হবে। বরগুনার কাকচিড়ার বড়ইতলায় নদী পারাপারের জন্য রো রো ফেরির ব্যবস্থা করতে হবে এবং আমতলী-বরগুনা সেতু নির্মাণ করতে হবে।

বরিশাল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মো.

এবায়েদুল হক চাঁনের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বরিশাল—৪ আসনের সাবেক এমপি মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ, চেম্বার অব কমার্স বরিশালের পরিচালক হাফিজুর রহমান হীরা, চেম্বার অব কমার্স পটুয়াখালীর পরিচালক দেওয়ান আব্দুর রহমান নিলু প্রমুখ।

ঢাকা/রায়হান/রফিক 

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন র ম ণ করত স বর শ ল

এছাড়াও পড়ুন:

‘আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব’

ঘড়ির কাঁটায় তখন দুপুর ২টা ২০ মিনিট। মাথার ওপর প্রখর রোদের উত্তাপ। প্রচণ্ড গরমে ত্রাহি অবস্থায় একটু বিশ্রাম নিতে গাছের ছায়ার খোঁজে ক্লান্ত পথিক। এমন সময় ঘর্মাক্ত শরীরে একটি ভবন নির্মাণের কাজ করতে দেখা গেল কয়েকজন শ্রমিককে। তাদের একজন তোঁতা মিয়া, অপরজন হাবিবুল।

হাবিবুল পাথর ভরেই যাচ্ছেন, তোঁতা মিয়া সেগুলো মাথায় করে একের পর এক টুড়ি ছাদ ঢালাইয়ের জন্য পৌঁছে দিচ্ছেন নির্দিষ্ট স্থানে। সেখানেও বালু-পাথরের মিশ্রণ করছেন আরও কয়েকজন। তাদের কর্মযজ্ঞের এক ফাঁকে কথা হয় তোঁতা মিয়ার সঙ্গে।

আলাপকালে তোঁতা মিয়া বলেন, ‘সারাদিন কাম (কাজ) কইরা ৫০০ ট্যাহা (টাকা) হাজিরা পাই। এইডি দিয়া কোনোমতে বউ-পুলাপান নিয়া দিন পার করতাছি। মে দিবস-টিবস কী কইতারতাম না। আমরার মতো গরিব মানুষ কাম না করলে পেডে ভাত জুটতো না এইডাই কইতারবাম।’

গতকাল বুধবার ঈশ্বরগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণকাজ করার সময় এসব কথা বলেন তোঁতা মিয়া (৪৫)। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার আকুয়া এলাকায়। এ সময় কথা হয় আরেক নির্মাণ শ্রমিক একাদুল মিয়ার সঙ্গে। একাদুলও জানেন না মে দিবস কী। তিনি বলেন, ‘এই কাম কইরা খাইয়া-না খাইয়া বউ-পুলাপান লইয়া কোনোরহমে দিন পার করতাছি। বর্তমান বাজারো জিনিসপাতির দাম বাড়লেও আমরার মজুরি বাড়ে না। পাঁচ বছর আগেও যা পাইতাম, অহনও তাই পাই।’ তিনি বলেন, ‘কয়েক ট্যাহা সঞ্চয় করবাম এই বাও (উপায়) নাই। অসুখ অইয়া চার দিন ঘরে পইড়া থাকলে না খাইয়া থাহন লাগব। আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব?’

আজ বৃহস্পতিবার মহান মে দিবস। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের এই দিনটি সারাবিশ্বের শ্রমিক শ্রেণির কাছে গুরুত্বপূর্ণ। বহির্বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হয় নানা আয়োজনে। কিন্তু যাদের অধিকার আদায়ের জন্য এ দিনটি পালন করা হয়– তারাই জানেন না দিবসটি সম্পর্কে। তাদের আরেকজন দিনমজুর রাজন মিয়া। রাজন জানান, এসব দিবসে তাদের মতো গরিব মানুষের কোনো লাভ-লোকসান নেই। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ