পর্যটন খাতের সম্ভাবনা ও যাত্রী বাড়ানোর পাশাপাশি সড়ক ও রেলপথে চাপ কমানো এবং অর্থনীতি চাঙা করতে কয়েকটি পরিত্যক্ত বিমানবন্দর আবার চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।

এর মধ্যে বগুড়া বিমানবন্দরের কাজ চলমান রয়েছে। পাশাপাশি লালমনিরহাট ও শমশেরনগর বিমানবন্দর চালুর বিষয়ে সরেজমিন পরিদর্শন করেছে কারিগরি বিশেষজ্ঞ দল। বিশাল পরিসর, প্রশস্ত রানওয়ে, উন্নত যাতায়াত ব্যবস্থা ও অবকাঠামোর সুবিধা থাকা সত্ত্বেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে দীর্ঘ ৫৪ বছরেও চালু হয়নি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম, পরিত্যক্ত, প্রবাসী অধ্যুষিত ও পর্যটন নগরী মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর বিমান বন্দর।

মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মো.

ইসরাইল হোসেন শমশেরনগর বিমানবন্দরটি চালুর লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টার কাছে একাধিকবার আবেদন করেন। সম্প্রতি ঢাকা থেকে বিমানবাহিনীর একটি প্রতিনিধি দল সরেজমিনে পরিদর্শন করে গেছেন।

জানা গেছে, দেশের অন্তবর্তীকালীন সরকার অভ্যন্তরীণ পর্যটন খাতের বিকাশ ও যাত্রী পরিবহণ বাড়াতে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) দেশের বিভিন্ন জেলায় পরিত্যক্ত, অব্যবহৃত ও দখলে থাকা ৭টি বিমানবন্দর যথাক্রমে ঈশ্বরদী, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, বগুড়া, শমশেরনগর, কুমিল্লা ও তেজগাঁও বিমানবন্দর নতুন করে চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম ও দেশের বৃহত্তম শমশেরনগর বিমানবন্দরটি সামরিক কাজে ব্যবহারের জন্য তৈরি করা হয়। সম্প্রতি লালমনিরহাট বিমানবন্দর ও মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর বিমানবন্দর চালু করার জন্য বেবিচকের চার সদস্যের একটি টিম সরেজমিন পরিদর্শন করেছে।

তারা বিমানবন্দর দুটি চালু করার বিষয়ে বেবিচক চেয়ারম্যানের কাছে প্রতিবেদন জমা দেবেন। তারপর পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে বেবিচক কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া অন্য বিমানবন্দরগুলো পরিদর্শন করে দেওয়া প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

জানা গেছে, ১৯৪২ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশরা জাপান, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার ও ইন্দোনেশিয়াকে দখল করার উদ্দেশে একসঙ্গে বড় যে দুটি বিমানবন্দর নির্মাণ করেছিল, তার একটি হচ্ছে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর বিমানবন্দর। সেসময় বিমানবন্দরটির নামকরণ করা হয় ‘দিলজান্দ বন্দর’।

স্বাধীনতা পরবর্তীকালে নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘শমশেরনগর বিমানবন্দর’। অযত্ন-অবহেলায় পড়ে থাকা বিমানবন্দরে ১৯৭৫ সালে বিমান বাহিনীর একটি ইউনিট খোলা হয়। সেখানে বিমান বাহিনীর তত্ত্বাবধানে একটি প্রশিক্ষণ স্কুল চালু করা হয়। সেই থেকে বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান ও হেলিকপ্টার ওঠানামা করছে এখানে। ৬০০০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৭৫ ফুট প্রস্থ বিশিষ্ট এ বিমানবন্দরের বড় একটি অংশ পতিত থাকায় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন মেয়াদে স্থানীয়দের কাছে ইজারা দিয়ে যাচ্ছেন।

পার্শ্ববর্তী সিলেট এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এখন যাত্রীর চাপও বেড়ে গেছে। ফলে বিমানবন্দরটি চালু হলে এ চাপ কমে আসবে। মৌলভীবাজার জেলাসহ আশপাশের কয়েকটি জেলার মানুষ উপকৃত হবেন। প্রবাসী ও পর্যটকদের যোগাযোগ সহজ হবে।

এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া গণমাধ্যমকে বলেন, পরিত্যক্ত বিমানবন্দরগুলো পর্যায়ক্রমে সচল করা হবে। তবে অবকাঠামো নির্মাণ, সংস্কার ও আনুষঙ্গিক প্রস্তুতি যেখানে আগে শেষ হবে, সেগুলো আগে সচল হবে। 

প্রবাসী অধ্যুষিত মৌলভীবাজার জেলার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক লোক ইউরোপ, আমেরিকা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত রয়েছেন। যাত্রীসেবার পাশাপাশি ভৌগোলিক কারণে এই বিমানবন্দরের সামরিক গুরুত্বও রয়েছে।

মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেন জানান, বিমানবন্দরটি চালুর লক্ষ্যে আমরা প্রধান উপদেষ্টার কাছে একাধিকবার আবেদন করেছি। সম্প্রতি ঢাকা থেকে বিমানবাহিনীর একটি প্রতিনিধি দল সরেজমিনে পরিদর্শন করে গেছেন। আমরা আশাবাদী, খুব দ্রুতই এখানে পুনরায় ফ্লাইট চালু হবে।

বিমানবন্দরটি চালু হলে এটিকে কেন্দ্র করে আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠবে এবং অত্র এলাকার যাত্রীদের যাতায়াত সুবিধা বাড়বে বলে অভিজ্ঞ মহলের অভিমত।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: শমশ রনগর ব ম ন ব ম নবন দরট র একট

এছাড়াও পড়ুন:

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে শ্রমিকের মৃত্যু

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। তাঁর নাম মো. আরিফুল। শুক্রবার বেলা এগারোটার দিকে তিনি ভবন থেকে পড়ে যান বলে জানা গেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের কর্তব্যরত চিকিৎসক নিংতম বলেন, বেলা এগারোটার দিকে কয়েকজন ওই শ্রমিককে নিয়ে আসেন। অবস্থা গুরুতর দেখে তখনই তাঁকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

নির্মাণাধীন ভবনটির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মোমিনুল করিম শুক্রবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ভবনটির নির্মাণকাজ বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। তবে কিছু শ্রমিক ওই ভবনে থাকেন। দুপুরের দিকে তিনি জানতে পারেন একজন শ্রমিক ভবন থেকে পড়ে গেছেন। তাঁকে এনাম মেডিকেলে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিলো। সন্ধ্যাবেলায় তাঁকে জানানো হয় ওই শ্রমিক মারা গেছেন।

তবে এনাম মেডিকেলের ডিউটি ম্যানেজার সুলতান প্রথম আলোকে বলেন, জাহাঙ্গীরনগর থেকে একজন রোগীকে আনা হয়েছিল। উনি ছাদ থেকে পড়ে গেছেন বলে জানানো হয়। মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই তিনি মারা যান।

শুক্রবার রাত পৌনে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক একেএম রাশিদুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আধা ঘণ্টা আগে খবর পেয়েছি। সঙ্গে সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। এমন একটি ঘটনা আমাদের আগে জানানো হয়নি কেন, তা জিজ্ঞাসা করেছি। বিষয়টি প্রো-ভিসি (এডমিন) দেখছেন।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে শ্রমিকের মৃত্যু
  • বাংলাদেশে নতুন প্রজাতির ব্যাঙ
  • ‘বিচার প্রক্রিয়া ও সংস্কারের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হবে’
  • জুলাই ডকুমেন্টরিতে ‘ফুটেজ’ না থাকায় জাবি ছাত্রদল নেতার হট্টগোল